জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:
এই কলমে লেখা হোল অনেক । নতুন বিষয়ে প্রবেশের পূর্বে, এতোদিন বলাহলো কিংবা লেখকের ,শিখা হোল - তার হিসেব নিকেশের কিছুটা প্রয়োজন হবে বলে মনে হোল। আরো মনে হয়েছে, এই প্রয়োজনীয়তা যতটুকু বা পাঠকদের, তার চাইতে যিনি লিখছেন তার।
হয়তো পূর্বে বলেছি, সে কথাটা আবারো বলে রাখি। এই কলমের লেখক সাহিত্যিক কিংবা তাত্বিক অথবা ইতিহাস লেখক নন । কি বিচিত্র দেখুন, যে ব্যক্তির ইতিহাসপাঠ অতি কিঞ্চিত, সেই ব্যক্তিকেই যে ইতিহাসের বাধ্যবাধকতার কারনে কোন দিন, লিখতে বসতে হবে, সেটি ভাবি নাই ।এই সুত্রেই মনে হয়েছে, বর্তমান কালে, এদেশের বোধ হয় এ এক অভিশাপ। যাদের হাতে কলম আছে, তাদের চিত্তে ময়দানী অভিজ্ঞতা নেই । যাদের সেটা আছে, কলম নেই।
বেলা শেষে এ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। বাধ্য হয়ে যখন লিখতে বসতো হোল, বাধ্যবাধকতার কারনেই লিখতে শিখতে শিখতেই লেখা চালাতে হোল।
----- এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি - তত্ব বা দর্শন কিংবা ইতিহাস সম্পর্কে অতি সাধারন ধারনা নিয়ে, যখন লিখতে বসি - তখন লেখায় অভিজ্ঞতার প্রবাহ ধরেই, সাধারনিকরনের অতি প্রয়োজনীয়, এসব উপাদান গুলির নির্য্যাস হটাৎ করেই, ইতিহাসের গভীর অন্ধকার ভেদ করে, এক একটি আলোর রশ্মির মতোই যেন অভিজ্ঞতার সাথে মিশতে মিশতে, অখন্ড সত্বায় কলম বা কম্পিউটারের আংগুলে ঝর্ণাধারার মতো সামিল হতে থাকে। তখন যেমন আনন্দ হয়, তেমনি একটা ভয়ংকর ভয়।
এভাবেই বুঝলাম, সারা জীবনের পার্থিব বস্তুর যা সঞ্চয়, তা তো আঙ্কিক নিয়ম ধরে অতি সহজেই বিলিবন্ঠন করা যায়। কিন্তু যাদের জীবনের অভিমুখটাই ছিলো অভিজ্ঞতার প্রবাহ, অ-পার্থিবতার সুত্রে যতটুকু পার্থিব চলে আসে - সেটা বিলি বন্ঠনের কাজে লাগে না,
------ অথচ সঞ্চয়ের ভান্ডারে আশি বছরের অভিজ্ঞতায় যার অন্তহীন চড়াই-উৎরাইএর বিচিত্র গতি প্রকৃ্তি লুকিয়ে থেকে, ইতিহাসের সাথে মিশে থাকা চিন্তনের সহস্র ধারা যখন সেখানে কুন্ডলি পাকিয়ে রয়েছে ---, তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিই, এক দিকে যেমন এই লেখালেখির বাধ্যবাধকতার কারন, অন্যদিকে এই অভিজ্ঞতাকে সাধারনিকরনের পথে ভাষা খুজে পাওয়া এবং বিশ্বচিন্তন প্রবাহে তুলে এন, , বিশেষভাবে নিদৃষ্ট পাঠকদের কাছে পৌছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভয়।ভয়ংকর ভয়।
কোন পাঠক প্রশ্ন করতেই পারেন - কে মাথায় লাঠি মারতে গিয়েছিলো, অভিজ্ঞতা বন্ঠন করতে? তেমন প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক যখন লেখক যে দল কিংবা ট্রেড ইউনিয়নে ষাট বছর কাজ করেছেন, সেখানেই এখন এসব কথা উঠছে, বাজার অর্থনীতি শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত হয়ে যখন মানুষের অস্তিমজ্জায় মিশে যাচ্ছে। তোলাটা স্বাভাবিক হলেও, প্রশ্নটা খুবই বিপদজনক।
এদেশে কেন, পুরো উপমহাদেশটাতে যেভাবে অর্থনীতি থেকে রাজনীতি বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে,বিস্ফারিত চোখে দেখে গেলাম, রাজনীতিটাও ক্রমে রাজনীতি হীনতার শিকার হয়েছে। এইভাবে রাজনীতিহীন রাজনীতির ব্যধী ক্রমে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে বিস্তৃত হয়েছে।
------ লেখকের মতো যারা ট্রেড ইউনিয়ন থেকে সাম্যবাদী দলে গিয়েছেন এবং ষাটের দশকের একেবারে শুরুতেই দলে এসেছেন, সেখানে যতটুকু মর্য্যাদা তা ট্রেড ইউনিয়ণে শ্রমিকদের গ্রহনযোগ্যতার মাধ্যমেইম তারা নিশ্চিভাবে লক্ষ করেছেন,
----- রাজনীতিহীনতার রাজনীতি এবং ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের শরীর সর্বস্বতার বিষয়দুটি, পরস্পর পরস্পরকে আকর্শন করে, সেজন্য বলতে হবে, বাজারের কারনে এই রোগ যখন ভারতীয় উপমহাদেশের সব বুর্জোয়া দলকে ইতিমধেই গ্রাস করেছে, তখন ট্রেড ইউনিয়নের ছিদ্রপথ ধরে, সাম্যবাদী দলগুলিতেও সংক্রামিত হয়েছে।
----- অনেক খোজাখুজির পর, অল্প পড়াশুনার সাথে অভিজ্ঞতাকে রসায়ন ঘটিয়ে বুঝলামা রজনীতিহীনতার রাজনীতি শব্দবন্ধন দুটির আসল অর্থ পলিটিক্যাল ইকনমিক্স থেকে ইকনমিক্সটিকে পৃ্থক করে নিলে, আক্ষরিক অর্থে ' পলিটিক্স' হিসেবে মানলেও, আসলে অর্থনীতি থেকে বিচ্ছেদ ঘটার পর সেটা - রাজনীতিহীন রাজনীতির শিকার হয়ে যায়।
ভারতে প্রকৃ্ত অর্থে, শ্রীমতি ইন্দিরা পর্য্যন্তই রাজনীতির অভিমুখে পলিটিক্যাল ইকনোমিক্স প্রভূত্ব করেছে, সেকারনে সাধারনভাবে বিরোধী দলগুলিক, বিশেষভাবে সাম্যবাদী আন্দোলনের অভিমুখে শত শত জ্ঞানী মানুষের সমাবেশ ঘটেছিলো।পলিটিক্যাল ইকোনমিক্সের সাথে যেহেতু জাতীয় আত্মমর্য্যাদা,জাতীয় স্বয়ংসম্পুর্নতা, স্বাধীনতা এবং জাতীয় বন্ঠনের প্রশ্নের সাথে মানব সম্পদের বিষগুলিও সন্নিবেশিত থাকে, সে কারনে রাজনীতি বা পলিটিক্স সব সময় ফলিত বিজ্ঞানের চরিত্র পেয়ে গিয়েছিলো ।
------ সেখানে সাম্যবাদী দল এবং ঐক্যকামী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনগুলি শত সহস্র সৃজনশীল নেতা নির্মান করেছেন।এরা ষাট সত্তোর দশকে দুনিয়া কাপানোর মতো সৃজনমূখীন জ্ঞান, বাগ্মিতা এবং পাহাড় টলিয়ে দেওয়ার মতো মনোবল নিয়ে ভারতের রাজনৈ্তিক গগনে আবির্ভুত হয়েছিলেন।
----- মুলতঃ সত্তোর দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে, বাংলার ভূমীসংস্কারের ইতিবাচক দিকগুলিকে এগিয়ে না দিতে পারার কারনে, ইতিমধ্যে দ্বিতীয়বার ইন্দিরার আগমনের পরে তার আমদানী নির্ভরতার দিকে ঝুকতে থাকার সময় থেকে, সাম্যাবাদীরাও অংশত সরকারীয়ানার আর বাকিটা - কেন্দ্রের ;সংস্কার'রের কল্যানে,প্রথমে শ্রমিক আন্দোলনে এবং পরে সাম্যবাদী নেতা কর্মীদের মধ্যে ' সাম্য এবং শ্রমিক একতা'র বিষয়গুলি ফলিত বিজ্ঞানের জায়গায়
------সেই যে ' শ্লোগানে বদলাতে শুরু করলো, তা পচনের পথ বেয়েই শুধু নয়, ক্রমে একের পর ঘটতে থাকা আভ্যন্তরীন এবং আন্তর্জাতীক প্রবাহের সাথে যেভাবে, 'বন্ঠন' বিবর্জীত বা পলিটিক্স বিবর্জীত আমেরিকা নির্ভরীত অর্থনীতিসর্বস্যতার যাকে আমরা বাজার বলে জেনেছি
----- যেভাবে উদোমগতিতে দেশে ঢুকেছে তেমনভাবে, শ্রমিক তথা সাম্যবাদী আন্দলণের অভিমুখো, 'চিন্তন মুক্তির' দিক থেকে কার্য্যতঃ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে, দলের মধ্যেই ব্রাহ্মন্যবাদের ব্যধীগুলি ঢুকে পরার অনেক ছিদ্রপথ খুলে দেওয়া হোল।অতীতের দিকে মুখ ফেরানোর সব থেকে ভয়ংকর পরিনাম দেখা দিলো,
------ বর্নাশ্রমকে শ্রেনী অর্থে তুলে আনার বিপর্য্যয়কারী ব্যর্থতার পরিনাম ফলতে লাগলো। , দেখা গেলো, দেশ ক্রমে অবিৃকত 'দাসব্যবস্থায়' গড়িয়ে চলতে থাকার প্রতিবিম্ব 'নারী সম্ভ্রমকেও 'বাজারজাত' করা শুরু হোলেও, শ্রমিক আন্দোলন, নিজেই নিজের ,শ্রেনীগত অবস্থানকেই বর্ণগত 'চোখে' দেখতে শুরু করেছে।
--- এটা এমন এক যুগ সন্ধিক্ষন যখন 'রাজনীতিহীনতার রাজনীতি' শ্রমিক আন্দোলনের সামনে দেশটাকে উলটো করে দেখাতে শুরু করছে।ভাষন লিখন এবং আন্দোলনের সব কিছুকে উলটো চোখে দেখাচ্ছে,
-----বুঝিয়ে ছেড়েছে, দেশের সেই অংশের,
যাদের জমি জিরেত রোজগার এবং এমন কী স্বাধীন জীবনবোধের যতটুকু টিকে ছিলো - তার সব কিছুইঃ হয় বাবুদের জন্য নির্মিত রাস্তা-ঘাট, কিংবা ড্যাম ইত্যাদির জলের নিচে বাকিটা ট্রেন লাইনের নিচে, রোজগারের জন্য যারা ট্রেনে খাওয়া বিলি কিংবা সরকারের 'স্বচ্ছতা নীতির' রুপায়নে ঠিকাদারদের 'বিনা পয়সার' রোজগারে রয়েছেন ,কলে কারখার শারীরিক শ্রমে নিযুক্ত করাহয়েছে ঠিকাদারী শোষনের ছত্র ছায়ায় ------ ভারতটা নাকি তাদের নয়। ভারতহোল উপর তলার কয়েকজনের এবং নিছের কয়েক কোটি বাবুর জন্য, যারা ব্রাহ্মন্যবাদের দুষ্ট নীতিগুলির ধ্বজা ধারী।-
কাজেই মনে হোলঃ
রাজনীতি এবং শ্রমিক আন্দোলনে যখন অভিজ্ঞতা, এবং ফলিত বিজ্ঞান বিসেবে প্যলিটিক্যাল ইকোনোমিক্স,এবং সেই অভিমুখে সমাজ বিজ্ঞানকে ছুটী দেওয়া হয়েছে,
------- সেই যায়গাকে ক্রমে বাবুনীতির অভিমুখ হিসেবে ইংরাজী সর্ব্বস্যতা এবং মেট্রোপলিস স্মার্টনেসকে যায়গা করে দেওয়া হয়েছে,
তখন হয়তো বা ষাটের দশকের একেবারে প্রথম ভাগে শ্রমিক আন্দোলের রুট ধরে সাম্যবাদী দলে এসেছেন তাদের এবং তাদের মধ্যে সব থেকে প্রথম হিসেবে,
------ জীবন রায়ের উচিত হবে, তার অভিজ্ঞতাকে ফলিত বিজ্ঞানের আলোকে বিচারে চলে যাওয়া কালকে বিশ্লেষন করে ভবিষ্যতর সম্ভাব্য অন্ধকারে কিঞ্চিত আলো নিক্ষেপ করা।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই লিখে চলেছি।
যেহেতু অন্ধকারের পথ চলে হাটা,
যে পথে সাধারনত কাউকে চলতে দেখা যায় নাই।
লেখা যেহেতু,লেনিনবাদের আলোকে অভিজ্ঞতার বিশ্লেষন
এবং সে স্যত্রে লেনিনবাদের কালগতভাবে সমৃদ্ধ করার
প্রশ্নের সাথে -
প্রয়োগের রীতিনীতিকে নতুন করে খুজে বের করা এবং কাঠামোগতভাবে আন্দোলনের শ্রমিক অভিমুখকে শত-সহস্র ধারায় প্রবাহিত করার প্রশ্নে সাথে যুক্ত; সবগুলি লেখা এবং বিগত তিন দশকে যে সব প্রতিষ্টানিক সত্বা
লেখকের হাত ধরে গড়ে উঠেছে
---- সবের একাত্ম রুপকেই ফলিত বিজ্ঞানের একটা সর্বোত্তম রুপ
হিসেবে মানা হয়েছে, সেজন্য এই শ্রমে উৎকর্ষতার সিংহভাগ দাড়িয়ে আছে, পাঠকের আলোচনা, সমালোচনা এবং পরামর্শের উপর।
সেদিকটি সামনে রেখেই, আজকের উল্লেখি শীরোনামাটিকে সামনে রেখে, আরো একটা বিষয়ে আলোচনা শুরু করছি।যেহেতু, লেখাগুলিতে একপ্রান্তে
অভিজ্ঞতা, অন্যপ্রান্তে ইতিহাস এবং দর্শনবোধের মিশ্রন ঘটিয়ে লেনিনবাদের মানদন্ডে অভিমুক দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে
------- সেজন্য, লেখকের ধারনা প্রতিটি লেখায়, প্রতিটি প্যারা এবং হয়তো অনেক লাইনের শেষে ফলিত বিজ্ঞানের কোন সৃষ্টি হয়েছে, লেখকের অজ্ঞাতেই। পরের লেখাগুলি থেকে সেই "কোন'গুলিকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
পাঠকদের কাছেও অনুরোধ করবো, তারাও লেখাগুলির উপরে মতামত লিখে দিতে। এ কারনেই এটা দরকার, -যে বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছি বিগত তিন বছর, এই বিজ্ঞানের এবং সাথে সাথে মেহনত ও মেহনতির অস্তিত্ব মূলতঃ এই আলোচনা এবং সমালোচনার উপরে মূলতঃ নির্ভরশীল।
তীব্র ভাষায় যারা সমালোচণা করবেন, তাদের অনুদানও আশীর্বাদ বলে মেনে নেবো।
তবে আগে থেকে স্বিকার করে নিই; লেখায় অনেক বানান ভূল থাকবেই সেগুলি নিজগুনে মাফ করে দিতে হবে। তাছারা সমাজবিজ্ঞানে সাধারনতঃ দারী, কমা বা ফুলস্টপকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। (ক্রমশ)
এই কলমে লেখা হোল অনেক । নতুন বিষয়ে প্রবেশের পূর্বে, এতোদিন বলাহলো কিংবা লেখকের ,শিখা হোল - তার হিসেব নিকেশের কিছুটা প্রয়োজন হবে বলে মনে হোল। আরো মনে হয়েছে, এই প্রয়োজনীয়তা যতটুকু বা পাঠকদের, তার চাইতে যিনি লিখছেন তার।
হয়তো পূর্বে বলেছি, সে কথাটা আবারো বলে রাখি। এই কলমের লেখক সাহিত্যিক কিংবা তাত্বিক অথবা ইতিহাস লেখক নন । কি বিচিত্র দেখুন, যে ব্যক্তির ইতিহাসপাঠ অতি কিঞ্চিত, সেই ব্যক্তিকেই যে ইতিহাসের বাধ্যবাধকতার কারনে কোন দিন, লিখতে বসতে হবে, সেটি ভাবি নাই ।এই সুত্রেই মনে হয়েছে, বর্তমান কালে, এদেশের বোধ হয় এ এক অভিশাপ। যাদের হাতে কলম আছে, তাদের চিত্তে ময়দানী অভিজ্ঞতা নেই । যাদের সেটা আছে, কলম নেই।
বেলা শেষে এ এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। বাধ্য হয়ে যখন লিখতে বসতো হোল, বাধ্যবাধকতার কারনেই লিখতে শিখতে শিখতেই লেখা চালাতে হোল।
----- এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি - তত্ব বা দর্শন কিংবা ইতিহাস সম্পর্কে অতি সাধারন ধারনা নিয়ে, যখন লিখতে বসি - তখন লেখায় অভিজ্ঞতার প্রবাহ ধরেই, সাধারনিকরনের অতি প্রয়োজনীয়, এসব উপাদান গুলির নির্য্যাস হটাৎ করেই, ইতিহাসের গভীর অন্ধকার ভেদ করে, এক একটি আলোর রশ্মির মতোই যেন অভিজ্ঞতার সাথে মিশতে মিশতে, অখন্ড সত্বায় কলম বা কম্পিউটারের আংগুলে ঝর্ণাধারার মতো সামিল হতে থাকে। তখন যেমন আনন্দ হয়, তেমনি একটা ভয়ংকর ভয়।
এভাবেই বুঝলাম, সারা জীবনের পার্থিব বস্তুর যা সঞ্চয়, তা তো আঙ্কিক নিয়ম ধরে অতি সহজেই বিলিবন্ঠন করা যায়। কিন্তু যাদের জীবনের অভিমুখটাই ছিলো অভিজ্ঞতার প্রবাহ, অ-পার্থিবতার সুত্রে যতটুকু পার্থিব চলে আসে - সেটা বিলি বন্ঠনের কাজে লাগে না,
------ অথচ সঞ্চয়ের ভান্ডারে আশি বছরের অভিজ্ঞতায় যার অন্তহীন চড়াই-উৎরাইএর বিচিত্র গতি প্রকৃ্তি লুকিয়ে থেকে, ইতিহাসের সাথে মিশে থাকা চিন্তনের সহস্র ধারা যখন সেখানে কুন্ডলি পাকিয়ে রয়েছে ---, তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিই, এক দিকে যেমন এই লেখালেখির বাধ্যবাধকতার কারন, অন্যদিকে এই অভিজ্ঞতাকে সাধারনিকরনের পথে ভাষা খুজে পাওয়া এবং বিশ্বচিন্তন প্রবাহে তুলে এন, , বিশেষভাবে নিদৃষ্ট পাঠকদের কাছে পৌছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভয়।ভয়ংকর ভয়।
কোন পাঠক প্রশ্ন করতেই পারেন - কে মাথায় লাঠি মারতে গিয়েছিলো, অভিজ্ঞতা বন্ঠন করতে? তেমন প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক যখন লেখক যে দল কিংবা ট্রেড ইউনিয়নে ষাট বছর কাজ করেছেন, সেখানেই এখন এসব কথা উঠছে, বাজার অর্থনীতি শাখা-প্রশাখায় বিস্তৃত হয়ে যখন মানুষের অস্তিমজ্জায় মিশে যাচ্ছে। তোলাটা স্বাভাবিক হলেও, প্রশ্নটা খুবই বিপদজনক।
এদেশে কেন, পুরো উপমহাদেশটাতে যেভাবে অর্থনীতি থেকে রাজনীতি বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছে,বিস্ফারিত চোখে দেখে গেলাম, রাজনীতিটাও ক্রমে রাজনীতি হীনতার শিকার হয়েছে। এইভাবে রাজনীতিহীন রাজনীতির ব্যধী ক্রমে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে বিস্তৃত হয়েছে।
------ লেখকের মতো যারা ট্রেড ইউনিয়ন থেকে সাম্যবাদী দলে গিয়েছেন এবং ষাটের দশকের একেবারে শুরুতেই দলে এসেছেন, সেখানে যতটুকু মর্য্যাদা তা ট্রেড ইউনিয়ণে শ্রমিকদের গ্রহনযোগ্যতার মাধ্যমেইম তারা নিশ্চিভাবে লক্ষ করেছেন,
----- রাজনীতিহীনতার রাজনীতি এবং ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের শরীর সর্বস্বতার বিষয়দুটি, পরস্পর পরস্পরকে আকর্শন করে, সেজন্য বলতে হবে, বাজারের কারনে এই রোগ যখন ভারতীয় উপমহাদেশের সব বুর্জোয়া দলকে ইতিমধেই গ্রাস করেছে, তখন ট্রেড ইউনিয়নের ছিদ্রপথ ধরে, সাম্যবাদী দলগুলিতেও সংক্রামিত হয়েছে।
----- অনেক খোজাখুজির পর, অল্প পড়াশুনার সাথে অভিজ্ঞতাকে রসায়ন ঘটিয়ে বুঝলামা রজনীতিহীনতার রাজনীতি শব্দবন্ধন দুটির আসল অর্থ পলিটিক্যাল ইকনমিক্স থেকে ইকনমিক্সটিকে পৃ্থক করে নিলে, আক্ষরিক অর্থে ' পলিটিক্স' হিসেবে মানলেও, আসলে অর্থনীতি থেকে বিচ্ছেদ ঘটার পর সেটা - রাজনীতিহীন রাজনীতির শিকার হয়ে যায়।
ভারতে প্রকৃ্ত অর্থে, শ্রীমতি ইন্দিরা পর্য্যন্তই রাজনীতির অভিমুখে পলিটিক্যাল ইকনোমিক্স প্রভূত্ব করেছে, সেকারনে সাধারনভাবে বিরোধী দলগুলিক, বিশেষভাবে সাম্যবাদী আন্দোলনের অভিমুখে শত শত জ্ঞানী মানুষের সমাবেশ ঘটেছিলো।পলিটিক্যাল ইকোনমিক্সের সাথে যেহেতু জাতীয় আত্মমর্য্যাদা,জাতীয় স্বয়ংসম্পুর্নতা, স্বাধীনতা এবং জাতীয় বন্ঠনের প্রশ্নের সাথে মানব সম্পদের বিষগুলিও সন্নিবেশিত থাকে, সে কারনে রাজনীতি বা পলিটিক্স সব সময় ফলিত বিজ্ঞানের চরিত্র পেয়ে গিয়েছিলো ।
------ সেখানে সাম্যবাদী দল এবং ঐক্যকামী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনগুলি শত সহস্র সৃজনশীল নেতা নির্মান করেছেন।এরা ষাট সত্তোর দশকে দুনিয়া কাপানোর মতো সৃজনমূখীন জ্ঞান, বাগ্মিতা এবং পাহাড় টলিয়ে দেওয়ার মতো মনোবল নিয়ে ভারতের রাজনৈ্তিক গগনে আবির্ভুত হয়েছিলেন।
----- মুলতঃ সত্তোর দশকের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে, বাংলার ভূমীসংস্কারের ইতিবাচক দিকগুলিকে এগিয়ে না দিতে পারার কারনে, ইতিমধ্যে দ্বিতীয়বার ইন্দিরার আগমনের পরে তার আমদানী নির্ভরতার দিকে ঝুকতে থাকার সময় থেকে, সাম্যাবাদীরাও অংশত সরকারীয়ানার আর বাকিটা - কেন্দ্রের ;সংস্কার'রের কল্যানে,প্রথমে শ্রমিক আন্দোলনে এবং পরে সাম্যবাদী নেতা কর্মীদের মধ্যে ' সাম্য এবং শ্রমিক একতা'র বিষয়গুলি ফলিত বিজ্ঞানের জায়গায়
------সেই যে ' শ্লোগানে বদলাতে শুরু করলো, তা পচনের পথ বেয়েই শুধু নয়, ক্রমে একের পর ঘটতে থাকা আভ্যন্তরীন এবং আন্তর্জাতীক প্রবাহের সাথে যেভাবে, 'বন্ঠন' বিবর্জীত বা পলিটিক্স বিবর্জীত আমেরিকা নির্ভরীত অর্থনীতিসর্বস্যতার যাকে আমরা বাজার বলে জেনেছি
----- যেভাবে উদোমগতিতে দেশে ঢুকেছে তেমনভাবে, শ্রমিক তথা সাম্যবাদী আন্দলণের অভিমুখো, 'চিন্তন মুক্তির' দিক থেকে কার্য্যতঃ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে, দলের মধ্যেই ব্রাহ্মন্যবাদের ব্যধীগুলি ঢুকে পরার অনেক ছিদ্রপথ খুলে দেওয়া হোল।অতীতের দিকে মুখ ফেরানোর সব থেকে ভয়ংকর পরিনাম দেখা দিলো,
------ বর্নাশ্রমকে শ্রেনী অর্থে তুলে আনার বিপর্য্যয়কারী ব্যর্থতার পরিনাম ফলতে লাগলো। , দেখা গেলো, দেশ ক্রমে অবিৃকত 'দাসব্যবস্থায়' গড়িয়ে চলতে থাকার প্রতিবিম্ব 'নারী সম্ভ্রমকেও 'বাজারজাত' করা শুরু হোলেও, শ্রমিক আন্দোলন, নিজেই নিজের ,শ্রেনীগত অবস্থানকেই বর্ণগত 'চোখে' দেখতে শুরু করেছে।
--- এটা এমন এক যুগ সন্ধিক্ষন যখন 'রাজনীতিহীনতার রাজনীতি' শ্রমিক আন্দোলনের সামনে দেশটাকে উলটো করে দেখাতে শুরু করছে।ভাষন লিখন এবং আন্দোলনের সব কিছুকে উলটো চোখে দেখাচ্ছে,
-----বুঝিয়ে ছেড়েছে, দেশের সেই অংশের,
যাদের জমি জিরেত রোজগার এবং এমন কী স্বাধীন জীবনবোধের যতটুকু টিকে ছিলো - তার সব কিছুইঃ হয় বাবুদের জন্য নির্মিত রাস্তা-ঘাট, কিংবা ড্যাম ইত্যাদির জলের নিচে বাকিটা ট্রেন লাইনের নিচে, রোজগারের জন্য যারা ট্রেনে খাওয়া বিলি কিংবা সরকারের 'স্বচ্ছতা নীতির' রুপায়নে ঠিকাদারদের 'বিনা পয়সার' রোজগারে রয়েছেন ,কলে কারখার শারীরিক শ্রমে নিযুক্ত করাহয়েছে ঠিকাদারী শোষনের ছত্র ছায়ায় ------ ভারতটা নাকি তাদের নয়। ভারতহোল উপর তলার কয়েকজনের এবং নিছের কয়েক কোটি বাবুর জন্য, যারা ব্রাহ্মন্যবাদের দুষ্ট নীতিগুলির ধ্বজা ধারী।-
কাজেই মনে হোলঃ
রাজনীতি এবং শ্রমিক আন্দোলনে যখন অভিজ্ঞতা, এবং ফলিত বিজ্ঞান বিসেবে প্যলিটিক্যাল ইকোনোমিক্স,এবং সেই অভিমুখে সমাজ বিজ্ঞানকে ছুটী দেওয়া হয়েছে,
------- সেই যায়গাকে ক্রমে বাবুনীতির অভিমুখ হিসেবে ইংরাজী সর্ব্বস্যতা এবং মেট্রোপলিস স্মার্টনেসকে যায়গা করে দেওয়া হয়েছে,
তখন হয়তো বা ষাটের দশকের একেবারে প্রথম ভাগে শ্রমিক আন্দোলের রুট ধরে সাম্যবাদী দলে এসেছেন তাদের এবং তাদের মধ্যে সব থেকে প্রথম হিসেবে,
------ জীবন রায়ের উচিত হবে, তার অভিজ্ঞতাকে ফলিত বিজ্ঞানের আলোকে বিচারে চলে যাওয়া কালকে বিশ্লেষন করে ভবিষ্যতর সম্ভাব্য অন্ধকারে কিঞ্চিত আলো নিক্ষেপ করা।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই লিখে চলেছি।
যেহেতু অন্ধকারের পথ চলে হাটা,
যে পথে সাধারনত কাউকে চলতে দেখা যায় নাই।
লেখা যেহেতু,লেনিনবাদের আলোকে অভিজ্ঞতার বিশ্লেষন
এবং সে স্যত্রে লেনিনবাদের কালগতভাবে সমৃদ্ধ করার
প্রশ্নের সাথে -
প্রয়োগের রীতিনীতিকে নতুন করে খুজে বের করা এবং কাঠামোগতভাবে আন্দোলনের শ্রমিক অভিমুখকে শত-সহস্র ধারায় প্রবাহিত করার প্রশ্নে সাথে যুক্ত; সবগুলি লেখা এবং বিগত তিন দশকে যে সব প্রতিষ্টানিক সত্বা
লেখকের হাত ধরে গড়ে উঠেছে
---- সবের একাত্ম রুপকেই ফলিত বিজ্ঞানের একটা সর্বোত্তম রুপ
হিসেবে মানা হয়েছে, সেজন্য এই শ্রমে উৎকর্ষতার সিংহভাগ দাড়িয়ে আছে, পাঠকের আলোচনা, সমালোচনা এবং পরামর্শের উপর।
সেদিকটি সামনে রেখেই, আজকের উল্লেখি শীরোনামাটিকে সামনে রেখে, আরো একটা বিষয়ে আলোচনা শুরু করছি।যেহেতু, লেখাগুলিতে একপ্রান্তে
অভিজ্ঞতা, অন্যপ্রান্তে ইতিহাস এবং দর্শনবোধের মিশ্রন ঘটিয়ে লেনিনবাদের মানদন্ডে অভিমুক দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে
------- সেজন্য, লেখকের ধারনা প্রতিটি লেখায়, প্রতিটি প্যারা এবং হয়তো অনেক লাইনের শেষে ফলিত বিজ্ঞানের কোন সৃষ্টি হয়েছে, লেখকের অজ্ঞাতেই। পরের লেখাগুলি থেকে সেই "কোন'গুলিকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
পাঠকদের কাছেও অনুরোধ করবো, তারাও লেখাগুলির উপরে মতামত লিখে দিতে। এ কারনেই এটা দরকার, -যে বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছি বিগত তিন বছর, এই বিজ্ঞানের এবং সাথে সাথে মেহনত ও মেহনতির অস্তিত্ব মূলতঃ এই আলোচনা এবং সমালোচনার উপরে মূলতঃ নির্ভরশীল।
তীব্র ভাষায় যারা সমালোচণা করবেন, তাদের অনুদানও আশীর্বাদ বলে মেনে নেবো।
তবে আগে থেকে স্বিকার করে নিই; লেখায় অনেক বানান ভূল থাকবেই সেগুলি নিজগুনে মাফ করে দিতে হবে। তাছারা সমাজবিজ্ঞানে সাধারনতঃ দারী, কমা বা ফুলস্টপকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। (ক্রমশ)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours