মাহাবুবা লাকি, কবি, লেখক ও প্রকাশক, বাংলাদেশ:

আমরা কেউ কখনো কি ভেবে দেখেছি যে, রক্তপাতহীন, গোলাবারুদ বিহীন  হাজার হাজার সৈন্য ও অস্ত্র ছাড়া তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখব?
সেটাই এখন আমাদের অতিক্রম করতে হচ্ছে।এক অদৃশ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীবের সাথে সারা বিশ্বকে লড়তে হচ্ছে। এত বিদ্যা, এত বুদ্ধি, এত বিজ্ঞানী, এত রসদ, ধন দৌলত, টাকা ক্ষমতা কোন শক্তিই আজ তার সাথে লড়ার ক্ষমতা রাখছে না।
বিনা নোটিশে সে বন্ধ করে দিয়েছে অর্থনীতির চাকা।সমগ্র পৃথিবীকে হুমকি ছাড়া থমকে দিয়েছে। গৃহবন্দী করেছে সৃষ্টির সেরা জীবগুলোকে।পৃথিবী আজ চিন্তায় ভারাক্রান্ত। ভাল নেই সে, ভালো নেই তার বুকে দম্ভভরা পায়ে হেঁটে চলা মানুষগুলো ও। এমন হবে কদিন আগে ও কি আমরা ভেবেছি?
থমকে যাওয়া পৃথিবীর আগামীকাল নিয়ে ভাবতে গিয়ে গাঁ শিউরে উঠছে।
যেসব মহাশক্তিশালি দেশগুলো আছে, যাদের ডজন ডজন ডাক্তার,পাড়ায় পাড়ায় ক্লিনিক ভেন্টিলেটর প্রচুর পি পি কেনার টাকা অনেক তারা ও আজ হতচকিত। হিমসিম খাচ্ছে এ কারনে শক্তিশালী বিশ্ব বলে তাদের কত কি আছে কিন্তু পারছে না কেন করোনার সাথে?
দিনে তাদের ওখানে মৃত্যু হচ্ছে ১৪৮০ জনের ও বেশি।ব্রিটিশরা আরো ৬ মাস লক ডাউন বাড়িয়েছে। ইটালি ও স্পেনে রোজ সাত আটশ লোকা মারা যাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ মৃত ও বিশ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত ধারনা করা হচ্ছে। কারন প্রকৃত মৃত্যুর খবর কোন দেশই দিচ্ছে না। প্রতিদিন হাজার হাজার পরিবার লকডাউনে। অনেকে আইসোলেশনে। এ সংখ্যা যে আরও কত বাড়বে তা ভেবে ভয় হচ্ছে।
কি অদ্ভুত শক্তি এই সামান্য অনুজীবের। সমাজ সভ্যতায় স্বার্থপর লোভী যে অমানুষগুলো কোন কিছুর ধার ও তোয়াক্কা করত না তাদের মনে মৃত্যু ভয় জাগিয়ে দিয়েছে। বিচ্ছিন্ন জীবন যাপনে যারা অভ্যস্ত ছিল মৃত্যু ভয় তাদেরকে মায়ের স্নেহের আঁচলে নিয়ে এসেছে।কেও ভাবছে না পাপ অন্যায় পথে পা বাড়াবে। গোটা পরিবার গুলোকে এক ছাদের নিচে নিয়ে এসেছে।
অর্থনীতির চাকা বন্ধ করে দিয়েছে, সুদের হার কমিয়েছে,ধনী গরীবের ব্যাবধান বুঝিয়ে দিলো, বন্ধ হলো সব অনৈতিক কাজ, মদ জুয়া, শিশা।
প্রতিটি ধর্মের লোক যার যার গডের কাছে প্রে করছে করোনা থেকে মুক্তির জন্য। সবাই বুঝল বিধাতার শক্তির কাছে এতসব প্রযুক্তি মূল্যহীন। এই কঠিন দিন থেকে একমাত্র তিনিই আমাদের রক্ষা করতে পারেন।
বালুকনার একশো ভাগের একভাগ হয়েও সমগ্র পৃথিবীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল সচেতনতা কাকে বলে। এক লহমায় দেখাল শাসককে তার বন্দির প্রতি বিনয়তা। সচেতনতা শেখাল কি করে হাঁচি দিতে হয়, কি করে কাশি দিতে হয়।
যা ১৪০০শ বছর আগে শিখিয়েছিলেন আমাদের নবী করীম (সঃ)।
প্রতিটি প্রাণে হিংসা বিদ্বেষের তীব্রতা দমন হয়েছে।মানুষ  বুঝেছে ক্ষমতা টাকা সব অহেতুক এটা কোন কাজেই আসছে না করোনার সামনে। যেখানে জীবনই থমকে গিয়েছে এই ক্ষুদ্র কণার কাছে।
গতানুগতিক কাজের ভেতরই আমরা সীমাবদ্ধ। সৃষ্টির লগ্ন থেকেই আমরা বিশ্বাস করি এই ধরাধামে যাই ঘটুক তার পেছনে আধ্যাত্মিক কোন কারণ থাকে। সেই একজন উপরওয়ালা যার হাতে সব ভাল মন্দের ধারক ও বাহক নিহিত। তা না হলে কার সাধ্যি ছিল একটি কনার জন্ম দিয়ে সারা পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দেয়।
জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। যে কোন সময় তার মরন ঘটতে পারে। মানুষ ভুলেই গিয়েছিল জন্মিলে মৃত্যুর সাধ তাকে গ্রহণ করতেই হবে।
খোলা চোখে অদেখা এক ভাইরাস--
কি শক্তি তার। সারা দূনীয়াকে অচল অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। ইসলাম ধনীর টাকায় গরীবের হক বাতলে দিয়েছে, করোনা অনায়াসে সে হাতকে গরীবের দিকে প্রসারিত করেছে। চলছে দিন তো ভালোই আসছে যে দিন, সে দিনের কথা ভেবে, সে পরিনতির কথা চিন্তা করে ভয় পাচ্ছি।
বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ। আমরা ভাবতেও পারছি না কি পরিনাম আমাদের। ধনী ও ক্ষমতাধর দেশগুলো যেখানে কিছুই করতে পারছে না। সেখানে গবেষণা ও যন্ত্রপাতিতে অনুন্নত এই দেশ কতদূর এগোবে? যে ভয়াবহ প্রকোপ আকারে আসছে তা থেকে আমরাও বাদ পড়ব না। আগামী দিনগুলির কথা ভেবে সবাই দিশেহারা হচ্ছি। এতদিন যাচ্ছে ভালোই সামনে কি দিন আসছে আল্লাহই ভাল জানেন।
গতকাল সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ তত্ত্ব অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু সংখ্যা এখন আটে। নতুন আক্রান্ত নয়জন। মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সত্তর জন। আক্রান্তদের ভেতর চার জন সুস্থ হয়েছে। সুস্থতার সংখ্যা চৌত্রিশ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো বত্রিশ জন। গতকালের হিসাব এটা।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে আই ই ডি সি আর এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তত্ত্ব জানান।
পৃথিবীর মানচিত্রে ক্ষুদ্র এই দেশটিতে যথেষ্ট পরিমান রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেই। যদি থাকত হয়তো দ্রুত এর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হত এবং প্রতিটি জেলা উপজেলায় এর পরীক্ষা গুলো পর্যবেক্ষণ করা যেত।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সরকার সহ অনেক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। অলরেডি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ক্রমে সব পদক্ষেপ গ্রহনও করেছেন। পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সংঘঠন।
একবার ভেবে দেখুন এই অবস্থায় শুধু নিম্মবিত্ত লোকরাই নয় নিম্ম মধ্যবিত্তরাও বিপাকে পড়েছে। সবাই গরীবদের নিয়ে ব্যস্ত, আমাদের আশেপাশে আমরা যারা মধ্যবিত্ত ও নিম্ম মধ্যবিত্তরা আছি বা আছেন তাদের খবর একবারও কেও নিচ্ছেন না। এই সব মিডিল ক্লাস পরিবারদের ঘরে কোন বাজার সদাই আছে কি না, নাকি মুখ চেপে একবেলা খেয়ে না খেয়ে রাতদিন পার করছে তার খবর অনেকেই জানছেন না।
একবার ভেবে দেখুন নিম্মবিত্তরা ভাতা পাচ্ছেন খাবার পাচ্ছেন আর বড়লোকদের তো একবছর লকডাউন থাকলেও অভাব নেই। কিন্তু দেওয়ালে পিঠটা মধ্যবিত্তদেরই ঠেকেছে।
তাই সরকার যদি রেসনিং ব্যবস্থা করতেন হয়তো কিছুটা পার পাওয়া যেত। আর ত্রান বিতরণে কোন দূর্নীতি হচ্ছে কিনা তা কঠোর ভাবে মনিটরিং করা প্রয়োজন।
পরিশেষে এতটুকুই বলব আপনি আমি একটু সচেতন হলে এই কঠিন সময় থেকে সহজেই মুক্তি পাব। কেবল সরকারের একার পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।আমাদের একটু সচেতনতা বোধই পারে এর থেকে মুক্তি দিতে।
খুব ভয় পাচ্ছি আপনাদের দেখে যে আপনারা লকডাউন মানছেন না। কয়েকটা দিনই তো, একটু ঘরে থাকুন। দমবন্ধ হয়ে আসছে বলে বেড়িয়ে পড়ছেন পাড়া বা মহল্লার চায়ের দোকান ও মোড়ে আড্ডা দিতে। অযথা মাছ তরকারি কেনার অযুহাতে। একদিন বেড়িয়ে একটু বেশি করে বাজার করে নিন। এতদিন তো জীবন স্বাভাবিক ছিল, এখন তো সবাই আমরা কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। এসবই কিন্তু ভয়ের কারণ।আপনাদের সাথে যে ভাইরাসটি ঢুকছে না সে নিশ্চয়তা কিন্তু দিতে পারছেন না।
আসুন আমরা সবাই কটা দিন লকডাউনে থাকি এবং অন্যদের উৎসাহিত করি। কেবল একটু সচেতনতাই পারবে তৃতীয় এই বিশ্বযুদ্ধ থেকে পরিত্রান দিতে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: