শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

ধর্মান্ধতা মানুষকে ধর্মের নামে যে কোন অপরাধ করাতে পারে। ধর্মান্ধ মানুষ, তার মতের- পথের অপছন্দের ব্যাক্তিকে খুন করে ফেলতে পারে। অপছন্দের ব্যাক্তির আবাসস্থল জ্বালিয়ে দিতে পারে। দেশান্তরিতও করে, ইতিহাসে এমন নজির অনেক।
ধর্মান্ধতা রোগে আক্রান্ত  হলে, সনাতন ধর্মাবলম্বী সংসার বিরাগী সাধুও হর হর মহাদেব আওয়াজ  তুলে কোন, অসনাতনিকে খুন করার জন্য তেড়ে আসতে পারে। তার ভাষায় তার চিন্তায় একটি খুন, একটি যুদ্ধকে পবিত্র মনে হতে পারে।  তা যতই  অন্যায় ও পৈচাশিক হোক না কেন!
আবার অষ্টম  শতকে একজন ইসলাম ধর্মাবলম্বী ব্যাক্তি, রাজ্য -রানী -সন্তান ছেড়ে এসে সূফী  হয়ে যান।  তাকে দরবেশ বলে এক নামে চিনতো মুসলিমরা। এখনো চেনে।  সেই তিনিই আবার  আল্লাহু আকবার বলে "জিহাদে" অংশ নেন এবং মৃত্যু বরণ করেন। ইসলাম ধর্মের অভিধান অনুযায়ী তিনি "শহীদ"। সেই দরবেশ কেবল সংসার বিরাগী ছিলেন না। তিনি রাজ্য ছেড়েও চলে এসেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধে অংশ নিলেন! কেন? তার মনে হয়েছে এটা পবিত্র কাজ।

 ধর্মান্ধতা এমনই। অন্য সম্প্রদায় তো  দুরের কথা। ধর্মান্ধতায় নিমজ্জিত হলে, স্বধর্মের মানুষকেও খুন করতে পারে। নিয়ম নীতির এদিক সেদিক হওয়ার কারনে। পত্রিকায় দেখেছি, সৌদী আরবে মদীনায়, শ্রেফ নবীর প্রতি দরুদ পরার কথা স্বীকার করার "অপরাধে" ছয় বছরের একটি  শিশুকে  হত্যা করেছে একজন ড্রাইভার; তাও আবার শিশুটির মায়ের সামনেই!

একজন মানুষ  যখন ধর্মান্ধ হয়। তখন সে আর তার নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিবেচনা করে অগ্রসর হয় না। সে সুযোগও থাকে না।কেন না, মাথা ও মগজ তার হলেও নিয়ন্ত্রণ করে অন্য ব্যাক্তি ও গোষ্ঠী। ইউরোপে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে খৃষ্টান সম্প্রদায় শত শত বছর যুদ্ধ করেছে নিজেদের মধ্যেই। অবশ্য পরে, তাদের বোধদয় হয়েছে। রাষ্ট্র  থেকে ধর্মকে পৃথক করে ফেলে। তারা রাষ্ট্র ও ধর্মের সংযুক্তির কুফলটা বুঝতে পেরেছিলো। তাই তারা ধর্মবিশ্বাসকে রাখে ব্যাক্তগত পর্যায়ে। পরে, তারা এক সময় রেনেসাঁস এসেছিলো, শিল্প ও বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকে পরে। নিজেরা বদলে যায়, বদলে ফেলে  পৃথিবীটাকেও।

মানুষ কেবল ধর্মীয় কারনেই ভয়ংকর হয়ে উঠে না। জাতীয়তাবাদ, বা অন্য যে কোন মতবাদে বিশ্বাসী হয়েও খুন করতে পারে। বা তার চেয়েও ভয়ংকর অপরাধ করতে পারে। ইতিহাসের পাতায় তার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।
পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী
খান খুন হয় আততয়ীর হাতে। কেন?  কি কারনে? তিনি তো একটি  সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া "পাক'  ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো না, অমুসলিমদের পক্ষ নেয়ার৷ যা, নথুরাম গডসে, গান্ধীজির বেলায় বিপরীত দাবি তুলে ছিলো। লিয়াকত আলী খান হত্যার তদন্ত রিপোর্ট  আজো সামনে আসেনি। আমরা সত্যটা জানতে পারিনি। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করে তারই সম্প্রদায় ও দেশের একজন। তার শাস্তি হয়েছে যদিও।
ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে তার পুত্র রাজীব গান্ধীকেও। যে ভয়ে  কিছু দিন ক্ষমতার কুসরিতে সরাসরি বসেনি নেহেরু- গান্ধী পরিবার।
নথুরাম গডসে ভারতের জাতির জনক মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধীকে ( মহাত্মা গান্ধী) খুন করেছিলেন। সে স্বেচ্ছায়,ধরা দেয় এবং আদালতে তার বিচার হয়েছিলো। পাকিস্তানের লিয়াকত আলী খানের আততয়ীর মত উধাও ও খুন হয়নি। আজো ভারতের রাজনীতিতে নথুরাম নিয়মিত চর্চা হয়৷ এমন কি গতকাল রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও নথুরাম একই মতবাদে বিশ্বাসী। বলার অপেক্ষা রাখে না এসব রাজনৈতিক বক্তব্য। রাহুল ও কংগ্রেসকেও মাঝে  মাঝে তার প্রতিপক্ষ দলের লোকজন পাকিস্তান পন্থী বলে অভিযোগ করে থাকে। এটাও রাজনৈতিক বক্তব্য।
শোনা যাচ্ছে নথুরাম গডসের নামে মন্দির নির্মিত হবে। হিন্দু মহাসভা তা করার চেষ্টা করছে। এর আগে বিজেপি শাসিত রাজ্যে নথুরাম গডসের নামে মন্দির তৈরীর অনুমতি মিলেনি। এবার হবে কি না, কে জানে। তবে মধ্যপ্রদেশ এবার কংগ্রেস শাসন করছে। যদি মধ্যপ্রদেশে নথুরাম গডসের মন্দির তৈরীর অনুমতি মিলে যায়। তবে তা হবে এক  খুনির রাজ্যে আর এক খুনির মন্দির।

 কেন না, কংগ্রেসের বর্তামান মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথকে ১৯৮৪ সালে শিখ গণহত্যার জন্য  মাস্টারমাইন্ডদের একজন মনে করা হয়। ভারতের  সাবেক  প্রধানমন্ত্রী  ইন্দারা গান্ধী  তার দেহরক্ষী দ্বারা খুন হলে। হাজার হাজার শিখ সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করা হয়েছিলো। কেন না, তার সেই খুনি দেহরক্ষী ছিলো, একজন শিখ। আর শিখদের  গনহত্যা সংগঠিত হওয়ার পর ভারতীয় সংসদে দাড়িয়ে কেউ একজন বলে ছিলেন, "বড় গাছ মাটিতে পরলে একটু ঝাঁকি লাগেই!"

 ধর্মান্ধতার মত, জাতীয়তাবাদ, ব্যাক্তি পুঁজা, দলান্ধতাও বিপদজনক।  নথুরাম ভিনায়ক গডসে ১৯৪৮ সালে ৩০ জুন নয়াদিল্লীতে খুব কাছ থেকে মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী কে (মহাত্মা গান্ধী)  পরপর তিনবার গুলি করে খুন করে। তার অভিযোগ মোহন দাস  করম চাঁদ গান্ধী ভারত ভাগের জন্য দায়ী। এবং ভারত ভাগের পরও তিনি মুসলিমদের ফেভার করে চলেছেন। ঠিক ইসরাইলী  প্রধানমন্ত্রী কে হত্যা করে একজন ইহুদী এমনই অভিযোগ করেছিলো। তিনি নাকি ফিলিস্তিনীদের ফেভার করছিলেন ইহুদীদের প্রধানমন্ত্রী হয়ে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours