জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

জাতীপুঞ্জের প্লাতিনাম জুবলি অধিবেশনে মহাসচিবের ভাষনের গোটা দুয়েক বিন্দু,  করোনা যুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধের দাবীতে মহাসচিবের উদ্যোগের অভিমুখ এবং তার সাথে, সেই সম্মিলিত উদ্যোগ প্রচেষ্ঠা থেকে সরে আসার প্রশ্নে বিশ্ব মিলিটারীতন্ত্রের
প্রতিনিধী হিসেবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অজুহাতগুলিকে যদি একসাথে দেখা যায়,
তবেই করোনাত্তোর কালে বিশ্বদ্বন্দ্ব কোন দিকে মুখ ঘোরাবে তার একটা ইংগিত
পাওয়া যাবে।
পুঁজি-কেন্দ্রিভবনে বিপর্য্যয়কর বিস্ময়কালে, যখন রেনেশার সব অভিমুখকে কার্য্যতঃ নর্দমায় নিক্ষেপ করা হয়েছে, সে কালে সমাজ বিজ্ঞানের নিরখে মুল বিশ্বদ্বন্দ্বটি,পুঁজি ।বনাম মেহনতের (এই বিজ্ঞান অনুযায়ী এখানে মেহনতী  শ্রমের বাহন বা vehicle  বই অন্য কিছু নয়)দ্বন্দ্বে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাথে সাথে মানা হয়েছে, কেন্দ্রিভবনের কারনে, পুঁজির ভেতরকার দ্বন্দ্বের নিয়ম অনুযায়ীই, কেন্দ্রিভবনে পুজির যে সব কেন্দ্র
অধিকতর সুযোগ পায়, সে সব কেন্দ্রের সাথে কমসুযোগ পাওয়া জাতিগুলির দ্বন্দ্ব আজকের কালে তীভ্র হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই দ্বন্দ্বের নিরিখেই ছোট মাঝারী পুঁজি সমুহ নিজের অবস্থান ঠিক করার পথে,  দোলাচলের নিরন্তরতায় আন্দোলিত হতে থাকে।দ্বিতীয় যুদ্ধোত্তোর কালের অভিজ্ঞতাতেই দেখা গেছে, এই কেন্দ্রিভবনের কারনে আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব যখন যেভাবে তীভ্রতা পায়, গরিব দেশগুলির সাথে সাথে কেন্দ্রিভূত পুঁজির নিয়ন্ত্রনাধীন দেশগুলিতে,  জাতীয় আত্মমর্য্যাদা উদ্ধারের সংগ্রাম যেমনভাবে  তীভ্র হয়ে উঠতে থাকে, তেমনভাবেই, মূল দ্বন্দ্ব হিসেবে, পুঁজি এবং মেহনতের দ্বন্দ্বটিও
তীভ্রতা পেতে থাকে।
যদি জাতি সঙ্ঘ মহাসচিবের পূর্বে উল্লেখিতি ভাষন এবং করোনাযুদ্ধে একতাবদ্ধ সর্বোতোমুখী প্রতিরোধ সংক্রান্ত আচরন, তার সাথে বিশ্ব কেন্দ্রিভূত পুঁজির চুড়ামনি হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরনের পেছনকার পরিপ্রেক্ষিত
--- বিপরীত দিকে আমেরিকার অবরোধ নীতি,  পঞ্চাশ  দশকের শেষপ্রান্ত থেকে যে সব দেশ বিপদ গ্রস্থ,  কিংবা সিরিয়ার যুদ্ধকে আরব দেশগুলিতে বিস্তৃত করার চ্যালেঞ্জকে যদি এক বিন্দুতে এনে যখনই বিশ্বযুদ্ধবাজরা বিচার করতে শুরু করবে,তখন সে বিস্ফোরিত চোখে দেখতে পাবে
----করোনাত্তোর বিশ্বে, শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালিন দ্বন্দ্বগুলিকেই তীভ্র করবে তাই নয়, পুঁজির রোবাষ্ট রোবোটাইজেসানের কারনে, মেহনত বনাম পুঁজির দ্বন্দ্বটিও, বিশ্বকে তৃতীয় মহামানবিক সংঘাতের মুখে ঠেলতে থাকবেই।
ক্রমে পরিস্থিতি এই দ্বন্দ্বের উৎস স্থল, চিনের বিরুদ্ধে  আমেরিকার বানিজ্য যুদ্ধ, অন্যদিকে,
---- পঞ্চাশের দশকে খ্রুশ্চভের,  সেই কিউবাকে আমেরিকার ভোগে ছেড়ে দেওয়ার সময় থেকে আমেরিকার অবরোধ নীতির ক্রম বিস্তৃতিতে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন তারা এবং তারকা যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে, সাবেক সোভিয়েতের দেশগুলিকে অপদস্ত করা ইত্যাদি সব দ্বন্দ্বই যে এক হয়ে, সারা বিশ্বকেই রনাঙ্গনে টেনে আনার সম্ভাবনা নির্মান করবে
– সেসব কিছুই,  আগামী দিনের সমাজ বিজ্ঞানের বিবেচনায় আসবেই।
সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্ররা অবগত জনশ্রোতের অভিমুখ,  সাধারনভাবে মানুষ উপর থেকে বুঝতে পাড়েন না, কিন্তু এই বিজ্ঞানের ছাত্ররা কোন ব্যক্তি কিংবা ঘটনার উপর সাধারন মানুষের আবেগের পরিমাপ চিহ্নিত করতে গিয়েই, সাধারনভাবে সামাজিক গতিকেও বুঝতে পারতেন। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের কার্য্যকারন সম্পর্ক যে প্রথমযুদ্ধে, আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত
--- যুদ্ধবিরতি চুক্তিই প্রধান ভূমিকা নিয়েছিলো, সেটা যারা বুঝবেন না, তারা এমন মেনে চলবেন যেন ইতিহাসের নায়ক, নায়িকা কিংবা ভিলেন ইত্যাদিদের আবির্ভাবের সবটাই যেন এসব ব্যক্তির ইচ্ছার অধীন।সাথে সাথে, তারা এটাও বুঝবেন না,  কি করে সোভিয়েত উত্তরকালের নিঃস্পেষনের অর্থনীতি এবং কেন্দ্রিভূত পুজির গা’জোয়ারী নীতিই করোনা উত্তর সম্ভাব্য অর্থনৈ্তিক সংকটের সাতে আমেরিকার সাঁমরিক বাধ্যবাধকতাই, বিশ্বকে তৃ্তীয় যুদ্ধের কিনারায় নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈ্রী করবে।
দুই। 
এই সুত্রেই, রাসিয়া এবং সব জাতীগুলির মধ্যে যেগুলি পূর্বতম সোভিয়েতের অংগরাজ্য গুলিতে,  যোসেফ স্তালিনের প্রতি প্রীতি যে ক্রমেই সিংহচূড়ায় আরোহোন করছে এবং
স্তালিনের প্রতি এই জনসমর্থন বৃদ্ধির সাথে সাথে, সারা বিশ্বেই মেহনতিদের মধ্যে একটা নতুন আবেগ দেখা যাচ্ছে, সেসবের কার্য্যকারন সম্পর্ক যারা চিহ্নিত করতে
পারবেন না
-- নতুন বিশ্বপরিস্থিতিতে সামাজিক দ্বন্দ্বগুলি কেমনভাবে আচরন করবে, সেগুলি সম্পর্কে কোন ধারনাই করতে পারবেন না। কিছুতেই বুঝতে পারবেন না,  রাসিয়া এবং প্রাক্তন সোভিয়েত অন্তর্ভূক্ত জাতিসত্বাগুলির
---- মধ্যে স্তালিনের প্রতি আনুগত্য বেড়ে গিয়ে থাকে, তা যতটুকু পুরানো সম্মান ফিরে পাওয়ার জন্য একজন নতুন হিরো খুজে পাওয়ার আবেগ থেকে উদ্ভুত,  তার কিঞ্চিৎ মাত্রই হবে, তথাকথিত মুক্ত অর্থনীতি থেকে আবার সমাজতন্ত্রে ফিরে যাওয়া কিংবা পুনরায় সোভিয়েতকে ফিরে পাওয়ার জন্য।
---- আবার অল্পবয়সী মেহনতিদের মধ্যে চে-গুয়েভারার সাথে সাথে স্তালিনের প্রতি
নতুন আনুগত্যের পেছনে, রাসিয়া বা সোভিয়েতের প্রাক্তন জাতিগুলির আবেগ থেকে পৃথক। যুব এবং শ্রমিকদের এই আবেগ পুঁজির বিপরীতে দাসত্ব বিরোধী সংগ্রামী অভিমুখ যে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পাওয়ার সুযোগ খুজতে চাইছে, তারই প্রতিধ্বনী। 

তিন। 
ভারতের ইলেট্রনিক মিডিয়া, ইতিমধ্যেই এমন ধারনা নির্মানের চেষ্টা করছেন, যেন  করোনা উত্তরকালটি, বিশ্ব-অর্থনীতি নিরপেক্ষ ভাবেই, নানা কায়দা কানুন করে দেশটাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে। অথচঃ চিন-ভারত-পাকিস্থান সীমান্ত বরাবর আমেরিকান ফোর্স এবং বঙ্গোপসাগর পথে সপ্তম নৌবহরের প্রতিশ্রুতী দেওয়া, আমেরিকায় গিয়ে আমেরিকা বসবাসকারী ভারতীয়দের ভোটের প্রতিশ্রুতি দিয়েও
--- যখন ধমকের সামনে দেশকে অসুবিধায় ফেলে আমেরিকায় করোনা ঔষধি
পাঠাতে হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেনস্থার মধ্যেও যখন সংস্থার পাঠানো করোনা উপকরন তামিলনাদের পথ থেকে নিউইয়র্কে স্থানান্তর করেও মন না পেয়েও  এই
ভয়ংকরতার মধ্যেও  ১২০০ কোটি টাকার মিশাইল সৌদাঁ করেই মনতুষ্ট করতে
হয়,
---- তখন বুঝে নিতে হয়, যদি কউ প্রচার করেন, যেন  করোনা উত্তরকালে, বিশ্ব নিরপেক্ষভাবে ভারতীয় অর্থনীতি এক পা’ এগুতে পারবে, তারা আসলে মেহনতিদের প্রবঞ্চিত করার জন্যেই এসব করা হচ্ছে। সাথে শিক্ষিত মধ্যবিত্তকে বোকা বানানোর চেষ্টা হচ্ছে।
এই সুত্রেই বুঝে নিতে হবে,
বিদ্দমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় আর্থ-রাজনীতিতে,  ক্রমেই দুটি অভিমুখ খুলতে থাকবে।  ইতিমধ্যে জাতীয়-আত্মমর্য্যাদা ধুলায় নেমে যাওয়ায়, সেখানে প্রভূপাদেই নিজেকে খুজে পাওয়ার মধ্যেই যখন রাষ্ট্রীয় নীতি আবর্তিত হতে থাকবে,  তখন  ইতিমধ্যে সামাজিক কাঠামোতে যখন দাসত্ব অনেকটাই পেনিট্রেট করয়েছে, তখন
নিশ্চিতভাবে, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন নতুন করে ট্রেড ইউনিয়ন নীতিকে
বুনিয়াদী প্রতিরোধের অভিমুখে শক্তি সমাবেশের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাইবে।

চার।
জাতীপুঞ্জ মহাসচিবের ভাষনে, গ্লোবালাইজেসনের সংকট এবং সেই সংকটে প্রযুক্তি-সামাজিক সম্পর্কের দ্বন্দ্ব থেকে বেড়িয়ে আসার উপরে অপরিসীম গুরুত্ব আরোপ করেছেন। জাতীপুঞ্জের প্ল্যাটিনাম জয়ন্তির মতো অনুষ্ঠানে যদি গ্লোবালাইজেসনকে
ক্রম নিমর্জমান বলার সাথে সাথে,  প্রযুক্তি ও সামাজিক সম্পর্ককে সন্তুলনে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে বিজ্ঞানীদের ভূমিকায় গুরুত্ব দিয়ে থাকেন এবং করোনা যুদ্ধের
সম্মিলিত উদ্যোগের বিষয়টিকে, সিরিয়া সমেত সব স্থানীয় যুদ্ধাবসানে, যুদ্ধবিরতির প্রস্থাব করে থাকেন
---  তখন  বুঝতে হবে, আজকের বিশ্ব-আর্থ রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে,  করোনার বিরুদ্ধে সম্মিলত যুদ্ধ এবং সাথে সাথে বিশ্ব শান্তিকে একটি সরল রেখায় নিয়ে আসার উদ্যোগকে এক কালগত দায়বদ্ধতা বলেই বিশ্ব সংস্থা মেনেছেন।
উল্লেখিত প্রস্তাবকে যদি সত্য এবং বাস্তবতার প্রতিরুপ
বলে মেনে নেওয়া হয়, তবে এই প্রস্তাবের মধ্যেই একই সাথে
একগুচ্ছ  দ্বন্দ্বের মিমাংসা চেয়েছেন, যেগুলি শুধু দ্বন্দ্বমুলক নয়,
এই দ্বন্দ্বগুলির একটিও নিজে থেকে মিমাংশামুলক নয়, যাকে
 সমাজ বিজ্ঞানে   Irreconcilable conflict  বলে বিবেচিত।

পাঁচ।
 সেই সুত্রেই করোনাত্তোর
কালে বিশ্ব পুজির বিশ্বব্যাপি ধ্বংসাত্মক চেহারায় অর্থণীতির যে বিপর্য্যয় ঘটবে, সেখানে কেন্দ্রিভূত বিশ্বপূজির প্রতিভূ বা সম্রাট হিসেবে আমেরিকার মিলিটারীতন্ত্রের
অবস্থানটি যে শাঁখের করাতের মতো দাঁড়াবে, সেটি না বুঝলে, আজকের বিশ্ব
পরিস্থিতিটাই বোধগম্যতার বাইরে চলে যাবে ।
আমেরিকা মিলিটারী তন্ত্রের উভয় সংকটের যে দুটি কারন
সোভিয়েত ভেঙ্গে যাওয়ার কাল থেকে, ধীরে ধীরে একপ্রান্ত বারুদের স্তুপ নির্মান করেছিলো, অন্যপ্রান্তে যেসব দ্বন্দ্ব প্রতিকুল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নিশ্চুপ বা
Docile ছিলও, সেগুলিও আগ্নেটগিরির সন্ধান পেয়ে ক্রমে তলানী থেকে উপরে
উঠে আসছিলো।  (চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: