জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

ভাবের দিক থেকে বন্য প্রবনতার শিকার,  সাধারনত তারাই, যারাই
------ জ্ঞান ও দর্শনের বিষয়ে আদিভৌতিকবাদ কিংবা ম্যাটাফিসিক্সের ছায়াবৃত্তে, স্বর্ণ হরীনের অস্তিত্ব দেখতে পান। দলের উপরে  আদিভৌতিকবাদের বিস্তার তখনই ঘটে, যখন জাতীয়তাহীন জাতীসত্বাকে মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়।

তাই 'বনিকের মানদন্ড"  যখন'  রাজদন্ড রুপে দেখা দিলো,  বৃটিশের দু'শো বছরের শাসন কালকে, কিংবা পলাশির প্রান্তরে মীরজাফর - জগৎ শেঠদের উপস্থিতির ইতিহাসকে  , যদি  জাতীয়তার উন্মেষকালের  বিশ্বাস ঘাতকতা হিসেবে দেখতে না চান
----- জাতীয়তাতেও বিশ্বাসঘাতকতা কিংবা বণ্যতা প্রভাব বিস্তার করবেই। যে রাজনীতি, জাতীয়তার আধুনিক সর্ত হিসেবে, তাকে যে ইতিহাসের ইতিবাচক দিকগুলিকে এক পাত্রে মিশ্রন ঘটিয়ে যে জাতীয়তাকে   গড়ে পিটে  নেওয়ার নিয়মটিকে,  আত্মস্ত করতে ব্যর্থ  হন,
---- তখন এই ব্যর্থতার নেতিবাচকতাই দলের  'চরিত্রে' প্রতিস্থাপিত হবেই। কাজেই , দল হিসেবে বিজেপি দলটির বর্তমান হালতে' অস্বাভাবিকতার কিছু দেখি না।
পলাশির বিশ্বাস ঘাতকতাকে খাটো করে দেখা, কিংবা বৃটিশ বিরোধীতায় আনন্দ খুজে না পাওয়ার, ডি এন এ অন্য এক বিন্দুতে চিহ্নিত হয়ে আছে। যারা মেনে চলেন, মোগলদের হাতেই স্বাধীনতা গেছে, তারা স্বাভাবিকভাবে, পরাধীণতা বোধহীনতায়, বৃটিশদের বন্ধুজ্ঞানে এবং হিটলারকে ত্রাতা মানবেন নিশ্চিত।
------ কেন না ইতিমধ্যেই, আপনি, সিপাহী মিউটিনি উত্তর জাতীয়তাকে, প্রজাতান্ত্রীক  জাতীয়তার ঘারে চাপিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ কিংবা 'জনগনমন'কে তাড়িয়ে 'বন্দেমাতারমের' স্থান করে দেওয়াকে নিশ্চিত করতে চেয়েছেন।আর ইতিহাসকে যদি মানতে হয়, কংগ্রেস দলের আত্মপ্রকাশের পূর্ব পর্য্যন্ত
----- ভারতীয় জাতীয়তায় প্রজাতন্ত্রের উদ্ভবই ঘটে নাই এবং তেমনটি ঘটার কথাও নয়।
যদি মেনে চলাহয়, পঞ্চদশ শতাব্দীতে মোগল আসার পূর্বে, ভারতে একতা সাবলিল জাতীয়তার সত্বা বিরাজমান ছিল,তবে
----- একাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগেই  ভারতে সুলতান সাম্রাজ্যের গেড়ে বসার কোন কার্য্যকারন সম্পর্ক খুজে পাওয়া যায় না । আর যদি মেনে নেওয়া হয় মোঘোলদের পূর্ব্বেই স্বাধিনতার বিসর্য্যন ঘটে গিয়েছিলো, তবে মানতে হয় সুলতান সাম্রাজ্যের পূর্বে ই নিশ্চয়, ভারত একটা স্বাধীন আত্মনির্ভর জাতীয়তা বিকশিত হোয়ার সুযোগ পয়েছিলো,
----- যাকে ইতিহাস,  উঘ্র জাতীয়তাবাদ' বলে চিহ্নিত করতে পারতো, সেটাকে বদ্ধ উন্মত্ততাই বলা যাবে। তখন ইতিহাস বোধহীনতাও  নিশ্চিতভাবে  তলানীতে চলে যেতে চাইবে। যদি মেনে চলেন
---- যারা আধুনিক কালের জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে এড়িয়ে গিয়ে, , সমাজ বিজ্ঞানের স্বাদ আস্বাদন করতে চেয়েছেন, তারা - যে একপ্রান্তে বণ্য আকৃ্তি না পেলেও, প্রকৃ্তিতে বণ্যতার চরিত্র বহন করে চলবেনই।শেষ পর্য্যন্ত বিষয়গুলিরনিস্পত্তি  হবে
-------গনতন্ত্র বনাম ফ্যাসিবাদের সংঘাতের পরিনামেই । কিন্তু এর মধ্যেও  নেতাদের  অবরুদ্ধ জাতীয়তার প্রভাবে যেভাবে দলের নেতা-কর্মীদের চারিত্রিক বৈশিষ্টগুলিও  বন্যাবস্থায় কিংবা সর্বগ্রাসী  আত্মসর্বস্যতায় নেমে আসছে, সে বিষয়টা দল যদি নিজেদের  বোধে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়, তবে 'চৈনিক কার্নিভাসের। এর '  মতোই মরক পুরো , দলটাকে গিলে খাবে।

ইতিমধ্যে সে ,
সেদিন থেকে যখন এক একজন  এক খন্ড গেরুয়া কাপ[ড় পরিধান করার দৌলতে দেশের সাংসদ ও বিধায়কের আত্মমর্য্যাদাবোধ তলানীতে পৌছু্তে শুরু করেছে। 
---- আপনাদের মানতেই হবে, ভারতীয় রাজনীতির আধুনিকতার বাহন হিসেবে জ্ঞান এবং যুক্তিবাদকে যেভাবে   'গেরুয়ার' আদিভৌতিকবাদ পেছনে ঠেলতে শুরু করলো, সেদিন থেকেইই, রাজনীতিকদের সামাজিক দায়বদ্ধতা হ্রাস পেয়েছে, দিল্লীর সাম্প্রতিক  নির্বাচনে পার্থীদের আর্থিক অবস্থানের দিকে  তাকিয়ে দেখলেই পরিস্থিতি বোঝা যাবে। অধিকাংশ ভোট প্রার্থী 'মিলিয়নিয়ার' । আজকের দিনে টাকার সিন্দুক ব্যতিরেখে কমিউনিষ্ট পার্টীগুলি ছাড়া, শিক্ষিত যুক্তিবাদীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাই অসম্ভব। আমার ব্যক্তিগত ধারনা, ধীরে ধীরে কমিউনিষ্টদের পক্ষেওঃ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অসম্ভব হয়ে পরবে।
জাতীয়তার চন্দ্রগ্রাসে রাজনৈ্তিক দল হিসেবে, তার গনতান্ত্রিক চরিত্র অব্যাহত রাখার প্রশ্নে,  বিজেপির সব থেকে ক্ষতি হয়েছে। আজকে, অর্থের প্রহেলিকায় ভোটে জেতা সব থেকে বেশী সংখ্যক সাংসদ এই দলের এবং সব মিলিয়ে এই সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, সংসদ ক্রমে, লেনিনের ব্যক্যা অনুযায়ী শুয়োরের খোয়ার হয়েছে। ভালো ভাষন দেওয়ার পরিবেশটারই বারোটা বেজে গেছে।
বণ্যতায় আক্রান্ত জনপ্রতিনিধীদের সংখ্যাও বিজেপিতে সব থেকে বেশী।
----- সময় হয়েছে সে কথাটা বোঝারঃ সংবাদ মাধ্যম যখন 'আদিভৌতিকবাদে আচ্ছন্ন কোন দলকে 'উঘ্র জাতীয়তাবাদী'তে আখ্যায়ীত করে এবং সেই দল গ্যাস খেয়ে, আরো বেশী বেশী করে বোঝাতে থাকে যেন
----- পৃথিবী নয়, সূর্য্যই ঘোরে, তাতে সেই দলটির ফ্যাসিস্ত হওয়া ছাড়া অণ্য ঊপায় থাকবে না। এমনকে যদি ঘটতে দেওয়া যায়, দেশের সর্বনাস হবে ঠিক নিশ্চিত ভাবে দলের মধ্যে স্বরযন্ত্র এবং পালটা স্বরযন্ত্রে লোক কম মড়বে না।
----- ব্রাহ্মণ্যবাদ- সর্বস্ব , জাত-পাত ভিত্তিক, অন্য ধর্মের প্রতি হিংস্রতা নির্ভর পুরুষ সর্বস্যতা যে কী হিংস্র রুপ নিতে পারে, তার ছবি পাওয়া যাবে সাম্প্রতিক কালে 'যৌনতার' অভিযোগে অভিযুক্তদের উন্মত্ত হিংস্রতা থেকে।
তাই হয়, দলকে বাচাতেই,
বিজেপি দল কোন বিকল্প বিহীনভাবে ৭০ বছরে যে জাতীয় প্রবাহ নির্মিত হয়েছে, তার ভাংগা থেকে ফিরে আসতে হবে।হাত মেলাতে হবে অন্য সব দলের সাথে--
যাতে সংবিধান এবং সংধানের মূল প্রবাহটি যাতে কোন মতে আপোষ না হতে পারে।কোন দলের আইনি অস্তিত্বের সর্ত হতে হবে সংবিধান।
এই সুত্রেই মানতে হবেঃ
প্রথম শতাব্দীর প্রথমভাগে গুপ্ত  বা মৌর্য্য সাম্রাজ্য ভাংগতে শুরু করার কাল থেকেই, আরো স্পষ্ট করে বলতে হয়, বৌ্ধ ধর্মকে ভেংগে দিয়ে, বৈ্দিক বর্ণাশ্রমকে ফিরিয়ে আনার পর থেকেই
----- সামন্তিক সমাজের জাতীয়তাটুকুও ভাংগতে শুরু করেছিলো। তাই, ১১৯১ তে মহম্মদ ঘুড়ীর দ্বার সুলতান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার, অনেক পূর্বে (আনুমানিক ৭৫ খৃষ্টাব্দে) কুষান আক্রমনের পর থেকে লাগাতার বৈ্দেশিক আক্রমন চলতে থাকে।
এর মধ্যে মূঘল আমলেই প্রকৃ্ত অর্থে, নানা রকম সংস্কার এবং সংস্কৃতির বিস্তারের মধ্য দিয়ে  সামন্তিক জাতীয়তাবাদের কিঞ্চিত হলেও বিকাশ ঘটে।
 আর রবার্ট ক্লাইভরা যখন বাঙ্গালা হয়ে অযোধ্যা পর্য্যন্ত পৌছুছে, তখন  তথাকথিত ভারতীয় জাতীয়তার অর্থ হোলঃ
--- অতি হিংস্র ব্রাহ্মন্যবাদী বর্ণাশ্রম, নাস্রীদের প্রতি হিংস্রতা, অনুমান সর্বস্য টোল শিক্ষা, যেখানে  ব্রাহ্মন এবং রাজপুরুষ ব্যতিরেখে অন্যদের প্রবেশের অধিকার নেই। নিশ্চিতভাবে গেরুয়াধারী কিছু সাধু সন্ত, সুফি-কবির-ভক্তিবাদ জাতীয়তার রেশ ধরে রেখেছিলো। পাশাপাশি কাপালিক এবং তন্ত্রসাধকরাও ত্রাসের কারন হয়েছিলও।
------ পাশ্চাত্যের বা ইউরোপের গনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব  এবং দ্বিতীয় যুদ্ধের মহামানবিক আবেদনকে , তারসাথে রবীন্দ্রনথের মহামানবিক আবেদন এবং জনগনমনকে বাদ দিয়ে আধুনিক জাতীয়তাবাদের ভিত্তি কিছুতেই  নির্মিত হওয়ার সুযোগ ছিলো না। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours