দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

গরীবের ঘোড়া রোগ প্রবাদ খাটে নি রফিকের জীবনে। কারণ রফিকের  পেটের ভাত জোগায় রফিকের মামার দেওয়া এই ঘোড়ায়। ইচ্ছাখালি গ্রামের রফিকের কোনদিন ইচ্ছা ছিল না ঘোড়ার গাড়িতে সওয়ার হয়ে ফেরি করার!  এখন সেই ঘোড়া নিয়েই মাসের পর মাস তিনি ঘুরে বেড়ান জেলায় জেলায়।

রফিক হোসেনের বাড়ি মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর থানার ইচ্ছাখালি গ্রাম। স্ত্রী ও আট ছেলে, দুই মেয়ের সংসার টানতে রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে জীবন শুরু করছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। কারণ প্রতিদিন কাজ থাকে না। ঘোড়া নিয়ে এক্কাগাড়ি টানা সম্ভব নয়, কারণ ঘোড়া গাড়ির জায়গা দখল করে নিয়েছে টোটো গাড়ি।
তাই মাসের মধ্যে ২০-২৫ দিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘোড়ার নাল, তামা-পিতলের বালা, চেন বিক্রি করে সংসারে একটু সুখের মুখ দেখা।  রফিক বলেন, “পরিবারে মোট বারোজন সদস্য নিয়ে অথৈ জলে পড়েছিলাম। এরপরেই মামা একটি ঘোড়া দেন। ঘোড়া নিয়েই এক দশক আগে বেরিয়ে পড়ি বাড়ি থেকে। বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান, হুগলী, মালদা, রায়গঞ্জ সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মাসে একবার করে ঘুরে নাল ও তামা-পিতলের সামগ্রী বিক্রি করে যা আয় হয় তাতেই দিব্যি চলে যায় সংসার”। এই করেই এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। পাঁচ ছেলে বিয়ে করে সংসার পেতেছে। তারা এখন রাজ্য ছাড়িয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে নিজেদের সংসার চালায়। ফলে নিজের সংসার টানতে এবং এক মেয়ের বিয়ের জন্য ষাটোর্ধ বয়সে এখনও ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পরেন অজানা গন্তব্যে। রামপুরহাট হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় দাঁড়িয়ে রফিক জানান, ঘোড়াকে প্রতিদিন ভুষি, গুড়, খোল খাওয়াতেই চলে যায় দেড়শো টাকা। তাছাড়া নিজের খাওয়া তো রয়েছেই। তবে যেটুকু আয় হয় তাতে দিব্যি চলে যায় সংসার।ঘোড়ার নালে কি কাজ দেয় তার জানা নেই, তবে লোকে চায়। তামা পিতলের বালা ও চেন মানুষ চায়, তাই চাহিদা অনুযায়ী তাঁর ব্যবসা চলে, চলে তার রুজিরোজগার। মাসের মধ্যে পাঁচ-সাত দিন ঘরে ফিরে ফের বেরিয়ে যান অজানা ঠিকানায়।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours