শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

আকবরউদ্দীন  ওয়াইসি ভারতীয় রাজনীতিক। আসাদউদ্দীন ওয়াইসীর ছোট ভাই। তার রাজনৈতিক দলের নাম  অল ইনডিয়া মজলিস  এ ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (AIMIM)।  নিজের  দলটি ধর্মীয় এবং দলটির আইডিওলজি ইসলামইজম হলেও, নরেন্দ্র মোদীকে সাম্প্রদায়িক বলে চিৎকার করে থাকেন হর হামেশাই। ভারতে ১৫ মিনিটের জন্য পুলিশ হটিয়ে দিলে তিনি অনেক কিছুই করতে পারেন। এমন কথা বলায় তার নামে মামলা হয়। তিনি সম্ভবত দুমাস হাজত বাস করে, এখন জামিনে রয়েছেন। এমন সাম্প্রদায়িক হুমকি দেয়ার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। কিছু দিন পরপর তারা দু ভাই এমন কিছু বলেন, যা খবরের শিরোনাম হয়। ৫৪৩  টি  লোকসভা আসনে তাদের আসন দুইটি।

আকবরউদ্দিন ওয়াইসি আবারো শিরোনাম হয়েছেন সিএএ নিয়ে। সারা পৃথিবী জুড়েই নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও; তিনি নাগরিকত্ব প্রমানের জন্য কোন কাগজ তথা ডকুমেন্টস দেখাতে নারাজ! বরং পাল্টা অদ্ভুত কিসিমের প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন।  তাজমহল,কুতুব মিনার, লাল কেলা চার মিনার থাকতে তার কাগজ দেখাতে হবে কেন? আরে বাবা, রেলের টিকিট, সিম কার্ড নিতে, ব্যাংক একাউন্ট করতে কি নিজের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য কি কোন কিছু দেখাতে হয়নি? নাকি তার ভাই আসাদদুদ্দীন ওয়াইসি লন্ডনে পড়তে গিয়েও বলেছে, আমি পাসপোর্ট দেখাবো না। মোঘলেরা আমার বাপদাদা ছিলো? আর তাতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাকে ভর্তি করে নিয়েছেন?
আকবর উদ্দীন বলেছেন, সারে আট শ বছর ধরে তারা (?) ভারতবর্ষে রাজ করছেন? আশংকা করছি সেই একই কথা বলে আবার, ঢাকা ও লাহোর দখল না করতে এলে হয়। কেন না, মুঘলরা তো ঢাকা, লাহোরও দখলে রেখেছিলো।  তবে  ভারতবর্ষের ইতিহাস কি কেবল মোঘল তুর্কি আফগান আরবদের দখলের ইতিহাস পর্যন্তই? তার আগে ও পরে কোন ইতিহাস ছিলো না বা নেই? আকবরের দাবি সত্য ধরে নিলে তার পরিবার ভারতে দখলদার বলতেই হয়। বোকাটা  হয় তো জানে না, কেবল বাঙালির ইতিহাসই কয়েক হাজার বছর পুরনো। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের কাছে তার দাবী করা সাড়ে আট শ বছর অনেক কম।

 আকবরউদ্দীন ওয়াইসিরা,তাদের মুখোশ নিজেরাই খুলে দিয়েছেন। তার এ বক্তব্য "আমরা সাড়ে আট শ সাল থেকেই রাজ করছি', বলার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন, তারা ভারতীয় সভ্যতার অংশ নয়। তারা নিজেদের  হাজার হাজার বছর পুরোন ভারতীয় সভ্যতার অংশ মনে করেন না। আকবর ওয়াইসিরা কেবল সাম্প্রদায়িকই নন তারা ইতিহাস বিকৃতিও করেন এবং মানুষকে বিভ্রান্তও করেন রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য। জাভেদ আকতারের ভাষায় আকরবউদ্দীন ওয়াইসিরা " হায়দারাবাদ কি এক মোহল্লে কা নেতা" । জানি, ভারতের সমঝদার মুসলিমরা আকবরউদ্দীনের ভাষায় কথা বলবে না। তার সাম্প্রদায়িক ও সভ্যতা ইতিহাস বিকৃত চিন্তার সাথে ঐক্যমত হবেন না, এবং এটাই স্বাভাবিক। কেন না, ভারতে লাখো কোটি সভ্য, শিক্ষিত অসাম্প্রদায়িক মুসলিম বসবাস করে থাকেন।
আরেক জন হলেন সারজিল ঈমাম, সিএএ এ বিরোধী, দিল্লীর শাহীন বাগ আন্দোলনের অন্যতম একজন। তিনি আসাম কে বিচ্ছিন্ন করে ভারত ভেঙ্গে পৃথক করার আহ্বান জানিয়েছেন। আর এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রঙান হয়। সিএএ, এনআরসি বিরোধিতা একটি বহানা মাত্র। কেননা, সিএএ, এনআরসি বিরোধী  আন্দোলনে ভারত ভেঙ্গে ফেলার আহ্বান আসার কথা নয়। তা একটি শিশুও বুঝে। এবং সারজিল ইমামের এমন ভাষান সামনে আসার পর সিএএ বিরোধী আন্দোলন প্রশ্ন বিদ্ধ হবে। সারজিল ইমাম জেএনইউ এর ছাত্র। এই জেএনইউ থেকেই জিন্নাপন্থী, পাকিস্তান পন্থীদের আগমন ঘটতে দেখা যায় নিয়মিত। তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও  বিজেপি বিরোধীতা করতে গিয়ে ভারত বিরোধীতায় নেমে পরেছেন একেবারে মাল কোচা দিয়ে! এমন কি কাশ্মীরি জঙ্গিদের পক্ষ নিয়েও জেএনইউ এর কমিউনিস্ট  ছাত্রদের পথে নামতে দেখা যায়! যদিও জেএনইউ এর ছাত্ররা কোন দিনই কাশ্মীরি হিন্দু পন্ডিতদের কাশ্মীর থেকে বিতাড়ানের বিরুদ্ধে কখনো টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি।

সারজিল ইমামকে সরকার গ্রেফতার করেছে।এ নিয়ে একটি টিভি ডিবেট দেখলাম, সেখানে কেজরিওয়ালের আম আদমী পার্টির নেতা রাঘব চড্ডা  অভিযোগ করলেন কেন এত দেরি করা হলো  সারজিল ইমামের মত দেশদ্রোহীকে গ্রেপ্তার করাতে। আবার কংগ্রেসের নেতা  আসিফ খান বললেন, সারজিলের মত দেশদ্রোহীর ঠাঁই এ দেশে হবে না। তাকে আরো আগেই গ্রেপ্তার করা উচিত ছিলো। ভারতের সরকার বিরোধীরা নেতারাই যখন এমন দাবী করছেন।
তখন, ঢাকার কিছু বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মি, দেশদ্রোহী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সারজিল ঈমামকে ভারতের মহান নেতা ভাবছেন! কেউ কেউ তো আরো দু কদম আগে, তাকে কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাও বানিয়ে ফেলতে চাচ্ছেন! অনেকটা সেই প্রবাদের মত, যার গরু সে কয় বাঞ্জা পড়শীরা কয় বছর বিয়ানি! আমি অবাক না হয়ে পারি না৷ ভারতের বামপন্থীদের দৃষ্টি ভঙ্গির বাইরে এক চুল পরিমান বেশি ভাবতে পারেন না বাংলাদেশের বামপন্থীরা। আমার দেখায়, গত ২৫ বছরে তসলিমা নাসরিনের বিতাড়নের বিষয় ছাড়া ঢাকার বামপন্থীরা হুবহু দিল্লী- কোলকতার বামদের প্রেসক্রিপশনেই কথা বলেছে ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে।

তবে, রাজনীতিক আকরব উদ্দীন ওয়াইশীর ইতিহাস ও সভ্যতা সংস্কৃতির খন্ডিত, বিকৃত সাম্প্রদায়িক ব্যাখা ও সারজিল ঈমামদের আসামকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার চিন্তা ও চেতনা একদিনে হঠাৎ করে প্রকাশ হয়নি। এ সবের পেছনে রয়েছে সূদুর প্রসারী পরিকল্পনা। যা কেবল ভারত নয়, এ উপমহাদেশেই বিশৃঙ্খলা ডেকে আনতে পারে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours