প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

আজ আমি বিবাহে সম্মতি দিয়েছি; বাবা বলেছেন,  সংহিতা রীতি মেনে  রাজপুত্রের খড়্গের সঙ্গে পরিণয় হবে আমার। আপত্তি করিনি আমি, কিন্তু ধাত্রীমাতাকে সঙ্গীনীরূপে পেতে চাই। কেন ভুল বলেছি!  বাবা তো সম্মতি দিলেন আমায়; কন্যাপণ যদি বংশরীতিতে প্রশস্ত হয়, বাবা সম্মতি দেবেন। কৌশিক আচারকে আমরা সম্মতি জানাই তো। পণ মেনে বংশরীতির যাপন আমার কাছে মর্যাদা নয়। মেঘে পাল তুলে ভেসে গেলে উড়ো ছাই হয় অভিসারী ভেলা। দুঃখ শিকারী মনে কেবলই আদেশ মনে হয় ভীষ্মের বাণী৷ তবে আমি ঋণী আজ; ভীষ্ম বলেছেন, জন্মান্ধের অভিশাপে কন্যার পুণ্যবল আমার। নির্জনতাকে অজুহাত দিলে যেমন শোকজব্দ প্রাণ তৈরি হয়, আমারো তেমন স্বতপ্রবৃত্ত স্বতন্ত্রতা জাগে।

বেদনাহতের নির্দেশে শকুনী বলেছেন যে, সে ভগিনীর সাথে যাবেন, তবে ক্ষণিকের ঢেউ নয়, নিবিড় আলোড়নের দশমীর মধ্যরাতে ফিরবেন না। স্থিত হবেন সারাজীবন।  ধাতৃমা চাইতেন না যে, আমি ক্ষত্রিয়ানীর বদ্ধমস্তকের আচরণ পালন করি, কিন্তু আমি যে একটিবার স্বামীর মুখ দর্শন করতে চাই। তবে পুত্রের মুখ আমি দেখবো না। ধাতৃমা চেয়েছিলেন আমি যেন মহাপথের আশ্চর্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শেষবারের মতো দেখি৷ তবে তক্ষশিলা পর্যন্ত আমি গিয়েছি৷ আমার অগ্রজ অক্ষক্রীড়াবিদ। আমায় বলেছিলেন, রথাহোরণে ভ্রমণ নাকি বড়ো সুখকর৷ আমি তো জানি যে, অগ্রজ বিপত্নীক, তবে ক্ষেমাংকরীর সাথে শারীরিক নৈকট্য আছে তাঁর। ক্ষেমাংকরী জানবে না এটা তো হতে পারে না।  ক্ষেমাংকরী এক এক স্থানে পৌঁছে গেছেন,  পরিচয় দিয়েছেন এবং স্বপ্ন ঘোরে মিশে গেছেন প্রকৃতির ঘরে।

আমি তো অভাগী ; অবেলার বুনো আহ্বান তো প্রকৃতি জুড়ে ঈশ্বরী, কিন্তু তীব্র চোরাস্রোতে আমি শীতল শরীর। নির্জনতা আমার উপাসনা হয়েছে৷ নদী - অরণ্য - বিশাল পর্বতের ব্যাপকতা আজ জীবনে অর্থ হারিয়েছে। আমি যে স্বচ্ছান্ধ বরণ করেছি। আমি মাকে বারণ করেছি ; মা!  তুমি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গের অপরাধে আমাকে জর্জরিত করবে না। মহেশ্বরের পূজা উপাসনা করার সময়, তুমি আর আদেশ করবে না আমায়৷ আমার কুরুক্ষেত্র যেতে বড়ো সাধ। শ্রীমুখেই না হয় সম্ভোগ করবো দৃশ্য। জীবনের বেশ কিছু মুহুর্তে স্মৃতিই সম্পদ।
আমি পঞ্চদশী নই,আমি অষ্টাদশী এখন। আমি নানাবিধ শাস্ত্র অধ্যায়ন করেছি৷ আমি আজ বিদুষী মায়ের কাছে। জানি আমি অনিচ্ছায় সাব্যস্ত হয়েছি; তবে মা ক্ষেমাংকরী চাতুরী জানে। তিনি মানসিক ক্লেশ নিবারণের জন্য অর্থহীন লঘু চাপল্য প্রদর্শন করছে। মা আমায় ইরম্মদের রূপের কথা বলেছিলেন, কিন্তু অনুভব  যে প্রয়োজন, এটা উনি ভুলে যান নি। দেহের ভিতর দেহ আমায় টানে। ধাইমা, আমায় চেনে। মায়ের আগল খুললেই  যৌবন নিকুঞ্জে গেয়ে যায় মহাবিহঙ্গ। আমি আজ অসহায় বিহঙ্গ৷ মায়ের বিবরণে  শারীর চেতনায় আচ্ছন্ন হয়েছি,  কামার্ত হয়েছি কদর্য জীবদেহে। জানতে চেয়েছি, এমন মহার্ঘ অসুখে কেন মা আমাকে ভাসাচ্ছেন। স্বেদজলসিক্ত শরীর মানসে এ উচাটনের পাঠ কেন দিচ্ছেন তিনি!! তবে কি মা আমাকে যৌবন পথে পদার্পণ করার উপযুক্ত পাত্রী তৈরি করছেন!!  জানতেন তিনি!  আমি কর্কশ নিষ্পেষণে ধর্ষিত হবো৷ ধাইমা বললেন, এ তো পুরাণ খ্যাত। মা জানাতে ভুললেন না, যে, তিনি শুদ্রা ; তাঁর বেদমন্ত্র উচ্চারণে অধিকার নেই। তবে যৌনতা এবং প্রসব করানোর কার্যাবলীতে তিনি পারদর্শী।  তাই মা হয়ে মেয়েকে তো সবটুকু উজাড় করে দেবেন-ই, এটাই যথার্থ।

আচ্ছা!  মুগ্ধতা শুধু দর্শনেন্দ্রিয় কি ঘটে!  চাইলে কি কামনা দিয়ে পরিচালিত করা যায়!  শৃঙ্গার, চুম্বন, রতিক্রিয়া এইটাই কি ভালোবাসা!  মা!  আকর্ষণ কি প্রেম হতে পারে!  আচ্ছা!  অনুভূতির অর্গল খোলা আছে তো!  তিনি নাকি অনবদ্য পুরুষ ; মা বললেন, আমার মুগ্ধতা নাকি আমার কামনার পথ প্রশস্ত করবে৷ আমাদের সর্বাঙ্গীন মিলন আমাদের সার্থক করবে জীবন, ভালোবেসে। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours