কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিষ্ট, কলকাতাঃ
- বলুন তো, বিবেকানন্দ যে ধর্ম মহাসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন, সে জায়গার নামটা কী?
- চিকাগো না শিকাগো?
বুকে হাত রেখে, হলপ করে নাও বলতে পারেন। কারণ আপনার বিদ্যার দৌড় 'আপটু' বিবেকানন্দের চটি বই 'পর্যন্ত'। 'আপটু পর্যন্তর' গেড়োতেই অনেক বাঙালি শেষ। তাই আপনি শহরের সঠিক নামটা নাও বলতে পারেন। দোষটা আপনার নয়। দোষটা ওসব বইয়ের। আপনার পড়া ওই বইয়ে আমেরিকার ওই শহরের নাম কোথাও চিকাগো, আবার অন্য কোথাও শিকাগো লেখা ছিলো।
ওদিকে বানানের যা ছিরি, তাতে চিকাগো হতে পারে আবার শিকাগোও। সেই হাতেখড়ির পর থেকে আপনি শিখে এসছেন 'সি', 'এইচ'- এ 'চ' হয়। চিলড, চ্যান্সেলর, চক প্রভৃতি। কিন্তু আমেরিকানদের মুখে ওই নাম শিকাগো। এরকম আরও আরও সহস্র উচ্চারণ বিভ্রাট আছে। গার্জিয়ান নাকি গার্ডিয়ান, অল্চিচিউড নাকি অল্টিটিউড, শেডিউল নাকি স্কেডিউল?
আমেরিকার ছোট্ট এক শহরের নাম শিকাগো। তবু আপনার ভুল হলে হতেই পারে। ইংরাজির উচ্চারণ যে আপনি সাহেব বা মার্কিনিদের মতো করতে পারবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। তাহলে ট্রাম্প যদি বিবেকানন্দের নাম উচ্চারণ বাঙালির মতো না করতে পারেন, তাতে দোষটা কোথায়?
বাংলা ভাষার উচ্চারণটাই বা আপনি কতটা ঠিকঠাক ভাবে করতে পারেন, ভেবে দেখেছেন কি? সেই যে শ্যামবাজারের শশীবাবু শশা খান। শ- য়ের খেলা। দুই ন- এর উচ্চারণে আপনার কালঘাম ছোটে মশাই। গণেশ আর জনতা, দুই 'ন' আর 'ণ', আপনার জিভে মিলেমিশে এক। বাংলার তিন র, ড়, ঢ়। বাঙালির মুখে একই শোনায়। আর ইংরাজির 'V' এর উচ্চারণও বাঙালির জিভে আসে না।
আসলে ভাষা উচ্চারণে মানুষের অনেক সমস্যা। আর ট্রাম্প সেই মানুষ প্রজাতির মধ্যেই পরেন। তাঁর নিজের মাতৃভাষা ইংরেজি উচ্চারণে সুপার পাওয়ার দেশের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনও সমস্যা আছে এমনটা শুনিনি। তবে তিনি বিদেশি ভাষার ভুলভাল উচ্চারণ করে বসেন। ঠিক যে ভুলটা আমি, আপনিও অনেক সময়েই করে বসি। কারণ, কোথাও অজ্ঞতা আবার কোথাও বা জিভের আড়ষ্টতা।
পুরনো এক রসিকতার কথা বলি। অনেকেই রঙ্গ তামাশা করে এমনটাও বলতেন, ওসব গাঁধি সুভাষের জন্য না। ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে পালিয়ে বেঁচেছিল, বাঙালির ইংরেজি শুনেই। সেই অসীমসাহসী বংসন্তানরা এবার বাগে পেয়েছেন খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এসুযোগ কখনও ছাড়া যায় নাকি? এমনকি এক দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিবেকানন্দ উচ্চারণ না করতে পারায়, তাঁকে পাগল- ছাগলও বলা হলো।
ট্রাম্পের মতোই আমাদের অবাঙালি নেতারাও কিন্তু স্বামীজিকে, সোয়ামিজি উচ্চারণ করেন। অনেকটা সোয়াবিনের মতো শোনায় নাকি বংকানে? শোনালে সেটা বাঙালির সমস্যা। যে ওই উচ্চারণ করছেন তাঁর সমস্যা নয়। বিবেকানন্দ হয়ে যান বিবেকানন্দ্।
আর বিদেশি ভাষার কথা ছাড়ুন। যে ভাষাটা অনবরত শোনেন সেই হিন্দি বলতে গেলেই তো কেলোর কীর্তি। কথায় লিঙ্গ- টিঙ্গতো বোঝেনই না। আপ, তুমেরও পিন্ডি চটকে রেখে দেন। উচ্চারণের চোটে বদলে ফেলেন মানেটাও। ধানবাদে এক দস্তুর মতো জনপ্রিয় বাঙালি সাংসদ ছিলেন। ভাষনের শুরুতেই তিনি বলতেন, "হাম আপকা জনানা চাহতা হ্যায়।" সাংসদ যা বলতে চাইতেন, আমি আপনাকে জানাতে চাই। কিন্তু উচ্চারণের মারপ্যাঁচে যা দাঁড়াতো, আমি আপনার গিন্নীকে চাই। কারণ হিন্দিতে 'জনানা' মানে মহিলা, স্ত্রী। ধানবাদের হিন্দিবাসীরা কিন্তু ওই ভুলভাল হিন্দি বলা ভদ্রলোকটিকেই তিনবার সাংসদের আসনে বসিয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা হয়নি এমনটা নয়। কিন্তু তাঁর প্রাপ্য সম্মানটা দিতেও ভুল হয়নি। বরাত ভালো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ধানবাদের ওই সাংসদের মতো কোনও ভুল করে বসেননি। নইলে বিরোধীদের তৎপরতায় নির্ঘাত এক কেস খেয়ে বসতেন।
আবার সেই বাঙালিরাই গদগদ হয়ে পড়েন বলিউড স্টারদের মুখের আধো- আধো বাংলাতে। "আমি তোমাকে বালোবাসি।" মুম্বাইয়ের নায়ক নায়িকারা কলকাতার কোনও অনুষ্ঠানে এলে নিয়ম করে এটা বলে থাকেন। কোথায় তখন তো ভুল ধরেন না? উল্টে যেন কৃতার্থ হয়ে যান। তাহলে আজ হঠাত এমনতরো ক্ষেপে উঠলো কেন বাঙালি?
আজ ট্রাম্পের মুখে স্বামী বিবেকানন্দের নামের ভুল উচ্চারণে, বাঙালি তার চায়ের কাপে ঝড় তুলেছে। কিন্তু এতদিন তো মশাই দিব্য ছিলেন ক্যালকাটা নিয়ে। তখন তো একবারও মানে লাগেনি যে কলকাতাকে সাহেবরা ক্যালকাটা বানালো কেন ? আবার হিন্দিভাষীদের কলকাত্তা।
ওসব বাংলা প্রেম- টেম না, আসলে রাজনীতির সুড়সুড়ি। মার্কিন বিরোধিতার পাঠ পড়ানো হয়েছিল বাঙালিকে। গত চৌত্রিশ বছর যত্ন করে বামপন্থীরা ওই কর্মটা করেছিলেন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল, আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষিত। মোদিবিরোধিতা। সবমিলিয়ে বেশ একটা হইচই বাঁধিয়ে দিয়ে, নিশ্চিন্ত মনে সপরিবার তাঁর আপন মুলুকে ফিরে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
অমর্ত সেন, অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে বিদেশে থাকলেও, বাংলা ভোলেন না। আর বাঙালি কলকাতাতে বসেই, বাংলাটা ভুলে মেরে দেন। আর নিজের এই অজ্ঞতার কথা জানাতে, গর্বে রীতিমতো ফুলে ফেঁপে ঢোল হন বাঙালি। পকেটের জোর থাকলে বাঙালি তার সন্তানকে আজও ভুলে বাংলা স্কুলে পাঠায় না। মোক্ষলাভ সেই পাড়ার ইংলিশ মিডিয়ামে।
আচ্ছা কেমন হতো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি বলতেন- আমার না বাংলাটা ঠিক আসে না!
- বলুন তো, বিবেকানন্দ যে ধর্ম মহাসভায় বক্তব্য রেখেছিলেন, সে জায়গার নামটা কী?
- চিকাগো না শিকাগো?
বুকে হাত রেখে, হলপ করে নাও বলতে পারেন। কারণ আপনার বিদ্যার দৌড় 'আপটু' বিবেকানন্দের চটি বই 'পর্যন্ত'। 'আপটু পর্যন্তর' গেড়োতেই অনেক বাঙালি শেষ। তাই আপনি শহরের সঠিক নামটা নাও বলতে পারেন। দোষটা আপনার নয়। দোষটা ওসব বইয়ের। আপনার পড়া ওই বইয়ে আমেরিকার ওই শহরের নাম কোথাও চিকাগো, আবার অন্য কোথাও শিকাগো লেখা ছিলো।
ওদিকে বানানের যা ছিরি, তাতে চিকাগো হতে পারে আবার শিকাগোও। সেই হাতেখড়ির পর থেকে আপনি শিখে এসছেন 'সি', 'এইচ'- এ 'চ' হয়। চিলড, চ্যান্সেলর, চক প্রভৃতি। কিন্তু আমেরিকানদের মুখে ওই নাম শিকাগো। এরকম আরও আরও সহস্র উচ্চারণ বিভ্রাট আছে। গার্জিয়ান নাকি গার্ডিয়ান, অল্চিচিউড নাকি অল্টিটিউড, শেডিউল নাকি স্কেডিউল?
আমেরিকার ছোট্ট এক শহরের নাম শিকাগো। তবু আপনার ভুল হলে হতেই পারে। ইংরাজির উচ্চারণ যে আপনি সাহেব বা মার্কিনিদের মতো করতে পারবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। তাহলে ট্রাম্প যদি বিবেকানন্দের নাম উচ্চারণ বাঙালির মতো না করতে পারেন, তাতে দোষটা কোথায়?
বাংলা ভাষার উচ্চারণটাই বা আপনি কতটা ঠিকঠাক ভাবে করতে পারেন, ভেবে দেখেছেন কি? সেই যে শ্যামবাজারের শশীবাবু শশা খান। শ- য়ের খেলা। দুই ন- এর উচ্চারণে আপনার কালঘাম ছোটে মশাই। গণেশ আর জনতা, দুই 'ন' আর 'ণ', আপনার জিভে মিলেমিশে এক। বাংলার তিন র, ড়, ঢ়। বাঙালির মুখে একই শোনায়। আর ইংরাজির 'V' এর উচ্চারণও বাঙালির জিভে আসে না।
আসলে ভাষা উচ্চারণে মানুষের অনেক সমস্যা। আর ট্রাম্প সেই মানুষ প্রজাতির মধ্যেই পরেন। তাঁর নিজের মাতৃভাষা ইংরেজি উচ্চারণে সুপার পাওয়ার দেশের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনও সমস্যা আছে এমনটা শুনিনি। তবে তিনি বিদেশি ভাষার ভুলভাল উচ্চারণ করে বসেন। ঠিক যে ভুলটা আমি, আপনিও অনেক সময়েই করে বসি। কারণ, কোথাও অজ্ঞতা আবার কোথাও বা জিভের আড়ষ্টতা।
পুরনো এক রসিকতার কথা বলি। অনেকেই রঙ্গ তামাশা করে এমনটাও বলতেন, ওসব গাঁধি সুভাষের জন্য না। ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে পালিয়ে বেঁচেছিল, বাঙালির ইংরেজি শুনেই। সেই অসীমসাহসী বংসন্তানরা এবার বাগে পেয়েছেন খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এসুযোগ কখনও ছাড়া যায় নাকি? এমনকি এক দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিবেকানন্দ উচ্চারণ না করতে পারায়, তাঁকে পাগল- ছাগলও বলা হলো।
ট্রাম্পের মতোই আমাদের অবাঙালি নেতারাও কিন্তু স্বামীজিকে, সোয়ামিজি উচ্চারণ করেন। অনেকটা সোয়াবিনের মতো শোনায় নাকি বংকানে? শোনালে সেটা বাঙালির সমস্যা। যে ওই উচ্চারণ করছেন তাঁর সমস্যা নয়। বিবেকানন্দ হয়ে যান বিবেকানন্দ্।
আর বিদেশি ভাষার কথা ছাড়ুন। যে ভাষাটা অনবরত শোনেন সেই হিন্দি বলতে গেলেই তো কেলোর কীর্তি। কথায় লিঙ্গ- টিঙ্গতো বোঝেনই না। আপ, তুমেরও পিন্ডি চটকে রেখে দেন। উচ্চারণের চোটে বদলে ফেলেন মানেটাও। ধানবাদে এক দস্তুর মতো জনপ্রিয় বাঙালি সাংসদ ছিলেন। ভাষনের শুরুতেই তিনি বলতেন, "হাম আপকা জনানা চাহতা হ্যায়।" সাংসদ যা বলতে চাইতেন, আমি আপনাকে জানাতে চাই। কিন্তু উচ্চারণের মারপ্যাঁচে যা দাঁড়াতো, আমি আপনার গিন্নীকে চাই। কারণ হিন্দিতে 'জনানা' মানে মহিলা, স্ত্রী। ধানবাদের হিন্দিবাসীরা কিন্তু ওই ভুলভাল হিন্দি বলা ভদ্রলোকটিকেই তিনবার সাংসদের আসনে বসিয়েছিলেন। তাঁকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা হয়নি এমনটা নয়। কিন্তু তাঁর প্রাপ্য সম্মানটা দিতেও ভুল হয়নি। বরাত ভালো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ধানবাদের ওই সাংসদের মতো কোনও ভুল করে বসেননি। নইলে বিরোধীদের তৎপরতায় নির্ঘাত এক কেস খেয়ে বসতেন।
আবার সেই বাঙালিরাই গদগদ হয়ে পড়েন বলিউড স্টারদের মুখের আধো- আধো বাংলাতে। "আমি তোমাকে বালোবাসি।" মুম্বাইয়ের নায়ক নায়িকারা কলকাতার কোনও অনুষ্ঠানে এলে নিয়ম করে এটা বলে থাকেন। কোথায় তখন তো ভুল ধরেন না? উল্টে যেন কৃতার্থ হয়ে যান। তাহলে আজ হঠাত এমনতরো ক্ষেপে উঠলো কেন বাঙালি?
আজ ট্রাম্পের মুখে স্বামী বিবেকানন্দের নামের ভুল উচ্চারণে, বাঙালি তার চায়ের কাপে ঝড় তুলেছে। কিন্তু এতদিন তো মশাই দিব্য ছিলেন ক্যালকাটা নিয়ে। তখন তো একবারও মানে লাগেনি যে কলকাতাকে সাহেবরা ক্যালকাটা বানালো কেন ? আবার হিন্দিভাষীদের কলকাত্তা।
ওসব বাংলা প্রেম- টেম না, আসলে রাজনীতির সুড়সুড়ি। মার্কিন বিরোধিতার পাঠ পড়ানো হয়েছিল বাঙালিকে। গত চৌত্রিশ বছর যত্ন করে বামপন্থীরা ওই কর্মটা করেছিলেন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল, আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষিত। মোদিবিরোধিতা। সবমিলিয়ে বেশ একটা হইচই বাঁধিয়ে দিয়ে, নিশ্চিন্ত মনে সপরিবার তাঁর আপন মুলুকে ফিরে গেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
অমর্ত সেন, অভিজিত বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে বিদেশে থাকলেও, বাংলা ভোলেন না। আর বাঙালি কলকাতাতে বসেই, বাংলাটা ভুলে মেরে দেন। আর নিজের এই অজ্ঞতার কথা জানাতে, গর্বে রীতিমতো ফুলে ফেঁপে ঢোল হন বাঙালি। পকেটের জোর থাকলে বাঙালি তার সন্তানকে আজও ভুলে বাংলা স্কুলে পাঠায় না। মোক্ষলাভ সেই পাড়ার ইংলিশ মিডিয়ামে।
আচ্ছা কেমন হতো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি বলতেন- আমার না বাংলাটা ঠিক আসে না!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours