অঙ্কিতা ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, পূর্ব বর্ধমান:

(সন্তানের আর্তি শুনতে কি পাও?)

আরও এক স্বীকারোক্তির পালা। অনেক অপ্রিয় কথাই বলতে হচ্ছে। আসলে আমি যে নিরুপায়।
আমার সাথে আমার স্বামীর ও আমার পালক মায়ের অশান্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। আমাদের সাথে এক প্রকার দুই মাস কথা বন্ধ। বন্ধ সমস্ত যোগাযোগ। একদিন হঠাৎ করে গৌরী মা আমাকে কাঁদতে কাঁদতে টেলিফোন করেন। এবং তখন বলেন যে গৌরী মা এর ওপর নিপীড়ন করা হয়েছে। এই নির্যাতনের আরো একজন নায়ক যুক্ত হয়েছেন যার নাম সত্যজিৎ চক্রবর্ত্তী।এই সত্যজিৎ চক্রবর্ত্তী আমাকে আমার জন্মের পর আমার জন্মদাত্রী মা তসলিমার কাছে থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসে। এখন এই ব্যক্তি হরিয়ানা রাজ্যে যমুনানগর এ থাকেন।এই সত্যজিৎ চক্রবর্ত্তী আমার পালক মা গৌরী দেবী কে নির্যাতন করেন।এবং শংকর চক্রবর্তী গৌরিদেবীকে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করেন। গৌরী মা এই কথা আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলেন। এবং এটাও বলেন তোর স্বামীকে যেন বেশি রাত পর্যন্ত বাইরে না বার হয়। তোর স্বামীকে বিপদগ্রস্থ করার প্রচেষ্টা চলছে। আমি তখন প্রশ্ন করেছিলাম কে বিপদে ফেলতে চায়? গৌরী মা আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। এরপর আতঙ্কে ভয়ে গৌরী মায়ের শরীর দিন দিন অবনতি হতে থাকলো। হঠাৎ করে ইংরেজির 2017 সালে গৌরী মা টেলিফোন করে ডাকলেন। বললেন আমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। তুই আর তোর স্বামী চলে আয়। তোদের সাথে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। আমরা টেলিফোন পাওয়ার পর দিন কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কলকাতায় তখন আমার পালক মা থাকতেন জোকা পার হয়ে পৈলান হাটে।আমার বিবাহ দেয়ার পর ঠিক কি কারণে গৌরী মা কলকাতা শহর ছেড়ে, বেহালা এলাকা ছেড়ে, পৈলান হাটের দিকে বাড়ি ভাড়া নিলেন! তখনো আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। যাইহোক গৌরী মা আমাদের সামনে দেখে খুবই আনন্দিত। জানো নতুন করে বাঁচার আলো দেখতে লাগলেন।ঠিক যেন মনে হচ্ছিল মলিন মুখে হাসি যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল, আমাদের দেখে হাসির বন্যা নেমে এলো। আমার পালক বাবা নির্মল নামে যে ভদ্রলোকটি তিনি ৩১০ বি. বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের কানপুর ট্যানারি নামক একটি জুতার দোকানে কাজ করতেন। যথারীতি তিনি নিজে কার্যক্ষেত্রে চলে গেলেন।

গৌরী দেবী আমার জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে মুখ খুললেন। এবং আমার স্বামীকে দিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করিয়ে নিলেন যেন আমার স্বামী আমার হাত কোনদিন না ছেড়ে দেয়। আমার স্বামী গৌরী মাকে কোথাও দিলেন। এরপর আমার স্বামীর সামনে সব ঘটনা বললেন। এবং এটাও প্রকাশ করলেন আমার জন্মদাতা পিতা জর্জ বেকার এবং আমার জন্মদাত্রী মাতা তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশি লেখিকা। এবং গৌরী দেবী মা এটাও বলেন আমার ছেলেটাকে একটু দেখিস। পারলে তোর স্বামীকে দিয়ে আমার ছেলের একটি ভালো মেয়ে দেখে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দিবি।গৌরী দেবীর মন তখন অনুশোচনায় ভরে গেছে। তিনি এটাও বলেন শেষ বয়সে আমি আর অন্যায় করবো না। সামনের দিনের জেল-হাজত আমি আর দেখতে পারবো না। সেই সঙ্গে আমার স্বামীর হাতে আমার পরিচয় পত্র দিলেন যেহেতু এই পরিচয় পত্র নিয়েই আমার গৌরি মার সাথে আমার স্বামীর বিবাদ। এবং গৌরী মা নির্দেশ দিলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা যেন আইনত বিবাহ করি এবং আমার মত অসহায় মেয়ের প্রাণ যেন বাঁচে।এবং এটাও বললেন আমার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে যত তাড়াতাড়ি কলকাতা শহর ছেড়ে চলে যাওয়া হয়।এর পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গরিমা আমার স্বামী ও আমার পালক বাবা সেজে থাকা ভদ্রলোকের সামনে বলেন গত রাত্রে তার ওপর অত্যাচারের কথা।আমার বাবা সেজে থাকা ভদ্রলোকটি গতরাত্রে অমানবিকভাবে গৌরী মাকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করে।আমি তখন বুঝতে পেরেছি কেন গৌরী মাকে অত্যাচার করা হলো। তার একটাই কারণ গৌরী মা আমাকে আমার জন্মদাতা পিতা ও জন্মদাত্রী মায়ের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। সেইদিনই গরিমার সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়। এবং গৌরী মা পরলোক গমন করেন। যাইহোক গৌরী মা তো নিজের জন্মদাত্রী মা না হলেও, পালক মা তো ছিলেন। মা বলে ডাকতে তো পারতাম। এখন আমি ওই পালক মাকে দেখবো আমার জন্মদাত্রী মায়ের মধ্যেই। এই রহস্য উদঘাটন করতে আমাকে হবেই।এবং জঘন্যতম কাজের সহিত যে সমস্ত মানুষ যুক্ত, সমাজের সামনে তাদের চেহারা উন্মোচন করতে। আমার পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় পেতে। আমি চাই ডিএনএ পরীক্ষা করা হোক আমার। যাহাতে আমি পিতৃপরিচয় ও মাতৃ পরিচয় পাই। আমি কিন্তু প্রস্তুত ডিএনএ পরীক্ষার মুখোমুখি হতে। (ক্রমশ)

(প্রতিবেদনের যাবতীয় দায় লেখিকার)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours