শামা আরজু, লেখক, বাংলাদেশ: 

বিজয়ের মাসে আমার এসব মনে না করলে কী চলেই না!
জিরোপয়েন্ট নামলাম রাত প্রায় পৌনে একটা। চির চেনা এলাকা এখন স্বদেশ নয় যেন। যেন এ দেশ এ গ্রামের আমি কেউই  না। এ রাত  কেবলই নরের। মনে পড়ে যায় ইয়াসমীনকে।
নুরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়, যখন শকুন নেমে আসে সোনার বাংলায়। এ কেমন সোনার বাংলা যেখানে মানুষকে বড় নমানুষ মনে করতে হয়। পুরুষসঙ্গী ছাড়া মেয়ে মানুষকে নেহায়েত একা, ভয়ঙ্কর একা মনে করে সবাই।
দু'গুন দামে রিকশা নিলাম। দানবদের বাজার পেরিয়ে গলিতে ঢুকতেই মনে পড়ে সেই দানবীয় রাতের কথা। তোমার সাথে রাস্তা পার হবো, ওরা দিলোনা। ওদের ছোট্ট হাতে বড় অস্ত্র নিয়ে ওরা আমাদের পাশের পাটক্ষেতে নিয়ে যায়।অস্ত্র ঠেকিয়ে ওরা তোমায় জড়িয়ে ধরে ছবি তুলতে বাধ্য করলো।তুমি লজ্জা পাচ্ছিলে কেবল।পুরুষ লজ্জা পায়, বাবার পর তোমায় দেখলাম।আমি তোমায় রক্ষা  করার জন্য ওদের সব মেনে নিলাম।ওরা দু'লাখ টাকা দেব মর্মে ব্ল্যাংক স্ট্যাম্পে আমাদের স্বাক্ষর  নিল।ওদের গডফাদার আছে। প্রায় তিনঘন্টা আটকে রেখে ওরা আমাদের ছেড়ে দিল।রাতেই এক সাংবাদিক ছোটভাইয়ের সাথে সব শেয়ার করলাম। পরদিন এলাকার কাউন্সিলরের  কথামতো মেয়রের সাথে কথা বলে থানায় একটা জিডি করলাম।ওরা আমাদের স্ট্যাম্প ফেরত দিলো না।আমিও ভাবলাম থাক। ওসব তাবিজ দিয়ে নাকি কতোকিছু করা যায়, দেখি না কী করে!
একটা স্বপ্ন দেখি প্রায়ই ।যেদিকেই তাকাই জল ছাড়া আর কিছুই দেখিনা। আমি একা জলের মধ্যিখানে।'কুল নাই কিনার নাই।'আবার মাঝেমাঝে এমনও দেখি আমার চার পাশে কেবল সাপ আর সাপ গিজগিজ করছে। আমি সাপের ভয়ে কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা পাচ্ছিনা।ঠায় দাঁড়িয়ে আছি।পালানোর পথও পাচ্ছিনা।ঘুম ভাঙলেই প্রচন্ড বুক ধড়পড় করে।আমি বুকের ভেতরকার শব্দ বাইরে থেকে শুনি।আমার দম নিতে কষ্ট হয় পরে বুঝতে পারি এ নিছক স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা আমায় ঘুমের ভেতরও তাড়িয়ে বেড়ায়।এ কেমন সোনার বাংলা? এখানে ঘরে ঘরে দূর্গ তো হয়নি হয়েছে নেশাখোর আর অস্ত্রবাজদের রক্তের হোলিখলা।হয়েছে আমার মতো মানুষদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ।
তোমার কেনা কেক ছিলো, সেটা খেয়েই শুয়ে পড়া।দাঁত মাজার অভ্যাস ছিলোনা,তোমাকে মনে করে তাই করি।রান্না ঘরের আলোটা জ্বালালে শোবার রুম খানিকটা আলোকিত হয়।পুরো অন্ধকারে ভয় হয়।শুয়ে পড়ি।শুচিবাই তোমার।পা মোছার কাপড়টা আলাদা।অামার মাথার কাছেই ঝোলানো ছিলো।খুসখুসে কাশি।গলায় কাপড় না জড়ালেই এই এক সমস্যা। উঠতে ইচ্ছে করছেনা।তোমার পা মোছার কাপড়টা টেনে নিয়ে গলায় জড়ালাম।ঘেন্না করবে কেন? পা তো ধুয়েই মোছো।আর তোমারই তো পা।তুমিই তো।
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে প্রায় দেড়টা।জানালা খোলার যো নেই।সারাক্ষণ নেশাখোরদের ।হরিপদ কেরানীর ঘর মনে পড়ে যায়।নিজের বোনের ঘরে খাবার আবদার করিনা।মামাতো বোনের ঘরেই খাবার কথা ছিলো।অতো রাতে জাগালাম না।জার্নিতে কেউ কখনও কিছু কিনে দেবার মতো কেউ ছিলোনা আমার। আজকাল মেয়েটা দেয়,সঙ্গে তুমিও।
তবুতো আমার একটা তুমি আছে, যা অনেকেরই থাকে না।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours