শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

পাকিস্তান একটি অদ্ভূত দেশ। নামটি আরো বেশি বিচিত্র।  তাদের দাবী ইংরজি অক্ষর অনুযায়ী নাকি পাকিস্তান গড়া হয়েছে। এমন আজগুবি দাবীর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। ইংরেজি  'এ' থাকলেও আফগানিস্তান নেই। পাকিস্তান লিখতে ইংরেজি "বি' অক্ষর অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু বেলুচিস্তান দখল করেছিলো। এবং বারো শ মাইল দুরের একটি  অঞ্চল বাংলাকে সংযুক্ত করেছিলো। অবশ্য বাংলার এ অংশ কায়মনে পাকিস্তান চেয়েছিলো ; এমন কি লাহোর প্রস্তাবও একজন বাঙালির।
পাকিস্তান লিখে নিজেদের মুসলমান  "পাক" বলে জাহির করলো। যদিও পাকিস্তানে রয়ে গেলো, অনেক অমুসলিম। উল্লেখ্য সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতীতত্ত্বের ভিত্তিত্বে বিভক্ত  পাকিস্তানের দৃষ্টিতে  ভারত ও হিন্দু দুটোই  'নাপাক"!  যদিও ভারতে রয়ে গেলো কোটি কোটি মুসলমান। তারা নিজেদের পাক- ইস্তান ঘোষনা করলেও, 'পবিত্র '  আরবী ভাষায় পাকিস্তান শব্দটি লেখা যায় না। কেন না, আরবীতে "প" উচ্চারিত হয় এমন  অক্ষর  নেই। তাই পাকিস্তানকে আরবীতে হয়, বাকিস্তান বলতে হবে, না  হয় ফাঁকিস্তান, অথবা অন্য কিছু৷

পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের দুজন  সাংসদের বিতর্ক শুনলাম। একজন,  রানা সানাউল্লা খান,পাঞ্জাবের সাবেক আইনমন্ত্রী এবং বর্তমান সাংসদ। আরেকজন, শাহরীয়ার খান আফ্রীদি। সাংসদ ও মিনিষ্টার অব স্টেট ফর ইন্টেরিয়র। তারা তাদের বিতর্ক ও  বক্তব্য এমন পর্যায়ে নিয়ে গেলেন, যা দেখে ও শুনে আমাদের দেশের পাড়া -গাঁয়ের মহিলাদের ঝগড়ার কথা মনে হলো। পাড়া-গাঁয়ে  মহিলারা ঝগড়া বাধলে  সাধারণত  বলে থাকে, "তর মুখে পুকা পরুক"  ' তর মাতায় ঠাডা পরবো" "আল্লার গজব পরুক" "আল্লায় বিচার করবো" প্রভৃতি।

আমরা ছোট বেলায় কখনো কখনো  এমন কথা বলতাম প্রাইমারি স্কুলের খেলার মাঠে, খেলার মাঝে ঝগড়া লাগলে। হাডুডু বা  গোল্লাছুট খেলায় কেউ দম ছেড়ে দিয়ে আবার দম নিয়ে অস্বীকার করলে৷ বা দাঁড়িয়াবান্দা  খেলায় হাত ছুঁইলে তা এক পক্ষ স্বীকার না করলে,  আমরা ওরকম বলতাম যদি ঝগড়াটা একটু বড় হয়ে গেলে। বা খেলাটা যদি ভন্ডুল হয়ে যেতো।
পাঞ্জাবের সাবেক আইন মন্ত্রী রানা সানা উল্লা খানের বিরুদ্ধে "মাদক মাফিয়া " গীরী'র  অভিযোগ আনা হয়েছে। আইন আদালত তো বটেই বিষয়টি সংসদে পর্যন্ত উঠেছে। তুমুল বিতর্ক  চলছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে পাকিস্তানের সংসদ উত্তপ্ত। অভিযুক্ত সাংসদ রানা সানাউল্লার দাবী,  ইমরান খানের  সরকার তাকে ফাসিয়ে দিতেই, তার উপর মাদকের অভিযোগে মামলা করেছে।
 অন্য দিকে পাকিস্তানের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সাংসদ ও মন্ত্রী শাহরীয়ার খান আফ্রিদি দাবী করেছেন, অভিযুক্ত সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী  একজন ড্রাগ মাফিয়া।  তিনি বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে চাইছেন বিভিন্ন কৌশলে। কিন্তু কোন কাজ হবে না। সরকার কোন ড্রাগ ডিলারের সাথে কম্প্রোমাইজে যাবে না। তা সে জনপ্রতিনিধি হোক বা অন্য কেউ। এমন কথা সংসদে হয়, হতে পারে তা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু আমার কাছে যা অস্বাভাবিক এবং হাস্যকর মনে হয়েছে তা হলো, বারবার পরস্পরের প্রতি অভিসম্পাত দেয়া ও গজব কামনা করা। অভিযুক্ত সাংসদ রানা সানা উল্লা এ বিষয়ে আরো দো কদম আগে নিকলা। তিনি বলেছেন, এই মামলা দেয়ার কারনে, আল্লাহ যেন  প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও মন্ত্রী শাহরীয়ার আফ্রিদির কপালে, মরার সময় কালেমা নসীব না হয়! সংসদে তার হাতে অধিকাংশ সময়  আবার পকেট কোরআন থাকে। তা থেকে উদ্ধৃতিও দেন। আমরা বাংলাদেশের  সাবেক প্রেসিডেন্ট বি চৌধুরীকেও জাতীয়  প্রেসক্লাবে কোরআন হাতে দেখেছি। যদিও,  তার নিজ দলের ( বিএনপি) লোকেরাই তাকে শারীরীক লাঞ্ছিত ও আক্রমন করেছিলো। আবার বাংলাদেশে মানবতা বিরোধী ও  যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজা প্রাপ্ত সাবেক সাংসদ, জামায়াত নেতা  দেলোয়ার হোসেন সাইদীকেও আমরা দেখতাম আদালতে আসা যাওয়ার সময় হাতে কেরআন রাখতেন!

পাকিস্তানি সাংসদ শাহরীয়ার খান আফ্রিদি ও কম যান না।  ফাইল হাতে  সংসদে আসার কারনে, রানা সানা উল্লাকে উপহাস করে বলেন, যাক  এবার অন্তত কোরআন হাতে না নিয়ে এসে ফাইল হাতে এসেছেন৷
মাদক মাফিয়া হিসেবে অভিযুক্ত, রানা সানা উল্লা সংসদে চিৎকার করে শাহরীয়ারের উদ্দেশ্যে বলেন, আসুন আমরা, আল্লাহর নামে শপথ করি, আমাদের  মধ্যে  যে মিথ্যা বলছে আল্লাহ যেন আমাদের উপর এখনই গজব নাজিল করেন। শাহরীয়ার আফ্রিদি পাল্টা জবাবে বলেন, ইধার উধার বাত না করে আদালতে আসুন, আদালতই ফয়সলা করে দেবে৷ এবং তিনিও বলেন, আমিও যদি ভুল করে থাকি আল্লা যেন আমার উপরও গজব নাজিল করে।
২০২০ সালে কোন  রাষ্ট্রের একটি জাতীয় সংসদে আলোচনায় যখন  নির্বাচিত  সুট টাই পরা সংসদেরা এমন আত্মপ্রবঞ্চিত ও ধর্মান্ধর মত কথা বলতে  পারে তা ভাবতেও অবাক লাগে। যখন কেউ এমন চরম ভাববাদী, ফালতু বাক্য ব্যাবহার করে তখন সহজেই অনুমান করা যায় তাদের আকল কোন পর্যায়ে আছে৷  এমন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত তর্ক বিতর্ক কেবল পাকিস্তানের মত সংসদেই সম্ভব। এমন শিশুসূলভ তর্ক এখন বাংলাদেশের কোন কিন্ডারগার্টেনের খেলার মাঠেও হয় কি না সন্দেহ। পাকিস্তান সংসদ সদস্যরা  সংসদ সদস্যের মত আচরন  করুক। নিদেন পক্ষে সাবালকের মানুষের মত হোক তাদের তর্ক বিতর্ক। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours