শুভ্রা গুপ্ত, ফিচার রাইটার ও আইনজীবী, বারাসাত, কলকাতা:

বিবাহ এক সামাজিক বন্ধন, বেশ কিছু রীতিনীতি মেনেই বিয়ে বা বিবাহ নামক অনুষ্ঠান প্রচলিত ছিল। ভিন্ন দেশে ভিন্ন মতে, ভিন্ন বয়েসে, ভিন্ন সময় মেনেই বিয়ে দেওয়া হত নারী পুরুষের। এই নিয়ে অনেক সংস্কার বা কুসংস্কারও আছে। ধীরে ধীরে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মধ্যে দিয়ে আইনের প্রবর্তন করা হয়।
বর্তমানে সামাজিক নিয়মাবলী মানলেও আইনসিদ্ধ বিবাহই সমাজে স্বীকৃত।

তবে আজ কেবল সাধারণ স্বাভাবিক বিবাহ নিয়ে কথা বলাটা উদ্দেশ্য নয়। আমরা আজ আলোচনা করতে চাই বিভিন্ন অসম বিবাহ নিয়ে, যা সমাজের আইন দ্বারা রদ করা সত্ত্বেও এখনও কিছু পিছিয়ে পড়া মানুষজন অশিক্ষা, কুশিক্ষা বা সামাজিক, রাজনৈতিক চাপের মুখে কিছু অসম বিয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ সফল কেউ অসফল। তবুও লুকিয়ে চলছে সওব। তারা না মানে আইন, না মানে ভদ্রতা।  যেমন :- বাল্যবিবাহ, নাবালিকার বিবাহ, বুড়ো বরের সাথে অল্পবয়সী মেয়ের বিবাহ ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো সবই হয় জোরপূর্বক।

পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস বলে আমাদের সমাজ একসময়ে মাতৃতান্ত্রিক ছিল। যেখানে মহিলা দ্বারাই সৃষ্ট হত সমাজ, যেহেতু নারীরই একমাত্র ক্ষমতা হল সন্তান ধারণ ও তার জন্ম দেওয়ার। বিবাহের কোনো রীতি ছিল না, নারী ও পুরুষ সবাই ছিল বহুগামী। কিন্তু সমাজে যে নারী সর্বময় নেতৃত্ব দিতেন, তিনিই নিজেই ঠিক করতেন যে তার সন্তানের পিতা কে হবে। তার চাহিদা ছিল সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষকে বেছে নেওয়া, তবেই সবচেয়ে ভালো ও উৎকৃষ্ট অপত্যের জন্ম দেওয়া যাবে পৃথিবীর বুকে টিকে থাকা ও অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য। সবটাই আজও পশুপাখিদের মতই "অস্তিত্বের জন্য টিকে থাকার লড়াই"। ভালোবাসা, প্রেম, যৌনতা সকই একপ্রকার স্বার্থ।

যাইহোক, যা বলছিলাম যে সমাজ ছিল নারীতান্ত্রিক, নারীর কাজ ছিল, সন্তান জন্ম দেওয়া, লালন পালন করা, রান্না করা, ফসলের বীজ রোপন করা, অর্থনৈতিক বিষয়ে বা বৈষয়িক বিষয়ের খেয়াল রাখা; অর্থাৎ সব কোমল কাজ। আর পুরুষের কাজ ছিল শক্তি প্রয়োগের যেমন, শিকার করা, পাথর বয়ে আনা, খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা ও হিসাবে মত যে সকল কাজে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়, সেই ধরনের কাজ করা। পৃথিবীর প্রথম শ্রমিক বা লেবার হল পুরুষ।

এইভাবে চলছিল সবই, তারপর পুরুষ যেদিন বুঝলো যে সব শক্তির অধিকারী তারাই আর মেয়েরা শক্তিতে তাদের চেয়ে দূর্বল এবং আরও কিছু পারিপার্শ্বিক কারণ ছিল সবটুকু না হয় নাই বললাম, যার ফলে তারা একসময় শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নারীকে পরাজিত ও বন্দী করে। ধীরে ধীরে মাতৃতন্ত্রের অবসান হয় আর গড়ে ওঠে পুরুষতন্ত্র। যদিও এখনও কিছু কিছু যায়গায় ও প্রজাতিতে নারীতন্ত্র দেখা যায়, যেমন :- মোসুও জাতি, চাম জাতিতে, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ইত্যাদিতে। এই সবেই কিন্তু শুনতে খারাপ লাগলেও যৌনতা ছিল মূল বিষয়। এরপরই বন্ধ হয় নারীর বহুগামীতা। কিন্তু পুরুষ হয় ব্যাভিচারী। সমাজে সুস্থতা আনতে, ব্যাভিচার বন্ধ করতে, হত্যা ও রোগ দূরীকরণের জন্য প্রচলন হয় বিবাহ বন্ধনের। কিন্তু ভোগী পুরুষকে আটকাবে কে! তাই পুরুষ তার নিজের মত করে নারী ভোগের নিয়মাবলীর প্রবর্তন করে ফেলে। আমি কোনো জাতিকে আলাদা করতে চাই না, কারণ তার ব্যাখ্যা দিতে গেলে পাতার পর পাতা ফুরিয়ে যাবে, তবু লেখা শেষ হবে না।

এরপর দেখা যায় পুরুষরা মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ করে, ফলে গৃহকাজ ছাড়া নারী বাইরের জগতে নিষিদ্ধ। নারী যাতে আর কখনও পুরুষকে দমিয়ে না কর্তৃত্ব হাতে পায় তার সবরকম প্রচেষ্টা পুরুষ চালাতে থাকে। বাল্য বিবাহ, অর্থনৈতিক দূর্বলতার সুযোগ, জোড়পূর্বক বিয়ে, দেবদাসী নর্তকী বাইজি পতিতার সৃষ্টি, এক পুরুষের বহুবিবাহ, বিধবাদের উপর অত্যাচার আরও অনেককিছু। যার অনেকটাই অনেকে আলোচনা করেছেন। তাই গভীরতায় যাচ্ছি না। এখন এভাবে দেখা যায় যে সবই হল কামনার প্রকাশ স্বরূপ আর তারপরই হয়ে যায় নিয়ম। মুলত নিজ প্রতিভূ রেখে যাওয়াই হওয়া উচিত ছিল বিবাহের মূল ধর্ম।

বর্তমানে নারীশিক্ষার উন্নতি হওয়ায় ও সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যেমে কিন্তু কিছু মহান শিক্ষিত পুরুষদের হাত ধরেই নারীরা আশার আলো দেখেছেন। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে আগে নারীরা স্বাধীন হয়েছেন, পূর্বের দেশগুলিতে ধীরে ধীরে নারীরা স্বাধীনতা পেয়েছেন, কিন্ত এখনও অন্ধকার সবজায়গার কাটেনি। আইন প্রবর্তিত হয়েছে তবুও কিছু জায়গায় জোরপূর্বক, রাজনৈতিক ও সামাজিক জোড়ে অসম বিবাহ চলেই চলেছে। বন্ধ হয়নি, বদলায়নি কিছুই।

এবার বলি, বাল্য বিবাহে মেয়েদের শারীরিক গঠন পূর্ণতা পায় না, ফলে যৌনজীবন হয় দূর্বিষহ আর এর ফলে যে সন্তান জন্মায় তারা হয় দূর্বল, এমনকি দেখা যায় বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু হয়। ফলে সন্তানের ভবিষ্যৎ হয় অসুন্দর ব্যতিক্রম ছাড়া। যারা নিজ পরিবারে বিয়ে করেন, বা বুড়োরা যখন কমবয়েসী মেয়ে বিয়ে করেন তারা হয়তো জানেন না যে এই বিয়ের ফলে যে সন্তান জন্মায় তাদের ডিএনএ সমস্যা হয় এবং বেশিরভাগ সন্তান হয় অসুস্থ ও অটিস্টিক।
ফলে, কেবলমাত্র স্বার্থ চরিতার্থ ছাড়া এইধরণের বিয়েতে কে কি ভালো পেতে পারেন জানি না, তাই একে সামাজিক  ব্যাধি বলেই আমি মনে করি।

আসুন এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আশেপাশে সচেতনতা গড়ে তুলি, গড়ে তুলি সুস্থ পরিবেশ।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours