আহসান হাবিব, লেখক, বাংলাদেশ:
যদি বলি পৃথিবীটা কেন সুন্দর, আমি বলবো শিল্পের জন্য। এ এমন এক নির্মাণ যার ভেতর দিয়ে গেলে মানুষ বদলে যায়, বদলে যায় উৎকর্ষের পরিমাপে। প্রকৃতি এক স্বয়ম্ভু শিল্প, মানুষ সৃজন করে তার মত করে অন্য শিল্প।
যখন আমরা এই পৃথিবীর দিকে তাকাই, তার সবকিছুতে মুগ্ধ হই । মাটি থেকে উত্থিত উদ্ভিদ, যাবতীয় গাছপালা, তাদের বিচিত্র রঙ, বিন্যাস দেখি, মন আনন্দে ভরে ওঠে । যখন তাদের খুব কাছে যাই, তাদের সজ্জা দেখি, বিস্মিত হই, যখন তাদের শরীর ছুঁয়ে দেখি, একটা অনির্বচনীয় অনুভুতি গ্রাস করে । সজীবতা এবং চঞ্চলতা তাদের শরীর ফুঁড়ে বের হয়ে আসে । বিষাদিত মনও তাদের সাহচর্যে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে । আমরা যখন এই প্রকৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ফুলের দিকে তাকাই, আমরা আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়ি । তাদের ভেতর থেকে ছুটে আসা সৌরভ যে সুখানুভূতির জন্ম দেয়, তুলনা তার নাই । যখন খুব কাছাকাহি যাই, ছুঁয়ে দেখি তাদের শরীর, আমাদের মনে শিহরণ জাগে । প্রতিটি ফুলের রঙ একটি থেকে আলাদা । তাদের আকার, ফুটে থাকা ঢং বিচিত্র । তাদের ঘিরে গুজরনশীল ভ্রমর,প্রজাপতি আমাদের মনকে আকৃষ্ট করে চুম্বকিয় টানে । এইসব উদ্ভিদ থেকে ঝুলতে থাকা ফল, তাদের স্বাদ আমাদের চকিতে প্রাণময় করে তোলে । আমরা অনুভব করতে থাকি এক অনাবিল সজীবতা ।
এইসব পৃথিবীর বাগানগুলিতে যে পাখিরা বাস করে, তাদের দিকে তাকিয়েও আমাদের আনন্দের শেষ নেই । কণ্ঠে বিচিত্র গান, তাদের উড়ে চলার ভঙ্গি, তাদের বাসা বানানোর কৌশল আমাদের মুগ্ধ করে । যখন তারা দল বেঁধে আকাশে উড়ে, তৈরি করে অননুকরণীয় ছবি, দেখে আমরা চোখ ফেরাতে পারিনা । যখন তারা নেমে আসে মাটিতে, বসে বিশাল প্রান্তরে, সেই রুপ অপরুপ । আকাশের দিকে তাকিয়েও আমাদের বিস্ময়ের শেষ নেই । নীল রঙের বিশাল শামিয়ানা, বুকে তার ফুটে থাকা অসংখ্য তারা আমাদের দৃষ্টিকে বিবস করে দেয় । যখন একটি পূর্ণ যৌবনবতী চাঁদ থেকে ছুটে আসে আলো, সাজায় পৃথিবীকে, এক রহস্যময় আনন্দে আমাদের মন ভরে ওঠে । আমরা এই আলোর নাম দিয়েছি জ্যোৎস্না কিংবা জোছনা । আবার এই আকাশ যাদের উপস্থিতিতে কালো হয়ে উঠে, আমরা তাদের নাম দিয়েছি মেঘ । যখন তারা নেমে আসে জল হয়ে, আমরা বলেছি তাকে বৃষ্টি । এই বৃষ্টির দিকে আমরা যখন তাকাই, আমাদের সমগ্র মন নেচে ওঠে শিশুর আনন্দে । যখন উদোম শরীরে ছুঁই তাদের, এক পুলকিত শিহরণ আমাদের গ্রাস করে । আমরা চিরদিনের জন্যে তার সৌন্দর্যে বাঁধা পড়ে যাই।
এতো নদী কোথা থেকে আসে ! যে পাহাড় থেকে এই জলেরা ছুটে আসে, দখল করে ভূভাগ, গড়ে তোলে নদী, তার রুপের বুঝি শেষ নাই । এঁকে বেঁকে সে চলে যায় দূর দুরান্ত, বুকে তার অশ্রান্ত ঢেউ । আমাদের তৈরি নৌকো ভাসিয়ে যখন আমরা ছুটে চলি এখান থেকে ওখানে, দুপাশের রুপ দেখে আমাদের দৃষ্টি হয়ে পড়ে আচ্ছন্ন । নদীর বুক থেকে যখন দেখে উঠি দিগন্ত জোড়া বনভূমি, আমাদের চিত্ত আনন্দে ভরে ওঠে । আবার এই যে পাহাড় উঠে গেছে আকাশের দিকে, তার দিকে তাকিয়ে আমরা বিচলিত হয়ে উঠি তার বিশালত্ব দেখে । মানুষ তার শীর্ষ ছুঁয়ে দেখতে চেয়ে হয়ে উঠেছে দুঃসাহসীক এক একজন আরোহী । শীর্ষে দাঁড়িয়ে সে পান করেছে মহাশূন্যের অপরুপ সৌন্দর্য রাশি । সাগর আমাদের দেখায় বিশালত্ব কাকে বলে । আমরা তার তীরে এসে একদিকে এর সৌন্দর্য অন্যদিকে ব্যপ্তি আমাদের যুগপৎ বিস্মিত এবং আনন্দিত হই । ঝরনার নৃত্য এক অনিঃশেষ আনন্দের উৎস । আরও কত কি ! প্রকৃতির রুপ যেন বর্ণনার অতীত এক রহস্য।
কিন্তু মানুষ নামের এক প্রজাতি যখন আঁকে কোন এক রাঙ্গা আপেল কিংবা ঝুড়িতে এক গুচ্ছ সূর্যমুখীর ছবি, তখন তার এই সৃজন ক্ষমতার আনন্দ বুঝি সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় । আপেল কিংবা সূর্যমুখী হয়ে ওঠে প্রকৃতিতে থাকা আপেল সূর্যমুখীর চেয়েও সুন্দর । সে যখন আঁকে একটি মাঠের ল্যান্ডস্কেপ, দেখে প্রত্যয় জাগে এটি তারও চেয়ে সুন্দর বুঝি । যখন একজন শিল্পী গেয়ে ওঠে গান কিংবা বাজিয়ে ওঠে কোন যন্ত্র- সেতার, সরোদ, বাঁশী, সন্তুর, তবলা কিংবা মৃদঙ্গ- সুধারসে মন সিক্ত হয় পাখির কিংবা নদীর গানের চেয়েও অধিক । যখন সে নদীর বুকে পাল তোলা এক নৌকার ছবি আঁকে, দেখে আমাদের চোখ জুড়ায় প্রকৃত নদীর চেয়েও বেশী । পৃথিবীর মিউজিয়ামগুলি ভরে আছে এইসব অপূর্ব সৃষ্টিতে, যা মানুষের সৃজনশীলতার অপরুপ শক্তির প্রকাশ । আমরা যখন এইসব দেখে উঠি, শুনি, তখন আমাদের বেঁচে থাকা সার্থক মনে হয়, মনে হয় আরও কিছু কাল বাঁচি । স্থাপত্যকলার সৌন্দর্য এবং একে উপভোগ আমাদের নিজেদের অমর করে তুলতে চায়, আমরা এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে চাই না।
মানুষ এর নাম দিয়েছে শিল্প । এই শিল্পই আমাদের চিত্তকে আনন্দের রঙে রাঙিয়ে তোলে।
যদি বলি পৃথিবীটা কেন সুন্দর, আমি বলবো শিল্পের জন্য। এ এমন এক নির্মাণ যার ভেতর দিয়ে গেলে মানুষ বদলে যায়, বদলে যায় উৎকর্ষের পরিমাপে। প্রকৃতি এক স্বয়ম্ভু শিল্প, মানুষ সৃজন করে তার মত করে অন্য শিল্প।
যখন আমরা এই পৃথিবীর দিকে তাকাই, তার সবকিছুতে মুগ্ধ হই । মাটি থেকে উত্থিত উদ্ভিদ, যাবতীয় গাছপালা, তাদের বিচিত্র রঙ, বিন্যাস দেখি, মন আনন্দে ভরে ওঠে । যখন তাদের খুব কাছে যাই, তাদের সজ্জা দেখি, বিস্মিত হই, যখন তাদের শরীর ছুঁয়ে দেখি, একটা অনির্বচনীয় অনুভুতি গ্রাস করে । সজীবতা এবং চঞ্চলতা তাদের শরীর ফুঁড়ে বের হয়ে আসে । বিষাদিত মনও তাদের সাহচর্যে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে । আমরা যখন এই প্রকৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ফুলের দিকে তাকাই, আমরা আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়ি । তাদের ভেতর থেকে ছুটে আসা সৌরভ যে সুখানুভূতির জন্ম দেয়, তুলনা তার নাই । যখন খুব কাছাকাহি যাই, ছুঁয়ে দেখি তাদের শরীর, আমাদের মনে শিহরণ জাগে । প্রতিটি ফুলের রঙ একটি থেকে আলাদা । তাদের আকার, ফুটে থাকা ঢং বিচিত্র । তাদের ঘিরে গুজরনশীল ভ্রমর,প্রজাপতি আমাদের মনকে আকৃষ্ট করে চুম্বকিয় টানে । এইসব উদ্ভিদ থেকে ঝুলতে থাকা ফল, তাদের স্বাদ আমাদের চকিতে প্রাণময় করে তোলে । আমরা অনুভব করতে থাকি এক অনাবিল সজীবতা ।
এইসব পৃথিবীর বাগানগুলিতে যে পাখিরা বাস করে, তাদের দিকে তাকিয়েও আমাদের আনন্দের শেষ নেই । কণ্ঠে বিচিত্র গান, তাদের উড়ে চলার ভঙ্গি, তাদের বাসা বানানোর কৌশল আমাদের মুগ্ধ করে । যখন তারা দল বেঁধে আকাশে উড়ে, তৈরি করে অননুকরণীয় ছবি, দেখে আমরা চোখ ফেরাতে পারিনা । যখন তারা নেমে আসে মাটিতে, বসে বিশাল প্রান্তরে, সেই রুপ অপরুপ । আকাশের দিকে তাকিয়েও আমাদের বিস্ময়ের শেষ নেই । নীল রঙের বিশাল শামিয়ানা, বুকে তার ফুটে থাকা অসংখ্য তারা আমাদের দৃষ্টিকে বিবস করে দেয় । যখন একটি পূর্ণ যৌবনবতী চাঁদ থেকে ছুটে আসে আলো, সাজায় পৃথিবীকে, এক রহস্যময় আনন্দে আমাদের মন ভরে ওঠে । আমরা এই আলোর নাম দিয়েছি জ্যোৎস্না কিংবা জোছনা । আবার এই আকাশ যাদের উপস্থিতিতে কালো হয়ে উঠে, আমরা তাদের নাম দিয়েছি মেঘ । যখন তারা নেমে আসে জল হয়ে, আমরা বলেছি তাকে বৃষ্টি । এই বৃষ্টির দিকে আমরা যখন তাকাই, আমাদের সমগ্র মন নেচে ওঠে শিশুর আনন্দে । যখন উদোম শরীরে ছুঁই তাদের, এক পুলকিত শিহরণ আমাদের গ্রাস করে । আমরা চিরদিনের জন্যে তার সৌন্দর্যে বাঁধা পড়ে যাই।
এতো নদী কোথা থেকে আসে ! যে পাহাড় থেকে এই জলেরা ছুটে আসে, দখল করে ভূভাগ, গড়ে তোলে নদী, তার রুপের বুঝি শেষ নাই । এঁকে বেঁকে সে চলে যায় দূর দুরান্ত, বুকে তার অশ্রান্ত ঢেউ । আমাদের তৈরি নৌকো ভাসিয়ে যখন আমরা ছুটে চলি এখান থেকে ওখানে, দুপাশের রুপ দেখে আমাদের দৃষ্টি হয়ে পড়ে আচ্ছন্ন । নদীর বুক থেকে যখন দেখে উঠি দিগন্ত জোড়া বনভূমি, আমাদের চিত্ত আনন্দে ভরে ওঠে । আবার এই যে পাহাড় উঠে গেছে আকাশের দিকে, তার দিকে তাকিয়ে আমরা বিচলিত হয়ে উঠি তার বিশালত্ব দেখে । মানুষ তার শীর্ষ ছুঁয়ে দেখতে চেয়ে হয়ে উঠেছে দুঃসাহসীক এক একজন আরোহী । শীর্ষে দাঁড়িয়ে সে পান করেছে মহাশূন্যের অপরুপ সৌন্দর্য রাশি । সাগর আমাদের দেখায় বিশালত্ব কাকে বলে । আমরা তার তীরে এসে একদিকে এর সৌন্দর্য অন্যদিকে ব্যপ্তি আমাদের যুগপৎ বিস্মিত এবং আনন্দিত হই । ঝরনার নৃত্য এক অনিঃশেষ আনন্দের উৎস । আরও কত কি ! প্রকৃতির রুপ যেন বর্ণনার অতীত এক রহস্য।
কিন্তু মানুষ নামের এক প্রজাতি যখন আঁকে কোন এক রাঙ্গা আপেল কিংবা ঝুড়িতে এক গুচ্ছ সূর্যমুখীর ছবি, তখন তার এই সৃজন ক্ষমতার আনন্দ বুঝি সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় । আপেল কিংবা সূর্যমুখী হয়ে ওঠে প্রকৃতিতে থাকা আপেল সূর্যমুখীর চেয়েও সুন্দর । সে যখন আঁকে একটি মাঠের ল্যান্ডস্কেপ, দেখে প্রত্যয় জাগে এটি তারও চেয়ে সুন্দর বুঝি । যখন একজন শিল্পী গেয়ে ওঠে গান কিংবা বাজিয়ে ওঠে কোন যন্ত্র- সেতার, সরোদ, বাঁশী, সন্তুর, তবলা কিংবা মৃদঙ্গ- সুধারসে মন সিক্ত হয় পাখির কিংবা নদীর গানের চেয়েও অধিক । যখন সে নদীর বুকে পাল তোলা এক নৌকার ছবি আঁকে, দেখে আমাদের চোখ জুড়ায় প্রকৃত নদীর চেয়েও বেশী । পৃথিবীর মিউজিয়ামগুলি ভরে আছে এইসব অপূর্ব সৃষ্টিতে, যা মানুষের সৃজনশীলতার অপরুপ শক্তির প্রকাশ । আমরা যখন এইসব দেখে উঠি, শুনি, তখন আমাদের বেঁচে থাকা সার্থক মনে হয়, মনে হয় আরও কিছু কাল বাঁচি । স্থাপত্যকলার সৌন্দর্য এবং একে উপভোগ আমাদের নিজেদের অমর করে তুলতে চায়, আমরা এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে চাই না।
মানুষ এর নাম দিয়েছে শিল্প । এই শিল্পই আমাদের চিত্তকে আনন্দের রঙে রাঙিয়ে তোলে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours