দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

গ্রামের যাত্রার অন্তর্জলী যাত্রা শুরু হয়েছিল সাত বছর আগেই। তার অন্যতম একটি কারণ কেবল টিভি ও মোবাইল ফোন।  কিন্তু গ্রামের যারা এই যাত্রাকে ভালোবাসেন তাঁরা মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই ফের নতুন উদ্যোমে সরস্বতী পুজো উপলক্ষে শুরু হলো যাত্রাপালা। আর মানুষ এই দুটোকে সরিয়ে রেখে করে প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে উপভোগ করল যাত্রাপালার মৌতাত! নলহাটি থানার কয়থা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দেবগ্রাম যুবক সমিতি আয়োজিত বিমান মণ্ডলের লেখা সামাজিক যাত্রা পালা “জননী আজও জ্বলছে”তে অভিনয় করেন গ্রামের ক্ষেতমজুর, কামার, সাইকেল মিস্ত্রি, শিক্ষক থেকে সমস্ত পেশার মানুষ।
ক্ষেত মজুর বাচ্চু মাল, সাইকেল সারাইয়ের মিস্ত্রী প্রিয়তোষ মিস্ত্রী এবং কামার তাপস কর্মকাররা বলেন, আমদের নিজের পেটের যোগার করে, সন্ধ্যেয়  রিহার্সালে হাজির হতাম। আমাদের খুব উৎসাহিত করেছেন ক্লাবের সেক্রেটারি মানস মুখোপাধ্যায়, জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রম্পটার আকাশ মাল এবং অন্যান্যরা।  জয়ন্তবাবু তো ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বাম দিকটায় পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। তবুও তিনি অন্তত দশ দিন রিহার্সালে এসে আমাদের অভিনয় দেখিয়ে দিয়েছেন।      এব্যাপারে গ্রামের শিক্ষক অলোক সাহা বলেন, এই সামাজিক যাত্রা পালায় আমি অর্জুনের চরিত্রে অভিনয় করি। এদিন তিনি অকেপটে জানান, প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো লোক হবে না। কারণ সন্ধ্যে থেকে অনেকগুলো সিরিয়াল আছে। তাই গ্রামের কেবলের লোককে বলেছিলাম, যাত্রার সময়টুকু  কেবল বন্ধ রাখার জন্য। তবে সন্ধ্যে থেকে লোকের ভিড় দেখে, আর তার প্রয়োজন পড়ে নি।  গ্রামের এক প্রবীণা বলেন, বাবা! আমি সন্ধ্যে থেকে রাণী রাসমণি, কৃষ্ণকলি, বকুল কথা আর সব শেষে দেখি দীপাবলীর সাত কাহন। এদিন ওসব দেখিনি। গ্রামের ছেলেপুলের যাত্রাভিনয় দেখার মজায় আলাদা। এই কনসার্ট, বিবেকের গান ছোটতে কত দেখেছি। স্টেজে ঝুলন্ত মাইক্রোফন, আলোর বাহার সব একই আছে।  এই গ্রামেও মাত্র সাত বছর আগে হয়েছে।  গ্রামের আরেক বয়স্ক মানুষ জানান, ২৫ বছর আগে তো গ্রামের পুরুষদের সাথে গ্রামের মেয়েরাই অভিনয় করতো।  অলোক সাহা জানান,  কন্সার্ট, বিবেক, পেন্টারের সাথে তিন জন ফিমেল হায়ার করে আনা হয় রামপুরহাট থেকে। তিনি জানান, এই সামাজিক যাত্রা পালা মঞ্চস্থ করার কথা ভাবা হয় দুর্গাপূজোর সময়। দুমাসের রিহার্সালে এই যাত্রা গ্রামের মানুষরা মঞ্চস্থ করেছে। জয়ন্তবাবু জানান,  এই যাত্রাপালায় মোট ১৩ জন অভিনয় করেছে। মা গান্ধারী,  দাদা যুধিষ্ঠির ও ছোট ভাই অর্জুনকে কিভাবে মেজোভাই দূর্যোধন বের করে দেয় তাই নিয়ে এই কাহিনী। মা ভিক্ষে করতে করতে মৃত্যু বরণ করেন, যুধিষ্ঠিরের মৃত্যু হয় কুলিগিরি করতে গিয়ে, ছোট ভাই অর্জুন সৈনিক হিসেবে দেশের জন্য প্রাণ দেন। আর সব শেষে চাকুরে দূর্যোধনের খারাপ কাজে যুক্ত হয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়। যাত্রা শুরু হয় সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা ও শেষ হয় রাত সাড়ে বারোটায়।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours