দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

‘আপে অডাক ঘর আলুপে উডুঞকু তাবুনা’ (আপনারা কেউ বাড়ি থেকে বের হবেন না)। এভাবেই আদিবাসী ভাষার মাধ্যমে চলছে। মুখ্যভূমিকায়  দুই প্রাথমিক শিক্ষক। তাঁরা আদিবাসী ভাষায় কোন পুঁথিগত শিক্ষা নেননি। তবে তাঁদের বাড়ির চারিপাশে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। সেই পরিমণ্ডলে থেকেই রপ্ত করেছেন সাঁওতালি ভাষা। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরাই এখন আদিবাসী গ্রামে প্রশাসনের হাতিয়ার। দুই শিক্ষকের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

একজন আশিস মাল। অন্যজন আইনুল হক। আশিসবাবুর বাড়ি নলহাটি ১ নম্বর ব্লকের হরিদাসপুর অঞ্চলের বিলডাঙ্গা গ্রামে। তিনি লক্ষ্মীনারায়ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। আইনুল হক একই স্কুলের সহকারি শিক্ষক। একই পঞ্চায়েতের ধাবুনিগ্রামে। বাড়ি থেকে ছ’শো মিটারের মধ্যে ঝাড়খণ্ড রাজ্য। চারিধারে আদিবাসী পল্লী। সেখানেই বেড়ে ওঠা আইনুলের। ফলে খুব সহজেই আদিবাসী ভাষা রপ্ত করেন তিনি। তাদের সংস্কৃতিও তাঁর অজানা নয়। সেই শিক্ষাকেই কাজে লাগিয়ে আদিবাসী গ্রামে গ্রামে করোনা সচেতনতা চালাচ্ছেন তিনি। তবে মূল উদ্যোক্তা আশিসবাবু। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী স্বাস্থ্যকর্মী। লকডাউনের পরের দিন স্ত্রীকে সীমান্তবর্তী জামসুল আদিবাসী গ্রামে রাখতে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম আদিবাসীরা সামাজিক দুরত্ব বজার না রেখে গায়ে গা ঘেঁষে রেশন সামগ্রী তুলেছেন। সেদিনই ভেবেছিলাম কিছু একটা করা প্রয়োজন। এরপরেই আমাদের স্কুলের শিক্ষক আইনুল হককে প্রস্তাব দিই। তিনি রাজি হওয়ায় বিডিও এবং নলহাটি থানার পুলিশের কাছে অনুমতি নিয়ে আদিবাসী ভাষাতেই প্রচার শুরু করি”।
আইনুল হক বলেন, “আমি আদিবাসী পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠে তাদের ভাষা রপ্ত করেছি। ফলে আশিসবাবু যখন আমাকে আদিবাসী গ্রামে সচেতনতা বাড়াতে এগিয়ে আসার প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে প্রতিদিন বিকেলে আদিবাসী গ্রামে ঘুরে প্রচার চালাচ্ছি। তাদের বোঝানো হচ্ছে ‘আপে অডাক ঘর আলুপে উডুঞকু তাবুনা’ (আপনারা কেউ বাড়ি থেকে বের হবেন না)। প্রয়োজনে বের হলে মুখে মাস্ক বাঁধবেন। দোকানে বা বাজারে গেলে এক মিটার দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাইরের কাউকে গ্রামে ঢুকতে দেবেন না। করোনা ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক এখনও বের হয়নি। ফলে এই সংক্রামক থেকে বাঁচার উপায় পরিষ্কার থাকা ও ঘরে থাকা”। ইতিমধ্যে হরিদাসপুর অঞ্চলের আলমপুর, ভেড়াপাড়া, জামসুল, দাদুপাড়া, সন্তোষপুর, বিলডাঙ্গা, জামসুল গ্রামে সচেতনতা প্রচার চালানো হয়েছে। ভালো সাড়া পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি আশিসবাবু ও আইনুল হকের।

নলহাটি ১ নম্বর ব্লকের বিডিও জগন্নাথ বাড়ুই বলেন, “ওই দুই শিক্ষক আদিবাসী এলাকায় খুব ভালো কাজ করছেন। এবং আমরা সেই সব এলাকায় গিয়ে দেখেছি আদিবাসীরা সচেতন হয়েছেন”।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: