জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা: 
বোধ হয় শ্রমিক আন্দোলন থেকে ভারতীয় রাজনীতে, মেহনতিদের একটি ধারাটি পূর্বজরা টেনে এনেছিলেন,
সেটাকে গতি দেওয়ার সত্তোরের সংগঠিত স্বতস্ফুর্ততাকে শ্রেনীগত বা সাম্যের  সাংগঠনিক শ্রোতে প্রবাহীত হতে দেওয়ার,'ব্যক্তিবাদী  প্রাচীনত্বের বোধহীনতাই  শ্রমিক জাগরনের প্রশ্নে যে  এই 'উল্টো' যাত্রা। এই সত্যটাকে যদি নেতারা মানতে না চান,
---- তবে জোর করে মানানোর শক্তি সংগঠিত শিল্প শ্রমিকদের অর্জন করতেই হবে। আজ কাল অথবা পরসু সে জবাব খুজে বের করতেই হবে, সে কোন 'মায়াবিকতায়' কমরেড  মহম্মদ ইসমাইলের মতো, একেবারে নিচু থেকে উঠা দেশবরেন্য নেতা, দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থায়ী আসন নে পেয়েই চলে যেতো হোল। এটা আজ নিশ্চিত করে বুঝে নিতে হবে, অন্যরা যে যাই করুন না কেন, শ্রমিক আন্দোলনকে যখন  কোন ক্লাব কিংবা মিষ্টান্ন বিতরন কেন্দ্র বানিয়ে দেন, তখন, শ্রমিক রাজনীতির স্বপক্ষে 'শতভাগের' স্বপ্ন ঠাট্টা  বলেই মনে হবে।
----- এতো দিনে বুঝতে পারি,  এই দুর্বলতার কারনেই,  কমরেড বি টি আর  নিরন্তর, শ্রমিকদের নেতা হয়ে এসেছন কিংবা প্রকৃত অর্থে আন্দোলনকে 'শ্রেনী রাজনীতিকে' দল ও দল সমুহের উপরে তুলতে চান --------- এমন সবাইকে এই নেতৃ্ত্বের উপযোগী হতে ১০০ ভাগ আনুগত্বের দাবী রাখতেন।
 তখন বুঝতাম না, এখন বুঝি
----- এই 'শতভাগ' উৎসর্গের মধ্যেই, 'সোনার কাঠির' চিত্ররুপ কিংবা চালচিত্রটা লুকিয়ে রয়েছে। বুঝলাম এই 'শতভাগের' মধ্যেই -  সেই নেতার 'বিদ্রোহী সত্বাকে' বিপ্লবী সত্বায় উঠিয়ে এনে, মেহনতিদেরকেও একই উত্তোরনের দিকে ঠেলতে থাকা। 
এই আন্দোলনে ষাট বছর রয়েছি। এই থাকার পথকে যখন জীবন সন্ধ্যায়  চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি, তখন এক শিহরনের মধ্যেই আবিস্কার করি নিজেকে। খুজে পাই, যেমনভাবে নিজে উন্মুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, নিজের প্রতিবাদী বা বিদ্রোহী মননকে বিপ্লবী সত্বায় উঠিয়ে আনায়
------ তেমনভাবেই কমরেড স্তালিনের সেই শেষ দুটি সিদ্ধান্তকে অস্বিকার করার জন্যেই আজকের বিশ্বের এই বিড়ম্বনা এবং এই অস্বিকৃতিতেই, আজ ভারত নামক দেশটা কার্য্যতঃ বিশ্ব মিলিটারীতন্ত্রের পদানত। এমন পরিস্থিতি, দেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা অর্থমন্ত্রী, পাকিস্থানের মতোই তাদের ইচ্ছাকেই 'গনস্বিকৃ্তি' দিতে হচ্ছে ...
------  আর 'ভারতের বুদ্ধিসত্বা'য় যারা নিজেদের মালিক মনে করতেন তারাই যখন 'মেরুদন্ডহীন' হতবম্বতার শিকার, তখন শ্রমিক শ্রেনী নিজেই
----- হন্যে হয়ে, এক থেকে অন্য  ব্যক্তি শ্রমিক নেতার পেছন দৌড়াদড়িতে ব্যস্ত থেকেছে। নিজের শক্তি এবং নিজের একতা অথবা নিজেদের আত্মমর্য্যাদার দিকে তাকানোর সুযোগ করে নেয় নাই। আমরা নাকি ভারতের সেই 'সংসদে' ৫০% নারী সংরক্ষন দেবো, যেখানে একজন শ্রমিক এবং এমন কী প্রযুক্তি কর্মী নেই। তবু আমরা আছি, মধ্যম বর্গরা আছে।
স্তালিন মেহনতি এবং ইতিহাসের অস্তিত্বের জন্য
যে দুটি বাস্তবতার দিকে আঙ্গুল দেখালেন সেটি
দেখুন আর নিজেদের খুজুন আমরা কোন পথে
গেছিঃ
প্রথমতঃ
 তিনি বোঝালেন, রেনেশাঁকে উঠিয়ে নিয়ে, পুঁজিতান্ত্রিকতার মধ্যে যে হিটলারত্ব রয়েছে, সে জ্ঞান-সংস্কৃতির অভিমুখকে বন্ধ করে দিয়ে, 'জাতীয়তাকে' অবরুদ্ধ করেছে, আন্তর্জাতীক বোধে মেলাকে আটকাতে।
দ্বিতীয়তঃ
হিটলার গেছে, হিটলারত্ব রয়েছে। তাই পুজির অতি কেন্দ্রিভবনের অভিমুখ  যখন দ্বিতীয় যুদ্ধ ভেঙ্গে দিতে পারে নাই। কালে কালে দেশে দেশ এবং মহাবিশ্ব বা মহামানবিকতার কল্পনাকে গুড়িয়ে দিতে দৈত্য দানবের আবির্ভাব ঘটতেই থাকবে।
তাকিয়ে দেখুনঃ
দেশের অর্থনৈ্তিক বিপর্য্যয়ের সাথে যারা এখনো ভারতী রাজনীতির কালচক্রকে যারা মিলিয়ে দেখার যোগ্যতা রয়েছে, তারা নিশ্চিত বুঝেছেন
----- দেশে দাসত্ব এসে গেছে। যাদের বুদ্ধির বাজারে যতায়ত আছে তাদের তো অন্তত বোঝা উচিত ছিল, ইতিহাসকে স্তব্ধ করার পথে অনেকটা ঠেলে দেওয়া না হলে, এমন টি ঘটতে পারতো না।
মেরামতির কাজটায় যদি হাত দিতে হয়,
প্রথমেই তো বুঝতে হবে, ভাংগন কোন যায়গা থেকে
শ্রমিক আন্দোলনে ঢুকেছেঃ
এই সুত্রেই, মদ্যমবর্গ মানসিকতা কিংবা কেরানী মানষিকতাকে
নিশ্চিহ্ন করতে না পারাটাকেই বিপর্য্যয়ের কারন হলে চিহ্নিত 
করতে হয়।
যদি এটা বুঝে নেওয়ার চেষ্টা হোত, 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন 'অতি-পুঁজিকেন্দ্রিক দেশগুলি
যুদ্ধে বিনাশ হয়ে যাওয়া অবস্থা থেক পূর্নগঠনে জীবন পনে
রয়েছে, তখনই, 'নিজেকে' সাংগঠনিক রাজনৈ্তিক দক থেকে
----- বিশেষ করে মধ্যমবর্গীয়দের ভেতরকার বিপ্লবী সত্বাটুকুকে 
সংহত করে নেওয়া প্রয়োজন ছিল।
সেটা খোদ সোভিয়েতে করা হয় নাই।সোভিয়েত প্রকাশনাগুলিতে চোখ বুলালেই দেখা যাবে। ইতিহাস এবং বিজ্ঞানের গবেষনা একপ্রান্তে বিশ্ববোধের সংস্কৃতিতে প্রবাহিত করার দিক থেকে প্রায় সিংহচুড়ায় 
উঠে এসেছিলেন। কিন্তু, মেহনতিদের প্রতিরোধের কোর হিসেবে নির্মান করতে, স্তালিন লেনিনকে যেভাবে ব্যখ্যা করেছেন, সেই বিন্দুর কাছাকছি ,
সেই গবেষনাকে নিয়ে যাওয়া হয় নাই।
১৯৭৪ সালে কেন্দ্রিয় সরকারের একটি প্রতিনিধীমন্ডলীর অংশ হিসেবে যখন সোভিয়েত ঘুরে  এলাম, তখন প্রকাশ্যেই যদি  সোভিয়েতে প্রতিবিপ্লব   ঘটা সম্পর্কে সন্দেহ ব্যক্ত করে থাকি
---- তার পেছনেও তিনটি কারন খুজে পেয়েছিলাম। স্তালিন উত্তরকালে দলে এবং সরকারে, শ্রমের ভূমিকাকে শক্তীশালি করলেও, লেনিনীয় ভাবনা অনুযায়, নবউত্থিত মধ্যম বা মাঝারী অঞ্চলকে সন্তুলনে রাখার মতো শ্রমীকদের ভাব এবং রাজনীতির দিকে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো না।
---- এখন যদি মিলিয়ে দেখা হয়, দেখা যাবে ইউরোপের পুনর্গঠনের কালে একপ্রান্তে আমেরিকা একের পর এক দেশে সামরিক ঘাটি গড়ছিলো, অন্যদিকে সোভিয়েত সমেত সমাজতান্ত্রিক এবং ভারতের মতো দেশগুলিতে 'মধ্যম বা শ্রেনী ন্য় এমন শক্তিগুলির ,'মেরুদন্ড' ভেংগে দেওয়ার কাজ করছিলোঃ সাথে সাথে তাদেরকেই দিয়েই ক্ষমতার নিয়ন্ত্রন করছিলো।
বছর মিলিয়ে যদি দেখা যায় - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত বেশী সময় পাওয়ার পূর্বেই কমরেড স্তালিনের মৃত্যু হয়। সাথে সাথে স্তালিনকে সোভিয়েত এবং বিশ্ব থেকে মুছে ফেলে দিয়ে 
----- মধ্যম শ্রেনীর বুদ্ধি সত্তাকেই ক্ষমতার সর্বোচ্চ স্তরে উঠিয়ে আনা হয়। গর্বাচভ নিজে স্বিকার করেছেন, তার কমিউনিষ্ট পার্টীতে আসার ইচ্ছাই ছিল না। উনারা যখন সস্ত্রীক ভারতে আসেন, উনার স্ত্রীকে ভারতীয় দেব-দেবীকে নিয়ে ক্রিয়াচার সামলাতেই কে জি বিকে হিমসিম খেতে হয়েছিলও।
যদি পেছনে তাকিয়ে দেখা যায়, চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব এবং উত্তরকালের অরাজকতা, লাউস- কম্বডিয়ার সাম্যের সমস্যায় সর্বত্র,
মধ্যমবর্গীয় বুদ্ধিসত্বার অতি উচ্চস্তরে ভাবহীন রাজণীতি, শ্রমিক অভিবাবকত্বহীনতায় উল্কার মতো আমেরিকা মিলিটারীতন্ত্রের দিকে
ধাবিত হচ্ছিলো; 
আজকের ভারতের দিকে কিংবা যে পরিস্থিতিতে পশ্চিম বাংলায় বামফ্রন্ট ক্ষমতা হারালো
----- সর্বত্রই দেশ বিপদে পড়েছে,   উচ্চ মধ্যমবর্গী মানুষের বোধহীনতাকে, মানবিক অভিমুখে রাখার ব্যর্থতা থেকে। এরা সবাই জ্ঞানী-গুনি। এদেরকেই দেশ গড়তে হবে।
----- তবে মানতে হবে এদের হাত ধরেই ভারতীয় সাংবিধানিক কাঠামোকে না ভেঙ্গেই দেশ বিদেশীদের হাতে গেছে এবং একদল  আদিভৌতিক সত্বা, ধর্মান্ধতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে - দেশের সৈ্ন্যবাহিনী থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রন করছে।
পশ্চিম বাংলার বামফ্রন্ট চলে যাওয়াটার 
আসল কারন যদি 'সিংগুর' বলে বিবেছিত হয়
প্রশ্ন উঠবেঃ 
লেখক কোন দিনই রাজ্য সি আই টি ইউ কে
শ্রমিক জাগরনের ভাবদর্শগত কেন্দ্র বলে মানতে পারি নাই।
তবু তত্বগতভাবে মানতে হবে --
ট্রেড ইউনিয়ন আন্দলণ যদি, শ্রমিকদের ডাইনে-বায়ে বিভাজনের 
উর্ধে উঠে প্রকৃত একতাট উঠিয়ে আনতে চাইতেন - 
সরকার এবং দল শ্রমিকদের যদি সরকারের 'তল্পী বাহক"
বিচার না করে, যদি 'রাজনৈ্তিক-ভাবাদর্শের দিক দিয়ে
এক স্বাধীন শক্তির মর্য্যাদা দিতেন, কিছুতেই বাম ফ্রন্ট
ভাংতো না।
 কমরেড বিনয় চৌধুরী তখন দুর্গাপুরের পার্টি দেখতেন। ১৯৭২-৭৩হবে। তখন ইস্পাতের মতো শিল্পগুলিতে দল সম্পূর্ন আন্ডার গ্রাউন্ড। মধ্যবিত্ত শ্রেমিক সন্তুলনের রাজনীতি ব্যখ্যা করতে গিয়ে, 
---- লেখার শিরোনামার কথনটি বুঝিয় দেন।তিনি বোঝালেন মধ্যমবর্গ শ্রমিক শ্রেনী সব থেকে নির্ভরযোগ্য সহযোগী একটা সর্তেই হতে পারে।  ভাব এবং রাজনীতির দিক থেকে মহামানবিক সত্বায় একাত্ম হতে হবে।সেই একাত্মতার সর্তেই তাকে রাষ্ট্রীয় কাঠামো পুনর্নিমানে নেতার ভুমিকা নিতে পারবে।
উনি বুঝিয়ে বল্লেনঃ
আসলে মধ্যমবর্গীয় সত্বার প্রশ্নে, কেন্দ্রিভুত পুজি এবং শ্রমের মধ্যে একটা ট্যাগ্ অফ্ ওয়ার চলছে । পুজি এই অংশের যখন 'টিকি ধরে টানছে ' 
তখন ' শ্রমিক শ্রেনী' কে দুটো ঠ্যাংগ ধরে টানতে হবে"।
কালগত রাজনীতি-ভাবাদর্শগত সংঘাতে, ভারতীয় শিক্ষিত মধ্যমবর্গের উচু অংশ ক্রমে যেভাবে বিবষতার শিকার হচ্ছেন, তেমনি, সে নিজেকে 'নিরপেক্ষতার ভান করে 'ফ্যাসিস্তদের দিকে ঝুকে পড়ছেন। (সমাপ্ত)




Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours