সজল বোস, সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

আমাদের সময়কালে ছোট বেলা থেকে গান শোনার বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা থাকলেও  মাঝে মাঝে কিছু শিল্পীর সাথে পরিচয় হয়েছিলো মামা আর বাবার সৌখিন গ্রামোফোন রেকর্ড এর সৌজন্যে। মামার ব্যবসা আর বাবার সৌখিনতার সিম্বোলিক হিসাবে সেগুলো আশির দশকে প্রায় অচল হয়ে আসছে, বাজরে তখন টেপ রেকর্ডার আর ক্যাসেট সংগীত জগতে থাবা বসিয়ে ফেলেছে। গান ভালবাসেনা এমন বাঙ্গালী হিজ মাস্টার্স ভয়েস' বা এইচ এম ভির নাম জানেনা এমন সংখ্যা খুব কম। আর সেই সময়ের  রেকর্ড প্লেয়ার কিছু সংগ্রহে ছিলো।
এবার আসল বিষয় শুরু হলো এখান থেকে একটা সিম্বল দেখতাম গান শুনছে কুকুর আর মনে কৌতুহল হতো তাহলে কি গান কি শারমেয়দের জন্য? পরবর্তী সময়ে সেই একই চিহ্ন hmv এর ক্যাসেট আর তার ছবি থাকত, বিষয়টা কৌতুহল বাড়াতে থাকে কিন্তু অন্য লোগোর মাঝে এটা বড়ই আকর্ষণীয়। সেদিন থেকেই অনুসন্ধান এর নেপথ্যের কাহিনীটা কি? না নিছক কোন মজা নাকি কোন বাণিজ্যিক ভাবনা?
 'হিজ মাস্টার্স ভয়েস' বা এইচ এম ভির লংপ্লেয়িং রেকর্ডের লোগোটি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। লোগোটিতে একটি ডিস্কগ্রামোফোনের সামনে বসে সংগীত শ্রবনরত কুকুরটিকে নিশ্চিতভাবেই মনে আছে।
এবার আসি এই লোগোর বিষয়ে আসল তথ্য। মনিবের ভীষণ আদরের কুকুরটি একটি মিক্সড পেরিয়ার গোত্রের! ওর নাম ছিলো 'নিপার'। মনিবের মার্ক ব্যারাউ, তাঁর ভাই ফ্রানসিস আর নিপারকে নিয়ে তাদের সংসার। মার্ক ভালো গান করতেন  আর ফ্রানসিস ছিলেন চিত্রশিল্পী। সেই সময় সিলিন্ডার গ্রামোফোনের যুগ।
তাই মার্ক তাঁর গানের বা কন্ঠস্বরের একটি রেকর্ড তৈরী করিয়েছিলেন।
দুর্ভাগ্যের বিষয় মার্ক অল্প কিছুদিনের মধ্যে মারা যায়।
 তাঁর প্রিয় 'নিপারকে' রেখে যান ভাই ফ্রানসিসের কাছে।  কিন্তু মার্কের মৃত্যুকে নিপার মেনে নিতে পারছিল না।
একাকী নিপার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে সবসময়েই ঘরের একটা কোনে মনমরা হয়ে শুয়ে থাকতো। এমন ভাবে কাটলো কিছু দিন।
একদিন ফ্রানসিস মার্কের রেখে যাওয়া তাঁর কন্ঠস্বরের রেকর্ডটা ধুলো ঝেড়ে সিলিন্ডার গ্রামোফোনের উপর চাপিয়ে বাজিয়ে শুনছিল।
প্রায় আধমরা নিপার তার মনিবের কন্ঠস্বর শুনে ছুটে এসে একেবারে চোঙ এর সামনে বসে সেই কন্ঠস্বর শুনছিল।
বিষয়টি ফ্রানসিস কে খুব স্পর্শ করলো।
ফ্রানসিস নিজেই চিত্র শিল্পী তাই সে ঐ দৃশ্যটি অঙ্কিত করে ফেলল ক্যানভাসে।
এর কয়েকদিন পর নিপার মরে গেলো।
১৮৯০ সালে লন্ডনে গ্রামোফোন কোম্পানি তাদের কোম্পানির জন্য একটি লোগো আহ্বান করে বিজ্ঞাপন দেয়। ফ্রানসিস যথারীতি নিপার আর তার ভাইয়ের গ্রামোফোনের চিত্রটি বিবেচনার জন্য পাঠালেন।
কোম্পানির একজন ডাইরেক্টর ফ্রানসিসের কুকুরের গান শোনার ছবি দেখে ছবিটির মর্মার্থ জানতে চাইলেন।
ফ্রানসিসের মুখে ছবিটির সমস্ত কাহিনী শুনে ঐ পরিচালকের হৃদয়কেও স্পর্শ করলো।
ব্যাস, ফ্রানসিসের আঁকা সেই ছবি  গ্রামোফোন কোম্পানি ১০০পাউন্ডে কিনে নিলেন এবং লোগো হিসাবে গ্রহণ করলেন আর কোম্পানির নামটিও নিপারের অসাধারণ ভালবাসাকে সম্মান দিতে পাল্টে রাখা হলো 'হিজ মাস্টার্স ভয়েস'।
এমন এক মর্মস্পর্শী কাহিনী সকলের কাছে অজানা থাকলেও সারা বিশ্ব জুড়ে এইচ এম ভি বা হিজ মাস্টার্স ভয়েস' আজও সঙ্গীত জগতের সাথে জড়িত একটি উজ্জ্বল নাম।
আশাকরি অন্য ধরনের এই গল্প পাঠকের মনে সুখানুভূতি আনবে আর আমার মতো যারা এই লোগোর কাহিনী খুঁজছিলেন তাঁদের খোঁজ শেষ হলো নিশ্চয়?

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours