প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

নির্বাণ প্রাপ্ত হয়েছেন বুদ্ধদেব ; এবার উপলব্ধি প্রকাশের উপযুক্ত আধার সন্ধান করলেন।  কিন্তু গুরু আলার কালাম সাতদিন পূর্বে প্রয়াত। তিনি তো উচ্চকোটিতে জন্ম নিয়েছিলেন, তাই ধর্ম প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা শ্রবণ করলে অনায়াসেই মর্ম অনুধাবন করতে পারতেন। তবে যে নিষ্কলুষ রাম পুত্র উদক, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও পণ্ডিত ব্যক্তি। কিন্থ হায়!  চলে গেছেন প্রকৃতির কোলঘেঁষেই৷ স্মরণ করলেন পঞ্চশিষ্য কথা ; বুদ্ধগয়া থেকে ১৪৪ মাইল দূরে বেনারসের নিকট সারনাথে অবস্থান করছেন তাঁরা। বন্ধু আহ্বানে বিহ্বল এবং সমীহ জাগানো ভাব প্রকাশে আগলে নিলেন আলোর পথের আধার। আত্মজ্ঞানের এক গভীর উপলব্ধির স্তরে প্রথমটি হলো "ধর্ম চক্র প্রবর্তন সূত্র " এবং দ্বিতীয়টি ঠিক তার পাঁচ দিন পরে দেওয়া "অনাত্মলক্ষণ সূত্র "।

বললেন, যিনি জগৎ সম্বন্ধে নিষ্পৃহ , তাঁর ক্ষেত্রে সেই চরম পন্থা অবলম্বন করার প্রয়োজন নেই। ইন্দিয়সুখজনিত কামনা  তো নীচ, অমার্জিত, হীন ও নিষ্ফল। অপরটি কৃচ্ছ্রসাধনের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত এবং অতি পীড়াদায়ক, হীন ও নিষ্ফল। এই দুই পন্থা পরিহার করলে  অন্তর্দৃষ্টি এবং জ্ঞান উন্মেষকারী মধ্যম পন্থাটি প্রশান্তি, চৈতন্য, পরিপূর্ণ দীপ্তি এবং শান্তি প্রদান করে। এটি হলো সেই সুবিখ্যাত অষ্টাঙ্গিকমার্গ। সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সঙ্কল্প, সম্যক বাক,সম্যক কর্মান্ত, সম্যক আজীবিকা, সম্যক ব্যায়াম সম্যক স্মৃতি ও সম্যক সমাধি। বললেন আরো কিছু কথা;" রূপম "অনাত্তা, " বেদনা " অনাত্তা, সন্ন" অনাত্তা "সমখার" অনাত্তা, "বিজ্ঞান " অনাত্তা।
যা ক্ষণস্থায়ী তা দুঃখ স্বরূপ৷ যা অনিত্য, তা পরিবর্তনশীল; চিন্তা করতে হবে, "এটি আমার নয়, এই আমি নই, এই আমার চিরন্তন রূপ নয়। " একজন মানুষের অনাসক্তি গড়ে উঠলেই সে হয়ে উঠবে মুক্ত৷ জাগতিক আসক্তি মানুষকে বদ্ধ করে। "নির্বাণলাভ হলে এই জ্ঞান জন্মাবে যে, " আমি মুক্ত "। কঠোরতা পালন নয়, মধ্যম পন্থাই মূল কথা। বোধশক্তির অন্তর্নিহিত প্রকৃত সত্য উপলব্ধির জন্য সঠিক পথের সন্ধান প্রয়োজন। লৌকিক দৃষ্টিতে দেখলে জীবন দুঃময় ; আদর্শ দৃষ্টিতে দেখলে জীবন আনন্দস্বরূপ। এক ক্ষুদ্র বদ্ধ জীবরূপে জীবনধারণ করাই হলো দুঃখ ; এই  পৃথক সহানুভূতি হলো চাপ ও উৎপীড়নের কেন্দ্রবিন্দু।  এই বিশাল জগৎ স্বরূপত সচ্চিদানন্দ।

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, বুদ্ধ  কর্মযোগকে  শিক্ষা কার্যে পরিণত করেছেন। বুদ্ধ ছাড়া অন্যান্য মহাপুরুষগণ সকলেই বাহ্য প্রেরণার বশে নিঃস্বার্থ কর্মে প্রবৃত্ত হয়েছেন। তিনি আচরণে সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত অভিসন্ধি বর্জিত ছিলেন। তিনিই আদর্শ কর্মযোগী।  হৃদয় ও মস্তিষ্কের অপূর্ব সমাবেশে তিনি অতুলনীয় বিকশিত আত্মশক্তির শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। তিনি একজন মহান সংস্কারক। " যিনি অর্থ, যশ,বা অন্য কোন অভিসন্ধি ব্যতীত কর্ম করেন, তিনিই সর্বাপেক্ষা ভালো কর্ম করেন; মানুষ যখন এরূপ কর্ম করতে সমর্থ হবে, তখন সেও একজন বুদ্ধ হয়ে যাবে এবং তার ভিতর থেকে এরূপ কর্মশক্তি উৎসারিত হবে, যা জগতের রূপ পরিবর্তিত করে ফেলবে।এরূপ ব্যক্তিই কর্মযোগের চরম আদর্শের দৃষ্টান্ত।" (সমাপ্ত)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours