কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিষ্ট, কলকাতা:
বিজেপি হেরেছে বেশ হয়েছে।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল জেতার খবর পেয়েই হনুমান মন্দিরে ছুটেছেন, বেশ করেছেন।
কিন্তু নিজের নাককেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করতে কজন পারে?
একমাত্র কংগ্রেসই পারে। ভোটগনণা শুরু হতেই এগিয়ে চলে আপ। একটুও দেরি না করে অধীররঞ্জন চৌধুরী খোলাখুলি তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বসেন। বেলা গড়াতেই বোঝা যায়, কেজরিওয়াল শুধু বিজেপিকেই হারাননি, ঝাড়ু মেরে দিল্লির বুক থেকে সাফ করে দিয়েছেন কংগ্রেসকেও। তাহলে কি ধরে নিতে হবে বিজেপির হারটাই বাংলা কংগ্রেসের কাছে সব? নিজের দলের জেতাটা ঠিক ততটা জরুরি নয়?
বাংলা কংগ্রেস বললাম কারণ, দিল্লির নেতারা দলের এই নিঃস্ব চেহারাটা আদৌ মেনে নিতে পারেননি।
মঙ্গলবার দিল্লি নির্বাচনের খবর বেরোতেই মাস নয়েক আগের ঘটনা মনে পড়ে গেলো? গত বছরের মে মাস। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের যে হাল হলো, সেদিন বাংলার লোকসভা নির্বাচনে ঠিক একই হাল হয়েছিল বামপন্থীদের। শূন্যেই শেষ হয়েছিল সিপিএমের ইনিংস। পাঁচবছর আগের নির্বাচনে যদিও বা দুটো আসন পেয়েছিলো, সেটাও হাতছাড়া হয়ে বাংলার লোকসভার ভারমুক্ত হয়েছিল সিপিএম।
বাংলা নিয়ে ভাবনাচিন্তার আর দরকার নেই বলেই জনগনের রায়। তবু উদারমনস্ক কমরেডরা আজও হাল ছাড়তে নারাজ।
আজ তাই সিপিএমের মাথাব্যথা দিল্লি নিয়ে। কিন্তু তাই বা কেন? দিল্লি নির্বাচনেও তো দলের টিকি দেখা গেলো না। ওদিকে হামেশাই শোনা যায় জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিতে নাকি গিজগিজ করছে বামপন্থীরা। কনহইয়া কুমার থেকে নিয়ে ঐশী ঘোষ পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতাই চলছে। তাহলে কি ইউনিভার্সিটি চত্বরেই লক্ষণরেখা টানা হয়ে গিয়েছে বাম রাজনীতির?
ভোটের ফলাফলে পরিষ্কার, বিজেপির জাতীয় রাজনীতির কথাবার্তা দিল্লিবাসীর মনে ধরেনি। বরং আপের নাগরিক পরিষেবার প্রতিশ্রুতিই তাঁদের কাছে ভরসার মনে হয়েছিলো। তার ওপর বিনি পয়সায় একাধিক পরিষেবাই অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে অনেকখানি এগিয়ে রেখেছিলো। কোমর বেঁধে নির্বাচনী ময়দানে নেমে পড়েছিলেন রাহুল প্রিয়াঙ্কাও। কিন্তু তাঁদেরকেও আদৌ পাত্তা দেয়নি দিল্লিবাসী। প্রসঙ্গত, এর আগে দিল্লিতে কংগ্রেসের মুখ বলতে ছিলেন শীলা দিক্ষিত। তিনিও দিল্লির ক্ষমতা ধরে রাখতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন।
ঠিক একদশক আগের কথা। শীলা দিক্ষিতের হাত থেকেই রাজপাটের ব্যাটন ছিনিয়ে নিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দশবছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর, এবার তিনিও হ্যাটট্রিক করলেন। আর হ্যাটট্রিক করার পরেই বললেন, আজ মঙ্গলবার। হনুমানজি কা দিন হ্যায়।" এরপরেই সপারিষদ তিনি ছুটে গেলেন রাজধানীর কনাট প্লেসে এক প্রাচীন হনুমান মন্দিরে। বেরোলেন পুরোহিতের পড়ানো জয়মালা গলায় দুলিয়ে। দিল্লিবাসীকে আশ্বস্ত করতে তিনি ফের বললেন, হনুমানজি সবকা ভলা করেঙ্গে। রাজনীতির সূক্ষ্ম চালে নরম হিন্দুত্বের তাসটি খেলে দিলেন কেজরিওয়াল। পাশাপাশি দিল্লির ভবিষ্যতের বল ঠেলে দিলেন হনুমানজির কোর্টে।
সেকুলার অরবিন্দ কেজরিওয়াল হনুমান মন্দিরে। তারও আগে ধর্মনিরপেক্ষ রাহুল গাঁধির উপবীত ধারন। শিবমন্দিরে ছোটা। নিজেকে শিবভক্ত বলে জাহির করা। বিজেপির চাপে সেকুলার দলগুলির হিন্দুত্বে দীক্ষার এই খোলাখুলি প্রদর্শন দেখে তৃপ্তির হাসি হাসতেই পারে বিজেপি। কংগ্রেস জমানায় ছিলো ইফতার পার্টির ধূম। বিজেপির রাজপাটে ছবিটা আমূল পাল্টে গেলো। এখন ধূম শিবমন্দির আর হনুমান মন্দিরে।
বাষট্টি আসন দখল করে এক নাম্বারে আপকে সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ওদিকে বহু ঘাম ঝড়িয়ে আট আসনেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ জুটিকে। তবে বিজেপির হার, আর আপের দিল্লি দখল দেখে বিজেপি বিরোধীরা যে উচ্ছ্বাস দেখালেন, তাতে একটাই কথা মনে হয়- বেগানা কি শাদি, অবদুল্লা দিওয়ানা।
তবু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়।
সামনের বছরেই বাংলার নির্বাচন। আপাতত যা অবস্থা তাতে দ্বৈরথে নামবে তৃণমূল কংগ্রেস আর বিজেপি। সেই নির্বাচনে ঘাসফুল শিবিরের কাছে যদি পদ্ম শিবিরের ভরাডুবি হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলামনে অভিনন্দন জানাতে পারবে তো কংগ্রেস, সিপিএম?
বিজেপি হেরেছে বেশ হয়েছে।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল জেতার খবর পেয়েই হনুমান মন্দিরে ছুটেছেন, বেশ করেছেন।
কিন্তু নিজের নাককেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করতে কজন পারে?
একমাত্র কংগ্রেসই পারে। ভোটগনণা শুরু হতেই এগিয়ে চলে আপ। একটুও দেরি না করে অধীররঞ্জন চৌধুরী খোলাখুলি তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বসেন। বেলা গড়াতেই বোঝা যায়, কেজরিওয়াল শুধু বিজেপিকেই হারাননি, ঝাড়ু মেরে দিল্লির বুক থেকে সাফ করে দিয়েছেন কংগ্রেসকেও। তাহলে কি ধরে নিতে হবে বিজেপির হারটাই বাংলা কংগ্রেসের কাছে সব? নিজের দলের জেতাটা ঠিক ততটা জরুরি নয়?
বাংলা কংগ্রেস বললাম কারণ, দিল্লির নেতারা দলের এই নিঃস্ব চেহারাটা আদৌ মেনে নিতে পারেননি।
মঙ্গলবার দিল্লি নির্বাচনের খবর বেরোতেই মাস নয়েক আগের ঘটনা মনে পড়ে গেলো? গত বছরের মে মাস। দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের যে হাল হলো, সেদিন বাংলার লোকসভা নির্বাচনে ঠিক একই হাল হয়েছিল বামপন্থীদের। শূন্যেই শেষ হয়েছিল সিপিএমের ইনিংস। পাঁচবছর আগের নির্বাচনে যদিও বা দুটো আসন পেয়েছিলো, সেটাও হাতছাড়া হয়ে বাংলার লোকসভার ভারমুক্ত হয়েছিল সিপিএম।
বাংলা নিয়ে ভাবনাচিন্তার আর দরকার নেই বলেই জনগনের রায়। তবু উদারমনস্ক কমরেডরা আজও হাল ছাড়তে নারাজ।
আজ তাই সিপিএমের মাথাব্যথা দিল্লি নিয়ে। কিন্তু তাই বা কেন? দিল্লি নির্বাচনেও তো দলের টিকি দেখা গেলো না। ওদিকে হামেশাই শোনা যায় জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটিতে নাকি গিজগিজ করছে বামপন্থীরা। কনহইয়া কুমার থেকে নিয়ে ঐশী ঘোষ পর্যন্ত সেই ধারাবাহিকতাই চলছে। তাহলে কি ইউনিভার্সিটি চত্বরেই লক্ষণরেখা টানা হয়ে গিয়েছে বাম রাজনীতির?
ভোটের ফলাফলে পরিষ্কার, বিজেপির জাতীয় রাজনীতির কথাবার্তা দিল্লিবাসীর মনে ধরেনি। বরং আপের নাগরিক পরিষেবার প্রতিশ্রুতিই তাঁদের কাছে ভরসার মনে হয়েছিলো। তার ওপর বিনি পয়সায় একাধিক পরিষেবাই অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে অনেকখানি এগিয়ে রেখেছিলো। কোমর বেঁধে নির্বাচনী ময়দানে নেমে পড়েছিলেন রাহুল প্রিয়াঙ্কাও। কিন্তু তাঁদেরকেও আদৌ পাত্তা দেয়নি দিল্লিবাসী। প্রসঙ্গত, এর আগে দিল্লিতে কংগ্রেসের মুখ বলতে ছিলেন শীলা দিক্ষিত। তিনিও দিল্লির ক্ষমতা ধরে রাখতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন।
ঠিক একদশক আগের কথা। শীলা দিক্ষিতের হাত থেকেই রাজপাটের ব্যাটন ছিনিয়ে নিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দশবছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর, এবার তিনিও হ্যাটট্রিক করলেন। আর হ্যাটট্রিক করার পরেই বললেন, আজ মঙ্গলবার। হনুমানজি কা দিন হ্যায়।" এরপরেই সপারিষদ তিনি ছুটে গেলেন রাজধানীর কনাট প্লেসে এক প্রাচীন হনুমান মন্দিরে। বেরোলেন পুরোহিতের পড়ানো জয়মালা গলায় দুলিয়ে। দিল্লিবাসীকে আশ্বস্ত করতে তিনি ফের বললেন, হনুমানজি সবকা ভলা করেঙ্গে। রাজনীতির সূক্ষ্ম চালে নরম হিন্দুত্বের তাসটি খেলে দিলেন কেজরিওয়াল। পাশাপাশি দিল্লির ভবিষ্যতের বল ঠেলে দিলেন হনুমানজির কোর্টে।
সেকুলার অরবিন্দ কেজরিওয়াল হনুমান মন্দিরে। তারও আগে ধর্মনিরপেক্ষ রাহুল গাঁধির উপবীত ধারন। শিবমন্দিরে ছোটা। নিজেকে শিবভক্ত বলে জাহির করা। বিজেপির চাপে সেকুলার দলগুলির হিন্দুত্বে দীক্ষার এই খোলাখুলি প্রদর্শন দেখে তৃপ্তির হাসি হাসতেই পারে বিজেপি। কংগ্রেস জমানায় ছিলো ইফতার পার্টির ধূম। বিজেপির রাজপাটে ছবিটা আমূল পাল্টে গেলো। এখন ধূম শিবমন্দির আর হনুমান মন্দিরে।
বাষট্টি আসন দখল করে এক নাম্বারে আপকে সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ওদিকে বহু ঘাম ঝড়িয়ে আট আসনেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ জুটিকে। তবে বিজেপির হার, আর আপের দিল্লি দখল দেখে বিজেপি বিরোধীরা যে উচ্ছ্বাস দেখালেন, তাতে একটাই কথা মনে হয়- বেগানা কি শাদি, অবদুল্লা দিওয়ানা।
তবু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়।
সামনের বছরেই বাংলার নির্বাচন। আপাতত যা অবস্থা তাতে দ্বৈরথে নামবে তৃণমূল কংগ্রেস আর বিজেপি। সেই নির্বাচনে ঘাসফুল শিবিরের কাছে যদি পদ্ম শিবিরের ভরাডুবি হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলামনে অভিনন্দন জানাতে পারবে তো কংগ্রেস, সিপিএম?
Post A Comment:
0 comments so far,add yours