দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

ভবঘুরেদের পাশে দাঁড়াল রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ প্রশাসন এবং রামপুরহাট মহকুমা সাংবাদিক। ভবঘুরেদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু নিজেদের নামটা বলতে পারছেন না। আবার কেউ কেউ শুধুমাত্র নিজের নাম বলতে পারছেন, কিন্তু পদবী মনে নেই। রেল চলাচল বন্ধ থাকায় লোকের সাহায্য থেকে তাঁরা বঞ্চিত। তবে ভবঘুরেদের মধ্যে সুকুর সেখ, আনেরা বিবি, সোনামণি মার্ডি সহ মোট ৬৫ জন খুব খুশি এই খাবার পেয়ে।   বৃহস্পতিবার থেকে স্টেশনে থাকা ভবঘুরেদের দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছে রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসন ও সাংবাদিকেরা।  রান্নার পর খাবার পাকিং করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে স্টেশনে ভবঘুরেদের হাতে। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিজে তদারকি করেছেন বার বার।   এই উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছেন মহকুমা শাসক শ্বেতা আগরওয়াল। এই জরুরী অবস্থার মধ্যে দুবেলা পেট পুড়ে খেতে পাওয়ায় খুব খুশি ভবঘুরেরা।
     রবিবার থেকে শুরু হয়েছে সারা দেশে লকডাউন। কয়েক ঘণ্টা শিথিল থাকার পর সোমবার বিকেল থেকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সারা দেশে লকডাউন শুরু হয়েছে। ফলে বন্ধ ট্রেন-বাস চলাচল। এই পরিস্থিতিতে রুটিরুজিতে টান পড়েছে ভবঘুরেদের। যাদের আয় বলতে ট্রেন বাসের যাত্রীদের দেওয়া দু-পয়সা। সেই পয়সা দিয়েই খুন্নিবৃত্তি করেন তারা। কিন্তু রবিবার থেকে সেই আয় টুকুও বন্ধ। ফলে অর্ধাহারে কাটাতে হয়েছে তাদের। তাদের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে সাংবাদিকদের কাছে দুবেলার খাওয়াবার প্রস্তাব দেন রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সৌম্যজিত বড়ুয়া। সেই প্রস্তাবে সাড়া দেন সাংবাদিকরাও। সেই মতো বৃহস্পতিবার মেনুতে ছিল মাংস, ফুলকপি-আলু তরকারি, ডাল, ভাত। রাত্রের মেনুতে ছিল পাঁচ তরকারি, ডাল, ভাত। রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সৌম্যজিত বড়ুয়া বলেন, “কয়েকদিন কাজের সুবাদে স্টেশনে যেতে হয়েছিল। সেখানে ভবঘুরেদের দেখে খুব খারাপ লেগেছিল। তাই তাদের খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিই। ভালো লাগছে সাংবাদিকদের এই কাজে পাশে পেয়েছি”। রামপুরহাট মহকুমার সাংবাদিকরা বলেন, “মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য। আমরা তার উদ্যোগের পাশে থাকতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি। যতদিন লকডাউন চলবে আমরা চালিয়ে যাব। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক প্রথম আমাদের এই প্রস্তাব দেন। আমরা সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে কাজ শুরু করে দিয়েছি”।

তারাপীঠে সাধু সন্ন্যাসী ও ভবঘুরেদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন এলাকার ব্যবসায়ীরা। রবিবার প্রথম খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন লজ ব্যবসায়ী পরিমল প্রামাণিক। এরপর এগিয়ে আসেন অন্যান্য ব্যবসায়ীরা। এদিন প্রায় দেড়শো জনকে খাওয়ানো হয়েছে। মেনুতে ছিল টক, মাছ, সবজি ও ভাত। মাছ দেন তৃণমূলের রামপুরহাট ২ নম্বর ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়। মন্দিরের সেবাইত তারক কুমার বলেন, “এখানে মন্দিরের সেবাইত, ব্যবসায়ী সকলে মিলে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ যাতে অভুক্ত না থাকেন সেটা দেখাই আমাদের উদ্দেশ্য”।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours