জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

গনতন্ত্রকে তার অংশগ্রহনের সর্তে যদি বিবেচনা করা হয়, তবে সেখানে সংসদীয় গনতন্ত্রের সাথে অংশ গ্রহনের সেতুববন্ধনে, শিক্ষার জ্ঞানগত উত্তরন, একপ্রান্তে যেমন গনতন্ত্রকে অংশগ্রহনের সীমা থেকে টেনে  এনে, তাকে সব রকম সৃজন এবং সৌন্দর্য্যবোধের  ( যাকে আমরা ইংরাজীতে বলি Aesthetic sense) প্রতিভু হয়ে উঠে।
এইজন্যে গনতন্ত্রকে গন-সৃজন এবং সৌন্দর্য্যবোধের রসায়নে এক  প্রত্যয়িত রুপ বলে বিবেচিত হয়, তখন সংসদীয় ব্যবস্থা  কিংবা  বা তার  'এক দলীয়' বা 'দ্বি-দলীয়' ব্যবস্থার হুজুক
-----  কখনো সমাজ বিজ্ঞানের আলোচনায় বড় বিষয় হয়ে উঠার সুযোগ পেতো না।চিনে এক একবার গিয়েছি, তার চেহারায় যে  এক একটি রুপান্তর দেখেছি, তার মধ্য দিয়ে অংশ গ্রহনের  গনতন্ত্রকে তার সৃজনে  ও সৌন্দর্য্যের ক্রম   বিকশিত রুপটিকে  দেখেছি। সেই সুত্রেই, অংশগ্রহনের গনতন্ত্রের সাথে শিক্ষা্র জ্ঞনগত উত্তোরন ঘটানোর কার্য্য-কারন সম্পর্কটিকে অনুধাবন করেছিলাম।
----   এই সুত্রেই বলে রাখা ভালো, গনতন্ত্রকে যখন অংশগ্রহন এবং সৃজন/সৌন্দর্য্য এর সম্মিলিত রুপের সাথে মিলিয়ে বিবেচনা করা হয়, তখনই একপ্রান্তে গনতন্ত্রের এবং অন্যপ্রান্তে জাতীয়তার চালিকা হিসেবে আন্তর্জাতীকতায়
-----  উর্জার  কাজ করে। সেকারনেই, গনতন্ত্র যখন অংশ গ্রহনের সাথে সংযুক্ত হতে সক্ষম নয়, তখন গনতন্ত্র যেমন ভংগুর, তেমনি, শিক্ষার জ্ঞানগত উত্তোরনের কোন বিষয় হওয়ার  সুযোগ হয় না।
চিনের যতবার গেছি, ততবার বুঝেছি, চিনে,   সমাজ  বিজ্ঞানীদের মধ্যে, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোতে পুজিতন্ত্র গড়ার নেতীবাচক দিকগুলি কীভাবে কাজ করবে
------- সেটা নিয়েই যত গবেষনা, আরো বুঝেছি সেখানকার ' বহূদলীয় ব্যবস্থা' সম্পর্কে শব ভাবণা, ভারতের সেই 'বাবু' এবং সংবাদপত্রের যারা
-----   অংশ গ্রহনের গনতন্ত্র সম্পর্কে কিংবা শিক্ষার জ্ঞানগত উত্তোরন অথবা মানব সম্পদ উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ দেখান নাই।
এই বিষয়ে লিখতে গিয়ে নিজের জন্য নিজেই এই লেখক নিজের জন্য নিজে আত্মশ্লাঘা অনুভব করছি
----- আজ স্বিকার করছি, ১৯৫৮ সালে, কয়লায় বছর দেড়েক কাজ করার পর তিনি দুর্গাপুর স্টিলে চলে আসার পর যখন নতুন নতুন বিদ্যালয় নির্মান শুরু হোল, সেগুলি যে বিশ্বভারতীর আদলে নির্মিত হচ্ছিলো তা এবং বিশ্বভারতীর অভিমুখটাকে যে পন্ডিত নেহেরু
----- স্বাধীন ভারতে শিক্ষার জ্ঞান নীতির অভিমুখি রেখেছিলেন এবং সেই আদপের দুর্গাপুর ইস্পাতের বিদ্যাল্য় ব্যবস্থা গড়ে ঊঠছিলো, তা ভেবে দেখার কথ চিন্তাতেই আসে নাই। আরো সচেতনভাবে সেখালের মূর্খামীর কথা স্বিকার করতে হবে, তবে মানতে হবে
-----  চলতি ঔপনেবিশিক ভাবনায় শিক্ষার জ্ঞানগত উত্তোরনের বিষয়টিকে সামনে এনে, বিশ্বভারতীর  যে একটা আর্থ-সামাজিক-রাজনৈ্তিক অভিমুখ থাকতে পারে, সেটা বিবেচনাতেই আনতে পারি নাই। ক্রমে যেভাবে বুঝেছি, বুর্জোয়া গনতন্ত্র যখন রেনেশাঁ  কোমর ভেঙ্গে দিলো, রবীন্দ্রনাথই এখনো পর্য্যন্ত একমাত্র দার্শনিক যিনি ভারতে সাহিত্যকে মার্ক্সবাদের কাছাকাছি এনেছিলেন
----  তখনই বিশ্বভারতীকে, শিক্ষারর জ্ঞানগত উত্তোরনের  কেন্দ্র হিসেবে,স্বাধীন ভারতীয় ব্যবস্থার অভিমুখ হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছিলও। অন্য কে ভারতে জন্ম নিয়েছেন, যিনি ভারতের প্রাচীন সাহিত্য থেকে দ্বিতীয় যুদ্ধের কাছাকাছি সময় পর্য্যন্ত ভারতীয় সমাজকে গ্রহন-বর্জনের তুল্য মূল্যে একটা সংগঠিত রুপকে তুলে দিতে পেরেছেন।
-----  রবীন্দ্রনাথের ১৫০ তম জন্ম দিবস উপলক্ষে দুর্গাপুর চিল্ডেন্স আকাদমি ৫০০ পাতারো কিছু বড় মাপের যে স্মারক বেরোয়, তাতে জীবন রায়, তার এক দীর্ঘ প্রবন্ধে রবীন্দ্র কাব্যের অভিমুখে, স্বাধীন ভারতের শিক্ষার  জ্ঞানগত অভিমুখ হিসেবে দেখেছিলেন।
সুযোগে দুর্গাপুরের স্কুলগুলিকে কেন বহূমুখীন বিদ্যালয় বলাহোত, তার অর্থ এবং বিশ্বভারতীর সাথে যোগসুত্রগুলি স্পষ্ট বুঝেছিলাম এই চিন সফরের পর থেকে। এক একটি স্কুলে পঠন পাঠন ব্যবস্থার সাথে সাথে, গবেষনা, শ্রেষ্ট শিক্ষক, গবেষক, সংগীত ও কলার প্রশিক্ষক দের সমাবেশ হোত। ২০/২৫ একর জমির উপরে বিদ্যালয় ব্যবস্থায় খেলার নানা রকম আয়োজন, ভেতরে এবন বাইর অডিটোরিয়ামগুলি গম গম করট। সেখানেই শিখেছিলাম, বিজ্ঞান  মেলা কাকে বলে
---- এখনো মনে পড়ে। ১৯৬৩ হবে।  এক সন্ধ্যায় বেনাচিতির ইউনিয়ন অফিস থেকে ফেয়ারার পথে দেখলাম, টিপ টাপ বৃষ্টিতেও অন্ততঃ দশ হাজার পুরুষ-স্ত্রি পড়ুয়া  দাড়িয়ে খোলা মঞ্চের সামনে। সাইকেল থামিয়ে দাড়িয়ে গেলাম। দেখলাম রক্ত-করবি থিয়েটার হচ্ছে। বহুরূপীর। সম্ভু-মিত্রে যুগল অভিনয়, তৃপ্তি মিত্রের আবৃত্তি এবং সম্ভু মিত্রের গুরু গম্ভির গলা শুনলাম, জীবনের প্রথম এবং শেষবার।
প্রসংগত    বলে নিতে পারি, ১৯৭৪ সালে সোভিয়েতের শিক্ষা ব্যবস্থা, পরে চিনের ব্যবস্থা
-------  দেখে আসার পরেই, দুর্গাপুরে প্রথম দিকের শিক্ষা কাঠামো, সোভিয়েত  এবং সব শেষে চিনের ব্যবস্থাগুলি দেখে আসার পরেই
------  দুর্গাপুরে। ১৯৯৩ তার জীবনের এক দুর্ঘঠনার পর - , ২০ একর জনি নিয়ে,  চিল্ড্রেন্স আকাদমি এবং পরে 'নির্ঝর'  বিদ্যালয় ব্যবস্থা নির্মানের চালচিত্রের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। দুর্গাপুরের প্রায় সব সাংস্কৃতিক এবং জ্ঞানগত প্রতিষ্ঠানগুলির জ্ঞানী-গুনীরা এতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই ব্যবস্থা বিগত ২৭ বছর ধরে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
লেখক কেমনভাবে  থম বার চিনে গিয়েছিলাম সম্ববতঃ ১৯৮৯সাল নাগাদ ।বছরটা মনে আছে এই কারনে,
------ দুর্গাপুর থেকে ১৯৮৮ তে দিল্লী চলে যাওয়ার পর পর, জীবন রায়ের নেতৃত্বে এই ডেলিগেশান যায়। সেখানেই গনতন্ত্রে অংশ গ্রহনের রাজনীতি যে কী বিপুল ভাবে শিক্ষাকে জ্ঞানের সর্বপ্রান্ত থেকে বিস্তৃত করে খেলাধূলার সাথে এবং সেই খেলাধূলাকে
----  সামাজিক সম্পদে বদলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলো, তা দেখে শুধু আনন্দ নয়, সমাজ বিজ্ঞানের এক নব উন্মুক্তি দেখে এসেছিলেন। কেন যে চিনের এথেলেটিক্স বিশ্বে অপরাজেয়, তার চিত্ররুপ দেখেছেন এবং কারনটাও বুঝে এসেছেন।সেখানে প্রতিটি জেলায় যে  সব সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া কেন্দ্র রয়েছে,সেখানে রাষ্ট্রের সর্বশ্রেষ্ট প্রশিক্ষকরা যেমেন শেখান, রোজ হাজার হাজার মানুষের সমাবেশ হয়
------  রাষ্ট্র  পরিচালিত এসব কেন্দ্রে অভিবাবকরা হাজির হয়ে থাকেন নিজেদের জন্য আনন্দ খুজে নিতে,  ছাত্র-ছাত্রী, এবং  প্রশিক্ষকদের উৎসাহিত করতে।
------   এমন টি কখনো কানে আসে নয়াই, সেই বাচ্চাটি অন্যের এবং এটি তার। সবাই সবাইকার। এ  থকে গনতন্ত্রের আর কী বিকাশ হতে পারতো? (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours