আসাদ মল্লিক, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:

ফ্লাডেড উইথ লাইট

দ্য জার্মান সোসাইটি ফর নেচার ফটোগ্রাফি (জিডিটি)-এর আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় বিশ্বের সেরা আলোকচিত্রশিল্পীরা যোগ দেন। করোনার দাপটে  প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ হারাতে বসা ঘরবন্দি মানুষকে ফটোগ্রাফাররা উপহার দেন একগুচ্ছ প্রকৃতি। প্রায় ৭ টি বিভাগে জমা পড়া ৫০০০ ছবির মধ্য দিয়ে ৭০ টি ছবি বিচারক কর্তৃক নির্বাচিত হয়। 'নেচার'স স্টুডিও' বা 'প্রকৃতির রাজ্য' বিভাগে জ্যান পিইচার 'ফ্লাডেড উইথ লাইট' প্রথম স্থান অর্জন করে।

আলোকচিত্রে প্রধান বিষয়বস্তু হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে একটি পাখি। পাখিটির চঞ্চু দেখে বোঝা যায় যে সে সেইসময়ে কিচিরমিচিরে ব্যস্ত ছিল। ফলত প্রকৃতি তথা এই ঘন নিবিড় অরণ্যের সঙ্গে পক্ষীকুলের নিবিড় যোগাযোগ ব্যক্ত হয় এই ছবিতে। গাছের সবুজ আভা ও হলদেটে আলোর মাঝে বসে থাকা পাখিটি দেখতে লাগে অপূর্ব। ঘন অন্ধকারে ঢেকে থাকায় পাখিটি কোন প্রজাতির, তা শনাক্ত করা সম্ভব না হলেও পক্ষীপ্রেমী ও অরণ্যপ্রেমীদের কাছে এই ছবি যথেষ্ট উপভোগ্য।

আলোকচিত্রটি মূলত একটি 'সিল্যুয়েট শট'। সিল্যুয়েট শটে মূলত ছবির বিষয় অন্ধকারে থাকে, কারণ এক্ষেত্রে বিষয়টির পটভূমি অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল থাকে বা পটভূমিতে ছবির আলোক উৎসের অবস্থান থাকে। ফলত বিষয়টির উপর ফোকাস রাখলেও বিষয়টি নিজে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে ছবিটিকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। পটভূমির সাথে উজ্জ্বলতার ভিত্তিতে পার্থক্য গড়ে ছবির বিষয়বস্তু, যেমনটি হয়েছে 'ফ্লাডেড উইথ লাইট' ছবিতে। উজ্জ্বল অরণ্যের উদ্দেশ্যে হাঁক দিচ্ছে পাখিটি।
সিল্যুয়েট শটে গৃহীত ছবিটিতে পিইচা পটভূমিতে উজ্জ্বল  ও ঝলমলে আলোর উৎসকে ধরে রেখে ছবিটির মধ্যে আলোর পার্থক্য গড়ে তুলেছেন। ফলে আলো-আঁধারীর অরণ্য হয়ে উঠেছে রহস্যময়। আসলে ছবির হরিৎ অংশটি গাছের পাতায় পাতায় ঢেকে যাওয়া আকাশের এক টুকরো থেকে আসা আলোকরশ্মি। নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় প্রত্যহ বৃষ্টিপাতের ফলে জন্ম নিয়েছে চিরহরিৎ বনভূমি, এই ধরণের বনভূমিতে পাশাপাশি ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়ানো গাছগুলির পাতা চাঁদোয়ার মত আকাশকে ঢেকে ফেলে অরণ্যকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তোলে।

'ফ্লাডেড উইথ লাইট' -এই নামেই ছবিটির বৈশিষ্ট্য লুক্কায়িত রয়েছে। নানারকমের আলোর সমাহারে ছবিটি অনবদ্য হয়ে উঠেছে। পাখিটি প্রধান বিষয়বস্তু হলেও সিল্যুয়েট শটের ফলে ছবিতে আলো এক অন্য ভূমিকা নেয়। ধোঁয়াটে পরিবেশে পাতার ফাঁক দিয়ে ঠিকরে আসা সূর্যরশ্মির জেরে পুরো ছবিতেই হালকা হলদেটে আলো বিরাজমান। সঙ্গে গাছের পাতার সবুজাভ আভা দেখা যায় এবং প্রায় অন্ধকারে ঢেকে থাকা পাখিটির অবয়ব স্পষ্ট বোঝা যাওয়ায় দর্শকদের কাছে ছবিটি মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছে। উপযুক্ত কন্ট্রাস্ট, অনুভূমিক ভূমির সাথে সামঞ্জস্য ও সঠিক উজ্জ্বলতার সমাহারে ছবিটি একেবারে যথাযথ। 'রুল অফ থার্ড' মেনে ছবির প্রথম ভাগে পাখিটি থাকার ফলে ব্যকরণগত দিক থেকে ছবিটি উপযুক্ত।

জ্যান পিইচার ছবিটিকে অনেকেই 'বার্ড' বা 'পক্ষী' বিভাগে পঞ্চম স্থানাধিকারী ম্যাক্সিমিলিয়ন হর্নিশের 'সং অফ দ্য ডন'-এর সাথে তুলনা করেছেন। অনেকেই মজা করে বলেছেন, আসলে একটি পাখিই দুজনের জন্যে পোজ দিয়েছে। এছাড়াও নেটিজেনদের মতে, এমন ছবি ২০০০ সাল নাগাদ দেখা যেত যেখানে এমন সুন্দর আলোকচিত্রের তলায় একটি 'ক্যাপশন' থাকত এবং সেই ছবি ওয়ালপেপার হিসেবে ব্যবহৃত হত। সমালোচকদের মতে, এমন ছবি তুলতে পারাটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার কারণ এমন আলোর অবস্থায় পাখির হাঁ করে থাকা মুখের ছবি তুলতে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা ছাড়া গতি নেই। নেটিজেনদের কাছে সাদরে সমাদৃত হয়েছে ছবিটি। পক্ষীপ্রেমীরা ইতিমধ্যে এই ছবি বাঁধিয়ে রাখতে শুরু করেছেন। (ক্রমশঃ)

(ছবি সৌজন্যেঃ ইন্টারনেট)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours