জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

নতুন করে বুঝলাম ঘটনা প্রবাহের সাধারনিকরনেই তত্বের জন্ম শুধু নয়,তত্বকে বিকশিত করে। আমরা যারা সাম্যবাদী আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে  কাজ করছি,
তারাও  অনেক সময় জাতীয়তা,  এবং আন্তর্জাতীকার ইতিবাচক  সম্পর্কের ভেতর দিয়েই একপ্রান্তে যেমন জাতীয়তার বিকাশ
----- অন্যপ্রান্তে, জাতীয়তার বিকাশের প্রশ্নের সাথেই প্রজান্ত্রের ক্রমাগত বিকশিত হওয়ার নিয়মটি সুত্রবদ্ধ।
সমাজ বিজ্ঞানের বিচারে বিজেপি এর নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে   সংগ্রামটি যে জে এন ইউ কিংবা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় গুলির মতো আন্তর্জাতীক বিশ্ব বিদ্যালয়গুলি থেকেই একটা জাতীয় রুপ নিতে পারলো,
----- তার পেছনে নিশ্চিতভাবে একটা আবেগ কাজ করেছে। কিন্তু এই আবেগের পেছনে, যা কাজ করেছে, তা হোল  এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের  সরাসরি আন্তর্জাতীক ভাব প্রবাহের সাথে যুক্ত থাকার বাধ্যবাদকতার কারনে।

যা এখন ভারতে ঘটছে এবং ঘটতে থাকবে, অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যাবে, অনেক দিক দিয়েই  সমাজ বিজ্ঞানের ধারাপাতকে অনেক দূর এগিয়ে দেবে। ইতিহাস তার চলার পঠে যে সব প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে, সেই ব্যবস্থাগুলিই যেহেতু 'জাতীয়তাকে' আন্তর্জাতীকতার পথে এগিয়ে নিয়ে যায় সেই বোধ সত্বা তো আর কোন গাছ-পথরের নিয়মের সাথে ঝুলতে থাক না
----- সেগুলি মানবিক সত্বার সাথে মিশে গিয়ে ক্রমাগত  প্রজাতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে থাকে।
এইভাবে, ইতিহাসের কোন কালে, ইতিমধ্যে অতিক্রম করে আসা হয়েছে, সেই ভাবনাগুলিকে যদি, কোণ সাময়ীক  সুবিধাজনক অবস্থায়,  ইতিহাসে তলিয়ে যাওয়া 'ভাব' নির্ভরতার সাথে কোন  রাজনীতি
-----  হটাৎ করেই নিদ্রাভংগ হওয়ার কারনে, রাজনীতির রাজ সিংহাসনে আরোহন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে, তখন উন্নত আন্তর্জাতীকতায় সমৃদ্ধ রাজণীতিটির সাথে তাকে সংঘাতে আসতেই হবে। এই সংঘাত এমন একটা সংঘাত হয়ে দাড়ায়, একের নিধন ব্যাতিত অন্যের অস্তিত্ব অসম্ভব।
তাই বর্ভমানে
ভারতে যে 'ভারত বনাম ভারত' এর যে সঙ্ঘাত লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে ইতিহাসগত কারনেই, প্রাক-ঐতিহাসিক কালের ভাবাদর্শের অবসান নিশ্চিত। কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থা যখন কয়েক শতাব্দী ধরে যে ভাবসত্বা স্বাধীনতাত্তোর কালে সমৃদ্ধ হয়ে জনমানসকে সংগঠিত করেছে, সেখানে হটাৎ করেই একরাষ্ট্রে দুই ভারত ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা হয়,
------ তখন সেই সংঘাত, সমাজের তলদেশ থেকে বিস্তৃত হতে থাকবেই এবং ক্রমে সেটা জাতীয় রাজনীতির  uncompromising conflict এ বদলে যাবেই।
যদি মেনে চলা হয়,
এক রাষ্ট্র দুই ভারত তত্ব, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদগুলি জেন এন ইউতেই প্রথম একটি সর্বভারতীয় সেক্যুলার প্রতিরোধের প্রতিবিম্ব হিসেবে প্রতিধ্বনীত, সেই প্রতিধ্বনী গিয়ে প্রথামে কোলকাতার যাদবপুর  বিশ্ববিদ্যালয়, ক্রমে জামিয়া-মিলিয়া, আলিগড়, দিল্লী   চেন্নাই, পন্ডিচেরী এবং এমন কী মুম্বাই এর ইন্ডিয়া গেট পর্য্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে তার প্রধান কারন
----প্রাতিষ্ঠানিক দিক থেকে ইউনিভারসিটি গুলি সাধারনভাবেই, আন্তর্জাতিক এবং চিন্তনের দিক থেকে সব থেকে বিশ্ব চিন্তনের সর্বোচ্চ  অধিষ্ঠানের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। সেই বিচার মুসলিম ধর্ম যেখানে অনুসরনের  দিক থেকে  বিশ্বের দ্বিতীয়  বৃহত্তম অংশের অনুসারী এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেখান ছাত্র-ছাত্রি অধ্যয়ন করতে আসেন
------সেখানে 'ধর্মের নামে ভারতে দুটো ভারত হলেও কোনদিন, যদি জে এন ইঊ কিংবা  যাদবপুরকে ভাগাভাগিকে মেনে নিতে হয়, তবে সেদিন ইউনিভারসিটি গুলিই উঠে যাবে।  কাজেই, ধর্মের নামে  এক ভারতে দুটোকে ঢুকিয়ে দেওয়াকে ইউনিভারসিটিগুলির পক্ষে বিরোধীতা করাটা একটা বাধ্যবাদকতা।
অনুরুপভাবে, এই 'দুই ভারত'  তত্ব মেনে নিয়ে, ভারতের শিল্প কাঠামোগুলি তো বটেই, শ্রমিক অস্তিত্বই সম্ভব ছিলো না ।  কিন্তু সরকার, যদি নিশ্চিত হয়ে গিয়ে থাকেন, শিল্প উৎপাদনের দেখাশোনার বুনিয়াদী কাজটা যখন বিদেশীরাই চালিয়ে নিচ্চে, তখন ''দুই  ভারতের ভারত' শিল্প কাঠামো সম্পর্কে 
ভারতের ভাবার প্রয়োন নেই
------- সেক্যুলার রাষ্ট্রবাদী চরিত্র নিয়ে চলাটা যেখন শিল্পপুজির অস্তিত্বের দায়, সেখানে প্রাক-ঐতিহাসিক কালকে চাপিয়ে দেওয়াকে শ্রমিকরা নিশ্চিতভাবে আটকাবেই। হয়তো আটকে দিতোই ইতিমধ্যে
------,  ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকে  যদি নেতারা  অ-মলিন পয়সা-কড়িতে আটকে দেওয়াকেই 'নীতি' হিসেবে না নিতেন ইতিমধ্যেই প্রতিরোধ রাস্তায় ব্যারিক্যাডের লড়াইতে বদলে যেতো।
সব মিলিয়ে,
স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে, এই প্রথম একটা প্রতিরোধ শুরু হয়েছে, যেখানে সংবিধান থেকে এবং সংসদীয় কাঠামোকে ভেংগে বেড়িয়ে আসার বিরুদ্ধে একটা সংগ্রাম হচ্ছে। অতীতে  সংসদীয় ব্যবস্থার বাইরে যত গনসংগ্রাম হয়েছে, সব কিছু, সংসদ এবং সংসদীয় ব্যবস্থাস্র মধ্যে এবং সংবিধানের অভিমুখেই স্থানপের কারনেই হয়েছে।
কাজেই লড়াই চলছে এবং ক্রমে তা শক্তি পেতে থাকবে, এই শক্তিবৃ্দ্ধি ঘটবে মানুষের সাধারন প্রবৃত্তিতে একতাটাই প্রধান বলে এবং এই একতায়, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং যুক্তিবাদ প্রধান অভিমুখ হওয়ার কারনে। ইতিমধ্যেই প্রজাতন্ত্রিএবং আন্তর্জাতীকতাবাদী ভারত এই সংগ্রামে  কাছাকাছি আসছে ।
------ এই সুত্রেই ৮ই জানুয়ারী ধর্মঘট সাফল্যকে বিবেচনা করা উচিত হবে। কতভাগ ধর্মঘট হোল কিংবা হোল না, সেখানে গিয়ে বিবেচনার প্রয়োজন নেই। এটাই বুঝা দরকার,
------  ৮ই জানুয়ারী, যাদের ইতিমধ্যে 'খরচা হয়ে যাওয়া সম্পদ' বলে মেনে নেওয়া হচ্ছিলো, সেই 'spent force' যখন তেড়েফুরে বেরুতে শুরু করলো, ৮ই জানুয়ারীতে তাদের একটা মালায় বেধে দিলো, ইংরাজীতে বলতে হবে - strike has galvanised the unity against প্রাক ইতিহাসবোধকে। প্রসংগত স্মরন রাখতে হবে, রামায়ন এসেছে সামন্ত কালেরো আগে এবং দাসত্বের কালে।
কাজেই লড়াই এর মঞ্চ ইতিমধ্যেই নির্মীত, ভারতের ইতিহাসে সর্বৃহৎ গনতান্ত্রিক সংগ্রাম। নতুন নতুন মানুষ আসছেন। গনতান্ত্রিক এবং সেক্যুলার ভারতের দিকে। বি জে পি এবং আর এস এস এতোটাই নিচে নেমে এসেছে, সেখান থেকে
তার ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। সে জন্য এরা দিন  যত যাবে তত বেপোরোয়া হবে। যদি মানা হয়, জে এন ইউ এর ঘটনা, ঘটানোটা সেই বেপোরোয়া ভাবের প্রতিফলন।
অবস্য, এই লড়াই চলতে থাকবে এবং শেষ পর্য্যন্ত  ' বিবিধের মিলিত এক জাতির এক রাষ্ট্রই জয়ী হয়ে ফিরে আসবে। অবস্য, রক্তপাত কত কম হবে, তা নির্ভর করবে কত দ্রুত শ্রমিক নেতারা বুঝবেন
----- ভারতের বর্তমান এই সংগ্রাম, শ্রমিক শ্রেনী ও জনগনকে গনতান্ত্রিক রুপান্তরের কাছাকাছি। 
-----  ভবিষ্যতের সে কথাও বলে রাখি, নেতারা যদি কালের এই ডাককে পেছনে রেখে, এখনো অ-মলিন অর্থনীতিবাদ নিয়ে চলতে থাকেন, একটা সময়ে এই ণীতির বিপরীতেই বিদ্রোহ হয়ে যাবে। এটা ঘটবে একটা কারনেই,
---- রাষ্ট্রনীতিতে যখন 'হিন্দু-মুসলিমে ভাগাভাগিকে মেনে নেওয়া হবে অথবা নিরপেক্ষ থাকবে শ্রমিক আন্দোলন নিজেই, ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।

সব শেষ শেষ কতাটা আবারো বলে রাখিঃ
--- In the final analysis, the current battle against two nation one State
কার্য্যতঃ জাতীয়তা পূর্ব ভারতকে সামনে এনে জাতীয়তার আন্তর্জাতীকতার অভিমুখকে আটকে দেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম
তত্বগত দিক থেকেঃ
জাতীয়তা যদি কোন দিন সামন্তসাহী অথবা ভারতের ক্ষেত্রে দাসত্বকে ভেংগে এগিয়ে যেতে পেরে থাকে তার প্রধান কারনঃ আন্তর্জাতীকতা জাতীয়তার অভিমুখে থেকে ক্রমাগত প্রজাতন্ত্রের বিকাশ ঘটিয়েছে।
আরো বলিঃ
এই নিয়মটাই সমাজ বিজ্ঞানের এক সাধারন নিয়ম। মার্ক্সবাদ কখনো নিজে থেকে এগুতে পারতো না ঘোড়া হিসেবে কিংবা বলতে পারেন 'রকেট'  হিসেবে সামনে 'লেনিনবাদ' সাংগঠনিক অভিমুখটা ঠিক করে না দিতো।
----- আবারো বলি যেকোন রুপান্তরের তত্বে দুটী মুল উপাদান থাকতেই হবে।
একটি 'রুপান্তরের প্রকৃ্তি' অন্যটা রুপান্তরনের অভিমুখ। উভয়কে নিয়েই বলা যাবে ---- আন্তর্জাতীকতা। (ক্রমশ)



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours