শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

হাজার হাজার বছর আগেও ধর্মবেত্তারা অজ্ঞ মূর্খ ব্যাক্তিদের, সুযোগ বুঝেই ধর্মের নামে প্রতারনা করতো। প্রকৃতিক দূর্যোগ, অসুখে আপদে বিপদে  সাধারন মানুুষের দূর্বল চিত্ত  ও  অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে ধর্মবেত্তারা নানান রকম মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে প্রতারনা করে নিজেদের ক্ষমতা প্রচার করতো। বিভিন্ন সুবিধা আদায় করতো। মধ্যযুগেও তা করেছে৷ প্রকৃতিক দূর্যোগ বা  কোন বিপদ আপদ, অসুখ বিসুখ দেখলেই  বিভিন্ন ধর্মের ধর্মবেত্তারা তাদের সুবিধামত পাপ ও পূণ্যের তত্ত্ব নিয়ে হাজির হতেন। কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ধার ধারতেন না। ধারবে, কি করে, তারা নিজেরাও তো অসুখ ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের বৈজ্ঞানিক  কারন জানতেন না। সে বিদ্যাবুদ্ধি বা সুযোগ কোনটাই তাদের ছিলো না। থাকার কথাও নয়।

কিন্তু  এই আাধুনিক যুগেও যখন দেখি, কিছু মানুষ হাস্যকর আজগুবি ও অবৈজ্ঞানিক কথা বলেন, এবং তা বলতে একটুও লজ্জাবোধ করেন না। বরং  বুক ফুলিয়ে চরম হাস্যকর কথাগুলো প্রকাশ্য বলে বেড়ায়। আরো আজব বিষয় হলো, তাদের আজগুবী,শিশুসূলভ  কথাগুলো শোনা, বিশ্বাস করা ও মেনে চলার লোকও অগণিত! এবং এসব কথা তারা অনবরত বলেই চলছেন, তাও আবার ধর্মের নামে! আরো বিস্ময়কর বিষয় হলো, উচ্চ শিক্ষিত মানুষগুলোও এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও এসব শুনে নিরব থাকে। 

বাংলাদেশে তো ঘরে ঘরে আলোচনা, মুসলিমদের উপর অত্যাচার ও কোরআন চায়নিজদের মত করে অনুবাদ করতে চাওয়ার কারনে চীনে কোরোনা ভাইরাস নামের আল্লাহর গজব শুরু হয়েছে! কয়েক দিন আগে তো চানিজ প্রেসিডেন্টের মসজিদে  গিয়ে চায়নিজ হুজুরদের কাছে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে দোয়া চাওয়ার ভুয়া ভিডিও  ভাইরাল করতে দেখা গেলো! আমার স্ত্রীরও দাবী, সবাই বলতেছে, মুসলমানদের উপর চীনের অত্যাচার করার কারনে এই গজব!  তুমি কেন বিশ্বাস কর না এসব ?

বাংলাদেশের আলেম মুফতি ও হাফেজের তো কোরনা ভাইরাসকে কেবল আল্লাহর গজব বলেই খান্ত হননি।  এই ভাইরাস থেকে  রক্ষা
পেতে কি কি দোয়া পড়তে হবে, তা নিয়ে ওয়াজ নসিহতও করা শুরু করেছেন। এক মুফতি সাহেব তো গ্যারান্টি দিচ্ছেন, কোন দোয়া পড়লে করোনা ভাইরাস পালিয়ে যাবে, এমনকি কোরনা ভাইরাস মরে যাবে ইত্যাদি। 

চীন  সম্পর্কে আমাদের দেশের আগ্রহ এ জন্য নয় যে,  চীন কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। বা তারা প্রযুক্তিতে আগানো। বরং চীন, ভারতবিরোধী পরাশক্তি বলেই বাংলাদেশের মানুষের এত আগ্রহ। বলার অপেক্ষা রাখেনে না; ব্যবসা ও সস্তায় পন্যের জন্যও চায়না এদেশে সুপরিচিত।  তবে, একটি হাদিস আমরা ছোট বেলায় পড়তাম জ্ঞান অর্জনের জন্য  সূদুর চীন পর্যন্ত যাও। এ নিয়ে অবশ্য আলেমদের মধ্যে মৃদু বাহাস বা তর্ক হতো। কেউ বলতেন, দুরন্ত বুঝাতে হযরত মুহাম্মদ, এটা বলেছেন, কেউ বলতেন, রাসুল চীনেই যেতে বলেছেন। অবশ্য এখন  কারো কারো মুখে শুনি  ঐ হাদীসটিই নাকি জাল, তথা ভূয়া হাদীস।
 ভারত বিরোধীতার কারনে এ দেশের অনেকেই চায়না প্রেমি ছিলেন। হঠাৎ  করেই এ দেশ থেকে চায়না প্রেম কমতে শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের  মায়ানমার থেকে তাড়ানোর দায়টাও ভারতের উপর চাপিয়ে কিছুটা আত্মতৃপ্তি লাভ করার চেষ্টা করেছিলো,এ দেশের কিছু মানুষ।  কিন্তু,  উইঘুর মুসলিমদের চায়নিজ সংস্কৃতিতে ফিরিয়ে আনার বিষয়কে মুসলিম নির্যাতন হিসেবে দেখছে। আর, যখন চায়না ঘোষণা করেছে, তারা আল কোরআানকে তাদের সমাজ সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে অনুবাদ করবে। তখন, বাংলাদেশের মুসলিমরা চায়নার প্রতি যারপর নাই বিরক্ত হয়। যদিও এ দেশের পীর, মুফতীরা দিল্লি দখল করার মত বেইজিং দখলের কথা কখনো বলেনি। লংমার্চও করেনি। এমনকি পাকিস্তান ও সৌদী আরবের শাসকগোষ্ঠীও কখনোই, উইঘুর মুসলিমদের পক্ষে কখনোই টু শব্দটি করেনি। বরং উক্ত দুই মুসলিম দেশ, মনে করে, চায়না তাদের রাষ্ট্রীয়,স্বার্থে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে!

সে যাই ই হোক, এতো  গেলো চায়না ও বাংলাদেশের কথা। এবার ভারতের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। ভারতের এক ধর্মগুরু নিত্যানন্দ বাংলাদেশের  "এনটার কটিক"  খ্যাত ওয়ায়েজিন  মুফতি এব্রাহীমকেও ছেড়ে গেছেন। তিনি দাবী করেছেন, তার নাম ৪৮ ঘন্টা  জপলেও নাকি কোরোনা ভাইরাস মুক্ত হওয়া যাবে। পাগলামীর আর কাকে বলে!

আবার অন্যদিকে হিন্দু মহািষাশীসভার প্রধান চন্দ্রপানি মহারাজের দাবী তো মুফতি ইব্রাহীম থেকেও চার কদম আগে চলে গেছে! তার দাবী, করোনা ভাইরাস আসলে ভাইরাস নয় অবতার। আমিষ ভোজী,  তথা আমিষাশী চাইনিজ দের শিক্ষা দিতেই নাকি, অবতার রুপে পৃথিবীতে খোদ "ভগবান' বিষ্ণুর  কোরোনা ভাইরাস রুপে আগমন!  তিনি এই বিপদ থেকে বাঁচার পথও বাতলে দিয়েছেন। করোনা ভাইরাস নাম দিয়ে  মূর্তী বানিয়ে পু্ঁজো করার পরামর্শ দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্টকে। এবং মাংস পরিত্যাগও করতে বলেছেন!
আমরা এখনো, জানি না চায়নিজ শাসকেরা দোয়া পড়ে  নাকি মূর্তি গড়ে কোরোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে চেষ্টা করছে। ভারত - পাকিস্তানের পর স্বাধীন হওয়া চাইনিজরা কোন দোয়া বা মন্ত্রের জোড়ে পৃথিবীর  অন্যতম অর্থনৈতিক ও সামরিক  পরাশক্তিতে পরণত হয়নি। শুধু তাই নয়। আমরা যারা চাীন ভ্রমনে গেছি  তারা খুব ভালো করেই  জানি যে, ব্যাক্তিগত, সামাজিক উদ্যোগে এবং  রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চীনে ব্যাঙ্গের ছাতার মত উপাসনালয় গড়ার তো কোন সুযোন নেই। চীনে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পুরেপুরি পৃথক করে ফেলা হয়েছে। চীন সরকার কোন অবস্থাতেই সাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনা সমর্থন করে না। শত শত মাইল ঘুরলেও উপাসনালয় দু একটা খুজে পাওয়া কঠিন। আমরিকা এমনকি রাশিয়াতেও ধর্মিয় কারনে যে সকল বিজ্ঞান গবেষনা নিষিদ্ধ। চায়নাত তা নিয়ে কার্যক্রম চলছে পুরোদমে।

চায়না ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সারা পৃথিবীর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে নিউইয়র্কেও এমনকি ক্ষুদ্র অর্থনীতির রাষ্ট্র বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের অধিকাংশ আামদানি চায়না নির্ভর। তাই,  বাংলাদেশীদের চায়নার ক্ষতিকামনা করা মানে, শেয়াল হয়ে গাছের মাথায় বন্যার পানি  প্রার্থনা করে কাকের বাসার ক্ষতি  সাধন করার মত বিষয়! করোনা ভাইরাসে  কতজন চায়নিজ মরলো, তা রেখে কত হাজার বাংলাদেশী শ্রেফ সড়ক দূর্ঘটনায় মরে আর কত হাজার শারীরিক ভাবে পঙ্গু হয় আর অর্থনৈতিক ভাবে নিঃস্ব হয় সে দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত।

পৃথিবীর ইতিহাস গবেষনা করলে দেখা যায়, সব শতাব্দীতেই বিভিন্ন রোগ ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন দেশে মহাদেশে মানুষ মরে সাবার হয়ে যেতো। এখন, বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞান, তথ্য- প্রযুক্তি আধুনিক ও উন্নত  হওয়ায় পাইকারি ভাবে মৃত্যুর হাত থেকে মানুষ রক্ষা পায়। ঝড়ে বক মরে আর সাধু ও ফকিরের কেরামতি বাড়ে, এই বাংলা প্রবাদ আর খুব এটা চলবে না। তা, করোনা ভাইরাসই হোক,  সোয়াইন ফ্লু হোক, বা হোক না ঝড়-তুফান, সাইক্লোন।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours