শুভ্রা গুপ্ত, ফিচার রাইটার ও আইনজীবী, বারাসাত, কলকাতা:

বিদ্যাসাগর ও রাজা রামমোহন খামোখাই বাঙালি হিন্দু নারীদের স্বার্থে বিধবা বিবাহ প্রচলন ও সতীদাহ প্রথা বন্ধ করেছিলেন।  তখন যদি তারা জানতেন যে আলো দেখানোর এত বছর পর যেখা‌নে মেয়েরা চাঁদে পাড়ি দিচ্ছে ও আধুনিক মোবাইলে সেলফি তুলছে সারা পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে, তবুও সিঁদুর জনিত কিছু কুসংস্কারে আবদ্ধ হয়ে বিধবাদের প্রতি অবজ্ঞার দৃষ্টি রাখে এখনও, তাহলে হয়তো তারা নিজেরাই নিজেদের নির্বুদ্ধিতার জন্য জ্বলন্ত চিতায় ঝাঁপ দিতে পিছপা হতেন না।

দুর্গাপুজোর সময়ের কথা বলছি। পুরাণ অনুসারে দেবী দুর্গা ঘোর সংসারী, তিনি তার পিতৃগৃহে একবার আসেন সন্তানাদি নিয়ে বরকে ছাড়া এবং মাত্র ছয়দিন বরাদ্দ ছুটি নিয়ে। যাতে দশমীর পরদিনই সে শ্বশুরববাড়ি ফিরে আবারও সেখানকার হাল ধরে এবং পিতৃগৃহের লোকজনও দায়িত্ব খালাস করে ভাবে, বাঁচলাম বাবা আর সম্পত্তি দাবী করার কেউ নেই। আজকাল কিন্তু মেয়েরা বিয়ের পরও ঘনঘন বাপের বাড়ি যাওয়া আসা করে, সম্পত্তিতে ভাগও নেয়,  আর এক মেয়ে হলে তো কথাই নেই, সোনায় সোহাগা।  অথচ পুরোনো ধ্যান ধারণা নিয়ে আজও মেয়ে বউরা বরণডালা সাজিয়ে বরণ করে স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাকার আশীর্বাদ চেয়ে সিঁদুর মাখামাখি করে তাকে বিদায় জানানোর সময় সমাজ বদলের কথা ভুলে মেরে ফুচকা বানিয়ে খেয়ে ফেলে আধুনিক দেখনদারীর ঠেলায়।
কিন্তু, এতো আধুনিকতাতেও বিধবাদের এখনো বরণ করা নিষেধ কেন, আমি বুঝি না? যারা ঈশ্বর মানেন, তার সেবায় নিয়োজিত হতে চান অথচ বাঁধা প্রাপ্ত হন, তেমন পুজোর মানে কি, আমার জানা নেই!!
আমার পরিবারেও কিছু আত্মীয়দের যখন দেখি, সদ্য পতীহারা যদি সিঁদুর খেলার সময় সামনে পড়েন, তখন পাশে আমি দাঁড়িয়ে থাকলে আমাকেও উপেক্ষা করে, পরে আবার সরে গেলে তখন সিঁদুর দিতে আসেন। সেই দেখে তার অবস্থা হয় একবার ভাবুন!! এবং পরে যখন সেই মাতৃস্থানীয়ার মুখ থেকেই বৈধব্য একটি অপরাধ, এভাবে শুনতে হয়, তখন কেমন লাগে!!

যদিও আমি তা দেখে বোঝাই, যে দেখো, আমি তো শাঁখা পলা পরিই না, মাঝে মধ্যে সিঁদুরও না, বরণও করি না, সিঁদুরও খেলি না  ; তো তাতে আমার কি অসুবিধা হল!! আরও বললাম, আজকাল আকছার ডিভোর্স হয়, তারা কি করে!  যে আধুনিক বধু ওয়েস্টার্ন পরলে শাঁখা পলা পরেন না, তখন তাদের এঁয়োপনা কোথায় যায়!! আর সব নিয়ম মেয়েদের জন্য কেন?? ছেলেদের পত্নীবিয়োগ হলে কেন এসব নিয়ম তাদের পালন করতে হয় না?? সংসারের মঙ্গল চিন্তা কেবল স্ত্রীদের কেন??
সাময়িক খুশি তিনি হলেও, কতটা মানতে পারলেন সেটা অবশ্য অজানাই রয়ে গেলো। এগুলো দেখলে, শুনলে সাজগোজ ও উৎসবের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। এটা অবশ্য আমার হয়, সবার হয় কি না জানা নেই!!

আসলেই আমরা সবাই সাজতে ভালোবাসি, নিজেদেরকে যাতে ভালো দেখায় তার জন্য যতটা পারা যায় সবাই সাজিয়ে নিই নিজেকে। কেউ প্রকাশ করি আর কেউ সুপ্ত রাখি বাসনাকে। সাজে ছেলেরাও, কিন্তু সাজসজ্জায় মেয়েদেকেই যেন বেশি মানায়, সে মেয়েই হোক বা বোন, বউ বা মা।  তাই একটু চেষ্টা করলেই তাদের সাজটাকে অপরিবর্তিত না করতে পারি না কি আমরা। চলুন না বদলাই মানসিকতা। বয়েস হলে এমনিতেই শরীরের তালে বদলায় সব, তাই ততদিন নাহয় চলুক সেভাবেই! তাহলে তো আর শাঁখা সিঁদুরের বিভেদটা এত চোখে পড়ে না বা এই নিয়ে ভাবতেও হয় না। বৈষম্যের নিয়ম নাই বা মানলাম, আর যদি বা মানলাম তাহলে সবাই একই পুজোর পূজার্চনায় বাঁধন কেন!

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours