জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

যে শিল্পী নিজেই নিজেকে উদ্যেশ্য করে একদিন
বুঝিয়েছিলেন, 
"আমি শিল্পী নই। নাট্যকার বা অন্য যে কোনো আখ্যা লোকে আমাকে দিতে পারে।
তবে আমি মনে করি আমি প্রপাগাণ্ডিস্ট। এটাই আমার মূল পরিচয়।"
--- তাই বুঝেছি, সেই শিল্পীর মুল্যায়ন,
 কোন সোজা কাজ নয়।
 শিল্পপ্রতিভার যখন তুঙ্গে, তখন যাকে  জেলে যেতে হোল,
 যিনি সাম্য এবং
সাম্যবাদী দলে ভরন্ত  থেকেও তিনি নেই
---- সাম্যবাদী আন্দোলনের বিড়ম্বিত ঘটনা
হয়তো ইতিহাসের কারনেই  মৃত্যুকালে 
দলে থাকতে পারলেন না কিন্তু  শিল্প চেতনা এবং প্রপাগান্ডানিষ্ট হিসেবে
নিজেকে দলেই সমর্পিত রাখলেন,
শেষ দিন পর্য্যন্ত -
---- অথচ মানুষ যাকে  কোন দিন
 শিল্পী চেতনার স্বর্ণ সিংহাসন থেকে নিচে নামতে দেন নাই।
হয়তো কোন 'ভূষন পদে' ভূষিত হন নাই, কিন্তু
সংগিত নাটক আকাদমীর সর্বোচ্চ পুরস্কার সমেত
ফিল্ম ফেয়ার সমেত অসংখ্য পুরস্কারে মানুষ আলংকিত করেছেন,
বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন, সাম্যের সাথে ব্যক্তির পরিচিতি
বিপ্লবের প্রতি আনুগত্মে - পদে কিংবা  পুরস্কারে নয়।

মূল্যায়ন বলতে চাই না, এমন ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে খুজে পাওয়া,
 আনন্দ কিংবা  জীবন যন্ত্রনাকে চিহ্নিত করাটা
কোন সরল আয়নায়
 কিছুতেই হৃদয় বৃত্তিতে মেলানো যে  সম্ভব নয়, সেকথা জীবন থেকেই জেনেছি।
 ------ পাঠকরা অবগত, লেখার যোগ্যতা খুবই ক্ষীন ধাড়ায় চ্যুইয়ে পড়লেও
 জীবন রায়, কমেন্টারী বা ধারাবাহিকতা বর্ণনে বিশ্বাসী নয়।
,
 বিপ্লবী শিল্পীর দেওয়া দানকে মাথায় নিয়েই লিখছি। তিনিই শিখিয়েছেন 'বিপ্লবটা'ই' কলা বা বস্তুর সর্বোচ্চ রুপ। সেই বিপ্লবী আয়নাতেই, যতটুকু আমাতে আছে, তা দিয়েই
---- এমন ব্যক্তিত্বকে খুজে পেতে চেষ্টা করছি! গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজোর মতো।

তাই ভূমিকাটাই  একটু দূর থেকে শুরু করতে হচ্ছে আর সেই
যায়গাটাই হয়তো হয়ে উঠবে, কলাকে রুপান্তরকামীতায় উঠিয়ে আনায়
শিল্পীর  প্রতি
-----  সব থেকে সমৃদ্ধ  শ্রদ্ধার্ঘ।আরো  মেনেছি বয়সের ফরাক
 যেহেতু মাত্র দশ বছর, হয়তো  এই দেখাটাওঃ
----      সত্যের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাবে।

অংশ দুইঃ

উৎপল দত্তের শিল্প চেতনা,
কীভাবে প্রথমে সমাজ ও পরে ইতিহাস এবং বিদ্রোহী চেতনায় উঠিয়ে আনে
------ সেটাকে আত্মিক না করতে পারলে, তাকে যেমন চেনা হোল না, যিনি  লিখছেন তারো নিজেকে বুঝা  হয়ে উঠবে না।

 যদি কেউ সেক্সপিয়রের 'ওথেলোতে' ওথেলোর ভূমিকা থেকে হাসির হিন্দী  ছায়াছবি 'গোলমাল' পর্য্যন্ত
------- অনুসন্ধান করেন সর্ব ক্ষেত্রে  খুজে পাবেন, সেই
বিপ্লবী বুদ্ধিসত্বার সহজিয়া, কিন্তু তীখা রুপ। সেকালের অন্য কারুর শিল্পকর্মে  এই অসম সাহসি ক্ষুরধা বুদ্ধিমত্তাকে  খুজে পাওয়া যাবে না। 'বুদ্ধির' সাথে সাহসের যোগসুত্রটাও যে সমাজ বিজ্ঞান বা সংস্কৃতির অভিমুখে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে, সেটা উৎপল যেমন জীবন দিয়েও তুলে ধরেছেন, কদাসচিৎ তা দেখা গেছে, সমকালিন শিল্পচেতনায়।

হয়তো শিল্পগুনের বিদ্রোহী সত্বাকে বিপ্লবী সত্বায় উত্তোরন ঘটে নাই, যেমনটি সুকান্তের কবিতায় পাওয়া গিয়েছিলো,
---- কিন্তু উৎপল দত্ত।  যখন মিনার্ভার মঞ্চে, অংগার কিংবা 'কল্লোল' দেখছেন, একাংগেই শ্রমীকদের প্রতি আনুগত্য, মেহনতের কাছে  আত্মসমর্পনে টেনে নিয়ে যায়, সাম্যবাদী আন্দোলনের সেই গৌ্রব গাঁথা কীভাবে ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়ে মানুষকে চিত্তের গভীরে গিয়ে আন্দোলিত করে, তার বিমূর্ত রুপটির সাথে দর্শক শ্রোতা একাত্ম হয়ে যান। এই সুত্রেই বলে রাখি, কাব্য লেখা কঠিন কাজ, আর কাব্যের জীবন্ত মানবিক রুপান্তরন অনেক অনেক শক্ত কাজ। 

কল্লোল দেখে আসার পর,
সত্যজিৎ যদি বলে থাকেন, এই থিয়েটার উৎপলের পক্ষেই সম্ভব, সেটার একটাই কারন
 মিনার্ভায় যারা কল্লো দেখার সৌভাগ্য হয়েছে তারা মানবেন
-------- কল্লোলে যেন  নৌ বিদ্রোহ, তেলেংগানা এবং কাকদ্বীপের বীরগাথা এবং মুম্বাই ও কোলকাতার মেহনতিদের বীরগাথা যেন একাংগে  একাত্ম হয়ে গিয়েছিলো।।

অংশ তিন।

সেই মূহূর্তটায় যে ক্ষনে দলে ফিরে আসার সম্ভাবনা মুছে গেলো এবং শিল্প চেতনা এবং সেই চেতনাকেই
 বিদ্রোহী শিল্প চেতনায় রুপান্তরনের পথে পা' বাড়ানোর পথটাকেই তাকে
জীবনের একমাত্র অবলম্বন করে নিতে হয়েছিলো
সেই সময়টায়, এক কার্য্যকারন সম্পর্কের  কারনে, দুর্গাপুরে এই লেখকের ইস্পাত নগরীর বাড়ীতে চোখের  সামনে নিদৃষ্ট হয়েছিলো এবং লেখক  নিজেও
সেই যন্ত্রনার ভুক্তভোগী
---- সেকারনেই শিল্পচেতনার যন্ত্রনা লেখকের আয়নায় ধরা পড়ার কিঞ্চিত সুযোগ পেয়েছিলো।
তাই মনে হোল সেই বিষয়ের কার্য্যকরী সম্পর্কটি যদি এই লেখায় প্রতিবিম্বিত হওয়ার  সুযোগ না পায়, তবে এই লেখার কোন যৌক্তিকতা থাকবে না।

আজকের প্রজন্মে  যদি সত্যি সেই সুবুদ্ধি আসে,
কায় মনোবাক্যে ইতিহাসের  অতীত থেকে  কিছু  উপাদান ফিরে পেতে এবং
সেখান থেকে নতুনের  কাব্যিক দিকটির উন্মুক্ত করতে চান
----- তাদেরকে রবীন্দ্রনাথের আত্মসুদ্ধিবোধের পরেই, উৎপলের বিদ্রোহী চেতনার এস্থেটিক সত্ব্বার বিদ্রোহী প্রকাশ ভঙ্গিমাকে ফিরে  পেতে চাইবেন,
সংস্কৃতির কালগত প্রতিরুপের সন্ধানে।
নিজের জীবনেও তো হাটছি আর হাটছি, জীবনের এক একটি বাঁকে পথ হারিয়েছি আবার রাজপথে উঠে এসেছি। সেই উঠা-নামার বিচিত্র পথে
উৎপলের জীবন জিজ্ঞাসাকে মিলিয়ে দেখেছি, ধারনা হয়েছে,
---- বোধ হয় একই বিন্দুতে ইতিহাসের এবং চেতন-শিল্পীর জীবনে এসে মিলেছে, যেখানে লেখক নিজেও শেঁকলে বাধা। কালের গ্রন্থনায়, 'মেহনত'  যদিও বা 
ইতিহাসের নিয়ন্ত্রক,
----- সংগঠন তো বটেই কাব্যিক অর্থেও, আনুষ্ঠানিক স্বিকৃতি পেলেও সাংস্কৃতিক তো বটেই, 'মেহনতের; নিজ সংগঠনেও মেহনতিদের হাতে সুযোগ্য স্থান থেকে  বঞ্চিত হচ্ছে।
এইভাবে  রবীন্দ্রনাথকে যদি  ভারতীয় সত্বার ইতিহাসে আত্মসুদ্ধির
প্রতিবিম্ব মানা যায়, তবে
---- তবে উৎপলকে পাওয়া যাবে কল্লোল যুগে নাট্ট-কলার সর্বোচ্চ বিকাশ এবং প্রস্রবন ধারা হিসেবে । সে ইতিমধ্যে মার্ক্সবাদ এবং বিশ্ব নাট্ট আন্দোলনের নির্যাস, যা সাম্য পর্য্যন্ত পৌছে গিয়েছিলো।

যাইহোক উল্লেখিত
 'শূণ্যতাটাও নির্মিত হচ্ছিলো সেই বিন্দুতে। পরিনামে যে কারনে শ্রমিক আন্দোলন তার পরিনতির পথে এগুতে পারে নাই,
-----একই কারনে এবং পরিনামে  সেই ' কাব্য ' মেহনত বিড়ম্বিত হয়ে, মুখ থুবরে পরলো। উৎপল  উত্তরকালে, সোভিয়েত ভেংগে পড়ার কারনে। আসলে সমাজতন্ত্রকেই তো মানতে হবে মানবিকতার উৎস মুখ। সেই মুখ যদি বন্ধ হয়ে যায়, 
----- মেহনত এবং মেহনতি আন্দোলন যদি সেই পথ উন্মুক্তিতে এগিয়ে আসতে বিলম্ব ঘটায়, কাব্য নিজেও এগুতে পারবে নয়া,  উৎপল উত্তরকালকেও ক্রমাগত বিড়ম্বিত করবে ।
তৃতীয় অংশ।

কাজেই কোন বন্ধু আমার কোন লেখায় যদি উৎপলহীনতায়  আক্ষেপ করে  নব জীবনে নতুন  শিল্প চেতনার দাবী হিসেবে লিখে দেনঃ

""উৎপল দত্তের স্থান পূরণ করা যথেষ্ট কঠিন ।আজকের এই দুর্দিনে ওনার মতো সমাজচেতনা সম্পন্ন দক্ষ সাংস্কৃতিক শিল্পীর বড়ই দরকার ছিল ।"

মেনে চলতে হবে, এই কামনা,
শ্রদ্ধা এবং মনের এক স্বাভাবিক তাড়ানা এবং  নির্জলা সততা থেকেই উৎসারিত।  সাথেই যে উৎপলকে ফিরে পাওয়ার সাধারন আকুলতার প্রতিধ্বনী।

আমরা যারা সাম্যে ছিলাম, আছি থাকবো
------- কিংবা উৎপলেরই প্রতিনিধী হিসেবে সেই ব্যক্তি যিনি এই কলমের লেখক,  দলে না থেকেও দলের প্রতি আনুগত্বকে সম্বল করেই বেঁচে আছি, তাদের কাছে এই ফিরে পাওয়ার  আগ্রহটিকে  সত্য বলে মেনে নিলেও
,----  আগের উল্লেখিত স্থবীরতা এবং উত্তোরনের পথটি, উৎপলের জীবন দর্শন এবং শূণ্যতার বিন্দুটিতেই চিহ্নিত করার চেষ্টাটি উচিত হবে।

তিনি যখন  ইতিমধ্যেই পুজিতন্ত্রের পঁচনের (রেনেসাঁর বিরুদ্ধে পুজিতন্ত্রের বিশ্বাসঘাতকতা)
---- দিকটিকে চিহ্নিত করেফেলেছিলেন, তখন এই বুঝে ফেলার পরিনামটি হয়তো স্পষ্ট ছিলো না কিংবা স্পষ্ট করে দেওয়ার  যে শ্রেণীটির দায় ছিলো,
তাকেই যে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিলও কিংবা যে 'সোনার কাঠির' স্পর্শে
এই জাগরন ঘটতে পারতো, যাদুকরদের চেতনায় তার সন্ধানই  উকি মারার সুযোগ পায় নাই
----- অথবা হয়তো বা কয়েক হাজার বছরের বর্ণাশ্রম আশ্রয়ী এক  দাসত্বের চালচিত্রে ঔপনিবেশিক কালে 'বাবু' সংস্কৃতির চাপে সেই 'মেহনতের' কাব্যিক উৎসমুখ ছাই চাপাই ছিল।
উৎপল যখন বলছেনঃ
"""নিজেকে নিয়ে মেতে আছি বলেই পুঁজিবাদী সমাজে মানুষ আর মনুষ্যপদবাচ্য থাকে না; তার মনুষ্যত্বই হয়ে যায় পঙ্গু ও বিকৃত।” "নির্ভেজাল ভোগবৃত্তির উপাসনাই আজ পুঁজিবাদের একমাত্র ধর্ম।”

কথার ব্যঞ্জনা থেকেই একজন বুঝে নেবে,
-----  পুজিতন্ত্র তারকাছে এখন   অর্থনীতি থেকেও কাব্যিক ও দর্শনের রুপে
প্রতিভাত। তিনি বুঝে গিয়েছেন পুঁজিতন্ত্র জীবনবোধকেই গ্রাস করেছেন
---- " জীবন এক পেয়েলা চা ব্যতিরেখে আর কিছু নয়" কাজেই 'ভোগ কর'
লুটে নাও, চেটে পুটে পান করে ফেলো"
এর সাথেই যুক্ত করুন তার কাব্য রুপের জীবন দর্শনঃ
"আমি শিল্পী নই। নাট্যকার বা অন্য যে কোনো আখ্যা লোকে আমাকে দিতে পারে।
তবে আমি মনে করি আমি প্রপাগাণ্ডিস্ট। এটাই আমার মূল পরিচয়।"

অংশ চার।

এখানেই খুজে পাওয়া যাবে 'উৎপলকে, তার শ্রেনীগত কাব্যিক উত্তোরনকে।
একজন ইতিহাস- দর্শী, মার্ক্সবাদী পন্ডিত প্রলেফিক লেখক নিজের শিল্পগুনকে
কাব্যিক রুপে উঠিয়ে এনে
---- উল্লেখিত দুটি দিককে একাত্ম করে থাকেন, কিন্তু অনুরুপ তালে মেহনতের উন্মোচনে ব্যর্থ মেহনতি আন্দোলনে, সেখানেই উৎপল দত্তের এক প্রান্তে কাব্যিক উত্তোরন অন্যপ্রান্তে তার জীবনের ট্রেজেডি ইতিহাসে লিপীবদ্ধ রয়েছে।

অনেক লেখায় উল্লেখ করেছিঃ
ভারতে নকশাল আন্দোলনের উৎপত্তি এবং অসংখ্য মানুষের প্রাণনাসের প্রধান কারন, শ্রমিক আন্দোলনের,আত্মসর্বস্বতা থেকে মানবিক উত্তোরনের ব্যর্থতা।এর সত্যতা প্রমানিত হবে, করোনা সমেত ইদানিং কালের দুই মানবিক ট্রেজেডিতে কার্যত; এই আন্দোলনের কার্যতঃ নিশ্চুপতা।
---- অনেকবার  উল্লেখ করেছি
১৯৬৯ সালের বর্ধমান দলিল থেকে সরে আসাতে যদি ভারতে শ্রমিকহীন বিপ্লবের ধারনাকে নক্সল আন্দোলন, উৎপলকে সংগঠনগতভাবে সাম্য থেকে
বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
কিন্তু এটাই উৎপল দত্তের বিজয় যাত্রা, এই বিচ্ছিন্নতা সত্বেও, ফিরে আসার পরের দিন থেকেই 'লোভতন্ত্রে' বদলে যাওয়া পুজিতন্ত্র এবং তার ফ্যাসিস্ত প্রতিরুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এক দিনের জন্যেও থেমে থাকে নাই । দলের বাইরে থাকলেও কোন দ্বন্দ্ব দেখা দেয় নাই।

লেখাটা শেষের সময় এসেছে বলে মনে হয়।
ইতিমধ্যে আরো দুটি বিষয়ে দিক চিহ্নিত করে দেওয়া উচিত হবে।
---- প্রথমতঃ শ্রমিক আন্দোলনকে তার কাব্যিক অভিমুখকে উন্মুক্ত করার কাজ থেকে নেতারা পিছিয়ে আসাটাকে নব্য তত্ব  হিসেবে দাড় করানোর চেষ্টা করেন
তবে, স্বভাবিক ভাবেই
--- সেই তত্ব "জীবন এক কাপ চা' বই আর কিছু নয়' তত্ব শ্রমিক আন্দলোনের
তাত্বিক অভিমুখকের যায়গাটি জুরে বসবেই।

তখন সেই আকুলির মূল্য কতটুকু যখন বলা হচ্ছেঃ
"উৎপল দত্তের স্থান পূরণ করা যথেষ্ট কঠিন ।আজকের এই দুর্দিনে ওনার মতো সমাজচেতনা সম্পন্ন দক্ষ সাংস্কৃতিক শিল্পীর বড়ই দরকার ছিল ।" 
-ঁ  এই কলমের লেখক নিশ্চিত, এই আক্ষেপের সাথে বাংলার তো বটেই, ভারতের কলা সচেতন মানুষ, এক বাক্যে  একমত হয়ে যাবেন।
তবু শব্দ চেতনার বিচারে, উল্লেখিত শূণ্যতার কার্য্য-কারন সম্পর্কটিকে  কিংবা একজনের শিল্পীগুনের কালান্তরনের
--- কোন  যুক্তিনিষ্ট মূল্যায়ন সম্ভব হবে না।

অংশ পাচঃ

শিল্পীর  শিল্প  চরিত্রকে
তুলে ধরতে, তাকে যে অনেকেই  নট এবং নাট্টকার চরিত্রতেই সমাপ্তি টেনেছেন, তার জবাব শিল্পী নিজেই তার প্রতিবাদ রেখেছেন। সেখানে যাচ্ছি না। তবে লেখা শেষের পূর্বে, তার শিল্পচেতনার এক কাব্যিক রুপকে রেখে যাওয়া উচিত হবে।
------- আসলে সেই পঞ্চাশের দশকে লিটিল থিয়েটার গ্রুপ মঞ্চ থেকে সেক্সপিয়রের, অথেলোতে অথেলোর অভিনয় থেকে শুরু করে ছায়া ছবিতে যত ভিলেন কিংবা হাসির ভূমিকায়
পাঠ করেছেন, ভালো করে খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, তিনি নিজেকে একজন সাম্যবাদী হিসেবে প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন, সব অভিনয়ই ছিলও তারই প্রতিচ্ছবি।
----- যেন এসব চরিত্র উনার জন্যেই নির্মিত হয়েছিলো।  হিরক রাজার দেশে ও আগন্তুক তো ছিলো এক একটি মাস্টার পিস।আগন্তুকে তার ভূমিকা অন্য কারুর পক্ষে কি সম্ভব ছিলো। উত্তম-সুচিত্রা অভিনিত  সপ্তপদী ছায়া চিত্রে, একটি বিশেষ সিনে অথেলো নাটকে অথেলোর হাতে ডেসডিমোনা হত হচ্ছেন ----------   তখন ওথেলোর একটি লম্বা ডায়ালগ রয়েছে। উত্তমকুমারের লিপ্সে সেই ডাইলগটি সেদিন  সম্ভবতঃ বিশ্বে একমাত্র উৎপল দত্তই করতে পারতেন। সেক্সপীয়রকে উৎপল দত্ত নিজেই, সমাজ চেতনার বাহক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং এই শিরোনামায়, একটা পুস্তকো তিনি লিখেছেন।

প্রশ্ন উঠবে, শিল্প চেতনার সাথে সাম্য চেতনার যোগসুত্রটি কোথায়? এ সম্পর্কে উৎপল দত্ত নিজেই কিছু বলেছেন, সেটা পরেই বলবো। পূর্বে এই যোগসুত্রের তত্বটিকে তুলে ধরা যাক।
-----  সাম্য যদি মানবিকতার পরিচিতির সাথে  যুক্ত থাকে, তবে মানতে হবে,
উৎপল দত্তের আবির্ভাবটাই ছিলো, পঞ্চাশের দশকে ভারতের বিপুল সাম্যবাদী জাগরন এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের স্বর্ণযুগের বা গননাট্ট এবং আই পি টি এ
যুগ। যদি মেনে চলা হয়, উত্তম-সুত্রিত্রা জুটি প্রেমের জুটি - তবু মানতে হবে সেই জুটীর আবির্ভাব সে কালেই সম্ভব ছিল।সে কালটাই এমন ছিলো, যখন মেহনতের ভাব-সংস্কৃতি, মানবিকতা এবং  শিল্পচেতনা অতীতের বুক চিড়ে বিশ্বমানবিকতায় মিলবার সুযোগ পেয়েছিলো। 
একটা কথা , প্রয়োজনের তাগিদেই চোখ বন্ধ করেও
স্বিকার করা উচিত।
নিজেকে নিজের  সীমানায় দাড় করিয়ে যতটুকু  বুঝেছি,
---- হয়তাও কোন দিনই সর্বশক্তি দিয়ে, নাস্তিক হিসেবে ঘোষনায় স্পর্ধা দেখাতে সাহস পায় নাই।
তবু যখন খুজে বেড়াই চিহ্নিত করতে গিয়ে দেখি,
------- গীতার কর্ম-যোগ বা কর্ম-ফল  সংক্রান্ত কিছু ধারনা নিজ অজ্ঞাতেই
ফেড্রিক্সের দ্বন্দ্বতত্ব সম্পর্কীত সেই  সর্বকালের কালান্তর যাত্রী পুস্তকটির
ভূমিকার
প্রতিবাদ্যের সাথে,  মিলে মিশে যেন  কালান্তর যাত্রার মুখে
সেই  মহাজ্ঞানীর কাছা কাছি দাড় করিয়ে দেয়।
উনি আবার নব চেতনায় ফিরে আসবেন কি নয়, তা নির্ভর  করছে,
সেই ঐতিহাসিক ভূমিকায় বর্ণীত, প্রনালী অনুযায়ী,
মেহনতী আন্দোলন থেকে উচ্ছলিত অগ্নিবন্যা অন্যকোন গ্রহে,  সঞ্চালিত করা যাবে । মেহনতীর কর্মযোগ ইতিহাসের খন্ডিত অংশগুলি জোড়া দিয়ে নতুন ইতিহাসের পর দেখাতে পারবে অথবা নয়। (সমাপ্ত)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment: