জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুরঃ

এই ধারাবাহিকের ভেতরে যত প্রবেশ করেছি, যত বিশ্ব ইতিহাসের পাদমুলে ভারতীয় ইতিহাসকে ধরার চেষ্টা করেছি, ততই একটা চুড়ান্ত রকমের আপশোষ মনকে ঢেকে দিতে চেয়েছে।
-----  বুঝেছি, ইতিহাসের চুড়ান্ত  মূল্যায়ন সাধারনভাবে, শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী নির্ভর হতে ঠকতেই হবে। আর সে সব বুদ্ধিজীবিরাই ইতিহাস লেখায় সফল হতে পারবেন, যারা উৎপাদনের ইতিহাসের সাথে মেহনত ও মেহনতীর অন্তসম্পর্কের ডাইনামিজম ধরে ইতিহাস লিখতে চেষ্টা করেছেন।
----- আপশোষ হয়, জীবনের ৮০ টি বছরের সাথে সাথে পাঁচ হাজার বছরের শ্রেষ্ট সময়টা চলে গেলো, পেয়েছিলাম আধুনিক শ্রমিকদের সব থেকে সংগ্রামী সাফল্যকালের সান্নিদ্ধ। সেই সান্নিদ্ধতা একাত্মতার যায়গায় পৌছানোর সুযোগ পেয়েছিলো। কিন্তু এই কালের শ্রেনী প্রতিনিধীত্বকারীরাই যখন সেই মহেঞ্জোদোরোর কাল থেকে আধুনিক ভারত পর্য্যন্ত ইতিহাস চেতনার একটা সংগঠিত ভারতাত্মা পূনঃর্গঠনের সুযোগ পেয়েছিল, মধ্যমবর্গীয় স্বার্থপরতা এবং আত্মপরতার  'ঘেরাটোপে' সেই সম্ভাবনা হারিয়ে গেলো।
--- অথচ নিজেকে সেই প্রশ্নটা করার সামান্য বুদ্ধিটা যদি আসতো, কেন লেনিন মার্ক্সের পর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট দার্শনিক হতে পারলেন, তবু অন্ততঃ ভাবজগতে  ইতিহাস কিংবা জাতীয়তার পূনঃর্গঠনের বিভিন্ন উপাদানগুলির সংহতি সাধনে কিঞ্চিত আগ্রহ জাগতো সময়কালে। লেনিন ইতিহাসবিদো ছিলেন না, যেমন ছিলেন না দার্শনিক। কিন্তু রাজনীতি করার কারনে, জারের শাসন বড় ভাই আলেকজান্ডারের ফাসি, তার  শিক্ষাআভিজাত্বের  সব অভিমুখগুলিকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর যেমনভাবে শ্রমিক আন্দোলনে নিজেকে সপে দিয়েছিলেন, তার নির্য্যাসেই ভ্লাদিমি আজকের লেনিন হয়ে উঠেছিলেন।
----- ভারতের জাতীয়তাবাদ যে তার প্রতিটি উজানের মুখেই ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সেটা অজন্তা-ইলোরাকে - , কিঞ্চিত ইতিহাসবোধ এবং মেহনতের ইতিহাসের সংশ্নেষনেই  একটা মূর্ত প্রতিবেদন দিতে পারতো।
----- ভারতীয় জাতীয়তাবাদের আজকের দুর্দষাকে বুঝতে, কি করে বৈদিক ভাবনা সনাতনিতে বদলে গেলো নিশ্চিত বুঝতে হোত। অজন্তা-ইলোরার পর্বতগাত্রে বৌদ্ধ (দুই ধারার) এবং কৈ্লাসের শিল্পকর্মে পার্থক্যের চালচিত্রের মধ্যেই এক উন্নত সৃজন যুগ থেকে সনাতনি ব্রাহ্মন্যবাদের উত্তোরনের চিহ্নগুলি খুজে পাওয়া যাবে।
----- সেই পর্বতগুহার চিত্ররেখাগুলির কালচিত্র ধরে এগিয়ে গেলেই, চালচিত্রের কাল এবং ইতিহাসে লেখা কালের যুগবন্দিটা ধরা পড়বে। যতদূর অজন্তার কালচিত্র  মনে পরে, তাতে খৃষ্ট জন্মের ৭০০ বছরের মধ্য বৌদ্ধ সভ্যতার ভিত্তিটিকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিলও। এর পরেও বু্দ্ধের সমাজ ভাবনার অনেকটাই লোকগাথা হিসেবে সমাজে লোকসত্বা হিসেবে, থেকে গেলেও, রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে  কখনো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় নাই । অবস্য, ভারতীয় সংবিধানে সব ধর্ম এবং চিন্তার স্বাধীনতার সুযোগে, বুদ্ধের শিক্ষাকরে থকে সমাজের দুর্বল অংশ অস্তিত্বের সংকট থেকে নিজের টিকিয়ে রাখার সুযোগ পেয়েছে।
----- যদি ইতিহাসের পাতা ধরে  মেনে চলাহয় ২৩২ খৃষ্টাব্দে সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর ৫০ বছরের মধ্যে, মৌর্য্য সম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং কালের নিয়ম অনুযায়ী সরকারী পৃষ্টপোষকতাক ব্যতিরেখে কোন ধর্মের পক্ষে, বিশেষ করের এমন একটা ধর্মের পক্ষে যা ইতিমধ্যেই মানুষের জীবনবোধের সাথে মিশে গিয়ে, জাতীয়তার অঙ্গ হয়ে উঠছিলো
------ তার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভভ ছিলো না তবে মানতে হবে, তবে মানতে হবে, খৃষ্টপূর্ব ১৭০-৮০ থেকেই পৌ্ত্যলিকা বাদীদের হাতে, ভারতে প্রাথমিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তি ভেংগে পরার কাল শুরু হয়। মৌর্য্যযুগের পর ব্রহ্মন্যবনাদীরা ভাংগাচোরা সাম্রাজ্যে আসার পরে, স্বাভাবিক কারনে বৈ্দিক ভাবনার বর্নাশ্রমের উপর্বে জাতীয়তার অতীত সুত্র ধরেই, নিশ্চিতভাবেই বৌদ্ধিক ভাবনাও যথেষ্টভাবে সুপার ইম্পোজড হোয়ার সুযোগ পেয়েছিলো।
-----  খুব সম্ভবতঃ সংযোজন এবং বিয়োজনের সুত্র ধরেই, বৌদ্ধ ভাবনার প্রসাশনিক এবং রাষ্ট্রীয় দিকগুলিকে ব্রাহ্মন্যবাদী ও ক্ষত্রিয় অংশ টেনে নিয়ে
ব্রাহ্মন্যবাদী প্রসাশনে শক্তি যোগানোর ব্যবস্থা করে। অন্যপ্রান্তে, মানবিক দিকগুলি সমাজের দুর্বল অংশগুলি টানতে শুরু করে।
----   এর মধ্যেই, খৃষ্টের জন্মের ৮০ বছরে কুষান সাম্রাজ্যকালে আবার বৌদ্ধবাদ আবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা শুরু করে।এইভাবে, পেছনের দঁড়ির
টান বৃদ্ধি পেতে থাকলেও এর প্রভাব গুপ্তযুগ পর্য্যন্ত নিশ্চিতভাবে ছিল । অন্যথায়, জাতীয়তার অন্ততঃ প্রাথমিক দিকগুলির অনুপস্থিতিতে, সমুদ্রগুপ্তের
কালে এতো জ্ঞানের সাথে উৎপাদনীর বিকাশ সম্ভব ছিলও না । দিল্লীর লৌহ স্থম্ভ সমুদ্রগুপ্তের কালেই, প্রায় ইস্পাতের মতো মসৃন এবং পরিশ্রুত।গুপ্ত সম্রাজ্যের পতনকে যদি খৃষ্টপূর্ব ৬০০ শতাব্দী কাল পর্য্যন্ত, তবে মানতে হবে, অজন্তা গুহার স্বরলিপির সাথে স্বাধীন বৌদ্ধ বিকাশ কালের অবসানের কাল, সমচিহ্নিত হয়ে যায়।
তার পর থেকেই ভাংগন । রাজ্যে রাজ্যে, বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভাগ হয়ে যাওয়া
ভারতবর্ষ। সেখানে বৈ্দিক ভাবনা যেমন রয়েছে, বৌদ্ধিক ভাবনাই নিশ্চিতভাবে জাতীয়তার চেহারা দিয়েছে। সেখানে কুষানদের হাত ধরে কনফুসাস ভাবনারো অনুপ্রবেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় জাতীয় ভাবনয়া সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

এই সুত্রকে যদি এগিয়ে দেওয়া হয়,
দেখা যাবে প্রথমে মৌর্য্য, পরে কনিস্ক এবং শেষ
পর্য্যন্ত গুপ্ত সাম্রাজ্য ভেংগে যাওয়া, পরবর্তীকাল
ভারতীয় জাতীয়তার প্রাথমিক উন্মেষকাল খন্ড-বিখন্ডিত
হওয়ার সুযোগেই
------ ভারতে সুলতানী সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন ঘটলো মহম্মদ ঘোরির দ্বীতীয় ভারত আক্রমনের মধ্য দিয়ে। তার পরের ইতিহাসও সাধারনভাবে জানা।কিন্তু প্রথমে সুলতানী, পরে পাঠান এবং মোঘল শাসনের কতকগুলি বিশেষ দিক স্পষ্ট থাকলেই বোধ হয়,পরবর্তীকালে
------ কিভাবে একপ্রান্তে ভারতীয় জাতীয়তা নির্মান হয়েছে সর্বধারার একান্তে এবং একাত্মতায় এবং অন্যপ্রান্তে সব উচ্ছিষ্ট নিয়ে একপ্রান্তে সনাতনি এবং ইসলামী মৌ্লবাদ বেড়ে উঠেছে সম্ভবত স্পষ্ট হবে।
শুধু ইংগিত দিয়ে যায়, ভারতে সুলতানী, কিংবা পাঠান অথবা মোগলদের শাসন মুস্লিম শাসন বলা গেলেও, কখনো সে অর্থে, আরব থেকে আসা ইসলামী শাসন ছিলো না। ইতিহাসের দিক থেকি উভ্য় প্রান্তের মুসলিম সংস্ক্রৃতির পুথক বৈচিত্র বিদ্যমান থাকতে বাধ্য। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours