শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

আজকে লেখার কথা ছিলো ভিন্ন বিষয়। কিন্তু লিখতে হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ ভারত বিরোধী কেন, তা নিয়ে।  খুব বড় করেও লিখছি না। আজকাল অধিকাংশ মানুষ বড় কিছু লেখা দেখলে নাকি পরতে চায় না। সাভারের জাহাঙ্গীর নগরের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী আমাকে বলে ছিলো। তার মোটা বই দেখলে মাথা ঘুরে! আমিও অনেককে চিনি তারা বড় লেখা পড়তে চায় না।

প্রসঙ্গ বাংলাদেশের মানুষ এত  ভারত বিরোধী কেন?
আসলগুলো কারন কি কি?  সীমান্ত হত্যা? ৭২ এ অস্ত্র গোলা নিয়ে যাওয়া? এই দুই কারন ছাড়া আর কি? জামায়াত ও বিএনপির ভাষায় ভারত আমাদের দখল করে নেবে? তাহলে তিনটা?  আর কি? আরো কোন কারন? বামপন্থীদের মতে; ভারত সাম্রাজ্যবাদী।  বাংলাদেশের  উপর খবরদারী করে। আমাদের ব্যবসা শেষ করে দিলো! আরো কোন কারন নেই তো বাংলাদেশীদের ভারত বিরোধীতা করার? থাকলে তা কি কি ?

আসুন আমরা  আরো কারনসমুহ খুজি।  আরো একটা কারন মনে পরছে। " নরেন্দ্র মোদী মুসলিম বিদ্বেষী " বিজেপি মুসলিদের তাড়াতে চায়।" "নরেন্দ্র মোদী মুসলিম বিদ্বেষী "  "বিজেপি মুসলিমদের তাড়াতে চায়।" এমন অভিযোগ কেবল, ঢাকার  মোল্লাদেরই নয়। ঢাাকার অধিকাংশ কমরেডদেরও। আরো অভিযোগ ঢাকায় অসংখ্য ভারতীয় চাকরী করে টাকা নিয়ে চলে যায়!
প্রশ্ন থেকে যায়;  তাহলে ৭১ সালের  আগে  এ অঞ্চলের মানুষ কি ভারতকে খুব ভালোবাসতো? পছন্দ করতো? উত্তর হবে এক বাক্যে "না"।  ইতিহাস তা বলে না। আবার যদি প্রশ্ন করি পাকিস্তানিরা আমাদের ভালো বাসতো? পাঞ্জাবিরা কি বাঙালিদের ছোটজাত, কালা, শুয়োর,   অযোগ্য মনে করতো না? তাহলে হয়তো কেউ বলতে পারেন, আরে ভাই, ধান বানতে শীবের গীত গাইছ কেন! বাংলাদেশের মানুষ কেন ভারত বিরোধী তা নিয়েই লিখছিলে, লেখ। ভালো কথা। মেনে নিলাম। আরো দু একটা কারন খুঁজি, কেন বাংলাদেশের মানুষ ভারত বিরোধী।

ও আরো একটা পাওয়া গেছে। বাবরী মসজিদ ভাঙ্গা হয়েছিলো। তাই এদেশের মানুষ ভারত বিরোধী। আরো, কোন কারন? আমার মাথায় আসছে না। আপনাদের আসছে কি, বাংলাদেশের মানুষের ভারত বিরোধীতার কারন?  ও মনে পরেছে আমার,  ভারত আওয়ামী লীগকে সাপোর্ট করে। তাই এ দেশের মানুষ ভারত বিরোধী।  তাহলে তো আওয়ামী লীগের নেতা কর্মিদের ভারত বিরোধীতা করার কথা নয়। অথচ আমি বেশ কিছু আওয়ামী নেতা ও কর্মিকে চিনি যারা ভারত বিরোধী! ভারত বিরোধীতার জন্য,  বিএনপির  মওদূদ আহামেদ ও সাকা চৌধুরীকে ভারতীয় ভিসা দেওয়া হতো না, বলে, জানতাম। তাদের দুজনকে ভিসা না দেয়ার  কারনে, এ দেশের মানুষ  ভারত বিরোধী হওয়ার কথা নয়। আচ্ছা আরো কি কি কারন বাংলাদেশের মানুষ ভারত বিরোধী হয়। এ সব তো গেলো।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারন। অারো অন্য কোন কারন নেই তো? সাম্প্রদায়িক কারনে এদেশের মানুষ ভারত বিরোধী নয় তো? অথবা ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সার্বিকসহযোগীতা করার জন্য এ দেশের বিরাট একটি অংশ ভারত বিরোধী নয় তো? কিছু বামপন্থী চায়নিজ পন্থী হওয়ার কারনে ভারত বিরোধীতা করছেন না তো?  আর কিছু মানুষ যারা কায় মনে প্রাথনা করেন ভারত ভাঙ্গছে না কেন? ভারত ভেঙ্গে যাক এই রকম চিন্তার মানুষ আমি খুজে পেয়েছি।  যারা খুবই পাকিস্তান প্রেমী এবং ইসলাম  ধর্মভত্তিক দল৷ ও মাওবাদী তথা চায়নিজ পন্থী বাম রাজনীতিতে যাদের আস্থা আছে। এরা কেবল বাংলাদেশেই নয়, খোদ  ভারতেও এমন চেতনার কিছু মানুষ আছে। সে আরেক দিন বলা যাবে৷ আজ বাংলাদেশের মানুষ কেন ভারত বিরোধী তা নিয়েই কথা বলি। অপ্রিয় হলেও সত্য এই যে,  বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোন থেকে ভারত বিরোধী। এবং তার চেয়েও বেশি সত্য ভারত, বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে সবরকম সহযোগীতা দিয়েছে। তার জন্যও এ দেশের অনেক মানুষ ভারত বিরোধী। কেন না, যারা ৭১ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী ছিলো তারা এ দেশ ছেড়ে চলে যায়নি। বরং স্বাধীনতা বিরোধী শিরোকুূল মনি গোলাম আযম এ দেশে আবার ফিরে এসেছিলো জামাই আদরে। এমন কি মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত  বিচারধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করার পর তার জানজা আয়োজন করে করতে দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা! এটা তার বদান্যতা বলবো নাকি মহানুভবতা , নাকি বোকামী ?  তা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে, ইতিহাস বলে,  এই স্বাধীন বাংলায় বঙ্গবন্ধুকে প্রকাশ্যে জানাজা করতে দেয়া হয়নি! ঢাকায়,তো দুরের কথা। বঙ্গবন্ধু জন্মস্থানে একেবারে কঠোর গোপনীয়তায় জানাজা করতে বাধ্য করা হয়েছিলো।

এ দেশের মানুষের ভারত বিরোধীতার আরো একটা কারন, তা হলো বঙ্গবন্ধু সাথে ভারতের সুসম্পর্ক।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক থাকলে ঢাকার না দিল্লীর লাভ হবে তা এ নিয়েও এক শ্রেনীর  মাথা ব্যাথার শেষ নেই।
বাংলা দেশে ভারত বিরোধীতা এখন যে কোন সময়ের চেয়েবেশি। যদিও বাংলাদেশীদের ভারতের ভিসার চাহিদা বেশি! এবং আমি স্বচোখে মুম্বাই, কোলকাতা, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুরুতে হাজার হাজার বাংলাদেশী রোগীর চিকিৎসা করতে দেখেছি। অবশ্য ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায়ও ভারতের কঠোর সমালোচনাও করতে দেখেছি বাংলাদেশীদের!  সে কথা নাই বা বললাম।

কেউ মানুক না মানুক সত্য এই যে  বাংলাদেশের মানুষের  অধিকাংশের ভারত বিরোধীতা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোন থেকে। সেই সাথে রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতা। অন্য যে সকল আরো যে সকল  কারন সামনে আসে তা মুখ্য কারন নয়। এর সুরাহা  নিয়ে দু দেশেরই ভাবা উচিত।  তা না হলে, দু দেশকেই ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। কথাগুলো এ জন্য বললাম, আজ ৬৯/৭০ কিলোমিটার ট্রেন ভ্রমনে আম পাবিলেকের মুখে যা শুনলাম তা বিপদজনক ও লেখা সমম্ভব নয়। ভারত সম্পর্কে স্বাধীন বাংলাদেশেই; পাকিস্তানের আইএসআই, স্বাধীনতা বিরোধী ব্যাক্তি গোষ্ঠী, দল ও চৈনিয়ক বামেরা যে সকল প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে তা সত্যিই সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। পাকিস্তানের ইরান আছে, আফগানিস্তান আছে, ভারতের সাথে না চললেও চলবে৷ বাংলাদেশের সে সুযোগ নেই। এ দেশের বানিজ্য চায়নার পরই সম্পূর্ণ ভারত নির্ভরশীল। এবং একমাত্র স্থল সীমানায় ঘেরা দেশ। রোহিঙ্গাদের কেন্দ্র করে  ঢাকার সাথে মায়ানমারের সম্পর্ক একেবারে তলানীতে। সব বদলানো যায় দেশের সাথে সীমানা ঘেষা প্রতিবেশী দেশ বদলানো যাবে না। এই দুই প্রতিবেশী দেশ তা যতদ্রুত বুঝে ততই মঙ্গল।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours