নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেট, অস্ট্রেলিয়া:

“ভাসিয়েছ যেমন ভাসছ তেমন দুজনেই বেঁচে আছি আঁকড়ে ধরে জল, জ্বালিয়েছ যেমন জ্বলছ তেমন বুকের গভীরে নিয়ে কষ্টের দাবানল।”
অষ্ট্রেলিয়ায় দাবানল পুড়ছে কোয়ালা ,পসম , পুড়ছে কাঠবিড়ালী , কত কত পাখির মার্সিয়া জারি শুনছি , হাহাকার , দাউ দাউ জ্বলছে চারিদিক , আকাশ যেন সিঁদুর রঙা , বাতাসের আগুনের ফুলকি উড়ছে , মানুষের অসহায় চোখে আতঙ্ক খেলা করছে । কোটি কোটি জীব জন্তুর আর্তনাদ আগুনের লেনিহান শিখা গিলে খাচ্ছে । পরিস্থিতি সামলে নিতে নিতেই আবার অগ্নি দেবতার রোসে পড়ছে আরেক অঞ্চল। 
পত্রিকা , টিভি নিউজ , ইউটিউব , সোস্যাল মিডিয়া সব খানের আগুন আগুন চিৎকার । 
কখন নিয়ন্ত্রনে আসবে ? আদৌ আসবে কি ? 
কিছুদিন হলো শিখা অর্নিবাণের মতো জ্বলেই গেল আমাজন ।  পৃথিবী জুড়ে চলছে প্রকৃতির বিরূপতা , প্রকৃতি রুষ্ট হয়েছে । কেন রুষ্ট হলো প্রকৃতি ,আমরা কি তা জানতে পারছি ? নাকি ওসব বিজ্ঞান আর ভূগোলের ব্যপার বলে ছেড়ে দিয়ে দিব্যি ফেসবুকে ষ্টাটাস দিচ্ছি .... সো স্যাড অষ্ট্রেলিয়ায় দাবানল , আমাজন পুড়ছে ! 
ব্যস এই টুকুই ! 
জেনে নিই দাবানল আসলে কি -“দাবানল (ইংরেজি: wildfire) হচ্ছে বনভূমি বা গ্রামীণ এলাকার বনাঞ্চলে সংঘটিত একটি অনিয়ন্ত্রিত আগুন। পাহাড়িয়া অঞ্চলে দাবানলের ইন্ধন কিছু বেশি। উষ্ণ তাপক-শিখা ক্রমশ ওপরের দিকে উঠতে থাকে আর পোড়াতে থাকে বন। উঁচু গাছের ক্যানপির আগুন অনায়াসে উড়তে থাকে যত্রতত্র। এসব আগুন নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে কারণ আগুন থামাবার জন্যে সহজে কোনো ব্ল্যাঙ্ক করিডোর তৈরি করা যায় না যেখান থেকে সরিয়ে ফেলা যায় স্তুপ, ঝরা পাতা, ভেষজ দাহ্যবস্তুসমূহ। অতএব যতক্ষণ খুশি আপন মনে জ্বলতে থাকে আগুন। জ্বলতে জ্বলতে যখন খাদ্যের প্রচণ্ড অভাব হয় কেবল তখনই মরে যায়, দুর্ভিক্ষে মরার মতোই। ইতোমধ্যে মাটি পুড়ে টেরাকোটা হয়ে যায়, হারিয়ে ফেলে দরকারি জলশোষণ ক্ষমতা। এমন দগ্ধ মাটির ওপর যখন ঝুম বৃষ্টি নামে তখন এসব আলগা পোড়ামাটি আর কাদা ধুয়ে সমানে নামতে থাকে পাহাড়ের গা বেয়ে। নামতে নামতে পাদদেশে গড়ে তোলে কদর্য বিপুল পাহাড়, যে পাহাড় সরানো সহজ কাজ নয়।” 
এখন এই দাবানলের কবলে পড়েছে অষ্ট্রেলিয়া। মনে হয়, জাহান্নামের উল্কা মাটি ভেদ করে দাবানল আকারে পশ্চিম দিগন্তে ঝরে পড়ছে। সহস্র বাড়িঘর ও বনভুমি জ্বালিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অষ্ট্রেলিয়ার দাবানল। 
অষ্ট্রেলিয়ার বেশকিছু অঞ্চলে সংঘটিত 
স্কাই নিউজ, বিবিসি, এবিসি নিউজের সূত্র অনুযায়ী , সহস্র ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে এবং অবস্থা আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। অষ্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস, ব্লু মাউন্টেইন্স, সিডনি ও নিউ ক্যাসল অঞ্চলে এই ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে ছড়িয়ে পরা আগুনে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিশাল এলাকা সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে।
অক্টোবরের মাঝামাঝিতে সুত্রপাত হওয়া এই দাবানল এখন অষ্ট্রেলিয়ার জনগনের জন্য একটি বিরাট আতঙ্কে পরিনত হয়েছে। উক্ত দাবানল অষ্ট্রেলিয়ার এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে  বিপজ্জনক দাবানল হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। দাবানলের প্রধান সহায়ক হচ্ছে গরম আবহাওয়া এবং গতিশীল বাতাস। এই দ্রুতগামী বাতাসের জন্য আগুনের বিস্তৃতি খুব দ্রুত হচ্ছে। অষ্ট্রেলিয়ার পুলিশ এবং জরুরী সেবা মন্ত্রনালয় থেকে বলা হয়েছে, এই দাবানলটির´গতি এবং ভয়াবহতা´ বিগত কয়েক দশকে পরিলক্ষিত হয়নি এবং একেকটি আগুনের শিখা প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। অষ্ট্রেলিয়ার রুরাল ফায়ার সার্ভিসের অনুযায়ী নিউ সাউথ ওয়েলসে এখনো ৮০ টি আগুনের শিখা রয়েছে যার মধ্যে ২০ টি তাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে রয়েছে। austrelia fire সিডনির পশ্চিমে ব্লু মাউন্টেইন্স হচ্ছে দাবানলে আক্রান্ত সবচেয়ে ভুক্তভোগী এলাকা। প্রায় ১৯৩ টি বাড়ী ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এবং ১০৯ টি ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা আরো বিবৃতি দিয়েছে, এই আগুন কোনোভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয় এবং এটি কিলোমিটারের পর কিলোমিটার ছড়িয়ে পড়ছে। অগ্নি কর্মকর্তারা বলেন, এক একটি আগুনের শিখা প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। নিউ সাউথ ওয়েলসে ৬৩ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি তার বাড়িকে আগুন থেকে রক্ষা করতে গিয়ে হৃদরোগে মারা যায়। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ আরো ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছেন। উইন্মালি নামের এক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবিসি নিউজকে জানান, আমরা এখানে আগেও অনেক দাবানল দেখেছি কিন্তু এটা ছিল ব্যতিক্রমী। এর গতি ছিল অবিশ্বাস্য এবং এটি এই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং বাড়িঘর ধ্বংস করে আমাদের খোলা আকাশের নিচে ফেলে গেছে”।

লেক ম্যাকুয়েবির মেয়র জোড়ি হ্যারিসন জানিয়েছেন, উক্ত এলাকায় চারটি হ্যরিটেজ হোম এবং একটি ঐতিহাসিক জেটি ছিল যেগুলো দাবানলে আক্রান্ত হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এলেক্স চেজার বিবিসিকে জানান এই দাবানলটি স্বাভাবিক সময়ের আগেই শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এই এলাকায় যে শুকনো ঝোপগুলো আছে সেগুলো কয়েক বছরের আদ্র গ্রীষ্ম ও শীতের সমন্বয়ে অব্যাহত উচ্চ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই দুর্যোগকে ত্বরান্বিত করেছে।

বৃহস্পতিবার সিডনির আকাশ বনভুমি থেকে আসা ধোঁয়া ও ছাইয়ে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল।
 অষ্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল সংঘটিত হয়েছে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভিক্টোরিয়ার দক্ষিন প্রদেশে যেখানে সহস্রাধিক বাড়ি ঘর ধ্বংস হয়েছিল এবং ১৭৩ জন মানুষের প্রানহানী ঘটেছিল। অষ্ট্রেলীয়ার রুরাল ফায়ার সার্ভিস কমিশনার শেন ফিজিমোন শনিবার সতর্ক করেছেন যে, নিউ সাউথ ওয়েলসের দক্ষিন পুর্ব প্রদেশের দাবানল নিয়ন্ত্রনে কয়েক দিনের পরিবর্তে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। কর্মীরা অষ্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনবহুল এলাকায় দাবানল রোধে প্রানান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শনিবারের ঠান্ডা আবহাওয়া যদিও একটু আশার আলো জাগিয়েছিল, রবিবারের উচ্চ তাপমাত্রা এবং বাতাস তা আবার তীব্র করে তুলেছে। জলবায়ুর এ আকস্মিক পরিবর্তন পৃথিবীর যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষের জন্য এক বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যার ফলে প্রকৃতির কাছে মানুষ অসহায় হয়ে পরে যা অষ্ট্রেলিয়ায় এখন দৃশ্যমান।”
ভয়ঙ্কর দাবানলের কবলে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের আগুনের আঁচে প্রতিবেশী কুইন্সল্যান্ডও। গত সেপ্টেম্বর থেকে আগুনে জ্বলছে এই এলাকা। আগুন ছড়িয়ে পড়েছে  এক লক্ষ হেক্টরেরও বেশি এলাকা জুড়ে। 
অস্ট্রেলিয়ার দাবানলে প্রায় ৫০ কোটি প্রাণী মারা গেছে। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদরা বলছেন, দাবানলে সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৮০ মিলিয়ন স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং সরীসৃপ নিখোঁজ হয়ে গেছে। এই সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলবর্তী অঞ্চলে দাবানলের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। 
দাবানলের কবলে পতিত হয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপদগুলোর নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এযাবৎ খবরে পাওয়া প্রায় ১৮ জন মানুষ মারা গেছে এবং ১৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। তিনমাসের বেশী সময় ধরে সক্রিয় হয়ে আছে এই দাবানল বা আগুন ঝড় । ভস্মিভূত এক কোটি একর এলাকা । ফায়ার সার্ভিসের আড়াই হাজার কর্মী নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন । রাজ্যে জরুরী অবস্থাজারী করা হয়েছে । দাবানলের ভয়ঙ্কর অগ্নিশিখা নির্দিষ্ট এলাকায় এমন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে  যে, তার আশেপাশে, এমনকি আকাশ সীমার অনেক উপর পর্যন্ত চলে গেছে যার ফলে বিমান, হেলিকপ্টার পর্যন্ত এর উপর দিয়ে উড়াল দিতে আতঙ্কিত হচ্ছে । অবস্থা এতই শোচনীয় আকার ধারণ করেছে যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও দ্রূত  সর্বসংহারি দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ব্যর্থ হয়ে পড়েছে । 
আসলে আগুন নাকি জাহান্নামের অংশ তা এই দাবানল দেখেই  অনুমেয় হয় । প্রকৃতির এসব বিপর্যয় নিয়ে তথা -
Climate নিয়ে কত রিপোটই তো পড়ছি রোজ রোজ , কত গবেষণা ,কত তথ্য । রিসেন্ট জাতিসংঘের একটি বিজ্ঞানী প্যানেল হুঁশিয়ার করেছে - মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের পরিণতিতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন দ্রূত হারে সাগর-পৃষ্টের উচ্চতা বাড়ছে এবং বরফ গলছে।
সেই সাথে, জীব-জন্তুর বিভিন্ন প্রজাতি তাদের আবাসস্থল বদলাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফের আচ্ছাদন বিলীন হওয়ার কারণে কার্বন নি:সরনের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে, পরিস্থিতি দিনকে দিন বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে। আইপিসি বা জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্যানেলের সর্ব-সাম্প্রতিক একটি বিশেষ রিপোর্টে এসব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
গত এক বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এটি নাকি তাদের তৃতীয় রিপোর্ট ।
সর্বশেষ এই রিপোর্টটা পড়ে জানলাম তাপমাত্রার বাড়ার কারণে সমুদ্র এবং বরফে আচ্ছাদিত অঞ্চলের ওপর তার প্রভাব কী হতে পারে। বিজ্ঞানীরা এবার যা পেয়েছেন, তা আগের রিপোর্টগুলোর তুলনায় নাকি অনেক বেশি ভীতিকর।
খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে - সাগর-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে, বরফ গলছে দ্রুতহারে এবং এর প্রভাব পড়ছে পুরো বিশ্বের প্রাণীজগতের ওপর।
"ব্লু-প্ল্যানেট (পৃথিবী) এখন মহা-সঙ্কটে। বিভিন্ন দিক থেকে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং এর জন্য আমারাই দায়ী।," বলছেন ড. জ্যঁ পিয়ের গুাত্তুসো, যিনি এই রিপোর্টের প্রধান প্রণেতা।
মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশে যে বাড়তি তাপ তৈরি হচ্ছে, তার ৯০ শতাংশই শুষে নিচ্ছে সাগর। ১৯৯৩ সাল থেকে শুষে নেওয়ার এই মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে।

সেই সাথে গলছে গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফ। বাড়ছে সাগর পৃষ্ঠের উচ্চতাও । ড. গাত্তুসো বলছেন, "নিচু জায়গাগুলোতে সাগরের উচ্চতা বাড়ার পরিণতি হবে ব্যাপক। ৭০ কোটি মানুষ এরকম নিচু উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করে। ফলে বিষয়টি খুবই উদ্বেগের।"
রিপোর্টে সাবধান করা হয়েছে - সাগরে তাপ বাড়ার ফলে আবহাওয়া দিনকে দিন বিপজ্জনক আচরণ করবে। সামুদ্রিক ঝড় বেশি হবে, জলোচ্ছ্বাস বাড়বে। আমরা নজিরবিহীন কিছু বিপদের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি," বলছেন আইপিসিসি প্যানেলের অধ্যাপক ডেরা রবার্টস।

আপনি যদি স্থলভাগের খুব ভেতরেও বসবাস করেন, তাহলেও সাগর এবং পরিবেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনি নিরাপদে থাকতে পারবেন না।"
যেভাবে আপনার জীবনযাপন প্রভাবিত হতে পারে - বন্যার ক্ষতির মাত্রা দুই থেকে তিনগুণ বাড়তে পারে। সাগরের তাপমাত্রা বাড়ার ফলে ৯০ শতাংশ প্রবাল বিলীন হয়ে যেতে পারে।
সাগরের তাপমাত্রার বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে মাছ এবং জলজ উদ্ভিদের ওপর। মাছের শরীরে ভেতর পারদের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কি ভয়ঙ্কর ,বাপ্পরে! 
এতো কিছু শোনার পর মনে হয় এই বিপদের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কি কোন সম্ভাবনা নাই ? যাকে বলি এতো টুকু আশা! 
কিছু আশাবাদ তো অবশ্যই রয়েছে।
রিপোর্ট বলা হয়েছে যে সাগরের ভবিষ্যৎ এখনও আমাদের হাতে রয়েছে।
কিন্তু তার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে এখনকার তুলনায় কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমপক্ষে ৪৫% কমাতে হবে। 
চেষ্টা করলে আমরা কমাতেই পারি । কিন্তু তার জন্য লাগবে সৎ মনোভাব , এমন চলতে থাকলে কার্বন নির্গমনের মাত্রা অনেক কমালেও চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা চ্যালেঞ্জিং হবে।
তাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর জন্য রাজনীতিকদের ওপর জনগণের চাপ বাড়ানো খুবই জরুরি। 
হায়রে ভাগ্য সাধারণ মানুষের ,চোরকে দিচ্ছি খাজানার খবর! 
রাজনীতিক’রা যদি সৎ ও চিন্তাশীল হতেন তবে আর এই দিন দেখতে হয় ! আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা পঙ্গু বানিয়ে যাচ্ছি। 
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি আমাদের অনেকের কাছেই কাঠ খোট্টা বিজ্ঞান মনে হয়। এ কারণে বন্যা, খরা, ঝড়, নদী-ভাঙ্গন, মহামারী আর বিপন্ন জীববৈচিত্র্যের সাথে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক খুঁজতে আমরা বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হই।
কিন্তু জলবায়ূ পরিবর্তনই ২১ শতকের সবচেয়ে বড় স্টোরি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। সমাজের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভবিষ্যতে আরও হবে ! কিন্তু লাভবান হয় সম্পদশালী ভোক্তাশ্রেণী, জ্বালানি কোম্পানি, ভারী শিল্প, পরিবহন এবং কাঠের ব্যবসার সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ এরাই সবচে বেশি গ্রীনহাউজ গ্যাস ছড়ায়। 
পরিবেশ দূষণের জন্য আমাদের আর সবার চেয়ে তারাই বেশি দায়ী। ওদের বিচার করবে কে শুনি , ওরাই উকিল ওরাই আদালত ওরাই আইন! 

সত্যি বলছি জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর নিছক পরিবেশের বিষয় নয়। এর সাথে বৃহত্তর অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন জড়িত।
আমরা বেশীর ভাগ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়কে নিতান্তই পরিবেশের বিষয় বলে মনে করে এসেছি , বার বার নিজেদের বুঝিয়েছি বিজ্ঞানের বিষয় । এখন আর সেই অষ্পষ্টতা নেই মানুষের মাঝে । এখন বিষয়টিকে অবধারিত এক বৈশ্বিক ঘটনা হিসেবে দেখা হয় – যা অর্থনীতি, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, জীবনযাপন, খাবারের যোগান, এমনকি রাজনীতি পর্যন্ত – আমাদের জীবনের প্রতিটি দিককে কোনো না কোনো ভাবে প্রভাবিত করছে। 
নিউ ইয়র্ক টাইম সম্পাদকের  মতে, “আমাদের সময়ে সবচেয়ে জরুরী স্টোরি এগুলোই।” এসব নিয়ে কোথাও কোথাও অনুসন্ধান হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই তা অনুপস্থিত।

নেট এ একটা ফিচারে পড়লাম সেদিন -বিশ্বের সবচেয়ে বড় জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এখন পর্যন্ত নাকি কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হয়নি। ভাবা যায় ব্যপারটা ! উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে সৌদি এরামকো, সিনোপেক, চীনা ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম, কুয়েত পেট্রোলিয়াম – এমনকি তাদের চেয়েও বড় প্রতিষ্ঠান লুকঅয়েল, টোটাল এবং এনির কথা, যারা নাকি ব্যক্তিমালিকানাধীন হয়েও রাষ্ট্রগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব তথ্য মানুষের জানা উচিত, অবশ্যই জানা উচিত এইসব প্রতিষ্ঠান বা তাদের অ্যাসোসিয়েশনগুলো নিজেদের পছন্দমত আইন প্রণয়ন, সরকারি ভর্তুকি আর নীতিমালার জন্য কোথায় তদ্বির করছে এবং দিনকে দিন ফুলে ফেপে প্রকৃতি ধ্বংস করে শান্তিতে কুম্ভকর্ণের ঘুম ঘুমাচ্ছে ! কাদেরকে তুষ্ট করে মৌমাছি মেরে মধুটুকু টুপ করে বোতলে ভরেছে। 
এটাও জানতে পারলাম কিছু ফিচার পড়ে তারা কিভাবে টিকে আছে বেপরোয়াভাবে ।রাজনীতিবিদকে টাকা দিচ্ছে; কীভাবে ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে; জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে আনা আইন ঠেকিয়ে দিচ্ছে; পরিবেশবিরোধী গ্রুপগলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে এবং বিজ্ঞানীদের গবেষণাকে অগ্রাহ্য করছে।
তো প্রকৃতির হিসাব তো প্রকৃতি নেবেই । মানুষ মানুষকে ছাড় দিলেও প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয়না । এই প্রবণতা ভবিষ্যতে নতুন আর্থিক সংকট জন্ম দিতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদমূল্য নির্ধারিত হয়, তাদের খনিতে কত তেল-গ্যাস বা কয়লা মজুত আছে, এর উপর ভিত্তি করে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব এড়াতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানি মজুতের একটি বড় অংশই “অব্যাবহৃত সম্পদ” হিসেবে মাটির নিচে রেখে দিতে হবে, কখনোই তোলা যাবে না। এমনটি হলে এসব প্রতিষ্ঠানের শুধু যে সম্পদ কমে যাবে তা নয়, বরং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্যে তাদের তৈরি পণ্যকে দায়ী করা হতে পারে। রোজ রোজ কত কি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে প্রকৃতিকে নাকাল বানিয়ে ফেলছি। 
যেমন -কয়লা জীবাশ্ম জ্বালানি ,গ্যাস পোড়ানো, গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো ইদানিং বেশি মিথেন গ্যাস নির্গমন করছে, রাসায়নিক সার তৈরি করতে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়াতে হয়। এটি বাতাসে গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম প্রধান উৎস। এছাড়া গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের যেসব বন একসময় “কার্বন শোষক” হিসেবে ব্যবহৃত হত – “যারা  কার্বন ধরে রাখত – তাদেরকেও উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে গবাদি পশু পালন এবং সয়াবিন (বিশেষ করে আমাজন) ও পাম তেল চাষের মাধ্যমে (দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায়)।”

যাই হোক অনেক গবেষনা , সাংবাদিক দের কলাম থেকে তথ্য নিয়ে এই লেখাটার যবনিকা পাত করতে করতে ভাবছি , ছোট বেলায় পড়েছিলাম দাবানলের দেশ অষ্ট্রেলিয়া ... আর শিলাঝড়ের রাজধানী - সিডনী । এখন যখন নিজেই এই দেশের পাকাপাকি নাগরিকত্ব পেয়ে 
অজি অধিকারে অধিকারী হয়েছি , তেমনি এই দেশটার ভালো মন্দ বিপদ আপদ দাবানল , বন্যা -খড়া -শীলা -ভূমিকম্প , সব প্রাকৃতিক দূর্যোগকে স্বভাবতই আপন করতেই হয় । সুখে যেমন হাসি দু:খেও কেঁদে বুক ভাসাই । সেদিন টিভিতে আমার বেবীরা সহ  বুশ ফায়ারে নিহত ফায়ার ক্রুর ছেলেকে যখন বাবার বীরত্বের সম্মান দেয়া হচ্ছিল তারা বুক ভেঙ্গে কান্না করছিলো । ১৯ মাস বয়সী হার্ভি কিটন বৃহস্পতিবার তার বাবার মরণোত্তর পুরস্কার গ্রহণ করে। যে পুরস্কারটি দেয়া হয় তার বাবার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে।
সেই সময় মি. কিটনের কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে গার্ড অব অনার দেন দমকলকর্মীরা।
১৯শে ডিসেম্বর একটি আগুন নেভাতে যাওয়ার পথে গাড়িতে গাছ পড়লে মি. কিটন ও তার সহকর্মী অ্যান্ড্রু ও'ডোয়াইয়ার মারা যান।
অ্যান্ড্রু ও'ডোয়াইয়ারেরও একটি শিশু সন্তান রয়েছে, আগামী সপ্তাহে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের দমকল বিভাগের কমিশনার শেন ফ্রিটজসিমন্স শিশু হার্ভি কিটনের হাতে তার বাবার সাহসিকতার পুরস্কার তুলে দেন। এমনি করেই মানুষ মানুষের জন্য মৃত্যু আলিঙ্গন করে , প্রকৃতির পশুপাখির মৃত্যুর জন্য বিলাপ করে । প্রকৃতিও তেমনি কেড়ে নেয় যেমন তেমন ফিরিয়েও দেয় দুহাত ভরে। 
এজন্যই বলে বুঝি 
“You look after Mother Nature, and Mother Nature will look after you',"
মহাকালের দাবানলে আজ আমি ওষ্ঠাগত
প্রকৃতির বিরূপতায় কুচকে গেছে আমার ভ্রু
অগ্নির সমার্থক এ তনু
তবু, দুবাহু বাড়িয়ে
ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি আমি। প্রভু দয়া করো 
সমস্ত আগুনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা প্রাণীদের প্রতি। 

(তথ্য সুত্র - উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের ফিচার থেকে ও অনান্য সূত্র সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে পাওয়া তথ্য।)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours