গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

1884 এর আগস্ট মাসের দু তারিখ, ষ্টার থিয়েটারে প্রথম অভিনীত হচ্ছে  'চৈতন্যলীলা' সেই সময়ের  আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই নাটকে চৈতন্যের ভূমিকায় অভিনয় করছেন এক বারবণিতা বিনোদিনী দাসী, আর দর্শকাসনে অনেকের সঙ্গে বসে আছেন ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবও, নিমাই এর চরিত্রে ওই বারবণিতার অসাধারণ অভিনয় দেখে মুগ্ধ ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেব নাটকের মাঝখানেই গ্রিনরুমে গিয়ে বারবণিতা বিনোদিনীকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করেছিলেন, এরপরই যেন পাঁক থেকে পদ্ম হয়ে ফুটে উঠেছিলেন 'নটী বিনোদিনী' , হয়তোবা শ্রী রামকৃষ্ণের স্পর্শেই কলঙ্কমুক্ত হলেন সেই বারাঙ্গনা, একইসঙ্গে বাংলার রঙ্গমঞ্চও যেন  অশুচিমুক্ত হল! জন্ম হলো এক অসামান্য শিল্পীর 'নটী বিনোদিনী'।
1863 সালে তাঁর জন্ম হয়েছিল এক অত্যন্ত গরিব পরিবারে, সেই সময় তাদের  ঠিকানা ছিল কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিটের একটি খোলার চালের অপরিসর বাড়ীতে, মা, ভাই আর দিদিমাকে নিয়েই ছোট্ট সংসার, দারিদ্র্যকে সঙ্গে নিয়েই তার জন্ম হয়, সামান্য ঘর ভাঁড়ার টাকা থেকে এতো গুলো পেট চালাতে গিয়ে তার মা-দিদিমার যত্সামান্য অলংকারও বেঁচে দিতে হয়েছিল একে একে। ছোটবেলায় ফুটফুটে সেই ছোট্ট মেয়েটির ডাকনাম ছিল পুঁটি।  ভালো ভাবে জ্ঞান হবার আগেই এই পুঁটির বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো তাঁরই এক খেলার সাথীর সঙ্গে, কিন্তু সে বিয়ে খেলাঘরের মতোই ভেঙে যায়! বাচ্চা মেয়ে পুঁটির স্বামীকে তার বাড়ীর লোকেরা জোর করে নিয়ে চলে যায়।  এরপরই সেই পুঁটির জীবন সংগ্রাম শুরু হলো, তাঁকে ভর্তি করে দেওয়া হল কর্ণওয়ালিশ স্ট্রীটের এক অবৈতনিক স্কুলে। 
স্কুলের খাতায় তার নাম লেখানো হল বিনোদিনী দাসী। পড়াশুনাতে মেধাবী না হলেও তার গানের গলা ছিল অসাধারণ।  সে সময় বিনোদিনীদের বাড়ীতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন গঙ্গাবাঈ নামের এক গায়িকা, বিনোদিনীকে এই গঙ্গাবাঈয়ের কাছেই গান শিখতে পাঠালেন তার মা। প্রতিভাময়ী ছোট্ট বিনোদিনী অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আয়ত্ত করে নিলেন সুর-তাল আর কঠিন সমস্ত গান। এই গঙ্গাবাঈয়ের ঘরে প্রায়ই বসত গানের আসর, সেখানেই ধীরে ধীরে বিচ্ছুরণ হতে বিনোদিনীর গানের প্রতিভা। সেই গানের আসরে আসতেন সমাজের গানের সমঝদার জ্ঞানীগুণী মানুষরাও, বিনোদিনীর রুপ-গুণ আর বিশেষ করে তার গানের গলা তাঁর জীবনকে বদলে দেয় এখান থেকেই। অবশ্য দারিদ্র্যই তাঁর এই জীবন পরিবর্ত্তনের আর একটি অন্যতম কারণ, আর ছিল গঙ্গাবাঈ এর অনস্বীকার্য ভুমিকা! তিনি কিশোরী বিনোদিনী দাসীকে পরিণত করলেন বারাঙ্গনা বিনোদিনীতে! এই গঙ্গাবাঈয়ের গানের আসরে আসতেন পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ব্রজনাথ শেঠ ইত্যাদি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, তাঁরা বিনোদিনীকে ভর্তি করে দিলেন 'গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে' সে সময় মাসিক দশ টাকা বেতনের বিনিময়ে। 1874 এ মাত্র এগারো বছর বয়সে একটা ছোট্ট ভূমিকায় প্রথম অভিনয় করলেন বিনোদিনী  'শত্রুসংহার' নাটকে, আর শুরুতেই তাক লাগিয়ে দিলেন দর্শকদের। পরের নাটকে নামলেন একবারে সরাসরি নায়িকার ভূমিকায়, উল্লেখ করা যেতে পারে, সেই যুগে অভিজাত ঘরের মেয়েরা সাধারণত এই সব পেশাদারি নাটক-যাত্রায় অংশগ্রহণ করতেন না, তাই নাটক বা যাত্রায় এইসব  বারাঙ্গনাদেরই ডাক পড়তো নারী চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। 1876 এর ডিসেম্বরে তিনি 'গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার' ছেড়ে যোগ দিলেন 'বেঙ্গল থিয়েটারে'।  শুরু হল তাঁর জীবনের আর এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। এই সময়কালেই তার অভিনয় দক্ষতা ও তার গানের গলা তাঁকে পৌছে দেয় সাফল্যের শিখরে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হল এই সময়েই। এরপর ধীরে ধীরে বিনোদিনী দাসী থেকে অবিসংবাদিত নায়িকা নটি বিনোদিনী হয়ে ওঠার গল্প আর অসামান্য অভিনয় প্রতিভার জোরে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ। যদিও 'বেঙ্গল থিয়েটারেও' বেশী দিন থাকেননি তিনি, মাত্র উনিশ মাস কাজ করেছিলেন এই দলে। বিনোদিনীর সাহসিকতা আর যন্ত্রণার অনেক কাহিনী আছে,  মাত্র তেরো বছর বয়সেই দলের প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে 1975 এ 'গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার' জন্য তিনি অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে উত্তর ভারত যাত্রা করেন, ভাবা যায় আজ থেকে একশো বছরেরও বেশি আগে একটা বাচ্চা মেয়ে তার আত্মবিশ্বাস আর প্রতিভা কে সম্বল করে বেরিয়ে পড়লেন ঘর ছেড়ে শুধু অভিনয়কে ভালোবেসে।  বিনোদিনী তাঁর স্মৃতিকথায় লিখে গেছেন তার এই নিজস্ব অনুভূতির কথা, তাঁর 'নীলদর্পণ' নাটক শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা। মাত্র তেরো বছর বয়সেই ছোট্ট কিশোরী থেকে বিনোদিনী মানসিক ভাবে এক পূর্ণ যুবতীতে পরিণত হয়ে যান। 1876 এ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'সরোজিনী' নাটকে এই বিনোদিনীর অভিনয় এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।  যে কোনো কঠিন বা জটিল চরিত্রে তার তীক্ষ্ম অথচ সহজাত অভিনয় সব সময়ই দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে, তার জনপ্রিয়তা  তাই উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে যতো সময় এগিয়েছে। 'মৃণালিনী' নাটকে 'মনোরমা' চরিত্রে বিনোদিনীর অপূর্ব অভিনয় দেখে স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র বলেছিলেন, 'আমি মনোরমার চিত্র পুস্তকেই লিখিয়াছিলাম, কখনো যে প্রত্যক্ষ দেখিব এমন আশা করি নাই, আজ বিনোদের অভিনয় দেখিয়া সে ভ্রম ঘুচিল' এই বক্তব্যই প্রমাণ করে বঙ্কিমচেন্দ্রর মতো সাহিত্যিকের উপন্যাসের কল্পনার নারীকে কিভাবে নাট্য মঞ্চে বাস্তবায়িত করেছিলেন তিনি। 
নটী বিনোদিনী কোনোদিনই অস্বীকার করেননি যে তিনি এক বারাঙ্গনা।  তাঁর জন্ম হয়েছিল বারাঙ্গনার ঘরেই,  কিন্তু বারাঙ্গনার আত্মসম্মান হীন জীবনকে সম্মানের শিখরে নিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম তিনি আজীবন ধরে করে গিয়েছিলেন। যে যুগে সমাজ নারীদের স্বাতন্ত্র, অস্তিত্ব বা স্বাধীনতা কোনোটাই স্বীকার করতনা।  অথচ সেই যুগে বারাঙ্গনা নারী হয়েও নিজের অভিনয় প্রতিভার জোরে বিনোদিনী নিজেকে সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। শুধুমাত্র অভিনয় জগতেই নয়, সাংস্কৃতিক জগত এবং অভিজাত সমাজেও তিনি দম্ভের সঙ্গে নিজের একটা জায়গা তৈরী করে নিয়েছিলেন, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যোগ দিতেন বিভিন্ন আলোচনা সভায় এই অসামান্যা প্রতিভাময়ী নারী, যেখানে আলোচনা হত বাংলা বা ইংরেজী সাহিত্য ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে, যদিও তাঁর কোনো রকম প্রথাগত শিক্ষাই ছিল না। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে শেষ জীবন পর্যন্ত বারবার এই নাট্য-সম্রাজ্ঞীকে কিন্তু লাঞ্ছিত হতে হয়েছে, প্রতারিত হতে হয়েছে!
ষ্টার থিয়েটারে বিনোদিনীর শেষ নাটক 'বিল্বমঙ্গল'। তারপর থেকেই তার নাট্যকর্মী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গী সাথীদের সঙ্গে বিরোধের শুরু হয়, ষ্টার থিয়েটারে জন্য তাঁর চুড়ান্ত আত্মত্যাগের কথা তার সহকর্মীরা ক্রমাগত অস্বীকার করতে থাকে, বারাঙ্গনার বলে তাকে বারবার বিভিন্ন অপমানের সম্মুখীন হতে হয়েছে, তাই শেষপর্যন্ত অভিমানে ধীরে ধীরে বিনোদিনী নিজেকে সরিয়ে নেন অভিনয় জগৎ থেকে।  এমনকি এই সব ঘটনায় তার নাট্যগুরু গিরিশ ঘোষের নিস্পৃহতাও তার মনে আরও গভীর আঘাত করে! এই অপমান আর অবমাননা বিনোদিনী কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না, তাই তো মাত্র চব্বিশ বছর পেরোনোর আগেই 1887 এ ছেড়ে দিলেন থিয়েটার করা। তাঁর অভিনীত শেষ নাটক ছিল 'বেল্লিক বাজার'। এক জায়গায় বিনোদিনী লিখেছিলেন, "থিয়েটার ভালোবাসিতাম, তাই কার্য করিতাম, কিন্তু ছলনার আঘাত ভুলিতে পারি নাই, তাই অবসর বুঝিয়া লইলাম ".... বুকভরা অভিমান নিয়ে ছেড়ে দিলেন তার প্রাণের থেকেও প্রিয় অভিনয়।
স্টার থিয়েটার তৈরীতে নটী বিনোদিনীর অবদানের কথা হয়তো অনেকেরই জানা নেই, একবার দিন পনেরোর জন্য থিয়েটার থেকে ছুটি নিয়ে কাশী গেছিলেন বিনোদিনী, কিন্তু সেখানে গিয়ে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি, এক মাস আর অভিনয়ে যোগ দিতে পারেননি, এই ঘটনায় তাঁর বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়, আত্ম-অভিমানী বিনোদিনী সেই মুহূর্তেই থিয়েটার ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু গিরিশ ঘোষ এবং অন্য কিছু শুভানুধ্যায়ীরা তাদের নিজেদের থিয়েটার তৈরীর কথা বলে তাঁকে সেই মুহূর্তে নিরস্ত্র করেন।  ঠিক সেই সময়েই বিনোদিনীর আলাপ হয় গুর্মুখ রায় নামের এক যুবকের সঙ্গে, পরে ওই যুবক বিনোদিনীর একান্ত ব্যক্তিগত জীবনেও প্রবেশ করে। এই গুর্মুখ রায় সেচ্ছায় রাজী হয়ে যান থিয়েটার তৈরীর জন্য টাকার জোগান দিতে, কিন্তু এই টাকার বদলে তিনি বিনোদিনীকে দাবি করে বসেন! বিনোদিনী কিন্তু শুধু মাত্র থিয়েটারকেই ভালোবেসে রাজী হয়ে জান গুর্মুখ রায়ের সেই প্রস্তাবে। পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলেন সেই গুর্মুখ রায়, তিনি  টাকাটা দিলেন কিন্তু শুধু বিনোদিনীকে, সেই টাকা অবশ্য সবটুকুই খরচা করলেন বিনোদিনী শুধু তার স্বপ্নের থিয়েটার গড়তে। এরপর বিডন স্ট্রীটে জমি পাওয়াও যায় স্বয়ং বিনোদিনীর উদ্যোগে। এরপর গড়ে উঠতে সময় লাগেনি আজকের স্টার থিয়েটার। গুর্মুখ বিনোদিনীকে আশা দিয়েছিলেন, থিয়েটারের নাম হবে বিনোদিনীর নাম অনুসারে 'বি-থিয়েটার', কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাসে থিয়েটারের নাম 'বি-থিয়েটার' রাখা হয়নি! থিয়েটারের নাম শেষপর্যন্ত রাখা হল 'ষ্টার থিয়েটার'।
আসলে গিরিশ ঘোষ প্রমুখের চোখে বিনোদিনী যতোই বড় অভিনেত্রী হন না কেন, তার পরিচয় তো শুধু বারাঙ্গনা ছাড়া আর কিছুই নয়। এত বড় প্রবঞ্চনা তবুও বিনোদিনী ভুলতে চেষ্টা করলেন, আবার মহড়ায় এলেন, কিন্তু এসেই বুঝলেন গোটা পরিবেশটাই পালটে গেছে! তারপর থিয়েটারে আসা বন্ধ করলেন তিনি! দু-তিনমাস কেটে গেল, গিরিশ আবারও মধ্যস্থতা করে থিয়েটারে ফেরালেন বিনোদকে। 1883 সালের জুলাই মাসের একুশ তারিখে স্টার থিয়েটারের উদ্বোধন হল 'দক্ষযজ্ঞ' নাটক দিয়ে। সতীর ভূমিকায় বিনোদিনীর অভিনয় সকলকে অভিভূত করল আবার। 1883 পর্যন্ত গুর্মুখ স্টার থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু তারপর পরিবারের চাপে ষ্টার থিয়েটারের স্বত্ব বিক্রী করতে মনস্থ করেন গুর্মুখ রায়ে।  বিনোদকে তিনি অংশীদার করতেও চেয়েছিলেন কিন্তু বারাঙ্গনার অধীনে কাজ করতে প্রবলভাবে আপত্তি তুললেন সুশীল সমাজে!
কি হাস্যকর কথা না, বারাঙ্গনা নারীর দেহ ব্যবহার করা যায় নিজেদের কাম নিরসন করতে, কিন্তু তার অধীনে কাজ করতে লজ্জা!  শোনা যায় বিনোদিনীকে সেসময় সেচ্ছায় স্টার থিয়েটারের স্বত্ব গ্রহণে অস্বীকার করাতে গিরিশ ঘোষেই মুল ভুমিকা পালন করেছিলেন!  অতঃপর স্টার থিয়েটারের স্বত্বাধিকারী হলেন অমৃতলাল মিত্র, দাশুচরণ নিয়োগী, হরিপ্রসাদ বসু ও অমৃতলাল বসু।  মাত্র তেইশ বছর বয়সেই অভিনয় জগতের অঘোষিত সম্রাজ্ঞীর সিংহাসনে বসেও তাঁকে শেষপর্যন্ত ছাড়তে হল তাঁর প্রাণের থেকেও প্রিয় থিয়েটার। বিনোদিনী এক জায়গায় লিখেছিলেন, "মনের কথা জানাইবার লোক জগতে নাই"! আজ কিন্তু প্রমাণ হয়ে গেছে তার জীবন কাহিনী মানুষের কাছে অমৃত সমান, তাকে নিয়ে যাত্রা, থিয়েটার আর সিনেমা এখনও সুপার হিট। অদ্বিতীয়া বিনোদিনী তার মাত্র বারো বছরের অভিনয় জীবনের জন্য আজও কিংবদন্তি।  বিনোদিনীর কথা উঠলেই সবসময়ই গিরিশ ঘোষের কথা ওঠে, তা বলে গিরিশ ঘোষের চোখ দিয়ে মোটেই চেনা সম্ভব নয় বিনোদিনীকে! বিতর্ক থাকলেও বলা ভালো বিনোদিনীর জন্যই হয়তো গিরিশ ঘোষের এতো পরিচিতি! বিনোদিনী তাঁর আত্মজীবনীর জন্য একবার গিরিশ ঘোষকে বই এর ভূমিকা লিখতে বলেছিলেন, কিন্তু গিরিশ ঘোষের সেই লেখা তার পছন্দ হয়নি,  বিনোদিনীর মনে হয়েছিল গিরিশ ঘোষে ইচ্ছাকৃত ভাবে অনেক সত্যি কথা আড়াল করে গিয়েছেন!  তাই গিরিশ ঘোষের লেখা সেই ভূমিকা বাদ দিয়েই নিজের বই ছাপিয়ে দিয়েছিল বিনোদিনী।
স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসারের স্বপ্নও তিনি ভিশন ভাবে দেখতেন, কিন্তু ভাগ্য তার সেই ইচ্ছে কোন দিনই পরিপূর্ণ করেনি!  তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের বাকী অংশটা তাই যেন কালো পর্দার আড়ালেই থেকে গেছে।  বহু স্বার্থান্বেষী পুরুষ মানুষ অনবরত তাঁর জীবনে  এসেছে আর ছলনা করে চলে গেছে কিন্তু সত্যিকারের ভালবাসা জোটেনি তাঁর কপালে! বিনোদিনীর একটি কন্যা সন্তানও ছিল, কিন্তু তাকেও মৃত্যু কেড়ে নিয়েছিল তার কোল থেকে!  শেষ জীবনে তিনি আশ্রয় পেয়েছিলেন তার ভালবাসার বন্ধু রাঙাবাবুর কাছে, তাকেও মৃত্যু কেড়ে নিয়েছিল অসময়ে বিনোদিনীর কাছথেকে! নটি-বীনদিনির বাঁকি জীবনের গল্প সঠিকভাবে জানা যায় না,  কিভাবে কেটেছিল তার জীবনের শেষ দিন গুলো ভাল জানা যায়না, নানান কথা উঠে এলেও এটাই হয়তো সত্যি যে তিনি নিজেই নিজেকে আড়ালে সরিয়ে নিয়ে ছিলেন চরম অভিমানে। দেড়শ বছর বাদে আজ ষ্টার থিয়েটারের নাম হয়েছে, 'বিনোদিনী থিয়েটার' আফসোস শুধু একটাই, জীবিত অবস্থায় নটি-বীনদিনি এইটুকু সম্মানের জন্যই কতো হাহাকার করেছেন, চোখের জল ফেলছেন, তবু তার জীবদ্দশায় দেখে যাওয়া হয়নি এই নাম! তবুও শান্তি  যে মৃত্যুর পর তাঁর আত্ম যেখানেই থাকুন যেন শান্তি পান বিনোদিনী থিয়েটার' এই নামটা দেখে।





Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours