জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

চার্লস ডারউইন, তার বিবর্তনবাদ তত্বের এক বিন্দুতে এসে যখন লিখলেন - "অবাধ প্রতিযোগীতা, বাঁচার লড়াই, যাকে যা অর্থনীতিবিদেরা   সর্বোচ্চ ঐতিহাসিক সাফল্য ভেবে গর্বিত, তা হচ্ছে পশুরাজ্যের স্বাভাবিক অবস্থা", এঙ্গেলস যা বল্লেন তা প্রনিধানযোগ্য।
তিনি 'প্রকৃ্তির দ্বান্দ্বিকতা' পুস্তকের ভূমিকায়  লিখছেন - "এই কথা লেখার সময় ডারউইন জানতেন না, যে তিনি মানবজাতি সম্পর্কে কি কটু ব্যঙ্গোক্তিই না করেছেণ"  এই বলেই লিখছেন "উৎপাদন ও বন্ঠন পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত হয়, কেবল সামাজিক উৎপাদনের এহেন সচেতন সংগঠনই সামাজিক দিক থেকে মানবজাতীকে প্রাণীজগতের বাকি অংশ থেকে উঁচুতে তুলতে পারে"

উল্লেখিত দুই মহাপুরুষের  দুটি বাক্যের অভিমুখ থেকে, শুধু প্রাণী জগতের নিয়মের সাথে পুজিবাদ যখন সভ্যতার অভিমুখ ধরে  সামন্ততন্ত্র নিধনের কাজে হাত দিয়েছিলো, তার পার্থক্যটা চিহ্নিত হয়েছে।
------- দু'জনের দু'কথাকে,  সামান্ততন্ত্র থেকে পুজিবাদে উত্তোরনের কা্লে উত্তোরন পুরো ধারাটিকে যদি পাশাপাশি রাখা হয়, তবে এঞ্জেলস যখন 'প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতায় (১৮৭৩ থেকে ১৮৭৬), পুজিবাদ বিকাশের সর্তগুলিকে চিহ্নিত করছেন, তার অনেক পূর্বেই চার্লস ডারউইন (১৮৫৮ সাল) পুজিতন্ত্রের হাল যে ইতিমধ্যেই প্রাণীজগতের নিয়মের (যিনি যোগ্য, তারই বাচার অধিকার বা  survival of the fittest)  অধীন হয়ে,সভ্যতা যে প্রানী জগতের নিয়মের  সমত্যল্য হয়ে গেছে, সেটা বুঝিয়ে দিলেন।
এঙ্গেলস যখন বলছেন, আর্থ-সামাজিক সম্পর্কের নিয়মটাই হোল, 'উৎপান ও বন্ঠন পরিকল্পতেভাবে' পরিচালিতে হওয়া। সেখানে তিনি আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থার দুটি সর্তের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথমত তিনি বলছেন, উৎপাদনকে যে মুহুর্তে 'বন্ঠন'  থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হবে, সেই মুহুর্তে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারনে পুরো ব্যবস্থাটাই ধ্বসে পরতে থাকবে।দ্বিতীয় সর্তটি বুঝিয়ে দিতে তিনি লিখছেন, এই সন্তুলনের কারনেই উৎপাদনের অর্থনীতিকে সন্তুলিত হতে হবে। এই কটি কথা বলতে গিয়ে , শিল্পযুগে পুজিবাদি  অর্থনীতিকে যে পথ ধরে চলার কথা ছিলো বলে মার্ক্স উল্লেখ করেছেন, সেটাই ব্যখ্যা করেছেন।
----- কিন্তু সামাজিক উৎপাদন বনাম ব্যক্তিগত লুন্ঠনের নীতিটাই যেহেতু পুজিতন্ত্রের 'দর্শন' সেটাকে সামনে এনেই   কমিউনিষ্ট ম্যানিফেস্টোর পাতায়  বর্ণন করেছেন, কীভাবে, এই সামাজিক উৎপাদন এবং ব্যক্তিগত লুন্ঠনের প্রকৃ্তিটাই, পুজিতন্তের সংকট ডেকে এনে পুরো উৎপাদন ব্যবস্থাটাকেই চক্রাকারে সংকটের আবর্তনে ফেলছে এবং এক সংকট থেকে অন্যসংকটের ভেতর দিয়ে মানব সভ্যতার সংকট ডেকে আনছে। প্রসংগত, উল্লেখ যোগ্য, কমিউনিষ্ট ম্যানিফেস্টো বিশ্ব সাহিত্যে, বাইবেলের পরেই দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচারিত সাহিত্য।
ম্যানিফেস্টোর বর্নিত আবর্তনকে এঙ্গেলস এইভাবে বর্ণন করছেনঃ
"যতদিন মানুষদের সব থেকে আবশ্যিক ঐতিহাসিক কর্ম, যা তাদের অন্য সব কর্মের বাস্তব ভিত্তি রচনা করেছে, অর্থাৎ তাদের জীবনধারনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলির উৎপাদন, আমাদের কালে সামাজিক উৎপাদন, যা সর্বোপরি অনিয়ন্ত্রিত  শক্তিগুলির অনঅভিপ্রেত পরিণামের খেলা এবং ব্যতিক্রম হিসেবেই তা অভিপ্রেত ফললাভে সক্ষম হয়, কিন্তু প্রায়সই তার বিপরীতটাই ঘটে থাকে। সব থেকে শিল্পন্নোত দেশগুলিতে আমরা প্রাকৃ্তিক শক্তিসমুহকে বশ করেছি এবং মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছি। আমরা এর দ্বারা উৎপাদন এতো অসংখ্যগুন বাড়াতে পেরেছি যেঁ একজন বয়স্ক লোক যা উৎপাদন  করতে পারতো, আজ একটি শিশু তার থেকে অধিক উৎপাদন করতে পারে।এর ফল কী হয়েছে? ক্রমবর্ধমান অতিশ্রম এবং ক্রমবর্ধমান দারিদ্র এবং দশ বছর বাদ বাদ একটি করে  বিরাট বিপর্য্যয় (great collapse)."
ভদ্দর লোকেরা, যাদের সাথে আজকাল,ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন থেকে ছিটকে যাওয়া (হয়তো বা ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন নিজেই ছিটকে গেছে) কিছু বেশী মাইনের শ্রমিক, প্রশ্ন করতেই পারেন, এসব সংকট টঙ্কট সত্যেও পুজিতন্ত্র তো টিকে আছে তো বেশ।
------ এখান থেকেই আজকের শিরোনামার অভিমুখ নির্মাণ এবং তার সাথে দুটি প্রশ্ন তুলেই। প্রশ্ন দুটি এরকমঃ
প্রথমতঃ কোন মূল্যে টিকে আছে এবং এই টিকে থাকাটাকাকে কী টিকে থাকা বল?
দ্বিতীয়তঃ চক্রাকারে মহামারি লাগিয়ে দিয়ে এই টিকে যাওয়াটা কী টিকে যাওয়া এবং এই টিকে থাকাটা যখন শেষ কথা নয়, ইতিহাসের কোন কালে,
------উৎপাদন এবং বন্ঠনের মধ্যে যাকে মার্ক্স ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন conflict between social content of production and individual form of appropriation, সন্তুলন আসবেই তবে, মাঝখানের সময় মহামারি আর অসভ্যতার জন্ম দিয়ে লাভ কী।

মহামারি যে কী বিপর্য্যয়কর হতে পারে, তার চিত্ররুপ ভারতীয়রা গত তিন দশকে দু'দুটো সংকটে দেখেছেন  বিশ্বায়নের পর। এবারের বিপর্য্যয়ের শুরু বটে/
যখন উৎপাদন এবং বন্ঠনের সন্তুল প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ব যে বিন্দুতে পৌছবে, তা কার্ল মার্ক্স যেঁ ভাবে দেখেছেন, তাকে একটি নিদৃষ্ট চালচিত্রে স্থাপন করে
লিখছেনঃ
"উৎপাদন এবং বন্ঠন পরিকল্পিতভাবেভাবে পরিচালিত হয়,সামাজিক উৎপাদনের এহেন সচেতম সংগঠনেই সামাজিক দিক থেকে মানবজাতীকে প্রানীজগত থেকে উচুতে তুলে আনতে পারবে"
------ এঙ্গেলসের শব্দচয়ন কিভাবে সন্তুলনহীন অর্থনীতি থেকে সন্তুলিত অর্থনীতির তফাৎটা মানুষের প্রানীজীবন থেকে মানিকতায় উত্তোরনের সাথে চিহ্নিত করছে। আর এই 'প্রানীত্ব' টাকেই যে ডারউইন  'অস্তিত্বের জন্য টিকে থাকা'কেই কোন অর্থে  survival of the fittest  কথার মালা দিয়ে বর্ণণ করেছেন।  অবশ্য এঙ্গেলস উল্লেখ করেছেন, হয়তো বা নিজের অগোচরেই তিনি সেটা করেছেন।
এই সুত্রেই, অর্থনীতির উভয় ধারারা সন্তুলিত বিকাশ এবং 'প্রানীত্বের'কারনে উৎপাদনের মাঝখানের ফাক যায়গাটা জুরে যে সভ্যতা জ্ঞান ও বিজ্ঞানের স্থব্ধতার বিষয়টির সাথে ইতিহাসের স্থব্ধতার বিষয়টি যুক্ত, সে সম্পর্কে
----- আগামি অংকে কিছু বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, ইতিহাসের অন্তিমকাল এবং ইতিহাসোত্তির্ন কালের মধ্যকালের সামাজিক-অর্থনীতি সম্পর্কে মার্ক্সের আবিস্কারকে,উল্লেখিত প্রবন্ধে এঙ্গেলস কীভাবে বর্ণন করেছেন, তার চালচিত্রটি নিচে তুলে ধরে  আজকের লেখাটি শেষ করছিঃ
"কেবল সামাজিক উৎপাদনের এ হেন সচেতন সংগঠনই  সামাজিক দিক থেকে মানবজাতিকে প্রাণীজগতের বাকি অংশের থেকে উঁচুতে তুলতে পারে। সেইভাবে যেভাবে বিশেষ করে জীবতত্বের দিক থেকে সাধারনভাবে উৎপাদন মানবজাতির জন্যে করেছে। ঐতিহাসিক বিবর্তন এইরকম সংগঠনকে প্রতিদিন আর সম্ভব করে তুলেছে। এরে থেকে শুরু হবে ইতিহাসের এক নতুন যুগের, যখন মানবজাতি স্বয়ং, এবং মানবজাতির সংগে তার কর্মকান্ডের সব শাখা, বিশেষ করে প্রকৃ্তি বিজ্ঞান, এমন অগ্রগতির অভিজ্ঞতা লাভ করবে যার পাশে পূর্ববর্তী সবকিছু একেবারে ম্লান হয়ে যাবে "
Thus Engels explains about how the period of Chaos and crisis bridges TWO HISTORICAL PERIODS, IE. SURVIVAL OF THE FITTEST AND SOCIALISM WHEN PRODUCTION AND DISTRIBUTION WOULD GET BALANCED, AS COMPOSITE SOCIAL SYSTEM.

পরের লেখায় দেখাবো কি করে ,ক্রাইসিস এবং বিশৃংখলার কালে, জ্ঞানজগতকে তারাই ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়, যারা কতকগুলি নিয়ম সমাজের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে, , উৎপাদনের সামাজিক চরিত্রকে যেমন চাপিয়ে রাখে, অন্যদিকে এর পরিনামকে নিজেরাই লুট করে নেয়। (চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours