গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

বিভিন্ন পশুর নামে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, হাসি-তামাশা করা হয়, এবং সর্বাধিক যে পশু দুটির নাম জড়িয়ে গালাগাল বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ হয়, সে দুজন হতভাগ্য পশু হলো গাধা ও গরু, অথচ দুটি পশুই মুখ বুজে সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষের অনুগত হয়ে তাদের জীবন-জীবিকার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। যুগ-যুগ ধরে হাস্য-কৌতুক বা বিনোদনরূপে গাধা নামক নিরীহ প্রাণীটির যথেচ্ছ ব্যবহার করে গল্প, ছড়া, কবিতায় রঙ্গ-রস তৈরী হয়েছে, এই অত্যন্ত নিরীহ এবং পরিশ্রমী প্রাণী গাধা দেশ-কাল সীমানার গণ্ডী পেরিয়ে পৃথিবীর সর্বত্রই  হাস্য-কৌতুক আর ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের প্রতীক হয়ে গেছে, কোন পাপে গাধা এই শাস্তি পাচ্ছে ঈশ্বরই জানেন! আর এখন এই ভারতবর্ষে রাজনৈতিক জাঁতাকলে পড়ে গরুর অবস্থা গাধার থেকেও খারাপ হয়ে গেছে! যে যা পারছে বলছে, যা ইচ্ছে করছে, ব্যাচারি গরু কে স্যাটেল কক বানিয়ে যেন ব্যাডমিন্টন খেলা চলছে, প্রতিদিন এক কোর্ট থেকে আর এক কোর্টে পাঠিয়ে খেলা হচ্ছে! যেন নিজের সন্তানকে বঞ্চিত করে মানুষকে দুধ দিয়ে মহা অপরাধ করে বসে আছে! 
ভারতবর্ষ বা বাংলাদেশে গরুর সর্বোচ্চ ব্যবহার একসময় কিন্তু কৃষিকাজেই হতো। আজ হয়তো অনেক উন্নত যন্ত্র-পাতি বা ট্রাক্টর এসেছে, গরু গুলো একটু হলেও স্বস্তি পেয়েছে, হাড়ভাঙা খাটুনির হাত থেকে বেঁচে গেছে, তাবলে তাদের অতীতের অবদানকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। তেলের ঘানি এখন সম্পূর্ণ যন্ত্র নির্ভর হয়ে যাওয়ায় অসম্মানজনক কলুর বলদ উপাধি থেকেও এখন একটু  নিস্তার পেয়েছে গরু গুলো! যাইহোক গরুর দুধের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা আজও কিন্তু এতটুকু কমেনি, বরং বেড়েছে, বিজ্ঞান থেকে ডাক্তার সবাই এখন গরুর দুধের উপকারিতার সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছে, মানুষকে গরুর দুধ খেতে উৎসাহিত করছে। বলা যায় বহু প্রাচীন কাল থেকেই গরুর দুধ আমাদের খাদ্য এবং  সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, বিভিন্ন ধর্মীয় কাহিনীতেও তাই গরু আর গরুর দুধ নিয়ে চিত্তাকর্ষক সব গল্প আছে, বিশেষত হিন্দু শাস্ত্রে গরু কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।
ভারতবর্ষের মোট জনসংখ্যার প্রায় চল্লিশ ভাগ মানুষ নিরামিষভোজী, বৌদ্ধ-জৈন ছাড়াও প্রচুর হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষও ভারতবর্ষে নিরামিষভোজী, তারা মাছ, মাংস এমনকি ডিম পর্যন্ত খায় না এবং এটা অবশ্যই তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগ ও আচারিক মতানুসারে। ভারতের পশ্চিম, উত্তর এবং দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে এই নিরামিষভোজীদের সংখ্যা সবথেকে অধিক এমনকি সেখানকার খাবারের হোটেল গুলোর অধিকাংশই  ভেজিটেরিয়ান হোটেল, নন-ভেজ হোটেল খুঁজে পাওয়া গেলেও তার সংখ্যা খুবই নগণ্য। ভারতে গরুর মাংসভোজী মানুষ বলতে প্রধানত মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ধরা হয়, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু এবং জৈন ধর্মাবলম্বীরা আবার গরুর মাংস খাওয়াকে ধর্মহানি বলে মনে করে। তর্কের অবকাশ থাকলেও  বৈদিক যুগে হিন্দুরা যে গরুর মাংস ভক্ষণ করতেন সে বিষয়ে নানান মতবাদ আছে। গোমাংস ভক্ষণের বিষয়ে নানান বিতর্কিত তথ্য উঠে এসেছে:- ঋগ্বেদের প্রাচীন ভাষ্যকার হিসেবে সায়নাচার্য বা তাঁর আগে অন্যান্য ভাষ্যকার যেমন স্কন্দস্বামী, নারায়ণ  ঋগ্বেদের ভাষ্য করেছেন,
ভাষ্যকর আচার্য সায়ন তার অনুবাদে লিখেছেন, "You (O Indra), eat the cattle offered as oblations belonging to the worshippers who cook them for you. ( ATHARVA VEDA 9/4/1)" অর্থাৎ "হে ইন্দ্র গ্রহন কর সেসব গরুর মাংস যা তোমাকে তোমার ভক্তরা রন্ধন করে উৎসর্গ করেছে। "ঋগ্বেদ 1O.86.13 এ গরু রান্না করার কথাও পাওয়া যায়। ঋগ্বেদ 10.86.14 এ ইন্দ্রের জন্য গোবৎস উৎসর্গ করারও উল্লেখ রয়েছে, {RIG VEDA, 10.86.14; Indra speaks:- The worshippers dress for me fifteen (and) twenty bulls : I eat them and (become) fat, they fill both sides of my belly, Indra is above all (the world) }। উপনিসদেও গরু খাওয়ার কথা বলা হয়েছে, ভালো সন্তান পাবার জন্য ষাঁড়ের মাংস খাওয়া উচিত, (Brihadaranyak Upanishad 6/4/18 suggests a 'super-scientific' way of giving birth to a super intelligent child)।
এ ব্যাপারে আরো বিধান দিয়েছে মনুসংহিতা, মনুসংহিতা 5/44 এ বলা হয়েছে, "শ্রুতিবিহিত যে পশুহত্যা, তাহাকে অহিংসাই বলিতে হইবে, যেহেতু বেদ ইহা বলিতেছে। "অগ্নির কাছে নিবেদনে বলদ, ষাঁড় এবং দুগ্ধহীনা গাভীর বলিদানের ও উল্লেখ আছে। (ঋগবেদ সংহিতা, 1/162/11-13, 6/17/11, 10/91/14)।
বিষ্ণুপুরাণ বলছে, ব্রাহ্মণদের গো-মাংস খাইয়ে হবিষ্য করালে পিতৃগণ এগারো মাস পর্যন্ত তৃপ্ত থাকবেন, আর এর স্থায়িত্ব কালই সবচেয়ে দীর্ঘ (বিষ্ণুপুরাণ 3/16।  বৃষের মাংস {বেদ: 1/164/43} , মহিষের মাংস {বেদ: 5/29/8 }, অজের মাংস {বেদ 1/162/3 } খাওয়ার কথা বলা আছে।  আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় {বেদ:4/1/6}।  স্বামী বিবেকানন্দ এই বিষয়ে বলেছেন,
"You will be astonished if I tell you that, according to the old ceremonials, he is not a good Hindu who does not eat beef. On certain occasions he must sacrifice a bull and eat it. {The complete works of Swami Vivekananda, Volume 3, Pg 536}"
ঋগ্বেদের 1/164/80 এবং অথর্ব বেদের 9/10/20 ও 7/73/11  এর শ্লোকে গরুকে (আঘ্ন্যা) বলা হয়েছে, আঘ্ন্যা মানে যাকে হত্যা করা উচিত নয়, অথচ এইসব শ্লোকে শুধুমাত্র মা গরুকে অর্থাৎ যে গরু থেকে দুধ পাওয়া যায় সেই গরুর প্রসঙ্গেই (আঘ্ন্যা) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে অর্থাৎ যে গরু দুধ দেয় সেই গরু হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে।                  তুলসীরাম অনুবাদে লিখেছেন, "Invioable  (আঘ্ন্যা) as Mother Cow", তুলসীরাম অথর্ব বেদের  9/10/20  শ্লোকেও এই একই কথা লিখেছেন, "Invioable (আঘ্ন্যা) as Mother Cow"।                             
পৃথিবীতে অসংখ্য ধর্ম আছে আর প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তার ধর্মকেই শুধুমাত্র সত্য এবং সঠিক বলে মনে করে। এক ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের আচার আচরণ এবং আহারের বিভিন্ন  বিধিনিষেধ আছে, এক ধর্মে যা পবিত্র খাদ্যদ্রব্য অন্য ধর্মে সেটাই অপবিত্র এবং নিকৃষ্ট খাদ্যদ্রব্য।কেন হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না। সহজ ভাবে বলা যায় হিন্দু ধর্মে গরুকে 'পবিত্র মাতা' বলা হয়। গরু নানাভাবে মানুষের উপকার করে বলেই হয়তো হিন্দু ধর্মে গো-হত্যা নিষিদ্ধ। ভারতবর্ষে যতদূর জানা যায় বৌদ্ধ যুগের আগে পর্যন্ত হিন্দুরা নাকি গোমাংস ভক্ষণ করতেন, এই বিষয়ে কিছু তথ্যও উঠে আসে কিছু লেখা থেকে, সংস্কৃতে একটা প্রাচীন শব্দ আছে' "গো-সঙ্খ্য", এই শব্দটার অর্থ হলো, গো-পরীক্ষক, পরে অর্থ সঙ্কুচিত হয়ে  "গোপ" হয়ে গেছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই পরীক্ষা কেন হতো, কারণ আর কিছুই না, যে বলদ বা ষাঁড়কে কাটা হবে, তার স্বাস্থ্য না পরীক্ষা হলে, সেই মাংস মানুষের জন্য খারাপ হতে পারে, এই জন্য!                                 
প্রকৃতিতে মাংস তিন প্রকার :- ভূচর (যারা ভূমিতে চরে), খেচর (যারা আকাশে ওড়ে), জলচর (যারা জলে বিচরণ করে),
একমাত্র এই জলচর বাদে সব স্ত্রী-পশু বা প্রাণীদের বধ করা নিষিদ্ধ ছিল একসময় এমন তথ্যও উঠে আসে, কারণ স্পষ্ট, প্রজনন কমে গেলে প্রাণিজগতের ভারসাম্য বজায় রাখা যাবে না, একমাত্র মাছেদের ক্ষেত্রে লিঙ্গ নির্ধারণ করা অত্যন্ত কঠিন বলেই হয়তো জলচরদের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা যায় নি!                      যতদূর জানা যায় সম্রাট অশোকের সময় থেকেই গো-হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল অর্থাৎ বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাবের প্রায় হাজার বছর পর গো-হত্যা নিষিদ্ধ হয়। সম্রাট অশোকের এই নিষেধাজ্ঞা হিন্দুরা শিরোধার্য করে নিয়েছিল কেন! বলা যায়
এক ধর্মীয় সংঘাতের ফলেই এটা ঘটেছিল, সেসময় বৌদ্ধ ধর্ম ভারতবর্ষে এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, প্রচুর সংখ্যক মানুষ, বিশেষত তথাকথিত নীচ, অবহেলিত ও লাঞ্ছিত মানুষরাই বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি মুলত বেশি আকৃষ্ট হয়েছিল, এই ঘটনায় ব্রাহ্মণ এবং তথাকথিত উচ্চ-বর্ণের মানুষরা প্রমাদ গুনলো, তারা পুরোপুরি নিরামিষাসি হয়ে গিয়ে বাকিদের থেকে তফাৎ তৈরীর একটা চেষ্টা শুরু করেছিল!  উত্তরভারতেই এই প্রভাব সবথেকে বেশি লক্ষ্য করা গেছিলো। তাই হয়তো এখনও উত্তরভারতকে “গো- বলয়”  বলা হয়!                  হিন্দুরা কেন গো-মাংস ভক্ষণ করবে না, এই বিষয়ে আবার একই পৌরাণিক হিন্দু শাস্ত্রের সম্পূর্ণ অন্য ব্যাখ্যা আছে, জেনে নেওয়া যাক, আমাদের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদে গো-হত্যা ও ভক্ষণ না করার ব্যাপারে কি বলে,
(1). Ghrtam duhaanaamaditimjanaayaagne maa himsiheeh
(YAJURVEDA 13.49)
Do not kill cows and bulls who always deserve to be protected. (2).  Aare gohaa nrhaa vadho vo astu
(RIGVEDA 7.56.)
ঋগবেদে গোহত্যাকে মানুষ হত্যার সমকক্ষ বলা হয়েছে ও এর সাথে জড়িতদের শাস্তি দিতে বলা হয়েছে (3). Sooyavasaad bhagavatee hi bhooyaa atho vayam bhagvantah syaama
Addhi trnamaghnye vishwadaaneem piba shuddhamudakamaachar antee
(RIGVEDA:- 1.164.40, ATHARV VEDA:- 7.73.11 আর 9.10.)
The Aghnya cows - which are not to be killed under any circumstances- may keep themselves healthy by use of pure water and green grass, so that we may be endowed with virtues, knowledge and wealth.
বেদে আঘ্ন্যা, অহি ও অদিতি হচ্ছে গরুর সমপদ,
আঘ্ন্যা মানে যাকে হত্যা করা উচিত নয়, অহি মানে যার গলা কাটা বা জবাই করা উচিত নয়, অদিতি মানে যাকে টুকরো টুকরো করা উচিত নয়।
(Source: Yaska the commentator on Nighantu) এই বেদেই আবার আমারা পাই:-"প্র নু বোচং চিকিতুষে জনয়া,মা গামনাগা মদিতিং বধিষ্ট" (ঋগবেদ:- 8/101/15) যেখানে ঈশ্বর বলছেন, "আমি জ্ঞানবান কে বলছি যে তোমারা নিরপরাধ গো জাতিকে হত্যা করো না", এখনে তার্কিক মানুষরা প্রশ্ন তুলতেই পারে হত্যা করতে নিষেধ করা আছে, খেতে তো নিষেধাজ্ঞা নেই ! যাকে হত্যা করা যাবে না তাকে খাবার তো প্রশ্ন কোনো ভাবেই আসে না। বেদের এই বাক্যর পূর্ন ব্যাখ্যা আছে স্মৃতি তে, যা আমাদের আদি পিতা মনু ও বাকী আঠারো জন বেদবিদ মহর্ষিদের ব্যাখ্যা, স্মৃতি:- ব্রক্ষহত্যা সুরাপানং স্তেয়ং গুর্ববঙ্গনাগমঃ,
মহান্তি পাতকান্যাহুঃ সংসর্গশ্চাপি তৈঃ সহ।।
মনু:- ব্রাম্মহত্যা (মানুষ ও গো হত্যা), মদ্যপান, চৌর্য, কন্যা বা মাতৃ স্থানীয় নারীর সহিত সংঙ্গম এই চারটি ই মহাপাতক। যারা এই কর্ম করে তাদের সাথে বাস করা শয়ন বা উপবেশন করলে সেও মহা পাপী হবে। তাই বলা যেতেই পারে  হিন্দু শাস্ত্র মতে গো-হত্যা নিষিদ্ধ।  এতসব বিতর্ক ছেড়ে বর্তমানে যা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি যা জানতে পারছি পরম করুণাময় শ্রীকৃষ্ণকে মামাদের অভিসম্পাত থেকে রক্ষা করার জন্য পরিবার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, তখন শিশু শ্রীকৃষ্ণ গাভীর দুধ পান করেই জীবন রক্ষা করেছিল, শ্রীকৃষ্ণের ছবিতে গরুর উপস্থিতি প্রায় সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায় , তাছাড়া দেবধিদেব শিবের সহচর 'নন্দী' আকৃতিতে-আদলে একজন ষাঁড়, ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে বিশালাকায় পাথরের যে গরুমূর্তি দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলো নিঃসেন্দহে শিবের সহচর নন্দীরই মূর্তি, এই নন্দীর গো-রূপি মূর্তিকে প্রণাম ও পূজা করার প্রচলন হিন্দু ধর্মে আছে , তাই এটা অবশ্যই খুব পরিষ্কার করে বলা যায় যতোই বিতর্ক বা ব্যাখ্যা যেভাবেই উঠে আসুক না কেন, এটা বাস্তব সত্য যে ধর্মমতে যাকে পূজা-অর্চনা করাই রীতি, সেই হিন্দুদের পক্ষে গরু হত্যা বা গোমাংস ভক্ষণ ধর্মাচরণের বিরোধীতারই সমান।                           
এবার অবাক হওয়ার মতো কিছু বাস্তব তথ্য, মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের অনেক  মুসলমান কিন্তু গরুর মাংস খায় না, কাশ্মীরের শ্রীনগরে সুফি-সাধক 'নূরউদ্দিন ওয়ালির' গল্প জড়িয়ে আছে এই আচরণের সঙ্গে, তার মাজারও সেখানে রয়েছে। এই নূরউদ্দিনের ধর্ম-মা ছিলেন এক হিন্দু সন্ন্যাসিনী, তার নাম লালেশ্বরী, শৈশবে এই ধর্ম-মা নূরউদ্দিনকে নিজের স্তন-পাণ করিয়েছিলেন, হিন্দুরা আবার এই নূরউদ্দিন ওয়ালিকে নুন্দঋষি ও বলে থাকে, ধর্ম-মাতা এই লালেশ্বরীকে মুসলমানরা ডাকে 'লাল্লাদেদ', মৃত্যুর পূর্বে এই নূরউদ্দিন ভক্তদের উদ্দেশে তার হিন্দু মাতার স্তনদানের ঋণ শোধের জন্য অনুরোধ করেছিলেন, সেই ঋণ শোধের জন্যই তার অনুগামীরা অর্থাৎ কাশ্মীরের অনেক মুসলিম গরুর মাংস খায় না। আরও একটা ঘটনা, 1857 ভারতবর্ষ সিপাহি বিদ্রোহে উত্তাল, সেই সময়  হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য রক্ষায় তৎকালিন সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের উদ্যোগে কোরবানির ঈদে গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তিনি নিজে দুম্বা কোরবানি দিয়ে নিদর্শন স্বরূপ সব মুসলমানকে গরু জবাই থেকে নিবৃত্ত করেছিলেন, হ্যাঁ এটাই আমাদের সম্প্রীতির ভারতবর্ষের গল্প।                              শেষ করছি একটাই কথা দিয়ে যে সব ধর্মের উপরে সৃষ্টি আর উদ্ভিদ ও প্রাণী জগত, আর মানুষ হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব তাই প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব সৃষ্টিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। সাম্যবাদের জয় হোক, জয়ী হোক মানবতা।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours