শ্বেতা ঘোষ, ফিচার রাইটার, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা:

রাজ্যে চুড়ান্ত সতর্কতা মেনে জারি করা হয়েছে লকডাউন। রাজ্য সরকার রাজ্যবাসীর কাছে বারেবারে আবেদন জানাচ্ছে যাতে জনসাধারণ যেন তাঁদের নিজ নিজ ঘরে থাকেন। উদ্দেশ্য একটাই মারন সংক্রমণ করোনা মুক্ত করা আমাদের নিজস্ব পরিবেশ।
কিন্তু কাকর্শ্য পরিবেদনা। কেউ কেউ ধর্তব্যেই আনছেন না এই সরকারি আবেদন। পুরো রবীনহুড মার্কা ডোন্ট কেয়ার আচরন তাঁদের। আর এই ফঁড়েদের আচরণে ভীত গোটা সমাজ। এমনই আতঙ্কের পরিবেশ পরখ করে দুর্গাপুর থেকে এক গৃহবধূ দ্য অফনিউজ কে একটি লিখিত অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা তাঁর পরিচয় প্রকাশ না করলেও লেখাটি হুবহু নিচে তুলে ধরলাম।
"ইস্পাত নগরী দুর্গাপুর, যা পশ্চিম বাংলা তথা পশ্চিম বর্ধমানের এক গুরুত্বপূর্ণ শহর বলে আমরা জানি। সেই শহরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও শূন্য হলেও তার প্রভাব দুর্গাপুরে যে পড়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। করোনা ভাইরাস ঠেকাতে আমাদের রাষ্ট্র/ রাজ্য সরকার যেভাবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আমাদের প্রাণ রক্ষার্থে নেমেছেন তার একটুও দাম দুর্গাপুরবাসী কি দিচ্ছে? দিচ্ছে না বলাটাও যেমন ঠিক হবেনা আবার দিচ্ছে সেটাই বা চারপাশে দেখে কি করে বলি?দুর্গাপুরবাসীর একাংশ অল্প-বিস্তর দায়িত্বপালন করছে। অনেক জায়গায় মানুষ সত্যি বারমুখো হচ্ছেনা। নিত্য প্রয়োজনীয় সেবা যারা আমাদের দেন তাদের ছাড়া বাইরে কাউকেই দেখা যাচ্ছেনা। আবার উল্টো দিকে দুর্দান্ত বেগে বাইক দৌড়াচ্ছে, বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা সাইকেল ছোটাচ্ছে, চলছে ক্রিকেট- ফুটবল। তামাক জাতীয় দ্রব্যের দোকান বন্ধ থাকলেও সেখানে রোজকার আড্ডার কোনো ঘাটতি হয় নি। মুখে মাস্ক এর বদলে রুমাল, ডাস্টার ইত্যাদি দিয়ে আবৃত করেই আড্ডা শুরু। মাঠে বা বিভিন্ন বেনামি ঠেকে এবং নানা ক্লাবে চলছে আড্ডা, নেশা ও বাইকের স্টান্ট শো। জোরে বাইক চালাচ্ছে, অনর্থক ঘুরে বেড়াচ্ছে, উপরন্তু মাতাল হয়ে স্পীডে বাইক চালাচ্ছে, কেউ কেউ আবার পেছন সিটে মেয়ে চাপিয়ে বেলাল্লাপনা শুরু করেছে যা ব্যাখ্যা করার ভাষা আমার নেই। আমি দুর্গাপুরের স্টীল টাউনশিপের বাসিন্দা, যে হারে আমার বাড়ির সামনে দিয়ে বাইক ছুটছে মনে হচ্ছে না যে lockdown চলছে। অত্যন্ত চিন্তার ব্যাপার এই যে, যে ভাবে স্পীডে এরা বাইক চালাচ্ছে ক্রসিং গুলোয়(যেমন আমার বাড়ির সামনে) বা এমনি রাস্তাতেও এরা অ্যাকসিডেন্ট করবে ও অন্য মানুষের ক্ষতি করবে। এই অবস্থায় অন্যরকম বিপদ ঘটলে মানুষ কি করবে? এ তো গেল উঠতি বয়েসের লোকজনের কথা। কিন্তু বয়স্ক মানুষেরও অবদান কম নেই। বসন্তের দুপুরে ছায়ার তলে পাটি বিছিয়ে তাস খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজ্য, দেশ গোটা পৃথিবী উচ্ছন্নে যাক আনন্দের যেন কোনো ত্রুটি না হয়। একজনকে জিজ্ঞেস করলে জানা যায় কি সাংঘাতিক তাদের মনোভাব। যেমন একজন বয়োজেষ্ঠ ব্যক্তির সুন্দর ব্যাখ্যা, " কতদিন আর বাঁচবো, একদিন তো সবাইকেই চলে যেতে হবে, সে করোনা ভাইরাসেই হোক আর যাই হোক তাই যতদিন আছি সখ পূর্ণ করেনি"। এমন অনেক বাড়িতে বহিরাগত আত্মীয় এসে লুকিয়ে আছেন পুলিশের ভয়ে। কারোর বাড়ির ছেলে/মেয়ে/জামাই/বৌমা এসে উঠেছে সুদূর আমেরিকা বা ইতালি বা দুবাই বা সৌদি আরব থেকে বা আমাদের দেশেরই ভিন রাজ্য (মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, উত্তরাখণ্ড, ইত্যাদি) থেকে তাদের বাড়ির লোকজন তাদের বাড়িতে লুকিয়ে রাখছে ও পুলিশ আসলেও সত্য গোপন করছে। এর থেকে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানাও রেহাই পায়েনি। রীতিমত বাড়িতে সৌদি আরব থেকে আগত অতিথিদের বাড়িতে রেখে তারা কাজে আসছে কারখানায়। ঢুকতে না দেওয়া হলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে  কাজের পরিবেশ দূষণ করছে। শুনলাম দুর্গাপুরে বিভিন্ন মার্কেটে ও বড়ো রাস্তার মুখে পুলিশ লাঠিচার্জ করছে কেউ অনর্থক বাইরে ঘুরে বেড়ালে তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। পুলিশের কাছে নিবেদন এই যে বিভিন্ন অলিগলি, পাড়াগুলোয়, মাঠে, ছোটো রাস্তা গুলোতেও যাতে পুলিশ টহল দেয়। প্রসঙ্গত বলি কণিষ্ক মোড়, লিঙ্ক রোড, সেকেন্ডারি মোড়, আকবর রোড, রানাপ্রতাপ, রামকৃষ্ণ এক্সটেনশন সংলগ্ন এলাকায় ও আরো যে সব ছোটো - বড়ো রাস্তার মোড়, গলি, মাঠ আছে সেগুলোতে দয়া করে টহলদারি ব্যবস্থা করুন। সকাল দিকে কম হলেও বেলা বাড়তে লোকজন বেরোচ্ছে। বিকেলে আরো বেরোবে, কাল ও বেরিয়েছিল। জানি, শুধু পুলিশের টহলে বা প্রধানমন্ত্রী - মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তায় দেশের নাগরিক দায়িত্বশীল হবেনা। যতক্ষণ না আমরা নিজেদের সুস্থ রাখার অঙ্গীকারবদ্ধ হবো আমরা এই মারণ করোনা ভাইরাসের থাবা থেকে মুক্তি নেই। বাঁচতে হলে এই মুহুর্তেই নিজেদের সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন।"

কি অদ্ভুত মানসিকতা। এই গৃহবধূর বক্তব্য জেনে একটাই মনে হয়, যাঁরা স্বেচ্ছায় লকডাউন তোয়াক্কা করছেন না তাঁদের উদ্দেশ্য বলি, নাই বা পরোয়া করলেন নিজেকে কিন্তু একটিবার নিজের পরিবারের কথা ভাবুন একটিবার নিজের এলাকার কথা ভাবুন। তাঁরা কিন্তু খুব অসহায় আপনার সহযোগিতা ছাড়া। প্লিজ ঘরে যান প্লিজ।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours