আসাদ মল্লিক, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:

স্টোনি ডিপার

করোনা আতঙ্কে গৃহবন্দি সমগ্র মানবসমাজ। এরই মাঝে মানুষকে মুক্তি দিতে ও বাড়ি বসে প্রকৃতির স্বাদ এনে দিতে পারে একমাত্র আলোকচিত্রশিল্পীরা। আর তাই দ্য জার্মান সোসাইটি ফর নেচার ফটোগ্রাফি (জিডিটি) কর্তৃক আয়োজিত ২০২০-এর আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় ৭টি বিভাগে জমা পড়ে প্রায় ৫০০০ ছবি। তারই মধ্যে বার্ডস(পক্ষী) বিভাগে তৃতীয় স্থানাধিকারী ছবিটি হল হেরমান হিরসচ্-এর 'স্টোনি ডিপার'।

আলোকচিত্রে দেখা যায় পাথুরে ভূমির উপর বসে আছে একটি পাখি। এই পাখির নাম 'স্টোনি ডিপার' বা 'আমেরিকান ডিপার'। 'ডিপার' কথার অর্থ এই পাখি জলে ঝাঁপ দিয়ে তার সূক্ষ্ম চঞ্চু দিয়ে শিকার ধরতে সক্ষম। পাথুরে জমির উপর ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে শিকার ধরতে এর জুড়ি মেলা ভার। স্বভাব ও আচরণে ভারতীয় উপমহাদেশের মাছরাঙার সাথে আমেরিকান ডিপারের সাদৃশ্য দেখা যায়।

ক্যালিফোর্নিয়ায় তোলা ছবিটি পক্ষীপ্রেমীদের কাছে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পাথুরে স্থানের উপর পাখিটি যেন থমকে গেছে, সময়কে থমকে দিয়েছে হেরমানের ক্যামেরা! পাথরের গায়ে আঁকিবুঁকি অসংখ্য, তারই মাঝে বসে থাকা পাখিটিকে দেখতে লাগে যেন আঁকা ছবি। সমগ্র ছবির এই অদ্ভুত 'টেক্সচার' তাই ছবিটিকে অ্যাবস্ট্রাক্ট ছবির পর্যায়ে উন্নীত করে।
'স্টোনি ডিপার' ছবিটির মূল বিষয়বস্তু ছবির ঠিক মধ্যভাগে অবস্থান না করে একটু ডানদিক ঘেঁষে রয়েছে। ব্যাকরণ না মানলেও পাখিটি এমন অদ্ভূত অবস্থান নেওয়ায় ছবিটি এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। ছবিতে পাথুরে দেওয়াল আর পাখির কালচে রঙ মিলেমিশে দর্শককে মনে করিয়ে দেয় আদিম গুহাচিত্রের কথা! মনে হয় যেন কোনো অজানা নামবিহীন আদিম মানবীর হাতের অঙ্কনে ফুটে উঠেছে কোনো প্রাগৈতিহাসিক পাখির ছবি। গায়ে কাঁটা অনুভব করেন নেটিজেনরা!

হেরমানের 'স্টোনি ডিপার' ছবিতে পাথুরে দেওয়ালে সবুজ আভা, হলুদাভ অংশ ও নীলের আস্তরণে এক অদ্ভূত রঙের সৃষ্টি হয়েছে। পাথুরে স্থানটিকে মনে হয় ক্যানভাস, আর পাখিটি চিত্র। পাখিটির ভঙ্গিমা দেখে মনে হয় যেন সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কোনো শিকারের। ফলত এটা স্পষ্ট যে পাথরের পাশেই রয়েছে জলাশয়। হেরমান ছবিতে না ধরেও ছবির পারিপার্শ্বিক সম্বন্ধে দর্শককে যে আরও কল্পনার সুযোগ করে দিচ্ছেন, তা সত্যিই প্রশংশনীয়!

আলোকচিত্রে পাখিটিকে দেখে মনে হয় যেন এক্ষুনি উড়ে যাবে, আর সেই মুহূর্তকেই চিরকালের জন্য বন্দি করেছেন হেরমান হিরসচ্। প্রত্যহ বিলুপ্তির পথে চলে যাওয়া শ'য়ে শ'য়ে পাখির তালিকায় শীঘ্রই নথিভুক্ত হতে চলেছে এই স্টোনি ডিপার! ফলত হেরমানের এই ছবি যে মানবজাতির কাছে একটি স্মারক, তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না। এমন বর্ণময় পাথর থাকা সত্ত্বেও যে পাখিটির দিকে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষিত হবে, তার একমাত্র কারণ হেরমানের কারিগরি দক্ষতা। জলের শিকারিদের উপেক্ষা করে যেভাবে বাঁচার যুদ্ধ প্রতিদিন চালিয়ে যায় এই স্টোনি ডিপার, তা দর্শকদের এটা অন্তত শেখায় যে প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে জিততে গেলে দরকার সাহস আর আত্মবিশ্বাস। (ক্রমশঃ) 

(ছবি সৌজন্যেঃ ইন্টারনেট) 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours