ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বছর অতিক্রান্ত! হঠাৎ একদিন দ্বিপ্রহরে দ্বারকেশ্বর - বিদ্যাপিঠের প্রবেশদ্বারের সামনে এক অতি বৃদ্ধ জটাজুটধারী সাধু উপস্হিত হয়ে রমারঞ্জনের সাক্ষাৎ প্রার্থী ! রমারঞ্জন প্রথম দর্শনেই চিনতে পেরে সাষ্ঠাঙ্গে প্রনাম করে জানতে চাইলেন," গুরুদেব ,এতদিন পর? কোত্থেকে এলেন?"
" সমগ্র উত্তর ভারত পরিক্রমা সেরে আজই কাশীধামে এলাম! মন চইালো , আমার সাধনধামের ধ্বংসস্তুপ দেখতে! কিন্তু এসে দেখছি সম্পুর্ন বিপরীত! কি করে এই অসাধ্য সাধন হ'লো?" কথাগুলি এক নিঃশ্বাসে বললেন বিদ্যার্নব!
রমারঞ্জন বলল," সবই বাবা বিশ্বনাথের কৃপা! আপনি ভিতরে আসুন সব বলছি!"
বিদ্যার্নব উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞাসা করলেন," অত্যাচারী পুরন্দর?"
" যমালয়ে " বলল রমারঞ্জন!
" আর আমার না?" বিদ্যার্নব কাঁপতে কাঁপতে শুধালেন!
দুর থেকে হটী গুরুদেবকে দেখেই কাছে এসে সাষ্ঠাঙ্গে প্রনাম করল!
তার দুই বাহুধরে তুলে জিজ্ঞাসা করলেন," তুই বেঁচে আছিস মা?" হটী কিছু বলল না! তার দুই গাল বেয়ে নেমে এলো শ্রাবনের ধারা, যাতে মিশে আছে অভিমান, আনন্দ আর শ্রদ্ধা!
রমারঞ্জনের কাছে বিদ্যার্নব আনুপূর্বিক সব বৃত্তান্ত শুনলেন! অনুধাবন করলেন কেন কাশীর সচল বিশ্বনাথ তৈলঙ্গস্বামী জীবাত্মাকে পরমাত্মার দিকে প্রেরন করার কথা বলেছিলেন আর শাঁক বাজানোর বিষয়ে হটীকে তিরস্কার করেছিলেন! তিনি আরও জানলেন বর্তমানে কাশীনরেশ কাশীর রাজপুত্র কৃষ্নেন্দুনারায়ন সিংহ!
পুরন্দরের মৃত্যুর পর কাশীধামের নবজীবন ঘটেছিল! ফিরেছিল সুশাসন!
উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো ঈশানের! তাঁকে দশহাজারী মানসবদার পদে নিয়েগ করতে চেয়েছিলেন সেনাপতি বজ্রধর! কিন্তু ঈশেন রাজী হয়নি! সে চেয়েছে বাকী জীবনটা ধর্মকর্ম করে কাটিয়ে দেবে! ঈশেন এখন হটীর আশ্রমে আশ্রিত!
এরপর বহু বছর কেটে গেছে! উনবিংশ শতকের শুরু হয়েছে! ইতিমধ্যে দ্বারকেশ্বর বিদ্যার্নব লোকান্তরিত হয়েছেন! হটী এখন প্রবীনা একষষ্টি বছর বয়সের পৌঢ়া! আশ্রমে তিনি কদাচিৎ অধ্যাপনা করেন! সমস্ত দ্বায়িত্ব সতীর্থ রমারঞ্জন ভট্টশালীর! হটীর জীবনে চরম আক্ষেপ সে কাশীধাম বা সোঁয়াই গ্রামে ' ব্রজসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয় ' কে পুনরুজীবিত করতে পারল না শুধু মাত্র অন্ধ কুসংস্কারের জন্য! তথাকথিত কাশীর কোন পরিবার তাদের বাড়ীর বালিকাকে হটীর বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাইলেন না! শুধু মাত্র অন্ধ কুসংস্কার নারীর অক্ষর পরিচয় অকাল বৈধব্যের কারন!
আদি শঙ্করাচার্য ভারতবর্ষে চারটি দিকে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন! উত্তরে বদ্রিকাশ্রমের প্রবেশ দ্বারে যোশীমঠ! দক্ষিনে রামেশ্বরমে শৃঙ্গেরীমঠ!পূর্বে শ্রীক্ষেত্র অর্থাৎ পুরীতে গোবর্ধন মঠ এবং পশ্চিমে দ্বারকায় সারদামঠ! কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে কাশীধামে কোনমঠ প্রতিষ্ঠা করেন নি!এবং শঙ্করাচার্য পুরুষ ও প্রকৃতির সহবস্হানকে অস্বীকার করেছেন! তাঁর কোন মঠেরই নারীশক্তির বিগ্রহ নেই! একমাত্র পুরী ছাড়া! সেখানে সুভদ্রা জগন্নাথ ও বলরামের ভগিনী তদানিন্তন ভারতের সর্বাধিক উপাস্য শিব- পার্বতী ও রাধা-কৃষ্নকে কেন পরিহার করেছিলেন তা আজও অজ্ঞাত! তবে শঙ্করাচার্য অদ্বৈতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে সমগ্র আর্যাবর্তের পন্ডিতদের তর্কযুদ্ধে পরাস্ত করে উপস্হিত হলেন পূর্ব ভারতের গৌড়বঙ্গে! তৎকালীন অপ্রতিদ্বন্দী পন্ডিত কুমারিল ভট্টকে তর্ক- যুদ্ধে আহ্বান করলেন! কুমারিল ভট্ট তাঁর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি শর্ত দিলেন! আচার্য মন্ডন মিশ্রকে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করলে তিনিও পরাজয় স্বীকার করে নেবেন!
শঙ্করাচার্য আচার্য মন্ডন মিশ্রের আশ্রমে উপস্হিত হয়ে তাঁকে তর্কযুদ্ধে আহ্বান করলেন! মন্ডন মিশ্র ছিলেন গৃহী! বিচারক নির্বাচিতা হলেন মন্ডন মিশ্রের স্ত্রী মহাপন্ডিতা উভয়ভারতী! শর্ত হল - শঙ্করাচার্য পরাজিত হলে তিনি সন্ন্যাস ত্যাগ করে গার্হস্হ্য জীবনে প্রবেশ করবেন আর মন্ডন মিশ্র পরাজিত হলে সন্ন্যাস নিয়ে শঙ্করাচার্যের অনুগামী হবেন!
তর্কযুদ্ধে অদ্বৈতবাদ প্রতিষ্ঠিত হল মন্ডন মিশ্র পরাজিত হলেন! শঙ্করাচার্য আসন ত্যাগ করার উপক্রম করতেই উভয়ভারতী বাধা দিয়ে বললেন," আপনি মন্ডন মিশ্রকে পরাজিত করে অর্ধেক জয়ী হয়েছেন! আমি তাঁর অর্ধাঙ্গিনী আমাকে পরাজিত করলে আপনি জয়ী হবেন!"
শঙ্করাচার্য বললেন " তথাস্তু, কিন্তু কোন বিষয় নিয়ে বিতর্ক হবে?"
উভয় ভারতী বললেন," কামশাস্ত্র"
চমকে উঠলেন শঙ্করাচার্য! তিনি তো চির ব্রক্ষ্মচারী তিনি কামশাস্ত্র সম্পর্কে তো সম্পুর্ন অনভিজ্ঞ!
এরপর শঙ্করাচার্যের জীবনীতে কিছু কল্পিত অলৌকিক কাহিনীর সংযোজন ঘটানো হয়েছে!এরপর শঙ্করাচার্য তর্কযুদ্ধ অসমাপ্ত রেখে একমাস সময় চেয়ে নেন এবং অমরুক নামে এক মৃত রাজার শরীরে নিজ আত্মাকে প্রবেশ করিয়ে তাকে পুনরুজীবিত করে রাজপ্রাসাদে প্রত্যাবর্তন করে রাজমহিষীদের সাথে সহবাস করে কামশাস্ত্র বিশারদ হয়ে প্রত্যাবর্তন করলে বিনাযুদ্ধে উভয়ভারতী পরাজয় স্বীকার করে নেন!
(আগামীকাল এই ধারাবাহিকটির 'হটী-পর্ব' শেষ হবে)
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বছর অতিক্রান্ত! হঠাৎ একদিন দ্বিপ্রহরে দ্বারকেশ্বর - বিদ্যাপিঠের প্রবেশদ্বারের সামনে এক অতি বৃদ্ধ জটাজুটধারী সাধু উপস্হিত হয়ে রমারঞ্জনের সাক্ষাৎ প্রার্থী ! রমারঞ্জন প্রথম দর্শনেই চিনতে পেরে সাষ্ঠাঙ্গে প্রনাম করে জানতে চাইলেন," গুরুদেব ,এতদিন পর? কোত্থেকে এলেন?"
" সমগ্র উত্তর ভারত পরিক্রমা সেরে আজই কাশীধামে এলাম! মন চইালো , আমার সাধনধামের ধ্বংসস্তুপ দেখতে! কিন্তু এসে দেখছি সম্পুর্ন বিপরীত! কি করে এই অসাধ্য সাধন হ'লো?" কথাগুলি এক নিঃশ্বাসে বললেন বিদ্যার্নব!
রমারঞ্জন বলল," সবই বাবা বিশ্বনাথের কৃপা! আপনি ভিতরে আসুন সব বলছি!"
বিদ্যার্নব উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞাসা করলেন," অত্যাচারী পুরন্দর?"
" যমালয়ে " বলল রমারঞ্জন!
" আর আমার না?" বিদ্যার্নব কাঁপতে কাঁপতে শুধালেন!
দুর থেকে হটী গুরুদেবকে দেখেই কাছে এসে সাষ্ঠাঙ্গে প্রনাম করল!
তার দুই বাহুধরে তুলে জিজ্ঞাসা করলেন," তুই বেঁচে আছিস মা?" হটী কিছু বলল না! তার দুই গাল বেয়ে নেমে এলো শ্রাবনের ধারা, যাতে মিশে আছে অভিমান, আনন্দ আর শ্রদ্ধা!
রমারঞ্জনের কাছে বিদ্যার্নব আনুপূর্বিক সব বৃত্তান্ত শুনলেন! অনুধাবন করলেন কেন কাশীর সচল বিশ্বনাথ তৈলঙ্গস্বামী জীবাত্মাকে পরমাত্মার দিকে প্রেরন করার কথা বলেছিলেন আর শাঁক বাজানোর বিষয়ে হটীকে তিরস্কার করেছিলেন! তিনি আরও জানলেন বর্তমানে কাশীনরেশ কাশীর রাজপুত্র কৃষ্নেন্দুনারায়ন সিংহ!
পুরন্দরের মৃত্যুর পর কাশীধামের নবজীবন ঘটেছিল! ফিরেছিল সুশাসন!
উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো ঈশানের! তাঁকে দশহাজারী মানসবদার পদে নিয়েগ করতে চেয়েছিলেন সেনাপতি বজ্রধর! কিন্তু ঈশেন রাজী হয়নি! সে চেয়েছে বাকী জীবনটা ধর্মকর্ম করে কাটিয়ে দেবে! ঈশেন এখন হটীর আশ্রমে আশ্রিত!
এরপর বহু বছর কেটে গেছে! উনবিংশ শতকের শুরু হয়েছে! ইতিমধ্যে দ্বারকেশ্বর বিদ্যার্নব লোকান্তরিত হয়েছেন! হটী এখন প্রবীনা একষষ্টি বছর বয়সের পৌঢ়া! আশ্রমে তিনি কদাচিৎ অধ্যাপনা করেন! সমস্ত দ্বায়িত্ব সতীর্থ রমারঞ্জন ভট্টশালীর! হটীর জীবনে চরম আক্ষেপ সে কাশীধাম বা সোঁয়াই গ্রামে ' ব্রজসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয় ' কে পুনরুজীবিত করতে পারল না শুধু মাত্র অন্ধ কুসংস্কারের জন্য! তথাকথিত কাশীর কোন পরিবার তাদের বাড়ীর বালিকাকে হটীর বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাইলেন না! শুধু মাত্র অন্ধ কুসংস্কার নারীর অক্ষর পরিচয় অকাল বৈধব্যের কারন!
আদি শঙ্করাচার্য ভারতবর্ষে চারটি দিকে চারটি মঠ প্রতিষ্ঠা করেন! উত্তরে বদ্রিকাশ্রমের প্রবেশ দ্বারে যোশীমঠ! দক্ষিনে রামেশ্বরমে শৃঙ্গেরীমঠ!পূর্বে শ্রীক্ষেত্র অর্থাৎ পুরীতে গোবর্ধন মঠ এবং পশ্চিমে দ্বারকায় সারদামঠ! কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে কাশীধামে কোনমঠ প্রতিষ্ঠা করেন নি!এবং শঙ্করাচার্য পুরুষ ও প্রকৃতির সহবস্হানকে অস্বীকার করেছেন! তাঁর কোন মঠেরই নারীশক্তির বিগ্রহ নেই! একমাত্র পুরী ছাড়া! সেখানে সুভদ্রা জগন্নাথ ও বলরামের ভগিনী তদানিন্তন ভারতের সর্বাধিক উপাস্য শিব- পার্বতী ও রাধা-কৃষ্নকে কেন পরিহার করেছিলেন তা আজও অজ্ঞাত! তবে শঙ্করাচার্য অদ্বৈতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে সমগ্র আর্যাবর্তের পন্ডিতদের তর্কযুদ্ধে পরাস্ত করে উপস্হিত হলেন পূর্ব ভারতের গৌড়বঙ্গে! তৎকালীন অপ্রতিদ্বন্দী পন্ডিত কুমারিল ভট্টকে তর্ক- যুদ্ধে আহ্বান করলেন! কুমারিল ভট্ট তাঁর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি শর্ত দিলেন! আচার্য মন্ডন মিশ্রকে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করলে তিনিও পরাজয় স্বীকার করে নেবেন!
শঙ্করাচার্য আচার্য মন্ডন মিশ্রের আশ্রমে উপস্হিত হয়ে তাঁকে তর্কযুদ্ধে আহ্বান করলেন! মন্ডন মিশ্র ছিলেন গৃহী! বিচারক নির্বাচিতা হলেন মন্ডন মিশ্রের স্ত্রী মহাপন্ডিতা উভয়ভারতী! শর্ত হল - শঙ্করাচার্য পরাজিত হলে তিনি সন্ন্যাস ত্যাগ করে গার্হস্হ্য জীবনে প্রবেশ করবেন আর মন্ডন মিশ্র পরাজিত হলে সন্ন্যাস নিয়ে শঙ্করাচার্যের অনুগামী হবেন!
তর্কযুদ্ধে অদ্বৈতবাদ প্রতিষ্ঠিত হল মন্ডন মিশ্র পরাজিত হলেন! শঙ্করাচার্য আসন ত্যাগ করার উপক্রম করতেই উভয়ভারতী বাধা দিয়ে বললেন," আপনি মন্ডন মিশ্রকে পরাজিত করে অর্ধেক জয়ী হয়েছেন! আমি তাঁর অর্ধাঙ্গিনী আমাকে পরাজিত করলে আপনি জয়ী হবেন!"
শঙ্করাচার্য বললেন " তথাস্তু, কিন্তু কোন বিষয় নিয়ে বিতর্ক হবে?"
উভয় ভারতী বললেন," কামশাস্ত্র"
চমকে উঠলেন শঙ্করাচার্য! তিনি তো চির ব্রক্ষ্মচারী তিনি কামশাস্ত্র সম্পর্কে তো সম্পুর্ন অনভিজ্ঞ!
এরপর শঙ্করাচার্যের জীবনীতে কিছু কল্পিত অলৌকিক কাহিনীর সংযোজন ঘটানো হয়েছে!এরপর শঙ্করাচার্য তর্কযুদ্ধ অসমাপ্ত রেখে একমাস সময় চেয়ে নেন এবং অমরুক নামে এক মৃত রাজার শরীরে নিজ আত্মাকে প্রবেশ করিয়ে তাকে পুনরুজীবিত করে রাজপ্রাসাদে প্রত্যাবর্তন করে রাজমহিষীদের সাথে সহবাস করে কামশাস্ত্র বিশারদ হয়ে প্রত্যাবর্তন করলে বিনাযুদ্ধে উভয়ভারতী পরাজয় স্বীকার করে নেন!
(আগামীকাল এই ধারাবাহিকটির 'হটী-পর্ব' শেষ হবে)
Post A Comment: