কেয়া ঘোষ, ফিচার রাইটার, আসানসোল:

একটা করে ধর্ষণ হয় আর কলমের ডগা দিয়ে ভুরি ভুরি কবিতা গল্প প্রবন্ধ বেরিয়ে আসে। তুলির আঁচড়ে তৈরী হয় বিখ্যাত সব ছবি। সত্যি কথা বলতে গেলে এইসবে ধর্ষক কিংবা ধর্ষিতা কারোর‌ই কি কিছু আসে যায়? তারা কেউই কি এই মানসিকতা পোষণ করে? করে না। আমরা সবাই জানি এই লেখা বা ছবি সব‌ই আত্মতৃপ্তির জন্য লেখা বা আঁকা। এতে কোন ক্রাইম বা যৌন অপরাধ আটকান যাবে না।
যৌন অপরাধী তো আসলে একটা অসুস্থ বিকৃত মানসিকতার শিকার। তার মধ্যে কোন সূক্ষ্ম শিল্পবোধ জন্মায়নি যা থেকে সে এর বিকল্প কোন ভাল কাজ করতে পারে। সে নিশ্চয়  এই কুরুচিকর বিকৃত মানসিকতা নিয়ে পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হয় নি। তার বাবা-মা ও নিশ্চয় ছোটবেলা থেকে তাকে এই শিক্ষায় শিক্ষিত করে নি। তাহলে তার মধ্যে এই ভয়ানক পৈশাচিক উল্লাস, যৌন-বিকৃতি কোথা থেকে এল? পাঠক, আপনারা খেয়াল করবেন আমি কিন্তু একবার‌ও জান্তব কিংবা পাশব প্রবৃত্তি শব্দগুলো ব্যবহার করি নি। কারণ জন্তু বা পশুকে আমি এই সব পিশাচদের থেকে অনেক উঁচুতে স্থান দিই
তাহলে প্রশ্ন হল এই বিকৃতির উৎসস্থল কোথায়? উৎসস্থল হোল আমাদের সমাজব্যবস্থা, সামাজিক পরিকাঠামো, আমাদের অশিক্ষা। ঘরে ঘরে বে-রোজগারি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের অল্প বয়েসেই যেন তেন প্রকারেণ রোজগারের পথে ঠেলে দিচ্ছে। অর্ধশিক্ষিত এবং অশিক্ষিতের হাতে তুলে দিচ্ছি বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র এ্যানড্রয়েড মোবাইল।
ঘরে ঘরে যার ব্যাবহারে শিশু থেকে বৃদ্ধ- বৃদ্ধা অনায়াসে বহির্জগতের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলছেন। আপনি আমি অর্থাৎ মা- বাবারা যা পারি না আমাদের শিশুরা তাই অনায়াসে আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছে। গর্বে আমাদের বুকের ছাতি ১৪ ইঞ্চি থেকে ১৮ ইঞ্চি হয়ে যাচ্ছে। আমরা বুঝতেও পারছি না কিভাবে একটা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ধীরে ধীরে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে গ্রাস করে ফেলছে।
এতো গেল শিক্ষিত সমাজের গল্প কিন্তু অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিতের হাতে যখন এই মোবাইল ফোন উঠছে তখন যা যা হবার ছিল ঠিক তাই তাই কিন্তু ঘটছে। সস্তার ইন্টারনেটের লাগামছাড়া ব্যবহারে তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। রাতের অন্ধকারে গোল হয়ে বসে পর্ণোগ্রাফি সিনেমা তাদের উত্তেজিত করছে। তারা যা করছে একসঙ্গে মিলে করছে। মদ খাচ্ছে একসঙ্গে, সিনেমা দেখছে একসঙ্গে, এমনকি ধর্ষণ‌ও করছে একসঙ্গে।
ধর্ষণ তখন তাদের কাছে সাময়িক উত্তেজনা প্রশমনের একটা উপায় মাত্র। তারপর নিজেদের পৈশাচিক উল্লাস মিটে গেলে নিজেদের বাঁচানোর উপায় হলো ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে মারা। যারা করছে তারা কেউ চোদ্দ বা কেউ ষোলো, কেউ বা ছাব্বিশ কেউ বা তিরিশ। তারা কেউ কি খুব স্বাভাবিক অবস্থায় ধর্ষণ করছে? না তো, মদ্যপান করে নিজেদের এই কাজের উপযুক্ত করে তুলছে। এত মদের ব্যবসা কেন? মদের এখন ঢালাও ব্যবস্থা। বনেদী বাড়ীর আভিজাত্য বজায় থাকে না মদের বার না থাকলে। তেমনি অলিতে গলিতে অজস্র অসংখ্য মদের দোকানে নাবালক থেকে সাবালক সবার অবাধ যাতায়াত। মদ পান করে ইউ টিউবে পর্ণোগ্রাফি দেখার পরে একজন ড্রাইভার বা খালাসীর কাছ থেকে আমরা কি আশা করব? সাধু না শয়তান হবে সে?
কোন নির্জন জায়গায় পুলিস কেন থাকবে না? আমাদের রাষ্ট্রের অনেক কাজ করা উচিত কিন্তু তারা কি করেন? একটা এনকাউন্টারে চারজন ধর্ষক মারা গেলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। বাকী ধর্ষকদের বিচারের নামে দীর্ঘমেয়াদী প্রহসন চলতেই থাকবে। তারপর একদিন সেইসব ধর্ষকদের হয়ে লড়াই করা শয়তানের দূতেদের সাহায্যে তারা শর্তাধীন জামিনে মুক্তি পেয়ে নির্দ্বিধায় মেয়েটিকে পুড়িয়ে মারবে। বিচারের প্রহসন তখন‌ও চলতেই থাকবে। এর শেষ কোথায়? রাষ্ট্রকে তো তাহলে স্বীকার করে নিতেই হয় যে এদেশে মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে তারা ব্যর্থ। মহিলারা কোনকালে কোন যুগে কোন অবস্থায় কোন পরিবেশে তারা  কোনদিন নিরাপদ ছিলেন না আজ ও এই বিংশ শতাব্দীতেও তারা সমান অসহায় রয়েই গেলেন। অগ্নিপরীক্ষার হাত থেকে সীতাদের কোনদিন‌ই মুক্তি নেই।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours