জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা, দুর্গাপুর:

'মনকে' যিনি বস্তুজগতে প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ট কির্তী বলে আবিস্কার করলেন, তিনিই বোঝালেন, সাম্য-পথটাই হোল 'চিন্তা' মুক্তি এবং সেই মুক্তিটাই প্রকৃতির বিধান। তিনি সেই সুত্রেই বল্লেন, 'মুক্তি'টা যদি প্রকৃতিগত মনুষ্যত্বের স্বাভাবিক অভিমুখ
বিবেচিত হয়,কুপমন্ডুকতাই কালান্তরে চিন্তা-
দাসত্বের কারন করা হয়েছে। এইভাবে কুপমন্ডুকতা থেকে মানব এবং মানবিকতা থেকে মুক্তি করতে গিয়ে যুগে যুগে কালে কালে  জ্ঞন উন্মুক্তির সংগ্রাম চলছে। সেটা ইতিহাসের অধিকাংশ সময় চলেছে, অবেচতনভাবে, survival of the fittest এর নিয়মে। বুর্জোয়াদের জ্ঞান বিপ্লবটাই, যা ইতিহাসে রেনেশাঁ বলে ক্ষাত হোল সচেতনভাবে। এখান থেকেই মার্ক্স বল্লেন, মানব জাতীর ইতিহাস শ্রেনী সংগ্রামের ইতিহাস এবং এই ইতিহাসের উন্মুক্তিতে বুর্জোয়াদের অস্বিকৃ্তিই, শ্রমিক শ্রেনীকে সর্বপ্রথম ১৯৪৮ এর মে'তে ব্যারিক্যাডের সংগ্রামে টেনে নিয়ে এসেছিলো।
----- কুপমন্ডুকতার তন্ত্রবাদ, ভাব জগতের উপরে,  অতীত হয়ে যাওয়া  ভাবনাকে উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়েই,  চিন্তার স্তব্ধতা নামিয়ে আনা হয়।
এঙ্গেলস 'প্রকৃতীর  দ্বন্দ্বিকতা'র ভূমিকাতেই দেখিয়ে দিলেন, উৎপাদন কাঠামোর প্রতিটি উত্তোরনকেই পথ করে নিতে হয়েছে, আদিম চিন্তার অপসারন ঘটিয়ে যুক্তিবাদ এবং আধুনিক চিন্তার বিকাশ ঘটিয়ে। এই চিন্তা বিকাশের প্রতিটি পর্য্যায়ে, পুরাতন ব্যবস্থা সমাজের উপরে রক্তক্ষয়ী আক্রমন চালিয়েছে এবং সর্বক্ষেত্রেই এক একটা গৃহযুদ্ধকে অতিক্রম করেই সমাজকে তার প্রগতীর ধারাকে অব্যাহত রাখতে হয়েছে।
যারা কার্ল মার্ক্সকে তার অখন্ড সত্বায় অন্বেষন করার চেষ্টা করেছেন, দেখবেন, তার হাত ধরে দর্শনের উত্তোরনটিই ঘটেছে, ইতিহাসে সামন্তিক সামাজিক কাঠামো ভেংগে দিয়ে, নতুন দাবীদারদের, যারা যন্ত্র নির্ভর ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্টিত করতে চাইলেন, তাদের অসম সাহসিক সংগ্রামের সুত্র ধরেই। তিনি দেখিয়েছেন, সেকালের সেই  শ্রেনীটিকে অভাবনিয় মুল্য দিতে হয়েছে জ্ঞানের উন্মুক্তিতে। এঙ্গেলস লিখছেন অনেক বীরকে এক হাতে অসি নিয়ে অন্য হাতে মসি ধরেই ব্যক্তিমালিকানায় যন্ত্রযুগ বা পুজিতন্ত্রনের  বিকাশ ঘটালেন।
------- কালমার্ক্স দর্শনের উন্মুক্তিতে  যেখানে শেষ করেছিলেন, সেই সুতোটা ধরেই স্তালিন শিখিয়েছিলেন, যে সংগ্রাম, চাপিয়ে দেওয়া অতীতের ভাবনাকে পরাস্ত করে, যুক্তিবাদ এবং আধুনিক ভাবনয়া  উন্মুক্ত করতে ব্যর্ত্থ হয়,  সেটাকে শ্রেনী সংগ্রামই বলা যাবে না।
------  লেনিন অবিমিশ্র (Unalloyed) ট্রেড ইউনিয়নবাদ এবং জ্ঞান উন্মুক্তির পথ অন্বেষনে বা শ্রেনী সংগ্রামে শ্রমিক আন্দোলনের সীমানা চিহ্নিত করেছেন।
তিনি যখন বল্লেন, বুর্জোয়ারাই বুর্জোয়া গনতন্ত্রের পতাকা ধূলায় লুন্ঠিত হতে দিয়েছে, সেখান থেকেই পতাকাটি তুলে নিতে হবে।
আরো গভীরে গেলেই পরিস্কার হবে, মার্ক্স  চিন্তনমুক্তি কংবা জ্ঞান মুক্তির কাজটাই শুরু করেছিলেন, যেখানে ডার্বউইন শেষ করলেন। তিনি শ্রেফ্, বুর্জোয়ারা যেখানে জ্ঞানের তিন গতির  (পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা এবং শরীর বিদ্যা) মালা গেঁথেই ছেড়ে দিয়েছিলেন, তিনি ডারউইনকে এগিয়ে দিয়ে বল্লেন, 'মন বস্তুর সর্বোচ্চ বিকাশ'।
---- কার্লমার্ক্স দেখালেন 'জড়বস্তু বিবর্তনের মধ্য দিয়ে চেতনা লাভ করে '। অর্থাৎ তিনি কেবল, 'মন' পর্য্যন্ত নয়, মনকে 'ইতিহাস' এবং ইতিহাসকে জ্ঞান ও বিজ্ঞান এবং অর্থনীতি ও সমাজের সাথে যুক্ত করে দিলেন। বুর্জয়ারা তখন যে   জ্ঞানের জয়যাত্রার কাজ তারা শুরু করেছিলো, সেটাকেই আটকাতে শুরু করলো। উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে তারা Sigmund Froied কে বাজারে ছেড়ে বুঝাতে চাইলেন ---- নানা, 'মনের সাথে' উৎপাদন বা সম্পর্কের কোন সম্পর্ক নেই। 'মন পরমব্রহ্ম' জাত।
 দেখালেন 'জড়বস্তু বিবর্ত    শ্রমিক শ্রেনীকে কাজটা
   
চিন্তন মুক্তির সংগ্রামটাই মানবজাতীর সব থেকে বড় লড়াই।  ক্ষুদা মুক্তি বা শরীর রক্ষার লড়াই যদিও 'চিন্তন মুক্তির' লড়াই এর সর্ত, কিন্তু 'চিন্তন' বা 'চিত্ত মুক্তি  যে' ইতিহাসের মুক্তির প্রশ্মের সাথে যুক্ত সে কথাটা,এই দেশে রবীন্দ্রনাথ মর্মে মর্মে বুঝেছিলেন।
কম পড়াশুনা জানা,  ছোট মুখে বড়ও যদি হয়েও যায়, বলতে পারি সমগ্র রবীন্দ্রকাব্য তো বটেই  রবীন্দ্র জীবনের মূল দিকটাই এই মুক্তির প্রশ্নের সাথে যুক্ত।
তিনি লিখছেনঃ
" কেন রে বিধাতা পাষান হেন,
চারি দিকে তার বাঁধন  কেন।
ভাঙ্ রে হৃদয়, ভাঙ্  রে বাঁধন
সাধ রে আজিকে প্রাণের সাধন,
লহরীর পর লহরী তুলিয়া
আঘাতের পর আঘাত কর্ ।"

এই সুত্রেই আরো একটা কথা না বলে দিলে, তত্বের সাথে ইতিহাসের সেতুবন্ধনে ফাক থেকে যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথ নিশ্চিতভাবে এটা বুঝেছিলেন, চিন্তন প্রকৃয়ার পুরানো ধারাটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে আধুনিকতার বীজ বপন করতেই হবে। কিন্তু, এই আধুনিকতার উন্মুক্তির জন্য, শ্রেনী সংগ্রামে পৌছুনোর জন্যে
আধুনিক শ্রমিক শ্রেনীকে নিশ্চিত ভাবেই, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে
শ্রেনী সংগ্রামের স্তরে উঠিয়েই আনতে হবে।
------ সেজন্যে অনেক সময় পরামর্শ দিই মার্ক্সে পৌছুতে হলে, রবীন্দ্রনাথকেও সাথে রাখুন।

দ্বিতীয়ত অধ্যায়।

 আজকে ভারতীয় এবং বিশ্ব চিন্তনে যে গুরুতর সংকট দেখা দিয়েছে, সেই সংকটের মুলকে যদি চিহ্নিত  করতে হয়, তবে দর্শনের সব থেকে জটিল বিষয়টি আয়ত্ব করতেই হবে।
------ ভারতে আজ  যে সব  ঘটনা ঘটছে, যা দেশকে এক দীর্ঘকালিন গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলছে সেগুলিকে  যদি  বিশ্বের বিচারে ভাবতে হয়, তবে বুঝতে হবে,ষোরশ শতাব্দী থেকে যে জাতি   ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে উঠতে শুরু করেছিলো, সেগুলি  পুজির ফ্যাসিবাদী উত্তোরনের কালে  বাধার কারন হয়ে যাচ্ছে, তাই  সেগুলি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে,।
বিশ্ব রাজনীতির এই ভয়ংকর আলোতে যদি ভারতীয় উপমহাদেশের পরিস্থিতিকে বিচার করা হয়, তবে বুঝতে হবে
------ ভারতের একজাতী সত্বা, যাকে আমরা 'বিভেদের মাঝে মিলন মহান হিসেবে দেখেছিলাম, সেই সত্বা 'ফ্যাসিবাদের'  পক্ষে বিপদজনক হয়ে উঠছে।  তাই,  ভারতের বিচারে,
-----   আজকের কালকে  ভারতে প্রজাতন্ত্রকে ধ্বসিয়ে দেওয়ার ফ্যাসিবাদি পরিপকল্পনার কাল বলে বিবেচনা করা হয়, তবে একটু খুটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে
------ বর্তমানে আক্রমনের কেন্দ্রবিন্দুটাই হোল 'আধুনিক জ্ঞান' । ক্যান্সার সারানোর জন্য 'গাঝা' খাওয়া, দুধের 'স্বর্ণ' মিশ্রন, অর্জুনের ধনুকে 'পরমানবিক' ইত্যাদিকে কোন বিক্ষিপ্ত  ইংগীত বলে যারা ভাবছেন, তারা আসলে শ্রমীক বা সাম্বাদী আন্দোলনে ট্রেড ইউনিয়ন সর্বস্বতা কিংবা সরকারীয়ানার কুপমন্ডুকতায় মগ্ন।

------- এই মগ্নতা আরো ভয়ংকর হয়ে দাড়াচ্ছে, যখন বাংলার 'রবীন্দ্রভক্ত'রাও দেখতে  পাচ্ছেন না, কীভাবে রবীন্দ্রনাথকে, শিক্ষার অভিমুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে
জ্ঞান জগতকে কুপমন্ডুকতায় ঢুবিয়ে দেওয়া, বিদ্যাল্য় ব্যবস্থা থেকে ঝাটা দিয়ে জ্ঞান বিতরনের কাঝকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হয়েছে।

Having taken the basic philosophical content at the focus of the time, when most of the so call intellectuals are allowing themselves dipping increasingly into directionless,
----- শ্রম জীবি আন্দোলনের নেতাদের আজকে এটাই ইতিহাসের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ তারা যেখানে চলে গেছেন, সেখান থেকে ফিরে আসতে শুরু করবেন কী  না। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours