নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া:

আমাদের আবেগ হুম আবেগ গুলো যেন কিসের মাঝে বুঁদ হয়ে আছে , আমাদের আবেগের ভাষা গুলো গুঁজে রাখছি আজকাল হুয়াটস আপ, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, ট্যাংগো টুইটারে, কথা খরচও করতে হয় না শুধু  থামটা  চাপলেই লাইক হয়ে যায়। ইমেজি যেন ইনস্ট্যান্ট সিল্কি সিরাম, জাস্ট বুলিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে! আমরা এখন আর ঘরোয়া আড্ডায় পার্কে কম মাতি...বরং ঘরের কোনায় নিরিবিলিতেই বেশী বন্ধু আড্ডা কমেন্ট লাইকে বেশী গলে যেতে ভালোবাসছি।  আমনে -সামনে অভিব্যক্তির আদান প্রদান গুলো যদি বিফল হয়ে যায়, তবে ভালবাসা যদি এভাবে হারিয়ে যায় তাহলে বাঁচবেন কি করে মানুষ। আমার মতো কথাভূক আসর জমানো মানুষ গুলো ডিজিটালাইজ হয়ে বোবা হওয়া বাকী থাকবে শুধু। মনের এই মেঘ এই রোদ্দুর, অস্থিরতা হয়ে যাক দুর। তবে ভাবনাটাকে সাথে নিয়েই তো ঘুরি।

কোথাও আমন্ত্রণ কিংবা নিমন্ত্রনের খাবারের পদ গুলো নয়, যেন মানুষ গুলোর সাথে মিলবার... সুযোগটা হারাতে চাই না আমি এই বিদেশ বিভূঁই এ।

আজ ছিল এখানে এক আন্টির বাসায় দাওয়াত।

বাঙ্গালীর বাড়িতে দাওয়াত পেলে আমি শাড়ি পরার সুযোগটা হাতছাড়া করি না ভুলেও।

শাড়ি পড়ে যা অনুভূতি হলো - আমার হাসব্যন্ড গেয়ে উঠলো মান্না দে -

“যদি উপহার দিয়ে ফেলো একটাও ফুল।

যদি একবারও করো কোন সামাজিক ভুল

সেই ভুলেই ভাবতে রাজি এই ঘর সুখের বাসর

চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।।“

আমার শ্যামলা অবয়বটা যেন রামধনুর সপ্ত রং-এর মাধুর্য আত্মসাৎ করে, একটা হলুদ  রঙে প্রমিনেন্ট হয়ে, আমার আত্মার এক নতুন বিকিরণ ঘটেছিল গতকালকে। কন্যারা আমার পরিপাটি অনিন্দ্য স্নিগ্ধকান্তি দিব্যরূপ দেখে বিমোহিত হয়েছিল। যদিও জানি। আমি নই কো তেমন চারুময়ী। আমার শাড়ি পরা রূপ আমার ছোট্ট মানিক সোনা রুহা  বড্ড ভালোবাসে, বার বার কাছে আসে জড়িয়ে ধরে চুমু দেয়, মনে হয় ওরা রোজকার মাকে একটু অন্যরূপে একটু অচেনা ঢঙ্গে দেখতে পেয়ে, কিছুটা নতুন নতুন দেখবার সুখে মেতে যায়। বড় মেয়ে বলে মা সাবধানে হাঁটবে শাড়ি ডিসগাষ্টিং আমার ভাল্লাগে না মা। কিন্তু তুমি ভালো দেখছো , তোমাকে দেখতে ভালো লাগছে , আমি শাড়ি পরলে কি তোমার মতো লুক করবো মা? ডিসগাষ্টিং বলার মাঝেও মায়ের শাড়ি পরা চারুময় রূপ থেকে ও মুখ ফেরাতে পারে না , বাঙালীর শাড়ি পরা মায়ের মাঝে একটা অন্যরকম ভাব থাকে। আঁচলের ছায়া, আহা!

ম্যাচিং করে কালের দুল পার্স সেন্ডেল সবই তো ওরাই বের করে , মা তুমি এটাতে খুব সুন্দর দেখবে! না দেখালেও আমি পরে নিই ঝটপট ওদের মুগ্ধ করতে। রুহা শাড়ি পরা এনজয় করে, পিন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সামনে , রায়া শাড়ির কুচি ধরতে শিখে গেছে , ওদের বাবার এবার ছুটি । গতকাল বলছিল রায়া দেখ তো মা ট্রাই করো মার শাড়ির কুচি ধরতে ! ও ধরছে এবং পেরেছে । ওদের দিকে তাকিয়ে তখন মনে হলো বাজিয়ে রবি তোমার বীণে

আনল মালা জগতজিনে

তোমার চরণ তীর্থে আজি

জগত করে যাওয়া আসা।।

এমনি করেই দায়িত্ব আন্তরিকতা  ইনভল্ভমেন্ট তৈরী হয় সংসারে প্রতিটি মানুষের মাঝে।

ওপাশের দরজাটা খোলার আতিথেয়তার টানে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাদের প্রিয় বিলকিস আন্টি ! আতিথেয়তার গ্রীনরুম সাজিয়েছিলেন উনি অল্প সময়ের মধ্যেই যে পরিমাণ, তাতে স্নেহের আন্তরিকতা পেয়েছি যতটা তাতে মুগ্ধ বলেই চুপ থাকা যায় না, তারপরেও শব্দ থাকে অনেক সময় প্রকাশ ক্ষমতা হারিয়ে যায়। ছিল নতুন কিছু মুখ , নতুন কিছু গল্প টপিক , নতুন কিছু আন্তরিকতার সুতোয় বাঁধা আবেশ...যা নিয়ে ফিরলাম...স্মৃতি করে রাখলাম কিছু আলোকচিত্র...আমি হাসলাম বাতাসের সাথে উড়িয়ে আঁচল...গাড়িয়াল ভাই বলল...এদিকে তাকাও ডানে ডানে হ্যাঁ পারফেক্ট .. রুহা বল্লো মা তোমার শাড়ির এক্সট্রা যেটা ওটা ওয়েভ করলেই আমি ছবিটা টুলবো আচ্চা...! হ্যাঁ মা স্মাইল করো .. হাটটা চিনে রাখো ... গুড !

কঠিনের মাঝে বাস-হারালো আবেগ

মানবতার আকাশে ঘন কালো মেঘ।

গভীর আবেগে লিখা হবে না কবিতা

ডিজিটাল হাওয়ায় মোহ সবি-তা। শুধু যেন ছবি তোলা ছবিতেই ভুলে থাকা সময়ের এক একটা পল।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours