শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

কে আসিফ একবার, মীর তাজ মোহাম্মদ খানকে দেখে মোঘল এ আজম সিনেমায় আকবরের সেনাপতির ভুমিকায় অভিনয় করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু মীর তাজ, কে আসিফের প্রস্তাব তুচ্ছ ভাবেই প্রত্যাখান করেন। এবং বলেন, তাকে দিয়ে এসব অভিনয় নামের ফালতু কাজ করানো যাবে না। মজার বিষয় হলো, সেই মীর তাজের পু্ত্র শাহরুখ খানই আজ বলিউডের কিং খান বলে পরিচিত! উল্লেখ্য অতপর মীর তাজের স্থানে মুরাদকে আকবরের সেনাপতির ভূমিকায় অভিনয় করানো হয়।

মোঘলে আজম সিনেমার নির্দেশক কে আসিফ, সঙ্গীতকার নওশাদকে দিয়ে সঙ্গীত পরিচালনা করাতে গিয়ে বারবার অনেক  টাকার লোভ দেখান। কে আসিফ মনে করতেন টাকা হলেই সব সম্ভব! কিন্তু সে সময়ের অগ্রীম এক লাখ টাকার প্রস্তাব ফেরত দেন। তারপর বারবার অর্থের লোভ দেখিয়ে কে আসিফ ব্যার্থ হলে, সঙ্গীতকার নওশাদকে অনুরোধ করেন। এতে নওশাদের মন গলে। তবে, এই কিংবদন্তী সঙ্গীতকার উল্টো প্রস্তাব দেন তিনি টাকা ছাড়াই এ মুভিতে সঙ্গীত পরিচালনা করবেন।

আমরা তো  বড়ে গোলাম আলীর ৫০ হাজার টাকায় দুটি গান করার কথা শুনেছি। যখন তা অন্যেরা নিতেন ৮শ বা ১ হাজার টাকা। বড়ে উস্তাদ গোলাম আলীর উদ্দেশ্য ছিলো তিনি  বেশি টাকা চাইবেন, যাতে তাকে সিনেমায় গান করতে না হয়৷ কিন্তু কে আসিফ, নাছোর বান্দা।  তার বিশাল বাজটের প্রস্তাব সাদরে গ্রহন করেন। এবং বড়ে গোলাম আলীকে দিয়ে মোঘল এ আজম সিনেমায়,গান করিয়েই ছাড়েন। আরো মজার বিষয় হলো, এই সিনেমার একটি গান বাথ রুমে রেকর্ড করানো হয়, লতা মুঙ্গেশকারের কন্ঠে।  মোঘল এ আজম সিনেমার কাহিনীই কেবল ঐতিহাসিক কাহিনী নয়। এই সিনেমা তৈরীর কাহিনীও আরেক খন্ড  ইতিহাস!
শাহাজাদা সেলিমের ছোট বেলার চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তবলা বাদক ,উস্তাদ  জাকির হোসেইনকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো কিশোর তিনি তা প্রত্যাখান করেন। যা পরে কিশোর বয়সী  জালাল আগা, সেলিমের ছোট বেলার চরিত্রে অভিনয় করেন।

কে আসিফ নিজে ব্যাতিতই কাহিনীকার ছিলেন আরো চারজন কামাল আম্রোহী, ওয়াজাহাত মীর্জা,  এহসান রিজভি ও আমান।  আমান হচ্ছেন জিনাত আমানের বাবা। একবার কার নাম পোষ্টারে আগে থাকবে তা নিয়ে বিরোধ হয়।  বিরোধ এতই তুঙ্গে উঠে যে,  সিনিমার পোস্টার জটিলতা নিয়ে  মুক্তিই পিছিয়ে যায়!  দীলিপ কুমার, মুধুবালার নাম আগে থাকবে নাকি আকবর চরিত্রে অভিনয় করা পৃথ্বীরাজ কাপুরের নাম আগে থাকবে এ নিয়ে জেদ ধরে বসেন মধূবালা ও দীলিপ কুমার। তারা চেয়েছিলেন, পৃথ্বীরাজ কাপুরের নামের আগে তাদের  নাম ছাপা হোক। এ খবর জেনে পৃথ্বীরাজ কাপুর নিজে থেকেই কে আসিফকে বলে দেন, পোষ্টারে নাম  আগে পেছনে থাকা কোন বিষয় নয়। ওদের প্রস্তাব মতই যেন তার নাম পরেই ছাপা হয়। কিন্তু কে আসিফ তো এ রোখা মানুষ! তিনি দীলিপ কুমার ও মধূবালাকে জানিয়ে দেন। এটা সেলিম  আনারকলি মুভি হচ্ছে না। মুভিটার নাম মোঘল এ আজম!  তাই পোষ্টারে প্রথম নাম ছাপা হবে, পৃথ্বীরাজেরই। এবং তাই করা হয়।

দীর্ঘ ১৯৭ মিনিটের এই সিনেমা মোঘল এ আজম। ভাবা যায়! শুধু তাইই নয়। এই ছবি সাদা কালো হলেও  কিছু অংশ রঙিনও করা হয়েছিলো। যা,পৃথিবীর সিনেমার ইতিহাসে বিরল। এখানেই শেষ নয়। এই সিনেমা ছয় মাস চলার পর,আরো কিছু অংশ জুরে দেয়া হয়েছিলো। যা ইতিহাসে অন্য কোন সিনেমার বেলায় ঘটেনি। এবং টানা ১৫ বছর ছবিটি চলছিলো। পাকিস্তানই নয়; বার্মা ও শ্রীলঙ্কা থেকে  কেবল  মোঘল এ আজম ছবি দেখার জন্যই ভারতে লোকজন আসতো। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় প্রযোজক শিরাজ আলী পাকিস্তান চলে গেলে, কে আসিফকে পরামর্শ দিয়ে যান, বিজিনেস টাইকুন সরুজজী পালোনজির নিকটে যাওয়ার। শিরাজ আলীর অনুমান সঠিক হয়। সরুপজি পালোনজি সত্যি সত্যিই মোঘল এ আজম মুভিতে বিনিয়োগ করতে রাজি হন। যা পরবর্তীতে সিনেমার  ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লোখা  হয়ে যায় তার নাম! (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours