দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

দিল্লির বর্তমান অবস্থা নিয়ে নিজের উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করলেন অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন  "আমি খুবই উদ্বিগ্ন যে এমন একটা জায়গা যেটা দেশের রাজধানী এবং কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত। সেখানে যদি সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হয়।  সেই অত্যাচার পুলিশ আঁটকাতে হয় পারেনা না নইলে প্রয়োজনীয় চেষ্টা করেন না।  এটা যদি ঠিক হয় তাহলে চিন্তা করার খুবই কারণ আছে। এটা তো ঠিকই যারা মারা খাচ্ছেন, যাঁরা মারা যাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে মুসলমান ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অনেক বেশি এবং ভারতবর্ষ একটা ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। সেখানে হিন্দু-মুসলমানে পার্থক্য করলে তো চলবে না। অতএব এটা যদি ঘটতে থাকে তাহলে গর্বিত ভারতীয় নাগরিক হিসেবে নিশ্চয়ই চিন্তা করার নিশ্চয় বড় রকমের কারণ আছে ।"

দিল্লির সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন,"পুলিশ যদি হাতে না পাওয়া যায়, কিছু একটা গণ্ডগোল হচ্ছে, কি কারণে হচ্ছে, দোষটা কোথায় হচ্ছে - সরকারি চেষ্টা অভাবের জন্য অথবা পুলিশের অক্ষমতার কোন বড় রকমের কারণে সেগুলো আমাদের বিচার করতে হবে। আমি নানা বিষয়ে বিচারে বিশ্বাসী কিন্তু বিচার না করেই জবাব দেওয়ায় বিশ্বাসী নই।"

দিল্লীর পরিস্থিতি রাজনৈতিক চাপানউতোর নিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, এখানে কোন বচসা আছে বলে মনে করি না। যেখানে সামাজিক যুদ্ধ চলছে, সেখানে শান্ত করাটা খুবই প্রয়োজন আছে। কিন্তু তার সঙ্গে এক  অন্য দলের সমালোচনা করলে তাদের সুবিধা হবে না, এটা মনে করার আমি কারণ দেখি না। বাংলাদেশী ছাত্রী আফসারা মিমকে ভারত ছাড়ার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে তিন মিনিট খবরের কাগজে এই বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। তবে কাগজে যা পড়লাম তিনি কোন প্রতিবাদী  মিছিলের ছবি ইন্টারনেটে লাগিয়েছিলেন। সেটা দেশ থেকে দূর করে দেওয়ার পক্ষে কতটা শক্তিশালী যুক্তি, সেটা বিচার করা কঠিন। এখনও অব্দি যা দেখেছি, তাতে আমি খুঁজে পাই নি, কি কারণ থাকতে পারে যার জন্য তাকে দেশ থেকে বিতাড়ণ করা হবে। কোনরকম কারণ নেই, এটা আমি বলছি না। কিন্তু সে কারণগুলো কি জানতে আমি উদগ্রীব।   দেশের গনতান্ত্রিক অবস্থা নিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন " ভারতে গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগের কারণ তো সত্যি আছেই।  গণতন্ত্রে  দুটো দিক থাকে।  লোকেদের খোলাখুলি আলোচনার সুযোগ। যেটাকে জন স্টুয়ার্ট মিল বলেছেন, ডেমোক্র্যাসি ইজ গভর্ণমেন্ট বাই ডিসকাসন। এই আলোচনা যদি বন্ধ হয়। তাকে কেউ যদি মতবিরোধ প্রকাশ করেন তাকে যদি রাজদ্রোহ বলে চাপা দেওয়া হয় তাহলে নিশ্চয়ই ডেমোক্রেসির একটা ঘাটতি পড়ছে। মনে করার কারণ আছে। অন্য দিকটা নির্বাচন, সেই নির্বাচনে আর্থিক যে ব্যবধান নানা দলের মধ্যে সেটা কতটা ডেমোক্রেসির পক্ষে ক্ষতিকর সেটা নিয়ে চিন্তা করার কারণ আছে। এগুলো সব চিন্তার কথা। সরকারের সঙ্গে যে বিষয়ে দ্বিমত আছে, সেগুলো আলোচনায় বাধা আছে কিনা। নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমতলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় কিনা?  এর উত্তরগুলো আমি জানতে চাই।  আমি এমন বলছিনা যে ডেমোক্রেসি যায় যায় করছে। বলছি না ডেমোক্রাসির স্বপক্ষে যুদ্ধ করে জেতার সম্ভাবনা নেই। স্বম্ভাবনা খুবই আছে।"
দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরুলি ধরকে সরানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এই নিয়ে তো আলোচনা হচ্ছে। যাকে সরানো হয়েছে তাকে আমি চিনি এবং কি কারণে ঘটেছে এটা নিয়ে একটা বড় প্রশ্ন উঠতে পারে। কেন তাকে সরানো হলো যখন তিনি বিচার করে জনগণকে সাহায্যের চেষ্টা করছেন সেই সময় তাকে সরানো হলো। এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে কিন্তু তার জবাব টা কি সেটা বিচার না করে তার উত্তর আমি দিতে পারবো এরকমটা আমি বলতে পারব না।"

এদিন নবনীতা দেব সেনের স্মৃতি স্মরণে শান্তিনিকেতনে প্রতীচী ট্রাস্ট ও ইনস্টিটিউট ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কলকাতার যৌথ উদ্যোগে 'ভারতের মেয়েরাঃ আজকের চলচিত্র, আজকের করণীয়' শীর্ষক আলোচনায় যোগ দেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours