স্বপন দাস, প্রবীণ সাংবাদিক, কলকাতা:

করোনা নিয়ে আতঙ্কের মাঝে একটি সত্য প্রতিষ্ঠিত। আমরা মৃত্যুকে বড়ই ভয় পাই। আর এই ভয় পাওয়া থেকেই আমরা এই সময়ে সব কিছুকে ত্যাগ করেছি মন থেকে। ধর্মীয় বিভেদ, রাজনৈতিক মতাদর্শগত ফারাক , সব কিছু এখন হাজার যোজন দূরে। এ শুধু আমাদের দেশ ভারত নয়। সারা বিশ্ব এখন একটি বিষয়ে অন্ততঃ এক জায়গায়। নিজেদের রক্ষার তাগিদে এক জাতি , এক বিশ্বের মতে ভেসে চলেছি।
আমাদের দেশ,১৩০ কোটির দেশ। নানা ভাষা , নানা মত, নানা পরিধানের মাঝে যখনই কোন বিপদ এসেছে , এক সাথে মোকাবিলা করার জন্য তৈরি হয়েছি। সে স্বাধীনতা আন্দোলন হোক বা বহিঃ শত্রুর আক্রমণ। সব ক্ষেত্রেই আমরা সব ভুলে ,কাধে কাঁধ দিয়ে লড়েছি। আর জিতেছি। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সেই জিতটাকে উপভোগ করেছি। এবার এই গভীর সঙ্কটেও আমরা যে সবাই এক এবং অভিন্ন তার প্রমাণ দেবার চেস্টা করছি , যার যার নিজের নিজের মত করে।
১৩০ কোটির দেশে এই মারণ ভাইরাসকে থামানোর জন্য জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ মানুষ লড়াই করছেন , নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে। সে চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্য কর্মী, পুরসভার আধিকারিক থেকে সাফাই কর্মী । সবাই নিজেদের প্রাণকে বাজী রেখে আমাদের নিরপত্তা দিচ্ছেন। প্রশাসন তার মত করে লক্ষণরেখা টেনে আমাদের চারপাশে এক প্রতিরক্ষা বলয় তৈরি করার চেস্টা করেছে। সেটার দিকেও আমাদের সচেতন ভাবে লক্ষ্য রেখে কোথায় থামতে হবে আর কোথায় এগিয়ে যেতে হবে সেই বিসয়টাতেও গন্ডি টানতে হবে।
আজ সমগ্র জাতির সঙ্কট। এই সঙ্কট থেকে রক্ষার চাবিকাঠি আমাদের হাতেই রয়েছে।আর এই সঙ্কটের মুহূর্তে , মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা করতে হবে  ,অই ১ শতাংশের সঙ্গে হাতে হাত ধরে লড়াই করতে হবে আমাদের ৯৯ শতাংশকে। আমার আত্মিয়কে, আমার পরিজনকে নিয়ে যেমন চিন্তা করব।তেমনি চিন্তা করব, আমার বাড়ির পাশে থাকা সেই জেঠিমা বা কাকিমার পরিবার সম্পর্কে, যাদের কোলে পিঠে করে বড় হয়েছি।
এই ভাইরাসের মারণ ক্ষমতা খুব নগণ্য। মাত্র ১.৭ শতাংশ। তবুও আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে কেন? অই ১.৭ শতাংশের মধ্যে হয়ত আমিও চলে যেতে পারি, বা চলে যেতে পারে আমার কোন প্রিয়জন। আমাকে মনে রাখতে হবে , বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেমনটি মেনে চলতে বলছে , তেমনটিই চলব। অন্য কোন কিছুতেই কান দেবনা। আর অহেতুক আতঙ্কের শিকার হব না। মনে রাখতে হবে আরো একটি কথা, আমরা যদি আতঙ্কিত হই, তাহলে ভয় আমাদের মনের ভিতর চেপে বসে আমাদের মানসিক ভাবে দূর্বল করে দেবে।
মনে রাখবেন, আমাদের হাতেই রয়েছে নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধের হাতিয়ার। সেটা শজেই ব্যবহার করব আমরা। আমরাতো জেনেই গিয়েছি যে আমাদের মধ্যে ১০০ জন আক্রান্তের মধ্যে ৯৯ জন সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। তবে হ্যা, আপনি যদি আপনার ভিতরের বাসা বাধা রোগটাকে লুকিয়ে রাখেন , বা আপনার সন্দেহ হচ্ছে  অথচ প্রিয়জন ভেবে , তাকে আড়াল করার চেস্টা করছেন , তাহলে বুঝবেন , পরোক্ষে আপনি সমাজের মৃত্যুদূত হয়ে , সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours