প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

ভাগ্য নিয়ন্তা হিসাবে বিধাতা তাঁর কালি সংযোজনে ইতিহাসের উপাদান হিসাবে ব্যক্তিকে গড়েছেন৷ ইতিহাসও অগ্নিপরীক্ষা নেয় ; অনেক রক্তে চোখের জলে লেখা হয় তার কাহিনি। কি পেয়েছেন, রাজমহিষীর বঞ্চিত সম্মান। অবহেলার ভূমিতে অভিমানের দুচোখ ভরে জল রেখে কিই বা পাওয়া যায়!  কতো কথাই তো বলার থাকে, সবটুকু বুকে অনুগত হয়ে  দেবার মতো মানুষ কই! মাদ্রী তো নম্র, শান্ত, কোমল স্বভাবের ; ছোটোর অনুশাসনে অনুগত প্রেমে আঁকড়ে থাকাটাই তো বিধেয়। আবর্তের রোষানলে জীবন বিস্ময় হয়ে ওঠে, বোধহয় ভবিতব্য একেই বলে।

নারীর কাছে মনের আভরণে কেউ একজন প্রাণের সাথী থাকলে নিজেকে সাজাতে বড়ো ভালো লাগে৷ কোথাও মনে হয় স্বাধীনতা নিজস্বতা  হয়ে দাঁড়ালে অসহায়ের মুখে মোহন হাসি ফুটে ওঠে। এটাও তো প্রলেপ, যা কুন্তী নিঙড়ে দিয়েছিলেন বিদুরের  বিহ্বল  চোখের তারায়৷ পাণ্ডুর সাথে বিষন্ন উত্তেজনার স্রোত তো চিরকালের। বিদুর একদিন বলেছিলেন, "তোমার ভাইয়ের মতো স্বামী পাওয়া নারী জীবনের অভিশাপ "। আসলে এই বন্ধনটাই তপ জীবনের ফাঁস। সেখানে আবেগ নেই, স্বতঃস্ফুর্ততা নেই, মমতা নেই, শুধুই কষ্ট তাঁর।
অভিমানে ভারাক্রান্ত মনের ভার লাঘব করতে কুন্তী বলেছিলেন বিদুরকে তাঁর খুব প্রয়োজন৷ বিদুর এমনভাবেই সচেতনের মর্মে তাঁকে স্পর্শ করে আছে ; কুন্তীর " তুমিময় " জীবনে এক হয়ে আছে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস, জুড়ে আছেন বিদুর। বিদুর স্নিগ্ধ নিবেদনে কাঙাল চাহনিতে ভরে ছিলেন৷ কিন্তু নিষিদ্ধ ফল তো ছুঁতে নেই ; বাড়াবাড়ি ঔৎসুক্য হলে লজ্জিত হয় আদর ; তবু তো নারী পরাভাব মেনে নেয়। কুন্তী অনুকম্পা চায় না ; মানুষ বিধাতার এক বিচিত্র প্রাণী৷ অনুভূতির সংঘাত প্রতিমূহুর্তে বদলে যায় ; একনজরে সবাই চায় প্রেম, দরদ, বন্ধুত্ব, কিন্তু এখানে তো বর বৌয়ের খেলাটা নেই ; কাল্পনিক ছলে পুতুল পুতুল খেলা; আসলে একান্তে মনের চাওয়া পাওয়া, ইচ্ছা অনিচ্ছা মিল না হলে সুখের ঘর ভরে ওঠে না ; মনের মানুষই তো অকপটে সব কথা বলে ; দুজন দুজনের জন্য ;

 মানুষ তো আশা নিয়েই জীবনের নীড় রচনা করে ; জীবন স্বপ্ন আঁকটে ভালোবাসে ; দেবকের কন্যা পরাশরীরের সাথে বিদুরের বিয়ে থেকেই কুন্তীর জীবনটা অর্থহীন৷ তাঁর জীবনে ঘূণপোকার মতো সুখ শান্তি কুরে কুরে খাচ্ছে আশ্রয়হীন শূণ্যতা। (ক্রমশঃ)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: