সজল বোস, সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

করোনা আতঙ্ক কাটার পরেও তার রেশ কতদিন থেকে যাবে কেউ জানি না। কি হবে তাও জানি না।
তবে এর থেকেও ভয়ঙ্কর আক্রমণের মুখে পড়তে পারে পৃথিবীর বেশ কিছু দেশ, শত্রুর আক্রমণ হাজারে বা লক্ষ নয় কোটি কোটি শত্রু।
এই শত্রু আক্রমণ এর পর তার প্রভাব ভয়ঙ্কর হবে।
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
বর্গী এলো দেশে।
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেবো কিসে?
ধান ফুরুল, পান ফুরুল
খাজনার উপায় কী?
আর কটা দিন সবুর কর
রসুন বুনেছি।
 মা-নানি-দাদির মুখে ছেলেবেলায় এই গান শুনতে শুনতে নিশ্চয় অনেকবার ঘুমিয়ে পড়েছ!  কারও কারও নিশ্চয় মনে পড়ছে। না সেই বর্গীর কথা বলছিনা সিরাজদৌলার নানা আলীবর্দী খাঁর আমলে বহিঃশত্রু একদল দস্যু ক্ষেতের পর ক্ষেত গ্রামের পর গ্রাম জ্বলিয়ে খাদ্যশস্য লুঠ করত। যাই হোক এবার আসি মূল কথায়, এরই মাঝে আরেক খারাপ ও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চলেছে দেশ। জানা গিয়েছে বৃহদাকারের পঙ্গপাল হামলা চালাতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে। যার মধ্যে অন্যতম ভারত।
রিপোর্ট বলছে, আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে এই পঙ্গপাল দক্ষিণ এশিয়ার দিকে ধেয়ে আসতে চলেছে। কিছু পশ্চিমী  সংবাদপত্র সূত্রে খবর কেন্দ্রের পক্ষ থেকে *টু ফ্রন্ট ওয়ারের* প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ দ্বিমুখী লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে কেন্দ্র। এক, করোনার মোকাবিলা করা। দুই, পঙ্গপালের হামলায় চাষের ক্ষতি ও পরবর্তীতে খাদ্যসংকট।
সরকারি সূত্রে খবর, একটি পঙ্গপালের দল আফ্রিকা থেকে পঙ্গপাল ইয়েমেন, বাহরিন, কুয়েত, কাতার, ইরান, সৌদি আরব, পাকিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। অপরটি বঙ্গোপসাগর এর দিক থেকে বাংলদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর পূর্ব ও দক্ষিনের রাজ্য গুলিতে আক্রম করতে পারে।  মূলত এই পঙ্গপালের দল পঞ্জাব, হরিয়ানা ও গঙ্গা নদীর অববাহিকার চাষের জমিতে হামলা চালাবে। ফলে খাদ্য সংকটে দেখা দিতে পারে। ভারত হয়ে এই পঙ্গপাল বাংলাদেশের দিকে উড়ে যায়।
মাইলের পর মাইল চাষের জমি ধংস্ব করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এরা। ফলে বেশ আতঙ্কে রয়েছেন চাষীরা।
ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। ৪০ মিলিয়ন পঙ্গপাল একসঙ্গে হামলা চালায় বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। ২.৩ কেজি শষ্য একটি পঙ্গপাল প্রতিদিন শেষ করতে পারে। ফলে পরিণতি কি হতে পারে, তা নিয়ে রীতিমত চিন্তায় কেন্দ্র। এই ৪০ মিলিয়ন পঙ্গপাল ৩৫ হাজার মানুষের খাবার শেষ করতে পারে। বেশ কিছু দেশ পঙ্গপালের সমস্যা মেটাতে 'অর্গানোফসফেট' নামের একটি রাসায়নিক ব্যবহার করে।
সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ায় ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মহামারী আকার নিয়েছে এটা। আর কেনিয়াতে ৭০ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির ৭০ হাজার হেক্টর জমি এখন পঙ্গপালের দখলে। কেনিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, ‘কীটনাশক ছিটিয়ে আমরা এ পর্যন্ত বিশ ঝাঁক পঙ্গপাল মেরেছে,  আরও কোটি কোটি পোকা আসছে।’ জাতিসংঘের মতে, প্রতি পঙ্গপালের ঝাঁকে থাকে ১৫ কোটিরও বেশি পতঙ্গ। একটি ঝাঁক এক বর্গকিলোমিটার এলাকা বা ২৫০টি ফুটবল মাঠের সমান জায়গা দখল করে থাকে।
খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকা চরম হুমকির মুখে। ইথিওপিয়া ও সোমালিয়া থেকে এটা এখন কেনিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম, উগান্ডার উত্তর-পূর্বের ২০০ কিলোমিটার ও দক্ষিণ সুদানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দিকে হানা দিচ্ছে। আফ্রিকার পরিস্থিতি সামাল দিতে ৭ কোটি ডলারের অনুদান চেয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন।আফ্রিকায় এই ভয়াবহ পঙ্গপাল উদ্বেগজনক হারে ফসল ধ্বংস করছে। ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো ব্যাপক আকারে পঙ্গপালের আক্রমণের মুখে পড়ে পাকিস্তান। সম্প্রতি ২০১৯ সালের মার্চে পাকিস্তানে ফের পঙ্গপালের আক্রমণ শুরু হয়। এটি সিন্ধু, দক্ষিণ পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের ৯ লাখ হেক্টর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কোটি কোটি মূল্যের ফসল ও গাছপালা।
ভারত একটি কৃষি প্রধান দেশ ফলে একে করোনার প্রকোপে অর্থনীতি বিপর্যস্ত বেরোজগারের সংখ্যা বাড়ছে, তার উপর দোসর হবে এই কৃষিজীবি মানুষ, আপনি ভাবছেন আপনার কি? খাদ্য সংকট দেখা দেবে পয়সা থাকলেও খাদ্য পাবেন তার গ্যারেন্টি নেই... শুরু হবে কালোবাজারী, অবৈধ মজুদ করার কাজ, শুরু হবে অরাজকতা আর অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু হবে সরকার।
তাই বিপদের আশঙ্কা মাথায় রেখে আগে থেকেই ব্যবস্থা ও এই বহিঃশত্রুর মোকাবিলায় বিজ্ঞানীদের সাহায্য নিয়ে প্রতিহত করতে হবে, আগে থেকে সতর্ক হয়ে থাকতে হবে। আসুন আমরা এই সতর্ক বার্তা ছড়িয়ে দিই।
সরকারের কাছে আর্জি একটু গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নিন।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: