জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

(অংশ এক)

দাবী করা হয়েছে,
রাষ্ট্রপুঞ্জের  মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস, এক সাম্প্রতিক ভাষনে
বিশ্বে মানবিক মূল্যবোধের অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পরিস্থিতিকে
নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় থেকেও বিপদজনক বলে উল্লেখ করেছেন।
---- আসলে কি বলেছেন, সেখানে না গিয়েও, ২০২০ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেষন উদ্বোধন করতে গিয়ে, তিনি বর্তমান বিশ্ব মানবিকতার যে চিত্র দাড় করিয়েছিলেন, সেটি  ছিলো প্রকৃত অর্থেই বিষাদময়।

মহাসচিবের নামে দেওয়া পোষ্টটি
হাতে পরার পর, এই কলম থেকে যে মন্তব্য করেছিলাম, সেটা তাৎক্ষনিক  প্রতিক্রিয়া হলেও, সেই প্রতিক্রিয়াই ছিলো আজকের বিশ্ব সম্পর্কেই  শুধু নয়, ভারতীয়ত জাতীয়তা সম্পর্কে এই কলমের জীবন থেকে পাওয়া
মর্মস্পর্শি অভিজ্ঞতার ফসল।
প্রতিক্রিয়াটি ইংরাজীতে ছিলো.  প্রথমে হুবহু দিয়ে দিলাম। যেহেতু, এই পোস্টিংটি হবে,বর্তমান সিরিজে যে লেখাগুলি আসবে তার, অভিমুখ, সেজন্য মনে করছি,  বাংলা তর্জমাটিও হুবহু তুলে ধরা উচিত হবে।

The English version goes as follows:
"I REPEAT
THE LEVEL OF INDIAN NATIONALISM IS GOING LOW IN EVERY PASSING DAY, WHICH IS HAVING ITS SEVERE REFLECTION,
ON ALL BOURGEOIS PARTIES AND
NOW COMMUNIST PARTIES ARE TOO
AFFECTED NEGATIVELY"

বাংলা তর্জমা হবে নিম্নরুপঃ
" আমি আবারো বলছি,
ভারতীয় জাতীয়তা, চলমান প্রতিটি দিনে ক্রমাগত
নিম্নগামী হচ্ছে,
এই নিম্নগামীতা দেশের প্রতিটি বুর্জোয়া দলের
কার্য্যধারাতেই কেবল প্রতিবিম্বিত হচ্ছে তাই নয়,
কমিউনিষ্ট পার্টীগুলিকেও এক নেতীবাচকতায়
আচ্ছন্ন করছে।"

দুই।

পুর্বে জাতীয়তার উপরে  ৪১ টি অধ্যায়ে, যে আলোচনাগুলি হয়েছে, তাতে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে।সেখানে জাতীয়তার গুনগত অবস্থানের সাথে মানবিকতার অন্তসম্পর্কটি তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে।
----- মানবিকতাকে যদি 'ইলেক্টনিকের' সাথে তুলনা করা হয়, জাতীয়তাকে বুঝতে হবে, অবলম্বন বা মাধ্যমের মতো  'ইলেকট্রিসিটির' মতো। গনতান্ত্রিক অভিমুখ এবং প্রজাতন্ত্রের সাথে জাতীয়তার অন্তসম্পর্কটাই, গনতন্ত্রের মানবিক শ্রোত
---- এই ভাবেই, গনতন্ত্র জাতীয়তা এবং প্রজাতন্ত্রের অন্তসম্পর্ককে, এক উন্নত মানবিক বোধে  মন্ত্রমুগ্ধের মতোই মানুষকে উপর থেকে নিচু পর্য্যন্ত কাঠামোগতভাবে একসুত্রে বেধে রাখে। আর একেই বুঝতে হবে প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ রুপ।
প্রজাতন্ত্রের নিম্নগামীতার অর্থ যে, গনতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতার সর্বোচ্চ ধাপের সাথে,   নিম্নতম ধাপগুলির  সাযুঝ্যতা  হারিয়ে ফেলে, সে কথাও উল্লেখ করেছি।
তিন।

এটাই সম্ভবতঃ বিশ্ব মানবিকতার সব থেকে বড় ট্রেজেডি, মার্ক্সবাদ যখন সামজিক একতায় মানবিক সত্যাকেই
---- গনতন্ত্রের গ্যালভানাইজিং প্রতিরুপ  হিশেবে চিহ্নিত করেছেন এবং সেটাকে সরাসরি সাম্যের সাথে যুক্ত করার কাজটিকে,প্রকৃতির দ্বান্দ্বিক সত্বার সাথে যুক্ত করেই বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ অভিমুখ বা গতি হিসেবে আবিস্কার করলেন,
তখন
---- পুজিতন্ত্র  যেদিন থেকে নিজেকে লোভতন্ত্রে বদলে দিতে চেয়েছে, সেদিন থেকে সমাজ বিজ্ঞানের পূর্বে উল্লেখিত, অন্তসম্পর্কগুলিকে বাতিল করতে গিয়ে, মানবিকতারই চরম বিপদ ডেকে নিয়েছে, তাই প্রতিধ্বনীত হয়েছে,জাতীপুঞ্জের ২০২০ এর প্রথম অধিবেশনের উদ্ভোধনী ভাষনে। স্মরন রাখতে হবে তখনো,  করোনার বিস্ফোরন ঘটে নাই ।
করনোনার পর সাম্প্রতিক মন্তব্যে তিনি যদি উদ্বেগের সাথে  উল্লেখ করে থাকেন ---- বিশ্ব সম্ভবত করোনার কাছে হেরেই যাবে, সেখানেও মার্ক্সের এবং সাম্প্রতিক কালের বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট পদার্থবিদের সেই ভবিষত বানীর দিকেই অঙ্গুলি সংকেত করছে।
---- জাতীয়তার সাথে মানবিকতার সম্পর্কগুলিকে যদি মেনে না চলাহয় বিশ্বকে ধ্বংস করে দেওয়ার দিকেই ঠেলে দেওয়া হবে।

চার। 

যাইহোক, আজকের বিশ্বে মানবিকতার চরম বিপর্য্যয় ঘটছে বলে মেনে নেওয়া হয়, তবে, এটাও মানতে হবে
----- উপর থেকে নিচু পর্য্যন্ত গনতান্ত্রিক সম্পর্কগুলি ভেংগে যাওয়ায়,  যখন  জাতীয়তার নিম্নমুখীনতা, ইতিমধ্যেই  বুর্জোয়া দলগূলীকে অনেকটাই অমানবিক
করে তুলেছে এবং তার প্রভাবে সাম্যবাদী দলগুলিকেও মানবিক প্রশ্নে  নেতিবাচকতার মুখে ঠেলছে,
--- তবে এটা স্বতসিদ্ধ যে, নিচুতলার সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলিও জাতীয়তা এবং মানবিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে
ক্রমে সমাজ ও রাজনীতিতে অপ্রাসংগিক হয়ে পরছে।

এই সুত্রেই,এই কলমের লেখক জাতীপুঞ্জ মহাসচিবের  মানবিকতা সংক্রান্ত মন্তব্যের পৃষ্টভূমীতেই, ভারতীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি কিভাবে
সামাজিক রাজনৈ্তিক পরিপ্রেক্ষিত চ্যুত হয়ে, মানবিক প্রশ্নেই অপ্রাসংগিক
হয়ে পরছে, তা উল্লেখ করে বলেছেনঃ

" FURTHER,
PARALYZING TRADE UNION'S ROLE
DURING 
TWO SUCCESSIVE NATIONAL CRISIS ARISEN
OUT COMMUNAL OFFENSIVE BY THE RULING PARTY
OVER THE MUSLIM MINORITIES IN DELHI
AND ALSO DURING CORONA,
IT SEEMS
ORGANISED TRADE UNION MOVEMENT TOO
HAVE LOST MOST OF EARLIER CREDIT-ABILITY
IT GATHERED" .

বাংলা অনুবাদঃ
" আরো উল্লেখ করতে হয়,
সাম্প্রতিক কালে ভারতীয় সামাজিক-রাজনৈতিক এবং মানবিক
পরিপ্রেক্ষিতে দুটি অতি স্পর্শকাতর বিষয়ে
--- প্রথমতঃ দিল্লীতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর সরকারী
দলের আশীর্বাদপুষ্ট সাম্প্রদায়ীক দাংগা এবং
দ্বিতীয়তঃ 'করোনা' মোকাবিলায় ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলনের
অপ্রাসংগিক হয়ে যাওয়াটা
----  ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলন যে তার অতীত গৌ্রবের
সিংহভাগ খুইয়ে দিয়েছে, তারই প্রতিছবি"

পরের লেখায়, জাতীপুঞ্জের অধিবেশনে মহাসচিত প্রকৃ্ত কি বলেছেন এবং
তার যতটুকু জাতীপুঞ্জের বিবরনী হিসেবে প্রকাশিত হবে সেটা
তুলে ধরার চেষ্টা হবে।
এই সুত্রেই বলার চেষ্টা হবে, শ্রমিকদের শ্রেনীগত উত্তোরনের সংগ্রাম যখন
'লক ডাউন' হয়ে যায়, সেটা কীভাবে সাধারনভাবে, জাতীয় পরিস্থিতিকে
নিজের নিয়ন্ত্রনের বাইরে ছেড়ে দেওয়ার পরিনতি এবং কেনই বা সাধারনভাবে
--- নষ্ট হয়ে যাওয়া সমাজ এবং দেশের জাতীয়তা খন্ড বিখন্ড হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতির ইতিবাচক স্তরে উঠিয়ে আনতে না পারলে
---- শ্রমিক আন্দোলনের অতীত গৌ্রব ফিরে পাওয়াটাও  সম্ভব  হবে
না, সে বিষয়টি বলার চেষ্টা করবো।

এই সুত্রেই আগাম বলে রাখি
---- যদিও এসব লিখে বলা খুবই ঝুকির, তবু এবারের সিরিজে, মূলতঃ
সেই ধারাটিকে উন্মুক্ত করতে যাচ্ছি,
----  কীভাবে বাইরের অমানবিক শ্রোত শ্রমিক তথা সাম্যবাদী আন্দোলনের ভেতরেও ক্রমাগত প্রভাব ফেলেছে। প্রথমে তাত্বিক ধারা ধরে এই অমানবিক প্রবাহ সংগঠনের উপর মারন কামড় বসিয়েছে।  সেই প্রভাবে, যারা ক্রমে সাম্যের সম্পদ হতে পারতো, তাদের অনেকে  ক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এই সুত্রেই, এই কলমের লেখক নিজেই, উল্লেখিত জাতাকলের শিকার হয়ে যাওয়ায়, দেশের শ্রমিক আন্দোলন তথা দুর্গাপুরের যে কী বিপুল ক্ষতি হয়েছে
---- তার ইংগিতো তো কোথায়ো না কোথাও লিখে যেতে হোতোই। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: