জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:



ফিজিক্যাল সায়েন্সের ‘গতির’ সাধারন নিয়মের নিরিখে বিবেচনায়া কোন সমাজ বিজ্ঞানী এমন ভাবতেই পারেন
‘করোনা’ উত্তরকালে দ্বিতীয় যুদ্ধকালের পর থেকে বিশ্ব সম্পর্কে মানবিকতা, যেমনভাবে প্রস্তুরিভূত হয়েছে, সেখানে করোনা জনীত যুদ্ধ, বিগত তিন দশকে
--- বিশেষতঃ সোভিয়েতকে ভেংগে ফেলার পর থেকে, মানবিকতার প্রশ্নে যে সম্পর্কগুলি চলে গিয়েছিলো, সেগুলিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার সুযোগ করে দেবে মানব জাতিকে।  অন্যভাবে বলা যাবে, মানবিক দিকগুলিতে সম্পর্কগুলির স্থবীর দিকগুলি তরল হতে পারার সুযোগ করে দিতে পারে।
কাজেই করোনা যুদ্ধের বিষাদের দিকগুলিতেও, এই যুদ্ধাবসানের পরের দিকগুলিকে যদি বিশ্ব মেহনত এবং জনমতের গনতান্ত্রিক অংশ যদি বিবেচনায়, না রাখেন করোনা উত্তর কাল, মানব জাতিকে ' এক কেউটের'  গর্ত থেকে অন্য এক আরো 'ভয়ংকর বিষধরের' গর্তে নিয়ে ফেলবে।

এগিয়ে যাওয়ার পূর্বে স্মরন করিয়ে দেবোঃ
এই কলম মূলতঃ যেহেতু নির্ভেজাল রাজনীতি বা সমাজ বিজ্ঞানর, দর্শনগত অভিমুখ, বা রাজনীতীর আয়নায় দর্শন এবং দর্শনের আয়নায়,  পরস্পরকে, সাথে সাথে এই পারস্পরিকতার বিচারে, ইতিহাসের পর্য্যালোচনা করেন, সেজন্য কালের ইতিহাসের কার্য্যকারন সম্পর্কের উপর খুব বিস্তারের বিষটি পাঠকের হাতে ছেড়ে দিয়ে, মুলতঃ বিষয়ের গভীরতার মাপঝোপ করার চেষ্টা করেন।

অন্যান্যের মতো, আজকের লেখাটিকেও,
পাঠকবৃন্দ  সেই একই দৃষ্টিতে বিবেচনায় রাখবেন, সেই আশা  রেখে, জাতী পুঞ্জে মহাসচিবের উল্লেখ গুলিকে অনুধাবনের চেষ্টা করতে অনুরোধ জানাবো।
জাতীপুঞ্জের মহাসচিব যখন বার বার বলছেন, করোনা যুদ্ধে যদি অতি সত্তর জয় না পাওয়া যায় তবে তা, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ থেকেও  অমানবিক হয়ে উঠবে, এর অর্থকে বুঝতে ইতিহাসের বর্তমান কালগত দিকের সব পক্ষকে। শ্রমিক আন্দোলনকে তো বটেই।
------ এই সুত্রেই, বিশ্ব উৎপাদন কাঠামোর বিচারে  দ্বিতীয় যুদ্ধের সাথে বর্তমান করুনা যুদ্ধের অর্থনৈ্তিক পরিনামের বিচারে দু'চারটে কথা বলে নেওয়া না হলে, এমন অনেক কথাই হয়তো পাঠকরা বিশ্বাসে যায়গা করে নেবেন, কিন্তু পরিনামের বিচার আপ্তবাক্য হিসেবেই থেকে যাবে
দ্বিতীয় যুদ্ধ, যন্ত্র নির্মান এবং তার উত্তোরত্তর বৈপ্লবিক উত্তোরনের যে পথ খুলে দিয়েছিলো, তা  বিশ্ব প্রযুক্তির বর্তমান ধারা পর্য্যন্ত বিদ্যমান ছিলো।
এই সুত্রেই আরো দুটি বিষয় উল্লেখনীয়।
উল্লেখনীয় 'করোনাকে'  মহামারি হিসেবে ঘোষনার পূর্বেই, জানুয়ারীতে, জাতীপুঞ্জের ৭৫তম অধিবেশনে, মহাসচিব তার জানুয়ারী ভাষনে, বিশ্ব
অর্থনীতি সম্পর্কে দুটি বিপর্য্যয়কর ইংগিত দিয়েছিলেন।
প্রথমতঃ প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন আজ বিশ্বায়নকে পছন্দ করছেন না।এই কথার মর্মার্থ বোঝা যাবে যখন ইতিমধ্যেই স্বিকার করে নেওয়া হচ্ছে, বিশ্বে দারিদ্রসীমায় এখন ২০০ কোটি। ভারতে সরকারই মেনে চলেছেন, ৯০ ভাগ শ্রমিকের বেতন ১৫,০০০ এর মধ্যে। আসলে এই অংক ১০,০০০ রাখাটাই যুক্তিনিষ্ট হোত।
দ্বিতীয়তঃ মহাসচিব স্বিকার করেছেন, প্রযুক্তির এক বৈপ্লবিক উত্তরন ঘটেছে। এর পরেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এই বিকাশের ধারা, ক্রমেই উৎপাদনের সাথে অসন্তুলিত হয়ে পড়ছে। ...। দ্বিতীয় প্রশ্নে মহাসচিবের উক্তিকে যদি দর্শনের আংগিকে বিচার করা হয়, তবে বুঝতে হবে, তিনি এখানে বিপর্য্যয়ের, ইঙ্গিত পাচ্ছেন, এই বিবেচনায় যে 'প্রযুক্তির বিকাশ' উৎপাদনের সম্পর্কগুলির সাথে ক্রমেই সন্তুলন হারিয়ে ফেলছে।
----- প্রসংগত আজ শ্রমিক আন্দোলন, সে সব কটুক্তি যেগুলি 'কম্পিউটারের' সার্বজনীন ব্যবহার বিরোধী আন্দলনের উপরে বর্ষিত হয়েছিলও সেগুলি এখন প্রত্যাহার করে নিয়ে, শ্রমিক আন্দোলনকে ইতিহাসের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। অন্যদের কথা বলছি না, সাম্যবাদীদের মধ্যেও মধ্যমবর্গীয় অংশের সিংহভাগ 'প্রযুক্তিকে' 'ভগবানের' স্থানে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন।

আরো এগিয়ে যাওয়ার পূর্বে
সেই  কথাটা স্মরন করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন রয়েছে, দ্বিতীয় যুদ্ধ সাধারনভাবেও, তার ধ্বংসাত্মক চরিত্রের মধ্যেও, একটা 'ধনাত্মক' দিক বিদ্যমান ছিলো, কিন্তু বর্তমান বিশ্বযুদ্ধে 'ধনাত্মক' দিক এক বিচিত্র 'শব্দবন্ধনীতে'ই চিহ্নিত করতে হয়।
সেখানে 'টিকে' যাওয়ার সাথে সাথে 'করোনা' উত্তর কালের পূনঃর্গঠনে, ''উৎপাদন এবং '  'সামাজিক সম্পর্কের' অসুন্তলন যেভাবে, সামাজিক সম্পর্ককে যেভাবে
একপ্রান্তে ' প্রকৃতি' এবং 'মানুষের' সম্পর্ককে অসন্তলিত করে চলেছিলো  এবং
---- মানবিকতাকে ক্রমে ধ্বংসস্তুপে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো, সেটাকেও পুনঃর্গঠনের সুযোগ মানুষকে দেবে।

সমগ্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে যদি গভীরে গিয়ে বিবেচনা করা যায় তবে দেখা যাবে,
এই যুদ্ধ যেমন ধ্বংসলীলার সাথে সাথে ,
---- অমানবিক প্রবৃত্তি সমুহের গড়লধারা অভিমুখ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলো এবং তার পরিনতি ঘটেছিলো, সোভিয়েত ভেংগেপরা কিংবা ভেঙ্গে ফেলা। বিপরীত মেরুতেই
---- দ্বিতীয় যুদ্ধের পৃষ্টভূমিতেই 'দুনিয়ার মেহনতি এক হোক'- এই শব্দ বন্ধনী বিশ্বানুভতিতে এক নতুন ঝংকার তুলতে পেরেছিলো এবং তার সাথে সাথেই, হিমালয়ের গভীর পর্বতমালা ভেদ করে  উঠে এসেছিলো, সেই অমর কথার হৃদকাপানো ঝংকার ---- "আমরা করবো জয়, নিশ্চয়'। আজ সেই অমর কাব্যকার যিনি " We shall overcome, some day' রচনাকার পল লেব্রয় রবসনকে স্মরনে রেখেই লেখাটাকে নিয়ে এগিয়ে চলা যেতে পারে।
দ্বিতীয় যুদ্ধে, ধ্বংসাত্মক বা ঋণত্মক দিকেও

মহামানবিক উন্মেষের সুযোগ পাবে কিছুকাল। ধ্বংসাত্মক দিক থেকে
যদি এই মহামারীর পরিনামকে বিশ্ব অর্থনীতির নিরিখে বিচার করা হয়, তবে বুঝতে হবে দ্বিতীয় যুদ্ধ থেকেও এই যুদ্ধ অনেক ধ্বংসাত্মক হতে বাধ্য। অন্যপ্রান্তে, দ্বিতীয় যুদ্ধ চলতে চলতেই  যে মানবিক দিকগুলি উন্মোচিত হচ্ছিলো, সেগুলির বিপরীতমুখীনতাই যেহেতু  এই যুদ্ধের অভিমুখ
----- সে কারনেই, যুদ্ধোত্তর কালের সন্তুলনের প্রশ্নে, বিশ্ব দ্বন্দ্বের যে পক্ষ প্রাথমিক অবস্থান নেবে, যুদ্ধোত্তর কালের ইতিহাসে সেদিকেই প্রবাহিত হবে।
মানুন কিংবা না মানুন, দ্বিতীয়  যুদ্ধোত্তোর কালে,
----- পুজির কেন্দ্রিভবনের নিয়ম অনুযায়ী, পুজিতান্ত্রিক উদ্যোগ যেখানে অন্যান্য পুজিতান্ত্রিক দেশগুলিকে হটিয়ে দিয়ে, দ্বিতিয় যুদ্ধে কার্য্যতঃ দুটি আনবিক বোমা ফেলা ছাড়া যে কিছুই করে নাই, সে-ই বিশ্ব অভিবাবক হয়ে গেলো, অন্যদেরকে -  ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতীর মূল শিকার হয়ে যাওয়া মেষ শাবকে বদলে দেওয়া হয়েছিলও।
----- অন্যদিকটি মানবিকতার প্রান্তটি বা সমাজতান্ত্রিক দিকটি, সোভিয়েতকে সামনে রেখে, একতাবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলো, জীবনবোধের সর্বপ্রান্তে।

সোভিয়েতকে ভেংগে দিয়ে সেই বিশ্ব সন্তুলনকেই ভেংগে দেওয়া হয়েছিলও। আজ স্পষ্ট। যে অর্থনীতি বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশকে নিয়ন্ত্রন করে দেওয়া হোল, কিন্তু  বিকল্পে যা নিয়ে আসা হোল, সেটা যখন অন্য কেউ নন
---- স্বয়ং জাতিপুঞ্জ মহাসচিব স্বিকার করছেন, তার জানুয়ারী ভাষনে, এটা সহজেই অনুমেয়, আজকে বিশ্ব সন্তুলন যে কার্য্যতঃ ভেংগে যাচ্ছে, তার প্রধান কারন
----- সামলানো যাবে না বুঝেও যে সন্তুলনকে ভেংগে দেওয়া হয়েছিলো,তারই বিরুদ্ধে প্রকৃ্তিরই প্রতিশোধ।

লেখাটা পরের সংখ্যা ধরে যখন এগুতে থাকবে, তত স্পষ্ট হবে বিষয়টি। তবে এখন থেকেই বিশ্ব দ্বন্দ্বের 'মেহনত' বা 'শ্রম' অংশকে এখন থেকে বুঝে চলতে হবে একটা কথা
--- দ্বিতীয় যুদ্ধ, তৃতীয় বিশ্বের স্বাধীনতা সমেত, চরম দাসত্বের মধ্যেও প্রযুক্তির দ্বার উন্মোচন  সমেত, যে ' মানবিকতার' যে মহাসূর্য্য মেহনতি এবং নারীজাতি সমেত সব নিপিড়িতের হাতে তুলে দেওয়ার দৌলতে
---- দলিত ও নিপিড়িত বিশ্ব নিজেকে সূর্য্যমুখী হওয়ার অন্তত চেষ্টা করার সুযোগ করে দিয়েছিলো
এখন থেকে যদি এই নিপিড়িত অংশ 'করুনা' উত্তর সম্ভাব্য বিশ্ব সন্তুলনের
কথা বিবেচনায় রাখতেই হবে।
অন্যথায়, প্রকৃতি এবং ইতিহাসে দ্বন্দ্বের সাধারন নিয়মটিকে নিঃস্পেষনে রেখে
'মেহনতের' কাছে বিশ্বের অস্তিত্বটাই অনর্থের কারন করে তুলবে। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: