দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

নেই সামর্থ্য! কিন্তু তাতে কী? এতটুকু দমবার পাত্র নয় আবুল কাসেম। পেশায় দর্জি। নিজের খেয়ালেই ঘরে থাকা চুন নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই তাঁর। শুধু চুনে তো হবে না। তাই ইঁট কুড়িয়ে ইঁটের গুড়ো করেছেন তিনি। আর এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছে ক্লাস ওয়ানের পড়ুয়া ৮ বছরের মেয়ে নাজমা।

আম্ভূয়া হসপিটাল রোডে চুন আর ইঁটের গুড়ো দিয়ে করোনার ছবি এঁকে নিজের মতো করে মানুষকে সচেতন করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এব্যাপারে অনেকেই বলেছে, এভাবে বনের মোষ তাড়িয়ে কী লাভ? সে কথায় কর্ণপাত করেন বছর চৌঁত্রিশের কাসেম। তিনি বলেন, বিকেলের দিকে রাস্তায় মোড়ে মোড়ে মানুষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। তাদের বার বার সাবধান করেও, কোন লাভ না হওয়ায় এই নতুন পথ বেছে নিলাম। এমনিতেই সংসারে অভাব। বাড়িতে রাখা চুন আর ইঁটের গুড়ো দিয়ে রাস্তায় করোনার ছবি এঁকে মানুষকে সচেতন করছি। কারণ এই লক ডাউন সফল না হলে আমাদের মতো দরিদ্র দেশে আমরা কেউ বাঁচবো না।
 বাড়িতে আব্বা, আম্মু, স্ত্রী আর দুই মেয়ে নিয়ে কাসেমের সংসার। লক ডাউনের পর দর্জির কাজ বন্ধ। নেই বিপিএল কার্ড।  এই অভাবে দুঃস্থ পরিবারকে ১৩ টাকা কেজি চাল এবং ৯ টাকা কেজি গম কিনে কোনরকমে দিন গুজরান। কোন ফ্রী চাল গম পান নি। এসব নিয়ে কোন অভিযোগ বা দোষারোপ নেই তাঁর। কাসেম প্রত্যক্ষভাবে কোন রাজনীতি করেন না। আদ্যোপান্ত সাধারণ একজন ধার্মিক মানুষ।  দিন আনে দিন খায় পরিবার। আব্বা রাজমিস্ত্রীর কাজ করে মাথার উপর একটা ছাদ করে দিতে পেরেছেন। বয়সের ভারে এখন বাড়িতেই থাকেন। দর্জির কাজের উপর নির্ভর তাদের সংসার। এব্যাপারে মুরারই-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিনয় ঘোষকে ফোন করে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা হোম কোয়ারিন্টিন করে এলাকাকে সুরক্ষিত রেখেছি। তবে কাসেমের প্রচেষ্টায় এক অভিনবত্ব আছে। আমি তাঁর এই প্রচেষ্টাকে স্যালুট জানাই। তাঁর যে বিপিএল কার্ড নেই। বা তাঁকে চাল কিনে খেতে হচ্ছে এব্যাপারে খোঁজ নেব। আমি এটা জানতাম না। আমি কাসেমের বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পাঠাচ্ছি। 

বাবা আবির হোসেন সেখ, স্ত্রী জসমিনা বিবি দুজনেই কাসেমের এই কাজে খুশি। মুন্সিয়ানা, ভালো রঙ বা তুলির অভাবে তেমন আকর্ষনীয় ছবি ফুটে ওঠে নি। তবে অভাবের মাঝে কিছু একটা করতে পারার আনন্দে মশগুল এই দুঃস্থ পরিবার।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: