জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

কংগ্রেসের 'সমাজতন্ত্র'কে যদি 'পরমব্রহ্ম' শব্দের সাথে তুলনা করে, সেকালের জাতীয়তার রুপ চিহ্নিত করার  হয়ে থাকে, তবে প্রাসংগিকভাবেই
----- আজকের দিনে যখন আন্তর্জাতীক ক্ষেত্রে  মেহনত এবং পুজির সংঘাতে, পুজি যখন  ক্রমে বেপোরোয়া হয়ে,  ফ্যাসিস্ত স্থরে উঠে এসেছে,  এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি একের পর এক সেই আগুনে ঝাপ দিচ্ছে,
------তখন, তথাকথিত ভারতীয় 'রামরাজ্যে' জাতীয়তা কোন অতলে তলিয়ে যেতে পারে, সে সম্পর্কে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
এই সুত্রেই, ভারতীয় জাতীয়তার পূনঃর্গঠনে, প্রথমে কংগ্রেস দল এবং পরে, 'রাম-রাজ্য' পন্থীরা সব সময়, অনেকটাই সাম্প্রদায়ীক ব্যধীর মতোই, চিনের জুজু দেখিয়ে আভ্যন্তরীন তো বটেই পররাষ্ট্র ও সামরিক নীতি ঠিক করেছে, সেজন্য
---- ভারতীয় জাতীয়তা তথা প্রজাতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা সেই, গ্রামিন বিচ্ছিন্নতার ভাবসত্বার উপর 'বিশ্ব দ্বন্দ্বের' প্রতিরুপের ধারাবাহিকতা আজ যে রুপে বিরাজমান, তাকে উপর থেকে  চাপিয়ে দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই মূল্যাংকন করা প্রয়োজন হবে।
সেখানেও চিন এবং ভারতে নামক দুই দেশের বাস্তবতাকে যখন বিবেচনায় নিয়ে আসা হবে, তখন নিশ্চিতভাবেই দুই পরস্পর বিরোধীতার প্রতিরুপ ফুটে বেরুবে।  ভারতের ক্ষেত্রে, যে জাতীয়তা তখনো নিজেকে নিজেই যখন খুজে না পাওয়া, জাতীর ঘারে বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া ব্যবস্থা তখন ইতিমধ্যেই নিজেতে নিজে অত্মস্ত জাতীর সাথে বিশ্বত্রাসি মিলিটারি ব্যবস্থার পারস্পরিক বন্দ্যোবস্ত।
এই সুত্রেই বুঝে নিতে হবে,
যদিওবা যে অস্ত্রে সোভিয়েত বধ হয়েছে, সেই অস্ত্র ইউররোপ কিংবা চিনের উপরেও প্রয়োগের যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিলো এবং হয়েছে। কিন্তু  ইউরোপ ইতিমধ্যেই, অর্থনীতি পুজিতান্ত্রিক হলেও, যতেষ্ট উন্নত সেখানে চাপিয়ে দেওয়ার অবস্থাই ছিলো না।
--- পূর্বে একটা লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, কোন এক আন্তর্জাতীক সেমিনারে  প্রশ্নটি ইউরোপীয় প্রযুক্তিবিদদের কাছে রাখায় কী জবাব পাওয়া গিয়েছিলো। এই লেখক প্রশ্ন করেছিলেন -, সোভিয়েত পতনে যদি রাজনৈ্তিক আঘাতের সাথে সাথে প্রযুক্তিগত আঘাত গুরুতরভাবে দেখা দিয়ে থাকে, তার পেছনে ছিলো, ইলেক্ট্রনিক শিল্পে মূল উপাদানটিতে প্রযুক্তিগতদিক থেকে  সোভিয়েত অনেক পিছিয়ে পড়েছিলো।
 সেখানে ইউরপিয়ন প্রযুক্তিবিদরা জানিয়েছিলেন,
----- নিশ্চিতভাবে, ইউরোপ প্রযুক্তির দিক থেকে, বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক দিক থেকে { যারা তারাকা যুদ্ধের কথা ঘোষনা করে, সোভীয়েত মনোবল ভেংগে দিয়েছিলো,সেই)  আমেরিকা থেকে অনেক পিছিয়ে। তবে বলিষ্ঠ আত্মপ্রত্যয়ের সাথে জানিয়েছিলেন, তারা এই দুরলতা কাটিয়ে উঠবেন।,
প্রসংগত আবারো জানিয়ে রাখা দরকার। সোভিয়েত পতনের মূল কারন ছিলো,   স্তালীন  অপদস্তের পর, পুজিতন্ত্রের উদোম অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার কারনে এবং সেই অর্ন্তবিরোধী সোভিয়েত জাতীয়তার চেহারাটাই কলংকিত করে দিয়েছিলো।
দুই।

সব মিলিয়ে বুঝতে হবে,
জাতীয়তার উদ্ভব এবং বিকাশে যদি অতীত ভিত্তি হিসেবে কাজ করে
--- তবে তার সমকালীন অবস্থাটি নির্ধারিত হয়, চলমান  দুটি দ্বন্দ্ব কেমনভাবে এই অতীতকে প্রভাবিত করছে এবং সমসাময়ীক কালে তার প্রতিরুপটি কোথায় দাড়ীয়ে। এই দুটি দ্বন্দ্ব হোলঃ
প্রথমতঃ আভ্যন্তরীন সব দ্বন্দ্বের পৌনপনিক প্রতিরুপ।
দ্বিতীয়তঃ বিশ্বদ্বন্দ্ব সমুহ, যেমনভাবে, মেহনত এবং পুঁজির দ্বন্দ্বকে প্রভাবিত করছে তার প্রতিরুপ।
এখানে বিশ্বকে যদি চারটি সেগমেন্টে ভাগ করা হব এবং বিচার করার চেষ্টা হয়
---- কেমনভাবে আমেরিকান বিশ্বায়ন, এই চারটির সেগমেন্টের জাতীয়তাকে প্রভাবিত করেছেত, তবেই ভারতের বিপর্য্যয়কর অবস্থাটি ধরা পরবে।
(ক) প্রথমতঃ প্রথম সেগমেন্ট হিসেবে, হিটলারবাদের উত্তরাধীকারী হিসেবে যে মিলিটারীতন্ত্র এখন নিজেকে বিশ্বের অভিবাবক হিসেবে
নিজেকে ঘোষনা করেছে
---- কেন্দ্রিভূত পুজিতন্ত্রের বিশ্ব চুড়ামনি হিসেবে, তার নীতি কেমনভাবে অন্য তিনটি সেগমেন্টের জাতীয়তাকে প্রভাবিত করছে।
(খ) ইতিমধ্যে পাঠাকরা নিশ্চিত ইংগিতটি চিহ্নিত করেছেন, মিলিটারীতন্ত্র কিছুতেই ইউরোপকে গিলে খেতে পারবে না, যত সময় পর্য্যন্ত তৃ্তীয় বিশ্বের অর্থনীতির বাকিটা গিলে খেতে এসব দেশের জাতীয়তাকেই পঙ্গু করে দিতে না পারবে।
(গ) তৃ্তীয় বিস্বকে আবার কয়েকটি সেগমেন্টে ভাগ করা যাবেঃ
(১) ইতিমধ্যে উন্নত তৃ্তীয় বিশ্বের সদস্য হলেও ইতিমধ্যে উন্নত পুজিতন্ত্রের স্তরে উঠে এসেছে , সেই দেশ অর্থাৎ চিন।
(২)  কিছু দেশ নানা ভাবে নানা পথে জাতীয়তাকে সংহত করে, আত্মসমর্পনের পথকে আটকানোর চেষ্টা করছে। 
(৩) ভারতের মতো কিছু দেশ, যারা একটা সময়ে অর্থনীতির কিছু ভিত্তি নির্মান করেছিলো, বর্তমানে  সেই ভিত্তি ভেংগে দেওয়া হচ্ছে এবং ভারতীয় সামাজিক দ্বন্দ্বের নেতিবাচকতা এমন এক চরম পর্য্যায়ে টেনে নামানো হয়েছে, যেখানে  জাতীয়তাকে  আত্মসমর্পনের প্রস্তুতি চালানো হচ্ছে পুরো দমে
--- সেখানে আধুনিক শ্রমিক শ্রেনীকে জাগ্রত করে  জাতীয়তার পূনঃজাগরন ঘটানো অতি-প্রয়োজনীয় হয়ে দাড়ীয়েছে।

তিন।

জাতীয়তা এবং অর্থনীতির অন্তসম্পর্কের প্রশ্নে
এই 'পরমভ্রহ্মের' ধারনাটিকে ব্যখ্যা করেছিলেন।
প্রয়োগ-শৈলী শিখেছিলাম কমরেড পি রাম মূর্তীর এক ভাষনে। ষাটের দশকে যে সময়ে সি পি আই (এম) সি পি আই থেকে বেড়িয়ে আসছে, সে সময়ে উনি দুর্গাপুরের অশোক এভ্যিনিউতে এক ভাষনে কংগ্রেস দলের সমাজতন্ত্র সম্পর্কে এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন
---- এখনো মনে আছে, বিরাট ঝড়-বৃষ্টির পর সভা শুরু হয়েছিলো। আধঘন্টার মধ্যে এখানে সেখানে জল জমে যাওয়া মাঠ থিক্ থিক্
শ্রমিকে ভরে গিয়েছিলো। তিনি বোঝালেন, কংগ্রেসের সমাজতন্ত্রের
রুপ নেই, আকার নেই শুধু বাক্যচ্ছটা রয়েছে। তিনি বোঝালেন
--- এটা যেন 'পরম ব্রহ্ম' - যার আকার নেই, রুপ নেই, যেন মহাকাশ।

তিনি বোঝালেন
-------,ইউরোপের অর্থব্যবস্তা হিসেবে যখন দাবী করা হয় সেটা 'পুজিতন্ত্র', সেটার অর্থ বোঝা যায়। সোভিয়েত যখন দাবী করেন 'সমাজতন্ত্র', তার অর্থ বোঝা যায়। চিন যখন দাবী করেন উন্নত প্রজাতন্ত্র তার অর্থ বোঝা যায়।
----- তিনি তখন জানতে চাইলেন, ভারতীয় সমাজতন্ত্রটা কী ? তখনো  কিন্তু
সমাজতন্ত্র না থাকলেও, মিশ্র অর্থনীতি ছিলো, আধুনিক শ্রমিক শ্রেনীর আবির্ভাব ঘটছিলো। প্রযুক্তি শ্রমিক সংখ্যায় বিশ্বে অষ্টম।
এই সুত্রেই প্রশ্নটা আসে, আর এস এস এর 'রামরাজ্য' জাতিয়তাবাদের
আর্থ-সামাজিক রুপটা কী হবে?

আগের কোন কোন লেখায়,
জীবন রায় তার সংসদীয় রাজনীতির শেষ ভাষনে যা উল্লেখ করেছিলেন, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছিলো। সেখানে, চিনের আর্থ-সামাজিক সম্পর্ককে ব্যখ্যা করে
চৈনিক জাতীয়তাকে
--- কনফিউসিয়াস, মাও-সে-তুং এবং দেন সিয়াও পিং বোধ সত্বা সমুহের ককটেল হিসেবে ব্যখ্যা করা হয়েছিলো । তিনি একেই চিনের অর্থে আধুনিক জাতীয়তাবাদ হিসেবে বলা হয়েছিলো
তখন তিনি প্রশ্ন তুল্লেন
--- ভারতের ক্ষেত্রে 'রাম রাজ্য' বা 'রামায়নী-মহাভারতীয়তার নামে একটা গালভরা নাম খুজে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর আর্থ-সামাজিক রুপটা কী হবে?
লেখক নিশ্চিত হয়েছেন এসব কিছু আত্মসমর্পনের আত্মসমর্পনের সনদপত্র। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours