শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

কয়েক দিন আগে একজন আলেমের সাথে কথা হলো৷ তার বক্তব্য এজিদ (ইয়াজিদ) সম্পর্কে নাকি আমরা আম মুসলিমরা ভুল জানি। তার ভাষায় হযরত মুয়াবিয়া, নবীর নাতি  হাসানকে  ও এজিদ, হযরত মুহাম্মদের নাতী হুসাইনকে হত্যা করতে চায়নি। এ সব ষড়যন্ত্র ছিলো। আর ইরানের শীয়ারা হযরত মুয়াবিয়া ও এজিদের নামে নৃশংসতার অপপ্রচার চালিয়ে আসছে যা আমরা বিশ্বাস করে থাকি!  আমি প্রশ্ন করলাম কারা ষড়যন্ত্র করেছিল?  তার উত্তর ছিলো ইহুদী নাসারদের ষড়যন্ত্র। আমি বললাম, তখন তো মক্কা ও মদীনা ছিলো ইহুদী খৃষ্টান শুন্য।

তিনি আবারও বললেন, আপনারা ওসব বুঝবেন না, ইরানের শীয়ারা হযরত  মুয়াবিয়া ও ইয়াজিদের নামে সারা  দুনিয়াতে ওসব ছড়ায়। আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ,  মুয়াবিয়ার খলিফা হওয়ার জন্য দোয়াও করেছিলেন। আর ইয়াজিদ কখনো  হোসাইনকে হত্যা করতে চায়নি।
তার মানে হলো, এ উপমহাদেশে এক শ্রেনীর আলেম উলামা রয়েছেন যারা, বিশ্বাস করেন, মুয়াবিয়া ও এজিদ নির্দোষ! আবার  নবীর নাতী,  ফাতেমা ও আলীর  পুত্রদ্বয় হযরত হাসান  হোসাইনকেও দোষী বলতে সাহস পাচ্ছেন না। সে সুযোগও নেই। তাই সব চেয়ে সহজ ও পুরোনো কৌশল ইহুদী নাসারার ষড়যন্ত্রে ঈমাম হাসানকে বিষ খাইয়ে মেরেছে। আর ঈমাম হোসাইনকে এজিদ হত্যা করতে চায়নি। এজিদকে  কেউ ষড়যন্ত্র করে হত্যা করিয়েছে। প্রকৃত বিষয় হলো, এভাবে হাসান ও হোসাই হত্যাকে যদি ইহুদী নাসারার ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে দেয়া যায়, তবে এ কুল ও কুল, দুইই রক্ষা পায়। মুয়াবিয়া ও এজিদকে হাসান ও হোসাইনের খুনি চিহ্নিত যাবে না। আবার হাসান হোসেনের নৃশংস হত্যার দিনে শোকও পালন করা যাবে। শত্রুও পাওয়া গেলো ইহুদী নাসারা!
আমি উক্ত আলেমের বয়ান,  অন্য একজন আলেমকে বলি,  তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন সেই আলেমের প্রতি। এবং এক পর্যায়ে সেই আলেম ও তার উস্তাদ, উস্তাদদের উস্তাদ নিয়ে এমন সব মন্তব্য করেন, যা আমি এখানে লিখলে অনেক মুসলিম আমার কল্লা ফেলে দিতে চসইবে, নিদেন পক্ষে বাংলাদেশে  ৫৭ ধারায় মামলা হবে, ইসলাম অবমাননার দায়ে! কোন আলেম  যে আরেক আলেম সম্পর্কে এমন ভাষায় কথা বলতে পারে। এই প্রথম শুনলাম।

ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। মুয়াবিয়া খুব কৌশলে ধীরে ধীরে আলীর নিকট থেকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে থাকেন। এমনকি সে সময়ের অনেক সাহাবী বিশ্বাস করতেন,  মুয়াবিয়া নবীর নাতী ঈমাম হাসানকে গুপ্তচর দিয়ে  বিষ খাইয়ে হত্যা করিয়েছে। আর মুয়াবিয়ার পুত্র এজিদ তো পিতা মুয়াবিয়া থেকে একশ কদম আগে। তথা , ঈমাম হোসাইনের মাথা কাটিয়ে তার দরবারে এনেছিলো। তা তো সারা পৃথিবী জানে। ইমাম হোসেনের বংশের ছয় মাস বয়সী শিশু সহ ৭২ জনকে হত্যা করা হয়েছিলো।

এমনকি এজিদ যদি ঘোড়া থেকে পরে গিয়ে নিহত না হতো, তবে মক্কাতেও হয়তো  হত্যাযজ্ঞ চালাতো। যা, সে তার বাহীনিকে মদীনায় করতে দিয়েছিলো। এজিদের ত্রিশ হাজার সেন্যের এক বিশাল  বাহিনী মদীনায় তিন দিন যা খুশি তাই করেছে। খুন  ধর্ষন সহ এমন কোন অমানবিক কাজ নেই যা এজিদের বাহিনী করেনি। এমন কি তার বিরুদ্ধে আরো  ভয়ানক অভিযোগও রয়েছে। যে, নবী হযরত মুহাম্মদ যে ঘরে থাকতেন, তা এজিদের সৈন্যরা পশুর গোয়ালে পরিণত করেছিলো! এজিদের সৈন্যরা কেবল, কারবালাতে হযরত  হোসাইন ও তার সঙ্গীদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা মদীনার সাত শত হাফেজ, প্রায় শ খানেক কুরাইস বংশের লোকজন, মদিনার  দশ হাজার আম নাগরিক,  সতর শ মুহাজির, আনসার তাবেইন ও আলেম হত্যা করেছিল।
আর এতই ধর্ষন করেছিলো যে, এ হাজার মদীনাবাসী নারী গর্ভবতী হয়ে যায়! পৃথিবী আর কোন দিন মদীনায় এমন হত্যা, ধর্ষন ও নৃশংসতা দেখেনি।

আসলে বনু হাশিম ও  বনু উমাইয়া গোত্রের বিরোধ ছিলো বহু  আগে থেকেই।  হাশিম ও উমাইয়ার পুর্ব পুরুষরা যারা কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত ছিলো। অধিকাংশ উমাইয়ারা মক্কা বিজয়ের আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে হযরত মুহাম্মদের হাতে ইসলাম গ্রহন করে। তার আগে তারা প্রায় সকলে ইসলাম ও মুহাম্মাদের বিরোধিতা করে আসছিলো।
আবু সুফিয়ান যখন একবার হযরত আলীর নিকট দাবী করে , আমরা উভয়েই  আব্দুল মান্নাফের বংশধর। আলী তার উত্তর দেন, তোমার কথা সত্য তবে, উমাইয়া কোন ক্রমেই হাশিমের সমতুল্য নয়।
আলী, বনু হাশিম গোত্রের ; মুয়াবিয়া উমাইয়া গোত্রের। কুরাইশ গোত্রের হলেও, বনু হাশিম ও  বনু উমাইয়া গোত্রের বিরোধ কয়েক পুরুষের আগেও ছিলো তথা ইসলাম প্রচারের আগেও উমাইয়াকে মক্কা থেকে দশ বছরের জন্য বহিস্কার করা হয়েছিলো হাশিম জীবিত থাকার সময়। হাশিমের মৃত্যুর পর আবার বিরোধ বাধে। তখন হযরত মুহাম্মাদের দাদা আব্দুল মুত্তালিব কাবা দেখা শোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এবার মেনে নিতে চাননি,  উমাইয়া বংশের হারব। কিন্তু আবার আরবদের সালিশে উমাইয়ার মত, হারবেরও একই পরিণতি হয়। হারবকেও মক্কা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বনু হাশিম ও  বনু উমাইয়াদের এমন বিরোধ ইসলাম প্রচার প্রসারের আগেও ছিলো পরেও ছিলো। যদিও মক্কা বিজয়ের পর বনু উমাইয়ারা সকলে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে। এবং আরবদের ইসলামি সাম্রাজ্য বিস্তারে ঐতিহাসিক  ভূমিকা রাখে!

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours