নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া:

যেই না বসন্তের শুকনো পাতায় রোদ পোহাতে বের হলাম
সূর্যের অভিশাপে আমি হলাম ভিটামিন ডি শূন্য। বেঁচে গেছি এটাই বিশ্বাস হয় না !
যেন শান্তি দেব আজ আমার দাওয়ায় বসেছে , সকাল থেকে গান শোনালো আপত্তিহীন । জড় প্রকৃতি বা হিংস্র সমাজের অনিবার্য ফল হিসাবে -জীবনে কত ঘটনা ঘটে, তাকে মেনে নিতে হয় । কষ্ট হয় ,কিন্তু কষ্টগুলোকে সাজিয়ে নিতে পারলে হয়ত শান্তি অনেক।
মানুষের জীবন গুলোতে পাওয়া না পাওয়া হতাসা- আবেগ, রোগ -শোক, সব কিছু ছাপিয়ে যখন এক গতি নিয়ে চলে, তখন প্রাত্যহিক মানবিক বিশ্বাসের একটা পথ তৈরী হয়।
যে মানুষ জীবনের দু:খের পথ আর দু:খের পরিণাম কে একাকার করে নেন ,ভাবনার মধ্যে আনন্দ তার পথের পরিণাম।
দু:খ  যা হলো বাঁধা, যা অতিক্রম করে যাবার যা অপরিহার্য কিন্তু অলঙ্ঘ্য নয় । আর অলঙ্ঘ্য যে নয় এই বোধটাই মানবিক আনন্দের , এটাই শক্তির। ভালো লাগা গুলো মানুষের জীবনে সঙ্গী সমেত আসে ।  যেমন চাঁদের আলো ও হাওয়া , ঠিক তেমনি হিংস্রতার সাথে হীনতা। এই সবকিছুই প্রাকৃতিকতা , চাঁদের আলো হাওয়া , বেলী ফুলের ঘ্রান , তার সাথে মানুষে মানুষে চকিত সম্পকের্র উদ্যত এই ভঙ্গি , নিজেকে মেলে দেওয়া , গ্রহন করা সব কিছুই প্রাকৃতিকতা ।
কাল রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম , সকাল থেকে তার রেসটুকু বয়ে বেড়াচ্ছি ।
আমার ঘরে দুটো পা , অদ্ভুত চুপচাপ শব্দহীন , প্রথমে দৃশ্যটা দুর্ভাবনার মনে হলেও , পরে বুঝলাম , ওই পা দুটো আমার চেনা , আমি বহুবার স্পর্শ করেছি । নিশ্চয়ই অপ্রকৃতিস্থ নয় । অসুস্থ হওয়ার আগে মাঝে মাঝে ভয় হতো , অসংগত ভাবেই ভয় পেতাম। বন্ধুদেরকে বলেছিলাম কতক সময় । নিরুদ্বেগ নিয়ে ফিরে আসতাম , যখন ওরা বলতো ভয়ের কিছু নাই । বুঝতাম আমার বন্ধুদের আহাল্লাদ। বুঝতাম পাশে আছে কেউ , পা দুটোকে দেখে ভেতরে ভেতরে ভয় লাগতো , ভাবতাম ডাক্তার ডাকা চাই , পরে ভাবলাম মাথা খারাপ হলে ডাক্তার চাই না , নিজে নিজেই হাসতাম । চকিত পা দুটো কত সুন্দর হতে পারে , কত মানবিক দিনের পর দিন তা দিন দিন এমন কিছু দেখে যাওয়াটাও একটা অভিজ্ঞতা , চোখের অনেক কিছু ধুয়ে যায় । মুরশিদ আমার পাশে , আমার কি ভয় !
আমার আগামী দিনের স্বপ্ন আমার কানে কানে এসে ডাক দিয়ে যায় , তুমি আসবে মেয়ে ...!
আমিও আশা বেঁধে রাখি রূপ নারায়নের কুলে জেগে উঠবার । যদিও আমার ঘরে সন্ধ্যা । আবৃত্তির আসর শেষ হয়ে গেছে , কেবল টিম টিম হারিকেনের আলোয় পড়ে যাচ্ছে দোভাষী পুথি ক্লান্তহীন -নুরনামা ,  আমারই মঙ্গলের জন্য। আমার বাবা পথের ধারে চেয়ার পেতে বসে আছেন , আমার যাবার কথা ভেবে । তার চোখে জল , আবেগে ভরে যায় স্বর , তার ব্যক্তিত্বের বদল হয়ে গেছে , সে এখন আমার সন্তানের মত , এখানে পড়ন্ত বিকেলে অবসন্ন আভার সঙ্গে মিলে যেতে দেখি তার নিষন্নতা ,
আমার অকাল মৃত্যুর কথা ভেবে তারা কেবলই মরে গেছে।

মালিক -নোনাজলের ধাক্কা সামলানোর শক্তি দাও হাত ভরে ঠেলে দিয়ে যাও বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল...
তবে রাতের মতো আমাকেও অসুখ একা থাকতে দিয়েছিল বহু সময় হাসপাতালে , আমি আয়েস করে জমিয়ে বসে শুধু লিখতে পারার সুখে ব্যথাভার ভুলে থাকতাম ৷ সেই হিম চড়ায় শুয়ে ঘুমিয়ে অসুখের কষ্টে পড়ে থেকেছি বলে তার দায়ী আমি আমাকেই করে বেশ খুশি হয়েছি । জীবন চিনেছি , স্বজন চিনেছি , চিনেছি মৃত্যু ঘর।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours